03/09/2024
বেতন (টাকা) কে মাসের শেষ পর্যন্ত অবশিষ্ট রাখার
কৌশল
ঘটনাটি এক সৌদি-যুবকের। সে তার জীবনের প্রতি মোটেও সন্তুষ্ট ছিল না। তার বেতন ছিল মাত্র চার হাজার রিয়াল। বিবাহিত হওয়ায় তার সাংসারিক খরচ বেতনের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। মাস শেষ হওয়ার আগেই তার বেতনের টাকা শেষ হয়ে যেত, তাই প্রয়োজনের তাগিদে তাকে ঋণ নিতে হত। এভাবে সে আস্তে আস্তে ঋণের চোরাবালিতে আটকে যাচ্ছিল। আর তার বেতনে এমন বিশ্বাস জন্ম নিচ্ছিল যে, তার জীবন এই অভাবেই কাটবে। অবশ্য তার স্ত্রী তার এ-অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখত। কিন্তু ঋণের বোঝা এত ভারী হয়েছিল, যেন নিঃশ্বাস নেওয়াও দুষ্কর ছিলো।
একদিন সে তার বন্ধুদের এক মজলিসে গেল। সেদিন এমন একজন বন্ধু সেখানে উপস্থিত ছিল, যে অত্যন্ত বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ ব্যক্তি। যুবকের বক্তব্য এমন ছিল যে, আমার ওই বন্ধুর সকল পরামর্শকে আমি খুব গুরুত্ব দিতাম।
কথায় কথায় যুবক তার সকল অবস্থা বন্ধুকে বলল। বিশেষত আর্থিক সমস্যাটা তার সামনে তুলে ধরল। তার বন্ধু মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শুনল এবং বলল, আমার পরামর্শ হল- তুমি তোমার বেতন থেকে কিছু টাকা সাদাকার জন্য নির্ধারণ কর। যুবক আশ্চর্য হয়ে বলল, জনাব! সাংসারিক প্রয়োজন পুরনেই ঋণ নিতে হয়; আর আপনি আমাকে সাদাকাহ'র জন্য টাকা নির্ধারণ করতে বলেছেন? যাইহোক, যুবক বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি স্ত্রীকে জানাল। তার স্ত্রী বলল, পরিক্ষা করতে সমস্যা কী? হতে পারে আল্লাহ্ তা’আলা তোমার জন্য রিযিকের দরজা খুলে দিবেন। যুবক বেতনের চার হাজার রিয়াল থেকে ত্রিশ রিয়াল সাদাকাহ এর জন্য নির্ধারণের ইচ্ছা করল এবং মাসশেষে তা আদায় করতে শুরু করল। সুবহানাল্লাহ! কসম করে বললে মোটেও ভুল হবে না, তার (আর্থিক) অবস্থা সম্পূর্ণ বদলে গেল। সে তো সবসময় টাকা-পয়সার চিন্তা টেনশনেই পড়ে থাকত; আর এখন তার জীবন যেন ফুলের মতো হয়ে গেছে। এত ঋণ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে স্বাধীন মনে হত। মনের মধ্যে এমন এক অনাবিল শান্তি হচ্ছিল, যা বলে বুঝানো সম্ভব নয়।
কয়েক মাস পর থেকে সে নিজের জীবনকে সাজাতে শুরু করল। নিজের আয়কৃত টাকা কয়েক ভাগে ভাগ করল, আর তাতে এমন বরকত হল, যা পূর্বে কখনও হয়নি। সে হিসাব করে একটা আন্দাজ করল, কত দিনে ঋণের বোঝাটা মাথা থেকে নামাতে পারবে ইন শা আল্লাহ।
কিছুদিন পর আল্লাহ তা’লা তার সামনে আরও একটি পথ খুলে দিলেন। সে তার এক বন্ধুর সাথে প্রপাটি-ডিলিং এর কাজে অংশ নিতে শুরু করে। সে বন্ধুকে গ্রাহক/ক্রেতা এনে দিত, তাতে ন্যায্য প্রফিট পেত।
আলহামদুলিল্লাহ! সে যখনই কোনো গ্রাহকের কাছে যেত, গ্রাহক অবশ্যই তাকে অন্য গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছনোর রাস্তা দেখিয়ে দিত। এখানেও সে ঐ আমলের পুনরাবৃত্তি করত। অর্থাৎ প্রফিটের টাকা হাতে আসলে (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) অবশ্যই তা থেকে সাদাকাহ নির্ধারণ করত।
