22/09/2025
🔸 বিস্ময়ে শুরু হোক গল্পটা—
পাবনার বেড়ার এক কোয়ার্টারে ছোট্ট মেয়েটা সাইকেল চালিয়ে উড়ে বেড়াত। পাখির মতো মুক্ত মনে সে গান শেখা শুরু করেছিল, কিন্তু জীবনের সবচেয়ে বড় উড়ান তখনও বাকী ছিল। তাহসিন বিনতে আনিস — সবাইকে ডেকে ‘নোভা’ — আজ ৪০তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে তৃতীয় হয়েছেন। কিন্তু এ পথ সহজ ছিল না; সেটা জানলে ইনস্পায়ার হবেন আপনি ও আমি।
শৈশব: সাইকেল, গান আর ডাক্তারের বাড়ি
বাবা—ডাক্তার; মা—শিক্ষক। তবুও পরিবারের দিক থেকে মেয়েকে ডাক্তার বলার চাপ কখনো ছিল না। বাবা-মার বিশ্বাস ও সমর্থন ছিল নোভার সবচেয়ে বড় শক্তি। ক্লাস সিক্স পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোয়ার্টারে বড় হওয়া, এরপর ক্যাডেট কলেজ—এসব মিলিয়ে গড়ে উঠল এক আত্মবিশ্বাসী তরুণী।
ক্যাডেট কলেজ—“আমি” খুঁজে পাওয়া জায়গা
ক্যাডেট কলেজে ভর্তির পর নোভা নিজেকে নতুন করে গড়েছিলেন। বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা—সেখানে শুক্ষা মিলল। রোকেয়া হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক জীবন, রোকেয়া বিতর্ক অঙ্গনের সভাপতির দায়িত্ব—সব মিলিয়ে তৈরি হল সাহসী একজন নেত্রী।
বিসিএস যাত্রা: গুগল ছিল সহচর, স্ট্র্যাটেজি ছিল নিজস্ব
প্রিলিমিনারি ছিল সবচেয়ে কঠিন। কিন্তু নোভা হতাশ হয়নি—তিনি নিজেই তার স্ট্র্যাটেজি বানালেন। পিএসসির সিলেবাস আদ্যোপান্ত পড়ে বের করলেন কোন বিষয়গুলোতে বেশি কাজ দরকার, আর কোনগুলোতে সহজে ভাল করা যাবে। “গুগল” ছিল তার বড় সহচর—অনেক তথ্য, অজানা বিষয় সবই খুলে দেখেছেন অনলাইনে। প্রতিটি মানুষের পথ আলাদা—এটি তিনি মেনে নিয়ে চলেছেন, আর সেটাই ছিল তার শক্তি।
ভাইভা—নিজের পরিচয় দেখানোর মুহূর্ত
ভাইভায় মনে হয়েছিল, তারা মূলত আমার ব্যক্তিত্বটাই যাচাই করছেন। ছোটবেলা থেকে বিতর্ক ও উপস্থিত বক্তৃতার চর্চা ছিল এখানে কাজে লাগার মতো। ভাইভার দিনগুলো মিশ্র অনুভূতি নিয়ে কেটে গেছে—ভালও ছিল, কষ্টও ছিল—কিন্তু সবচেয়ে বড় জিনিস ছিল আত্মবিশ্বাস।
ইংরেজি দক্ষতা, লাইফ-স্কিল আর পরামর্শ
ইংরেজি শিখতেই সময় লাগে—নোভার কৌশলটা সরল: পড়া, দেখা, বলা। উপন্যাস, খবর, সিনেমা, আয়নায় কথা—সবকিছুই কাজে লাগে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহশিক্ষা কার্যক্রম—ডেবেট, বন্ধু-বন্ধন—এগুলোই ব্যক্তিত্ব গড়ার পরীক্ষিত উপায়।
তার প্রস্তাব: বিসিএসের পথে ধৈর্য্য আর প্ল্যান 'বি' রাখুন। “বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে”—এমন একচেটিয়া চাপ জীবন শেষ বলে ভাবাবেন না। প্ল্যান 'স' থাকলেই মন ইতস্তত হওয়া থেকে মুক্ত থাকে।
ভুবন-দৃষ্টি: এখন থেকে ভবিষ্যৎ
নোভা বললেন—প্রতিবছর নিজের একটি বেটার ভার্সান হতে চাই। সিভিল সার্ভিসে এ সুযোগ পেয়েছেন—এটাকে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন। সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা—দুইটাই জীবনের অংশ; দুটোই গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চান তিনি।
ফেসবুক পাঠকের জন্য শেষ কথা:
স্বপ্ন বড় হলে ভয় পাবেন না। পরিবারের বিশ্বাস, নিজের স্ট্র্যাটেজি আর নিয়মিত পরিশ্রম—এগুলো যখন একসঙ্গে থাকে, তখন সম্ভব অনবদ্যকিছু। নোভার গল্পটা তাই কেবল এক পরীক্ষার কাহিনি নয়—এটা সিদ্ধান্ত, ধৈর্য্য আর বিনয়ী বিশ্বাসের গল্প।