16/05/2025
সারা পৃথিবীতে বছরে প্রায় ৪ কোটি ফ্লাইট ওঠা-নামা করে, কিন্তু এয়ারপ্লেনের চাকা খুলে যাওয়ার ঘটনাটি প্রচণ্ড রেয়ার। কিন্তু, বাংলাদেশ বিমানের বিগত ১০ বছরে তিনটা চাকা খুলে যাওয়ার ঘটনা মনে পড়ছে।
হোয়াই?
ঢাকা এয়ারপোর্টে নামলেই আপনি বুঝবেন, এই দেশটা বিশৃঙ্খল, অব্যবস্থাপনার দেশ।
এই বিশৃঙ্খলা ও বিমানের চাকা খুলে যাওয়া দুইটার কানেকশন খুব সিম্পল—বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আমলারা ভয়াবহ রকমের অদক্ষ ও রিলাকট্যান্ট।
এই অদক্ষতার মূল রয়েছে, আমলাতন্ত্র এখনো ব্রিটিশদের ফেলে যাওয়া সিস্টেম, প্রসেস ও মেকানিজমে চলছে।
আমলাতন্ত্র মূলত তিনটা সিস্টেমের সমষ্টি:
একটা ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম,
একটা ডিসিশন মেকিং সিস্টেম এবং
একটা এক্সিকিউশন সিস্টেম।
কিন্তু বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রে ন্যূনতম ডিজিটাইজেশন হয়নি, ডিসিশন মেকিংয়ে কোনো ধরনের ডাটা ভিত্তিক অ্যানালিটিক্যাল ডিসিশন মেকিং প্রসেস নেই এবং এক্সিকিউশন সিস্টেম আছে, কিন্তু সেটা পাকিস্তান আমলের এক্সিকিউশন সিস্টেম, যা সাজানো হয়েছে দুর্নীতি ও ঢিলেমিকে ইন্সটিটিউশনালাইজ করার জন্য।
# # # শুধু ডিজিটাইজেশনের কথা যদি বলি,
আজকে ২০২৫ সালে এসে বাংলাদেশের প্রশাসনে আমলারা ফাইল নিয়ে সাক্ষরের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে, এখানে কোনো সেন্ট্রালাইজড ইমেইল সিস্টেম নেই। ইনথি, ডিনথি নামের কিছু জিনিস ফাইল সাক্ষরের জন্য, যেগুলো মূলত আমলাতন্ত্রের অদক্ষতা ডিজিটাইজ করতে নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো ফেলে দেওয়ার আগে বাংলাদেশে কোনো ধরনের ডিজিটাইজেশন হবে না।
অধিকাংশ আমলা জিমেইল ব্যবহার করে। আমার লজ্জা লাগে দেখে যে তাদের কার্ডেও তারা জিমেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে রাখে।
কিন্তু, মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ পিসি পাইরেটেড এবং কোনো ধরনের ভেরিফিকেশন নেই।
# # # বেসিক ডিজিটাইজেশন না থাকায়:
মন্ত্রণালয়ের কাজ, লর্ড ক্লাইভের আমলের আমলাদের দক্ষতার মতোই। এখানে দক্ষ আমলা বলতে আপনি যাকে চিনবেন, তার প্রোডাক্টিভিটি বাংলাদেশের আরএমজি সেক্টর বা ব্যাংকিং সেক্টরের সবচেয়ে অদক্ষ ম্যানেজার বা মার্চেন্ডাইজারের থেকেও দুর্বল।
কিন্তু যেহেতু তাদের হাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচের ক্ষমতা আছে, যেহেতু তারা মনোপলি ব্যবসা করে, জনগণকে চুষে খেতে পারে, যেহেতু তাদের ব্যক্তিগত ও সিস্টেমের পারফরমেন্স মেজারমেন্টের কোনো কার্যকর মাপকাঠি নেই (খরচ করতে পারছেন কিনা সেটাই ক্রাইটেরিয়া), সেহেতু তাদের সিস্টেমকে উন্নয়নের কোনো দায় নেই।
# # # আসেন ডিসিশন মেকিং-এ।
প্রতিটা মন্ত্রণালয়ের সকল সিদ্ধান্ত সচিবকেন্দ্রিক। সচিব সারাদিন ফাইল সাইন করেন। সেইগুলো পড়ার টাইমও তার নেই।
এবং এই ডিসিশন পুরোপুরি একজন আমলার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ইম্পালস ও ইচ্ছা-মানসিকতার উপর নির্ভর করে। কোনো ধরনের মেমো কালচার নেই।
পুঞ্জিভূত জ্ঞান নেই, ডাটা ভিত্তিক এভিডেন্স-বেইজড সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো মেকানিজম নেই। কীভাবে থাকবে, বেসিক ইনফরমেশন সিস্টেমটাই তো নেই।
# # # এরপর আসেন এক্সিকিউশন সিস্টেম।
আপনি শুনে অবাক হবেন, ডিপিপিতে গ্রান্ট চার্ট থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। অনেক আমলা গ্রান্ট চার্ট নামটাই শোনেননি। নারী ছাড়া যেমন বাচ্চা হয় না, ঠিক তেমনই গ্রান্ট চার্ট ছাড়া প্রজেক্ট এক্সিকিউশন কীভাবে সম্ভব আমার জানা নেই। এজাইল বা অন্য ধরনের কিছু মেথডোলজি বিগত ১ দশকে এসেছে, যেখানে গ্রান্ট চার্ট লাগবে না। কিন্তু সেই মেথডের নামই তারা শোনেননি।
বেসিকালি এই আমলাতন্ত্র আল্লাহ চালাচ্ছেন, মারফির ল’কে ভুল প্রমাণ করে।
যেখানে একটা ভুল থেকে বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকলে সেইটা হবেই তা ঠিক না, বরং বাংলাদেশের হাইওয়েগুলোতে এনা পরিবহনের গাড়ির মতো প্রতি মুহূর্তে এক্সিডেন্টের সম্ভাবনা থেকে বেঁচে বেঁচে যাচ্ছে।
তার একটা কারণ—আমি সবসময় বলি, আমার জীবনে মা-বাবার দোয়া আছে। আল্লাহ আমাকে বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দেন। ঠিক তেমনই আল্লাহ বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচিয়ে দিচ্ছেন। আমাদের উপরে আল্লাহর কোন একটা রহমত আছে।
আর আছে বাংলাদেশের মানুষের ডেসপারেশন। আমলাতন্ত্রের অদক্ষতাকে নেগোসিয়েট করেই রাষ্ট্রটাকে এগিয়ে নিচ্ছে —মরুভূমিতে ৫০ ডিগ্রি গরমে দাসের মতো থেকে রেমিটেন্স পাঠানো দাস, আর পরিবারের নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ঢাকায় পালিয়ে আসা পোশাক শিল্পের শ্রমিক।
কিন্তু, এই উন্নয়নের ক্রেডিট নেয় সরকার আর আমলাতন্ত্র। আর যদি কখনো কোনো বিপর্যয় ঘটে, গালি খায় মানুষ বা উদ্যোক্তারা, যারা পরিশ্রম করে এই সিস্টেমকে বিপর্যয় থেকে বাচিয়ে রাখছে।
এই সিস্টেমগুলোকে ঢেলে সাজানোর কোনো প্রচেষ্টা হাসিনার আমলেও ছিল না, প্রফেসর ইউনূসের আমলেও কেউ সেইটার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে চেষ্টা করেনি। হাসিনার আমলের দশ মাসে এখনো সেই হাসিনার রেখে যাওয়া ডিলিউশনারি সিস্টেমেই চলছে।
প্রশাসন রিফর্মের যে কমিশন হয়েছে, সেটি সম্পূর্ণভাবে আমলাদের আন্তঃবাহিনী ক্ষমতার সম্পর্কের ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে। কিন্তু ইনফরমেশন সিস্টেম, ডিসিশন মেকিং সিস্টেম ও এক্সিকিউশন সিস্টেমকে ইমপ্রুভ করার জন্যে তেমন কিছু আমার চোখে পড়ে নাই। ফলে এই রিফর্ম কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে আমার প্রত্যাশা খুবই কম। আর আমলা তন্ত্রের বেসিক যে অবভিয়াস সংস্কার আছে সেইটা করতে কোন কমিশান লাগবেনা। সম্পুরন প্রশাশনে ইমেইল ব্যবহার বাধ্যতামুলক করতে কোন কমিশান লাগবেনা, সরকার চাইলে এখনই করতে পারে।
ফলে আমি বাংলাদেশ রাষ্ট্র নিয়ে কোনো আশা রাখি না। এই সরকার ছিল আমাদের জেনারেশানাল অপারচুনিটি কিন্তু এইটা ফি সাবিলিল্লাহ এর মত চলতেছে।
আল্লাহর কাছে শোকরের নামাজ পড়েন যে একজন দক্ষ পাইলট প্লেনটাকে তার ব্যক্তিগত দক্ষতায় নামিয়ে আনতে পেরেছে।