01/08/2025
আজকের প্রসঙ্গ: অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাক কেন হয় এবং আমাদের করনীয় কি -
মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন( হার্ট অ্যাটাক)কি?
মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (MI), যা হার্ট অ্যাটাক নামেও পরিচিত, যখন মায়োকার্ডিয়ামের (হার্ট পেশী) একটি অংশে রক্ত সরবরাহ কমে যায় বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। একটি হার্ট অ্যাটাক নীরব হতে পারে (silent Myocardial Infarction) অথবা এটি মারাত্মক হতে পারে যার ফলে হেমোডাইনামিক অবনতি (অর্থাৎ ব্লাড প্রেসার মারাত্মক ভাবে কমে যায় অথবা ব্লাড প্রেসার রেকর্ড করা যায় না) হয়ে রোগীর আকস্মিক মৃত্যু হতে পারে।
রক্ত সরবরাহ না হলে হার্টে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয়। দীর্ঘায়িত অক্সিজেনের অভাবের ফলে হার্টের পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তারা মারা যেতে শুরু করে।
Premature coronary artery disease বা অকাল করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD) বলতে সাধারণত প্রত্যাশার চেয়ে কম বয়সে CAD-এর বিকাশকে বোঝায় । পুরুষের ক্ষেত্রে পঞ্চান্ন বছরের কম বয়স এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে পঁয়ষট্টি বছরের কম বয়সে হার্ট অ্যাটাক বুঝায় ।
হার্ট অ্যাটাক সাধারণত ৪৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সের লোকজনের সচরাচর দেখা দিলেও ইদানিং এশিয়ার দেশগুলোতে এক দশক পূর্বে অর্থাৎ ৩৫ বছরের মানুষজনের মধ্যে এর প্রবনতা ক্রমশ বাড়ছে ।
এটা অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ এর সাথে জড়িয়ে আছে চিকিৎসা ব্যয়, চিকিৎসার অপ্রতুলতা, শারীরিক অক্ষমতা সবকিছু মিলিয়ে একটি পরিবারের নীরবে ধ্বংস হওয়ার কাহিনী।
Indian Heart Association এর তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় উপমহাদেশের পুরুষদের সমস্ত হার্ট অ্যাটাকের ৫০% পঞ্চাশ বছরের কমবয়সী পুরুষের এবং ২৫% চল্লিশ বছরের কম বয়সে ঘটে।
আমরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০১৭ কিংবা ২০১৮ সালে ধনাঢ্য পরিবারের ১৪ বছরের স্থুল ছেলের বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা করেছিলাম ।
অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাক সচরাচর দেখা না গেলেও এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বিশেষ করে রোগী এবং চিকিৎসকের জন্য কারণ এখানে রোগের উপসর্গ ভিন্ন রকমের হয়ে থাকে এবং হার্ট অ্যাটাকের কারন অনেক সময় খুঁজে পাওয়া যায় না, সর্বোপরি অল্প বয়সের হার্ট অ্যাটাক এ বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ Factors জড়িত থাকে এবং (prog-NO-sis) রোগের সম্ভাব্য পরিণতি বা গতিপথ; আরোগ্যলাভ বা পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা পূর্ব থেকে অনুমান করা যায় না।
কোন কোন কারণে অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়তে পারে:
১. হ্নদরোগের পারিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার বাবা মা ভাই বোনদের হার্ট অ্যাটাকের ইতিহাস থাকে অথবা হার্ট অ্যাটাক হয়নি কিন্তু ইসকিমিক হার্ট ডিজিজ (IHD) এর চিকিৎসা করছেন।
২.ধূমপান : হার্ট অ্যাটাকের প্রধান ঝুঁকির কারণের মধ্যে অন্যতম কেননা ধূমপানের ফলে করোনারি ধমনীর (হার্টের রক্তনালীর) endothelium এর নিকোটিন রিসেপটর কে stimulate করে রক্তনালী ব্লক তৈরি করে।
৩.স্থুলতা : অতিরিক্ত ওজন বা স্থুলতা উচ্চরক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টরল এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর দিকে ধাবিত করে এবং এর সবকিছুই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।
৪.খারাপ খাদ্যাভ্যাস: ফাস্টফুড এবং জাঙ্ক ফুড ( food contains lot of fat, sugar & salt -potato chips, candy,soft drinks)
৫.শারীরিক পরিশ্রমের অভাব : আমাদের সকলের মধ্যেই হাঁটার প্রবনতা যেন হারিয়ে যেতে বসেছে আমরা ক্রমশ অলস হয়ে পড়েছি।
যে নদীর স্রোত আছে সেটা ছোট হলেও তার পানি পরিষ্কার, বড়ো নদী স্রোত নেই পানি অপরিষ্কার, কাজেই আমাদের রক্তনালী পরিস্কার করার উপায় একটাই জোরে জোরে হাঁটা মাঝে মাঝে দৌড়ানো।
৬.মানসিক চাপ: হ্নদরোগের একটা বড়ো কারণ যা অল্প বয়সীদের মধ্যে ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
৭.জেনেটিক প্রিডিসপজিশন(জেনেটিক প্রবনতা হলো কোন ব্যক্তির মধ্যে নির্দিষ্ট রোগের ঝুঁকি পরিবেশ গত কারনের চেয়ে জিনগত কারনে বেশি থাকা): জেনেটিক মিউটেশন হার্টের রক্তনালী এবং রক্ত জমাট বাঁধা সহ রক্তের cholesterol level কে প্রভাবিত করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে ।
