12/05/2025
চৌকস হওয়ার জাপানি কৌশল
জাপান শুধু প্রযুক্তি বা সৌজন্যর দেশ নয় , তাদের সংস্কৃতিতে লুকিয়ে আছে এমন কিছু বুদ্ধিদীপ্ত অনুশীলন , যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ , সুন্দর ও সচেতন করতে পারে । বাড়াতে পারে মনোযোগ ও বুদ্ধিমত্তা । এখানে এমন পাঁচটি জাপানি কৌশল নিয়ে লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
শিরিতরি কৌশল:
একদিন বিকেলে রিমি আর ওর ভাই খেলার ছলে শুরু করল শব্দখেলা । রিমি বলল ‘ চাঁদ ’ । ওর ভাই বলল ‘ দুধ ’ । এরপর রিমি বলল “ ধনুক ’ । এইভাবেই চলতে লাগল শব্দের পেছন ধরে নতুন শব্দ বলার খেলা । এটাই জাপানি ‘ শিরিতরি ’ — একটি জনপ্রিয় শব্দখেলা । এতে প্রথম ব্যক্তি একটি শব্দ বলেন এবং পরের ব্যক্তি সেই শব্দের শেষ অক্ষর দিয়ে আরেকটি শব্দ বলেন । এভাবে ঘুরে ঘুরে খেলা চলতে থাকে । যে মনে রাখতে পারে না বা ভুল করে , সে বাদ । আর যে ঠিক ঠিক মনে রেখে শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি শব্দ বলতে পারে , সে- ই জয়ী হয় । সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘ অরণ্যের দিনরাত্রি ' সিনেমায় একটি দৃশ্য আছে । সেখানে চরিত্ররা বনে বেড়াতে গিয়ে ‘ শিরিতরি ’ খেলে । এই খেলায় মজা যেমন আছে , তেমনি আছে মনোযোগ আর স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর গুণ । পরিবারের সবাই মিলে সপ্তাহে এক দিন শিরিতরি খেলুন । সময় বেঁধে নিন যে কম সময়ে বেশি শব্দ বলবে , সে জিতবে । ছোটদের ভাষা শেখানোর জন্য এটি এক অসাধারণ কৌশল । কানজি ভিজ্যুয়ালাইজেশন তরুণ ছাত্র অর্ণব জাপানি ভাষা
শিখতে গিয়ে দেখল , অক্ষরগুলো মুখস্থ করতে কষ্ট হচ্ছে । একদিন শিক্ষক তাঁকে বললেন , ' তুমি প্রতিটি কানজি অক্ষরের ভেতর একটা ছবি কল্পনা করো । ” অর্ণব ‘ mori ’ শব্দটির মধ্যে তিনটি গাছ কল্পনা করল । বুঝল , এটা মানে ঘন বন । ‘ hazashi ' মানে দুটি গাছ । অর্থাৎ জঙ্গল । এভাবেই প্রতিটি প্রতীক ছবির রূপে রূপান্তর করে মনে রাখা হয় । এই কৌশলই হলো কানজি ভিজ্যুয়ালাইজেশন ।
মোজিতসুকি:
নতুন বছরে জাপানের একটি গ্রামে উৎসব হচ্ছে । সবাই মিলে তৈরি করছে মোচি - চালের কেক । একজন মুগুর দিয়ে চাল পেষণ করছে , আরেকজন সময়মতো হাত ঢুকিয়ে চালের ভেতর পানি ও ছন্দ দিচ্ছে । একটুও ভুল হলে হতে পারে আঘাত , তাই দুজনের ভেতর গড়ে ওঠে এক অদ্ভুত তালমেল । এটাই হলো মোজিতসুকি । শুধু রান্না নয় , এটি সম্মিলিত মনোযোগ ও ছন্দ শেখায় । দলগত
জাপানিরা ইতিহাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঁচিয়ে রাখেন গল্পের ছলে । বাড়ির বয়স্করা ছোটদের পূর্বপুরুষদের গল্প শোনান । তাঁদের ইতিহাস বই , রান্নার বই , নৃতত্ত্বের বই — এ রকম নানা কিছু গল্পের মতো করে বলা বা লেখা হয় ।
কাজের মধ্যে কীভাবে আস্থা ও সময়জ্ঞান তৈরি হয় , এটি তার এক জীবন্ত উদাহরণ ।
জাজেন ফোকাস:
রাফি পড়ার টেবিলে বসে আছে , কিন্তু মন একদমই বসছে না । তখন সে শিখল ‘ জাজেন ’ । প্রতিদিন মাত্র পাঁচ
মিনিট সে চুপচাপ চোখ আধা বন্ধ করে বসে থাকে , শুধু শ্বাস গোনে । প্রথমে অস্থির লাগলেও ধীরে ধীরে রাফি দেখল , মনোযোগ বাড়ছে , অস্থিরতা কমছে । এভাবেই জাজেন বা জেন ধ্যান আমাদের শেখায় নিজেকে সামলানো , মনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া । জাপানিরা ধ্যানকে দৈনন্দিন কাজের অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছে । এই কাজটা নামাজের মাধ্যমেও হয় । তাই নামাজ পড়া বা ইবাদত করা যেতে পারে । অমুসলিম হলে ধ্যান বা ধর্মীয় প্রার্থনা করা যেতে পারে । প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ( যেমন ভোরবেলা বা রাতে ঘুমানোর আগে ) ৫ মিনিট জাজেন করুন ।
কোজিজি:
আকাশ প্রতিদিন সকালে এক কাপ চা বানায় । তিনি সেই চা বানানোতেই তার যত্ন , মনোযোগ , ধৈর্য — সব ঢেলে দেয় । আর এই ছোট ছোট কাজের মধ্য দিয়ে সে খুঁজে পায় শান্তি ও আনন্দ । এটাই হলো কোজিজি ছোট জিনিস , ছোট কাজ , ছোট শব্দ ; যেগুলোর মাঝে লুকিয়ে থাকে বড় উপলব্ধি । জাপানিরা মনে করে , জীবন শুধু বড় সিদ্ধান্তে নয় , ছোট অভ্যাসে তৈরি হয় । জাপানিরা ইতিহাস প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঁচিয়ে রাখেন গল্পের ছলে । বাড়ির বয়স্করা ছোটদের পূর্বপুরুষদের গল্প শোনান । তাঁদের ইতিহাস বই , রান্নার বই , নৃতত্ত্বের বই — এ রকম নানা কিছু গল্পের মতো করে বলা বা লেখা হয় । ইতিহাসের নানা ঘটনা আশ্রয় করে বানিয়ে ফেলা হয় সিনেমাও । ফলে সেগুলো আর বিরক্তিকর লাগে না , বরং ‘ ইন্টারেস্টিং ’ লাগে । আবার মনে রাখাও সহজ হয় ।
-দৈনিক আজকের পত্রিকা
✍️এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
লেখক: ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি,
ব্যাংকার'স ভাইভা বোর্ড,
মুজাহিদ'স ভাইভা সাজেশন,
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার,
লেসন ফ্রম বুকস।