04/09/2024
অবশেষে এম.এড পাশ করলাম। তবে তিন বছরের কোর্স ৭ বছরে। মাঝখানে অনেক ইতিহাস। ২০১৭ সালে আমরা বেশ কয়েকজন বাউবি’র ময়মনসিংহ অঞ্চলের অধীনে এই কোর্সে ভর্তি হই। তিন সেমিস্টারের দুই সেমিস্টার ভালোয় ভালোয় দিয়ে শেষ করে উত্তীর্ণ হলাম। এক একটি পরীক্ষা যেন একটি মহা-পরীক্ষা। প্রতিটি পরীক্ষার হলের পরিবেশ ছিল একেবারেই ভিন্ন রকম। যা এস.এসসি, এইচএসসি, স্নাতক, মাস্টার্স, বিএড পরীক্ষার প্রত্যেকটিকে ছাড়িয়ে গেছে। গাড় একটু এদিক ওদিক করলেই বাদল স্যারের বহিস্কারের হুমকি। এই নিয়ে পরীক্ষার হলের প্রত্যব্যক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের মাঝে প্রায়ই ঘটত উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়। কোন কোন ছাত্রকে (মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক) বাক বিতন্ডায় পরীক্ষা ফেলে রেখে চলে যেতেও দেখা গেছে। দ্বিতীয় সেমিস্টার উত্তীর্ণের পর যথাযথভাবে তৃতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা দিলাম। ফলাফলে ঘটল এক বিপত্তি। যথা সময়ে আল্লাহকে হাজির নাজির রেখে পরীক্ষা দেওয়ার পরও ফলাফল সীটে দেখ গেল এক বিষয়ের্ A.B. মানে অনুপস্থিত। পরীক্ষা দিয়ে হাজিরা সীটে স্বাক্ষর করার পরও অনুপস্থিত দেখানোর কারন জানতে চাইলে ময়মনসিংহ অঞ্চলের এক কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছুই বলতে পারব না। খোঁজ নিয়ে জানলাম এখানে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। তিনি এ বিষয়ে বোর্ডে যোগাযোগ করতে বললনে। হাজিরা সীটের কপিসহ আর এক পরীক্ষার্থী গোলাম মোস্তফাকে নিয়ে গেলাম বোর্ডে। তারও এমন জটিল কেস। সেখানে অনেক্ষণ অপেক্ষার পর এক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানালেন এ বিষয়ে কোন সমাধান দেওয়া যাবে না। তবে আপনি পুণ: নিরীক্ষন আবেদন করে দেখতে পারেন। হতাশ হয়ে ফিরে এসে আশায় বুক বেঁধে পুন: নিরীক্ষন আবেদন করলাম। ফলাফলে ভাগ্য আরও খারাপ। এবার দেখালো ফেল। এই বিষয়ে ৪র্থ বার পরীক্ষা দিতে গিয়ে ঘটল হৃদয় বিদারক ঘটনা, যা কোনদিনই ভুলার নয়। তখন কয়েকদিন ধরেই বাড়ীতে মা ভীষন অসুস্থ ছিলেন। পরীক্ষার দিন ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে বাড়ীতে আম্মাকে দেখে যাব এই ভেবে পূর্বধলা থেকে কিছু ফল কিনলাম। মোটর সাইকেলে রওনা হয়ে আনমনা হয়ে বাড়ীতে না গিয়ে শ্যামগঞ্জের কাছাকাছি চলে গেলাম। হঠাৎ মনে হলে উল্টো আবার বাড়ীর দিকে রওনা হলাম। আম্মাকে দেখে ওনার দোয়া নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলাম কিন্তু ভুলবসতঃ পরীক্ষার হলে টিএমএ নেওয়া হয়নি। পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি পূর্বধলায় চলে আসলাম এবং স্যারকে বললাম আগামীকাল টিএমএ জমা দিয়ে যাব। স্যার একদিন সময় দিলেন। এদিকে ওই দিনই সন্ধায় আম্মা আরও বেশি অসুস্থ হয়ে গেলে ওনাকে প্রথমে পূর্বধলা পরে ময়নমসিংহ ভর্তি করাই। এরই মধ্যে টিএমও গুলো সাথে করে নিয়েছিলাম এই ভেবে যে আম্মার শরীরে অবস্থা উন্নতি হলে এক ফাঁকে দিয়ে আসব। কিন্তু সারারাত ও পরদিন আসংখা জনক অবস্থায় থেকে আম্মা বিকেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাড়ীতে চলে এসে আম্মাকে দাফনের ৪/৫দিন পর ফলাফলের আশা বাদ দিয়ে স্যারের নাম্বার সংগ্রহ করে ফোনে বিস্তারিত জানালাম। সব শোনে স্যার আমাকে বললেন আপনি আগামীকালই টিএম জমা দিয়ে যান। বাকীটা আমি দেখব। স্যার কথা রেখেছেন। স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ। আল্লাহর কাছে শোকরিয়া, অনেক চরাই উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে ফলাফলে, জীবনের শেষ সনদটুকু সংগ্রহ করতে পারলাম। জানিনা এ সনদ জীবনে কোন কাজে লাগবে কিনা। তবে অনেক গঠনার সাক্ষী হয়ে রইল সনদটি।