৮.কোভিড -19: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে কোভিড সংক্রমণ এবং কোভিড vaccine পরবর্তীতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বয়স্ক ব্যক্তিদের পাশাপাশি অল্প বয়সী মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হচ্ছে।
৯.রক্তনালীর রোগ: রক্তনালীর সংকোচন (Coronary Spasm) এটা সাধারণত কোকেইন নামক মাদকদ্রব্য যারা সেবন করে তাদের ক্ষেত্রে হতে পারে, এছাড়াও মহিলাদের কোন কারন ছাড়াই coronay spasm হয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে , হার্ট অ্যাটাক না হলেও এ সমস্ত রোগীর মাঝে মাঝে বুক চেপে ধরে শ্বাসকষ্ট হয় আবার Angigram করে কোনো ব্লক পাওয়া যায় না, ( এটাকে variant angina অথবা prinzmetal angina অথবা angina inversa বলা হয়)
Coronary Vasculitis -হ্নদরোগের (হার্ট অ্যাটাকের)একটা অন্যতম প্রধান কারণ.can be caused by a variety of factors, including autoimmune diseases, infections, and drug reactions
করোনারি ধমনীর খিঁচুনি সাধারণত ধূমপানকারী বা উচ্চ কোলেস্টেরল বা উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যেও দেখা যায় । এটি কোনও কারণ ছাড়াই ঘটতে পারে, অথবা এটি নিম্নলিখিত কারণে হতে পারে:
অ্যালকোহল প্রত্যাহার
মানসিক চাপ
ঠান্ডার সংস্পর্শে আসা
উত্তেজক ওষুধ, যেমন অ্যাম্ফিটামিন এবং কোকেন সেবন
FMD (fibro muscular dysplasia) ফাইব্রোমাসকুলার ডিসপ্লাসিয়া ( এফএমডি ) হল রক্তনালীর একটি অ- অ্যাথেরোস্ক্লেরোটিক -non atherosclerotic, অ-প্রদাহজনিত -non inflammatory রোগ যা ধমনীর দেয়ালের মধ্যে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায় -এটাতে সাধারণত হার্টের রক্তনালী Dissection, Rupture, এবং Occlusion (ব্যবচ্ছেদ, ছিঁড়ে যাওয়া, বাধা) হয়ে বড়ো ধরনের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
১০. Hypercoagulable state: অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধার প্রবনতা : এটার পরীক্ষা অত্যন্ত ব্যয়বহুল,সব জায়গায় হয় না। Hyperhomocystinaemia, protein C, protein S deficiency & deficiency of anti thrombin iii.
GRACE ( Global Registry of Acute Coronary Events) study তে দেখা গেছে যে অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের প্রবনতার হার প্রায় সাত শতাংশ অর্থাৎ প্রতি একশ জন হার্ট অ্যাটাকের মানুষের মধ্যে সাতজন অল্প বয়সের।
অল্প বয়সের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষন:
এরা সাধারণত বুকে ব্যথা বা চাপ যা ঘাড়, চোয়াল বা হাতে ছড়িয়ে পড়ে
শ্বাস কষ্ট
বমি বমি ভাব
মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
অতিরিক্ত ক্লান্তি বোধ নিয়ে ডাক্তারের স্মরনাপন্ন হতে পারে
হার্ট অ্যাটাক অর্থাৎ হার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হ্ওয়া মানে আপনার শরীরের ইন্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনার চলাফেরা এক্কেবারে সীমিত করে ফেলতে হবে অর্থাৎ আপনি অকেজো হয়ে পরেছেন,তাই আসুন আমরা হার্ট অ্যাটাক কে প্রতিরোধ করি প্রতিহত করি, প্রতিরোধ করতে যদি ব্যর্থ হ্ই তাহলেও যেন এটাকে দূরে ঠেলে দিতে পারি অর্থাৎ যে হার্ট অ্যাটাক ৪৫ বছরে হ্ওয়ার কথা সেটা যেন আরও পঁচিশ বছর পরে হয় সেই চেষ্টা করতে পারি ।
করণীয় কি?
জীবন মান উন্নয়ন/ পরিবর্তন (Life style modification)- নির্দিষ্ট সময়ে ব্যয়াম, নিয়মিত হাঁটা, ধূমপান পরিহার, সময়মতো ঘুমানো, মানসিক চাপ পরিহার করার জন্য যোগ ব্যায়াম, ধ্যান,বা কাউন্সেলিং করানো
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা -হ্নদরোগের ঝুঁকি আছে এমন ব্যক্তিদের নিয়মিত হার্টের পরীক্ষা করা উচিৎ।
ব্লাড সুগার,ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখা সহ যাবতীয় বিষয়ে একজন দক্ষ অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
চিকিৎসা নিয়ে আপনি যেন গর্তে না পড়েন এভাবেই আপনি আপনার চিকিৎসা করাবেন।
প্রায়শই প্রতিটি রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যারা দীর্ঘ মেয়াদে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করছেন তাদের রোগ তো নিয়ন্ত্রণে থাকছেই না উপরন্তু নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে এমনটা যেন না হয়।
৩০-৪০ বছর বা তার চেয়েও কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বিশ্বব্যাপী দ্রুত বাড়ছে, তাই বয়স কম বলে নিশ্চিন্তে বসে থাকার অবকাশ নেই।
(Collected)