16/07/2025
গর্ভাবস্থায় বাবা ও মায়ের রক্তের Rh ফ্যাক্টরের প্রভাব
মূলত মা Rh নেগেটিভ (-) এবং বাবা Rh পজিটিভ (+) হলে শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। অন্য সব ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না।
আসুন, বিভিন্ন পরিস্থিতি ও তার প্রভাবগুলো দেখি:
১. মা Rh পজিটিভ (Rh+) হলে:
বাবার Rh ফ্যাক্টর যাই হোক (Rh+ বা Rh-): এই ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো সমস্যা হয় না, কারণ মায়ের শরীর Rh পজিটিভ প্রোটিন বহন করে। শিশুর রক্তের গ্রুপ Rh পজিটিভ হোক বা নেগেটিভ হোক, মায়ের শরীর শিশুর রক্তের বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিবডি তৈরি করবে না।
প্রভাব: শিশু সম্পূর্ণ সুস্থ থাকবে, Rh ফ্যাক্টর নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না।
২. মা Rh নেগেটিভ (Rh-) এবং বাবা Rh নেগেটিভ (Rh-) হলে:
শিশুর Rh ফ্যাক্টর: এই ক্ষেত্রে শিশু নিশ্চিতভাবে Rh নেগেটিভ হবে।
প্রভাব: কোনো সমস্যা নেই, কারণ মা এবং শিশুর Rh ফ্যাক্টর একই। মায়ের শরীর শিশুর রক্তের বিরুদ্ধে কোনো অ্যান্টিবডি তৈরি করবে না।
৩. মা Rh নেগেটিভ (Rh-) এবং বাবা Rh পজিটিভ (Rh+) হলে:
শিশুর Rh ফ্যাক্টর: এই দম্পতির ক্ষেত্রে শিশু Rh পজিটিভ (+) অথবা Rh নেগেটিভ (-) উভয়ই হতে পারে। যদি শিশু Rh পজিটিভ (+) হয়, তাহলেই জটিলতা দেখা দিতে পারে।
প্রভাব:
প্রথম গর্ভাবস্থা: সাধারণত, প্রথম Rh পজিটিভ শিশুর ক্ষেত্রে মায়ের তেমন কোনো সমস্যা হয় না, কারণ মায়ের শরীর অ্যান্টিবডি তৈরি করতে কিছুটা সময় নেয়। প্রসবের সময় বা গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের রক্তে শিশুর Rh পজিটিভ রক্ত কণিকা মিশে যায়, তখন মায়ের শরীর ওই Rh পজিটিভ প্রোটিনকে "শত্রু" মনে করে তার বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি (প্রতিরক্ষা প্রোটিন) তৈরি করা শুরু করে।
পরবর্তী গর্ভাবস্থা: যদি পরবর্তীতে আবার একটি Rh পজিটিভ শিশু গর্ভে আসে, তখন মায়ের শরীরে আগে থেকে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলো শিশুর রক্তে প্রবেশ করে তার লোহিত রক্তকণিকাকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে শিশুর গুরুতর সমস্যা হতে পারে, যাকে "হেমোলাইটিক ডিজিজ অফ নিউবর্ন (HDN)" বলা হয়।
শিশুর ঝুঁকি: গুরুতর রক্তাল্পতা (Anemia), জন্ডিস (Jaundice), লিভার বা প্লীহার সমস্যা, মস্তিষ্কের ক্ষতি, এমনকি গর্ভেই শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।
করণীয় (যদি মা Rh নেগেটিভ হন এবং বাবা Rh পজিটিভ হন):
Rh ফ্যাক্টর পরীক্ষা: গর্ভাবস্থার শুরুতেই বাবা ও মা উভয়ের রক্তের Rh ফ্যাক্টর পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক।
Anti-D ইনজেকশন (RhoGAM): যদি মা Rh নেগেটিভ হন এবং শিশু Rh পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে (বাবার Rh পজিটিভ হওয়ায়), তাহলে:
সাধারণত গর্ভাবস্থার ২৮ সপ্তাহে মাকে একটি Anti-D ইনজেকশন দেওয়া হয়।
শিশুর জন্মের পর যদি দেখা যায় শিশু Rh পজিটিভ, তাহলে ৭২ ঘন্টার মধ্যে মাকে আরেকটি Anti-D ইনজেকশন দেওয়া হয়।
এছাড়াও, গর্ভাবস্থায় কোনো রক্তপাত হলে, গর্ভপাত হলে, বা অ্যামনিওসেন্টেসিস (amniocentesis) এর মতো কোনো পরীক্ষা করা হলে, তখনো এই ইনজেকশন দেওয়া হয়।
লক্ষ্য: এই ইনজেকশনগুলো মায়ের শরীরকে Rh পজিটিভ রক্তের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করা থেকে বিরত রাখে, যা পরবর্তী গর্ভাবস্থায় শিশুকে সুরক্ষিত রাখে।
নিবিড় পর্যবেক্ষণ: যদি কোনো কারণে মায়ের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েই যায়, তাহলে পরবর্তী গর্ভাবস্থায় শিশুর অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বিশেষ চিকিৎসা (যেমন, গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুর রক্ত সঞ্চালন) দেওয়া হয়।
আধুনিক চিকিৎসার কল্যাণে, Rh ফ্যাক্টর অসামঞ্জস্যতার কারণে সৃষ্ট জটিলতা এখন খুবই বিরল। সঠিক সময়ে পরীক্ষা এবং চিকিৎসা নিলে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকেন। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।