আল্লাহর কসম! ‘সাদাকাহ কী’ তা কেউ জানে না; ঐ ব্যক্তি ব্যতিত যে তা পরিক্ষা করেছে। সাদাকাহ কর এবং সবরের সাথে চল- আল্লাহর ফজলে খায়ের বরকত নাযিল হবে, যা নিজ চোখে দেখতে পাবে।
নোট:- যদি আপনি কোনো মুসলমানকে তার উপার্জনের একটি অংশ সাদাকাহ জন্য নির্ধারণ করতে বলেন এবং এর উপর আমল করে, আপনিও ঐ পরিমাণ ছাওয়াব পাবেন যে পরিমাণ সাদাকাহ কারী পেয়েছে। আর সাদাকাহ কারীর ছাওয়াবে কোনো কমতি হবে না।
আপনি/ আমি দুনিয়া থেকে চলে যাবো আর আপনার অবর্তমানে কেউ আপনার কারণে সাদাকাহ করতে থাকবে। আপনি ছাওয়াব পেতে থাকবেন।
যদি আপনি তালিবে ইলমও হন এবং আপনার আয় একেবারে সীমিত ও নির্ধরিতও হয়। তবুও কম-বেশি, যতদূর সম্ভব (সামান্য কিছু হলেও) সাদকাহ র জন্য নির্ধারণ করুন।
যদি সাদাকাহকারী জানতে ও বুঝতে পারে যে, তার সাদাকাহ গ্রহীতার হাতে যাওয়ার আগে আল্লাহর হাতে চলে যায়। তাহলে অবশ্যই সাদাকাহ গ্রহণকারীর তুলনায় সাদাকাহদানকারী অনেক গুণ বেশি আত্মিক প্রশান্তি লাভ করবে।
সাদাকাহ দানের উপকারিতা:-
সাদাকাহ দানকারী এবং যে তার কারণ হবে সেও এ সকল ফায়েদার অন্তর্ভুক্ত।
১. সাদাকাহ জান্নাতের দরজাসমূহের একটি।
২. সব আমলের মধ্যে উত্তম আমল।
৩. সাদাকাহ কেয়ামতের দিন ছাঁয়া হবে এবং সাদাকাহ আদায়কারীকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করবে।
৪. সাদাকাহ আল্লাহ তা‘লার ক্রোধকে ঠান্ডা করে এবং কবরের উত্তপ্ততায় শীতলতার উপকরণ হবে।
৫. মৃতব্যক্তির জন্য উত্তম বদলা এবং সবচে’ উপকারী বস্তু হল সদকা। আর ছদকার ছওয়াবকে আল্লাহ তা‘আলা ক্রমাগত বৃদ্ধি করতে থাকেন।
৬. সাদাকাহ পবিত্রতার আসবাব, আত্মশুদ্ধির মাধ্যম ও সৎকাজের প্রতি রাহবারি করে।
৭. সাদাকাহ কেয়ামতের দিন সাদাকাহ কারীর চেহারার আনন্দ ও প্রফুল্লতার কারণ হবে।
৮. সাদাকাহ কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় নিরাপত্তার কারণ হবে। অতীতের জন্য আফসোস করা থেকে বিরত রাখবে।
৯. সাদাকাহ গুনাহের ক্ষমা এবং খারাপ কাজের কাফফারা।
১০. সাদাকাহ উত্তম মৃত্যুর সুসংবাদ এবং ফেরেস্তাদের দোয়ার কারণ।
১১. সাদাকাহ দানকারী সর্বোত্তম বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত এবং সাদাকাহ এর ছাওয়াব প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি পায় যে কোনো না কোনোভাবে অংশিদার হয়।
১২. সাদাকাহ দানকারীর সঙ্গে সীমাহীন কল্যাণ ও বিরাট প্রতিদানের ওয়াদা রয়েছে।
১৩. খরচ করা মানুষকে মুত্তাকীদের কাতারে শামিল করে। সাদাকাহ কারীকে সৃষ্টিকূল মুহাব্বত করে।
১৪. সাদাকাহ দয়া-মায়া ও দানশীলতার আলামত।
১৫. সাদাকাহ দোয়া কবুল হতে এবং জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম।
১৬. সাদাকাহ বালা মসিবত দূর করে দুনিয়াতে সত্তরটা খারাপির দরজা বন্ধ করে।
১৭. সাদাকাহ হায়াত ও মাল বৃদ্ধির মাধ্যম। সফলতা এবং রিজিকের প্রশস্ততার মাধ্যম।
১৮. সাদাকাহ চিকিৎসা, ঔষধ ও সুস্থতা।
১৯. সাদাকাহ আগুনে পোড়া, পানিতে ডোবা ও অপহরণসহ (সকল) অপমৃত্যুর প্রতিবন্ধক।
২০. সাদাকাহ র প্রতিদান পাওয়া যায় চাই তা পশু-পাখিকেই দেওয়া হোক না কেন।
শেষকথা:- এই মুহূর্তে আপনার জন্য সর্বোত্তম সাদাকাহ হল, কথাগুলো সাদাকাহ এর নিয়তে প্রচার ও প্রসার করা।
©