27/08/2025
"বৈচিত্র্যের পথে, এককরণের নয়।"
সব পড়াশুনা এক কেন্দ্রীকরণের পক্ষে আমি নই। কারণ এর যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে, তা আমাদের কল্পনারও বাইরে। এতে হয়তো ব্যক্তিগত লাভ হবে, কিন্তু রাষ্ট্র বা জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে এর প্রভাব নেগেটিভ হবে।
শিক্ষা হওয়া উচিত স্বাধীন ও বৈচিত্র্যময়। কেউ এসএসসির পর এইচএসসি করবে, কেউ ডিপ্লোমা ইন কৃষি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেরিন, লাইভস্টক,ফিশারিজে পড়বে,কেউ মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্টে পড়বে কেউবা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে পড়বে—আবার কেউ হয়তো পড়াশোনায় আগ্রহীই হবে না। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। শিক্ষা একক কোনো পথে সীমাবদ্ধ হলে এই বৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে যাবে।
একটি সহজ উদাহরণ দিই। আপনি যদি ট্রেনে প্রথম শ্রেণীর টিকিট কেটে থাকেন, তবে কি দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীতে গিয়ে বসতে পারবেন? পারবেন না। যদিও দাঁড়িয়ে যাওয়া সম্ভব, কিন্তু সিট পাবেন না। আবার যদি বলেন—“আমার কাছে প্রথম শ্রেণীর টিকিট আছে, তাই আমি সব শ্রেণীতে ভ্রমণ করতে পারবো”—তাহলে কথাটি কতটা যৌক্তিক শোনায়? শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রেও বিষয়টি একেবারেই এমন।
এইচএসসি + বিএসসি প্রকৌশলীদের হাতে প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণীর চাকুরীর টিকিট রয়েছে। তারা প্রকৌশল পদে তো আবেদন করতে পারেনই প্লাস চাইলে অন্যান্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর চাকরির পদে আবেদন করে প্রবেশ করতে পারেন। কেবল একটি পদ—উপসহকারী প্রকৌশল এই পদে শুধু আবেদন করতে পারেন না—এটি শুধুমাত্র ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য সংরক্ষিত।
অন্যদিকে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা এই একটিমাত্র পদেই আবেদন করতে পারেন, এর বাইরে নয়। ফলে দেখা যায়, বিএসসি প্রকৌশলীদের সুযোগ অনেক বিস্তৃত, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সীমিত।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে—যারা প্রায় সব পদেই আবেদন করার যোগ্যতা রাখে, তারা কেন এই একটিমাত্র পদ নিয়ে দাবি তোলে? এটি প্রকৃতপক্ষে ন্যায্য দাবি নয়, বরং লোভ ও হিংসা। যদি তারা ছোটবেলা থেকে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করে, ডিপ্লোমা শেষ করে বিএসসি করতেন, তবে একাধারে টেকনিশিয়ান, উপসহকারী প্রকৌশলী ও সহকারী প্রকৌশলী—সব পদের যোগ্যতা অর্জন করতেন।
অতএব, এতো যোগ্যতা থাকার পরও যদি তারা উপসহকারী প্রকৌশলীর মতো পদে চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে, তবে সেটা জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনে নয়, বরং কেবল বিলাসিতা কিংবা একটি মর্যাদার ট্যাগ অর্জনের জন্য প্রকৌশল পড়া।
আমি বলতে চাই উপসহকারী পদ শুধু মাত্র দের জন্য,সে যে বিষয়ে ডিপ্লোমা করুক।সবার নিজস্ব স্বাধীনতা আছে।যার যে বিষয় ভালো লাগবে সে সেই বিষয়ে পড়াশুনা করবে। কারো তো এতে কোন বাধাধরা নেই। শিক্ষার প্রতিটি ধাপের নিজস্ব মর্যাদা আছে। এক ধাপ এড়িয়ে অন্য ধাপের অধিকার দাবি করা কখনোই ন্যায্য নয়।
শিক্ষা হোক উন্মুক্ত শিক্ষা হোক স্বাধীন।
-মুতাসিম বিল্লাহ শাফিন
সাবেক শিক্ষার্থী
রংপুর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট