
28/09/2024
|| পৈশাচিক নজর ||
কলমে: সাফওয়ান
ছবি: সংগৃহীত
ছবিতে প্রথমেই নজর গেলো ফাঁকা অংশ দুটোর দিকে। ঠিক বললাম তাই না?
আমি একজন মেয়ে। সেই ছোটোবেলায় যখন সবে আমার জন্ম হলো, তখন আমার অপরিণত যোনি ঠিক করে দিলো আমার প্রথম পরিচয়। আমি মেয়ে। পাড়ার এক দাদু আমায় দেখতে এসে যোনির আসেপাশে স্পর্শ করে গেলো। অস্বস্তি একটা হলো কিন্তু ঠিক বুঝতে পারলাম না, কেঁদে উঠলাম। মা কোলে নেবার আগেই পাশ থেকে ওই লোক মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠলো, "কী লক্ষ্মীছাড়া মেয়ে বাবা! একটু গায়ে হাত দিতেই দেয় না।" সেদিন প্রতিবাদ করতে পারিনি কারণ আমি কথা বলতে পারতাম না। কিন্তু এখন বুঝি, কথা বলতে পারলেও আমি ছোটো বলে ওই নোংরা স্পর্শটাকে সবাই 'আদর' বলে এড়িয়ে যেত।
একটু বড় হলাম। আমার স্তন সুগঠিত হতে শুরু হলো। তখন থেকেই লক্ষ্য করি, স্কুলে যাওয়ার সময় বাসের কাকু বা ট্রেনে ওঠার পর অপরিচিত কিছু চোখ ঘুরছে আমার বুককে কেন্দ্র করে। কোনো সময় মায়ের পিছনে লুকোনো আর কোনো সময় সামনে ব্যাগ নিয়ে নিজের শরীরের ভাঁজগুলোকে যথাসম্ভব আড়াল করার চেষ্টা করেই বড় হয়ে গেলাম। জন্ম হলো একটা সুপ্ত অভিযোগের,"কেন আমি ছেলে হলাম না!"
শুধু দুটো মাংসপিন্ড আর যোনি; একটি নারী ও পুরুষের মধ্যে বাহ্যিক বিভেদ বলতে শুধু ওইটুকুই। প্রথমটি আপনাদের সবার বেঁচে থাকার রসদ যোগায় আর দ্বিতীয়টা আপনাদের জন্মানোর পথ। আবার, এই সমাজ ঠিক করে দিয়েছে মেয়েদের সম্মান- লজ্জার মাপকাঠিও, এই দুটো জিনিস ঘিরেই। অথচ, এত ধর্ষণ, মেয়েদের নিয়ে এত পৈশাচিক খেলা— সেসবও পুরোটাই শুধু এই অতি স্বাভাবিক দুটো জিনিস নিয়েই। শুধুমাত্র তাদের কাছে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা আছে বলে, আজকের সমাজে দাঁড়িয়ে একটা মেয়ে কোথাও নিরাপদ নেই। সৃষ্টিকর্তা নারী দেহে ক্ষমতা দিয়েছে জীবন তৈরি করার আর কিছু পুরুষ-পিশাচ উত্তেজনা দিয়ে ভস্ম করে দিতে চাইছে তাদের আপন জন্মের উৎস। কী চায় ওরা? নারী দেহকে শুধুই ওদের পৈশাচিক কামের ভোগ্য বানাতে? স্তন আর যোনি এই দুটোকে ওদের হাতের মুঠোয় রেখে, যখন ইচ্ছা তখন ব্যবহার করতে? নিয়ে নিক তবে শরীরের ওই দুটো জিনিস। কিন্তু নিরাপদে বেঁচে থাকতে দিক ওই নারীকে। তার না থাকুক প্রাণের ভয়, আর না থাকুক সম্মান হারানোর যন্ত্রণা।