16/05/2025
কাদামাটি আর কাঠের ঘ্রাণ
পর্ব ১: মাটির ঘ্রাণ
চৌধুরীপাড়া—একটা ছোট্ট গ্রাম, যেটাকে অনেকেই বলে ‘মানচিত্রের শেষ প্রান্ত’। এখানে আকাশ যেন একটু বেশি নীল, আর বাতাসে মিশে থাকে ধানের ঘ্রাণ। বর্ষার শেষ দিনগুলোয় সন্ধ্যাটা হয়ে ওঠে কেমন যেন বিষণ্ন—না ভালোবাসা, না বেদনা, মাঝামাঝি কিছু।
এই গ্রামের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে একটা পুরনো আমগাছ। তার নিচে একটা কুড়েঘর। বাঁশের বেড়া, টিনের ছাউনি, আর উঠোনে ছড়িয়ে থাকা শুকনো পাতা। বাড়িটা যেন এই গ্রাম থেকে আলাদা, নিঃসঙ্গ। বাড়ির ভেতরে আছে একজন বিধবা মা, আর তাঁর একমাত্র মেয়ে—যার নাম কেউ জানে না, জানলেও ডাকে না।
সে মেয়েটি বড় অদ্ভুত। সারাদিন কথা না বলে থাকে, কিন্তু সন্ধ্যা নামতেই উঠোনে বসে গেয়ে ওঠে। গলায় যেন নদীর কলকল শব্দ। পাখিরাও নাকি তার গান শুনে থেমে যায়। কে জানে, মেয়েটির সুরে এমন কী থাকে, যা সন্ধ্যাকে করে তোলে রহস্যময়!
লোকজন তাকে ডাকে “গানের মেয়ে”। কেউ বলে পাগল, কেউ বলে বিষন্নতা তার সাথি। কিন্তু মেয়েটির মুখে কোনো প্রতিবাদ নেই, কেবল চোখে থাকে এক অনন্ত দৃষ্টি—যেন সে সবকিছু দেখতে পায়, কিন্তু কিছুই বলতে চায় না।
এই মেয়েটির গানই টানে একজন অচেনা যুবককে। সে আসে বাইরের কোনো শহর থেকে। ছেলেটি ধানের ব্যবসা করে, তবে যেন সে আরেকটা কাজে এই গ্রামে আসে—মেয়েটিকে দেখা, তার গান শোনা।
সে ছেলেটি কিছু বলে না, দূর থেকে দাঁড়িয়ে থাকে। হাত পকেটে, চোখে বিষণ্নতা, আর ঠোঁটে অল্প হাসি। গ্রামের ছেলেরা তাকে চিনলেও কিছু জিজ্ঞেস করে না। তারা জানে—প্রেম যে কার ঘরে এসে দাঁড়ায়, তার খবর কেউ জানে না।
ছেলেটি প্রতিদিন আসে, একটানা দশ দিন ধরে। মেয়েটিও জানে, সে আসে। কিন্তু তারা কেউ কারো চোখে চোখ রাখে না, কোনো কথা হয় না। শুধু সন্ধ্যার দিকে যখন হারিকেনের আলো পড়ে উঠোনে, তখন মেয়েটির সুর হাওয়ায় মিশে যায় আর ছেলেটি হেঁটে চলে যায় গাছপথ ধরে।
কেউ জানে না এ কি প্রেম, নাকি কেবলই সুরে ডুবে যাওয়া এক শহুরে জীবনের প্রশান্তি।
তবে গ্রামের বাতাস জানে, এখানে কিছু একটা জন্ম নিচ্ছে—নিঃশব্দে, ধীরে ধীরে।
[পর্ব ১ সমাপ্ত | আগামী পর্বে: ছেলেটির চোখের ভাষা, মেয়েটির নিরবতা…]
গল্পের নাম: কাদামাটি আর কাঠের ঘ্রাণ
পর্ব সংখ্যা: ৬
লেখক: Nayem’s Golpo Ghor (MD Nayem Mia)
#গ্রামীণগল্প #ভালোবাসা #মাটিরঘ্রাণ