18/03/2025
অনিক আহমেদ।
সে সিলেটের এক ভালো ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করছে। টিউশন পড়িয়ে কোনরকমে দিন অতিবাহিত করা এক মধ্য-বিত্ত পরিবারের সন্তান। ইদানিং কালে খুব বেশী পরিমাণে ক্যারিয়ার টেনশন আর কোন এক এসোশিয়েশনের কাজের চাপে টিউশনে গরহাজির ছিল বলে কয়েকটি টিউশন হাত ফসকে চলে যাওয়ায় সে পড়েছে বর্তমানে প্রচুর বিপাকে..! উচ্চ ইউনিভার্সিটির উচ্চ সেমিস্টার ফি এবং ড্রপ কোর্স রেজিঃ এর ১০০০ করে ফাইন দিয়ে হাতে চলার মতো টাকা পয়সা তার একদমই নাই। তারা থাকে একসাথে ৭ জন। এই রমজানের বন্ধে ২ জন অলরেডী চলে গেছে বাড়ি। বাকী পাচজন আছে তাদের মেসে। মেসের বাজার গতকাল শেষ হয়ে গিয়েছিল। আজকে বাজার না করলে কারোরই রাতে সেহেরী হবে না। এদিকে আবার কারো পকেটেও পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা নেই যে কিছু বাজার করে নিয়ে আসবে। এমন দোদুল্যমান অবস্থা দেখে অনিক মোটামুটি অভিমান করেই বের হয়ে গিয়েছে বাসা থেকে ইফতার এর আগেই।
হাটতে হাটতে মসজিদের সামনে এলো৷ দেখলো যে উক্ত মসজিদে ইফতারের একটা ছোট-খাটো আয়োজন চলছে, এক মুরুব্বিগোছের লোক তাকে ইশারায় ডাক দিয়ে শামিল হতে বলল। প্রথমে ইতস্থত করলেও পরিশেষে সে শামিল হয়। একসাথে ইফতার করে নামায টা সেরে সে বের হলো টিউশনের উদ্দেশ্যে। টিউশনে যাইতে যাইতে তার মনে পড়লো একটা টিউশন আজ ইফতারের দাওয়াত দিয়েছিল। সচরাচর এমন দাওয়াতে সে অভ্যস্থ নয়। টিউশনের বাসাতে হালকা নাস্তা ভালোই, কিন্তু কোন বড় আয়োজন তার অপছন্দের, তাই সে আন্টিকে বলেছিল যে আন্টি আমরা তো বন্ধু-বান্ধব ৩-৪ জন মিলে ইফতার করি, তাই আসলে আসা হয় না। যাওয়ার আগ দিয়ে ইনশাল্লাহ আপনাদের সাথে একদিন ইফতার করবো। এভাবে বলে সে ফোন রেখে দিয়েছিল। ইদানিং রোজা রেখে টিউশন পড়ানো তার জন্যে খুব প্যারা দায়ক হয়ে যায়, তাই সে ইফতারের পরেই টিউশন করায়! মাগরিবের নামাযের পড়ে বের হয়, একটা টিউশন করিয়ে এশার নামায পড়ে তারাবী স্কিপ দিয়ে ২ টা টিউশন করিয়ে এসে রুমে এসে তারাবীর নামায পড়ে, তার জন্যে ব্যাপার টা একটু নতুন এবং কষ্টকর, কারণ এর আগে সে ছিল সাপ্তাহিক মুসুল্লি। কিন্তু এই রমজানে সে নামায টা নিয়মিত রাখার ট্রাই করছে, এতে অনিকের মতে দুইটা লাভ, এক সে একটা রুটিনের মধ্যে নিজের লাইফ কে আনতে পারবে, এবং দুই স্রষ্টার সন্তুষ্টির আশে ফরয ইবাদাত আদায় হবে। তাই রমজানের শুরু থেকেই সে এটি করছে।
যাক, আজকেও নিয়ম-মাফিক ২ টা টিউশন করিয়ে ৩য় নাম্বার টিউশনে সে ঢুকলো, আন্টি এসে কি খাবেন জিজ্ঞেস করায় সাধারণত যেটা তার মুখ থেকে বের হয় সেটা হলো, "আন্টি, এক কাপ চা"। আজ ও তার ব্যতিক্রম হলো না!! এক কাপ চা খাইতে খাইতে সে স্টুডেন্ট পড়ালো, টিউশন শেষ করিয়ে বের হওয়ার আগে আন্টি এসে তার হাতে একটি হটপটের বক্স ধরিয়ে দিয়ে বললো আজকে আপনি সেহরি করে নিয়েন। তরকারী গুলা গরম থাকবে, শুধু ভাত রান্না করে খেয়ে নিলেই হবে। হুট করে এমন কথা শুনে সে কি করবে বুঝে উঠতে পারলো না। খাবার টা নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসলো!!
মেসে এসে দেখে খালা আসছে, কিন্তু রান্না বান্না করার মতো কিছুই নাই, শিম আর আলু ছিল, ওটায় বাজি করতেছে। বাকী মেস-মেম্বারদের হালচাল জিজ্ঞেস করে দেখলো একজন অন্য কোন বন্ধুর কাছে সেটিং দিয়ে সেহরীর ডিল করে বাসা থেকে চলে গেছে। বাকী ৩ জন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সে তার হট-পট টা খুললো। খুলে দেখলো আন্টি ঠিক ৪ জনের হিসাব করেই কয়েকটা আইটেম এর তরকারী দিয়েছে। এত ভালো মানের খাবার দেখে সবাই খুশি। খালাও বলল যে তাইলে সে শুধু ভাত টা চুলায় তুলে চলে যাবে। মনে মনে অনিক ভাবলো প্রতিটা তরকারীর চারটা করে পিছ ই কেন দিলো আন্টি? তারপর মনে পড়লো আন্টিকে বলা কালকের সে কথা, " আন্টি, আমরা তো ৩-৪ জন বন্ধু-বান্ধব মিলে একসাথে ইফতার করি! তাই আসলে আসা হয় না"
মনে মনে আন্টিকে হাজারখানেক ধন্যবাদ দিলো সে। আর মনে মনে বললো "এমন মানুষ গুলা দুনিয়ায় আছে দেখেই কিয়ামত এখনো হচ্ছে না!"