https://www.facebook.com/196955920174622/

Arifa Khatun

Home
Bangladesh
Savar
Arifa Khatun

Assalamualaikum 💚💚
(9)

22/08/2025

#দগ্ধ🍁🍁
লেখিকা
পর্ব-৩১

[বিনা অনুমতিতে কপি করা নিষিদ্ধ ]

রেলিং ঘেঁষে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে রয়েছে ইন্দ্র। বুকের ভেতর জমে থাকা কান্না নরম অন্ধকারে নিঃশব্দে গলে যাচ্ছে। কোনোমতেই মায়ের কথাগুলো ভুলতে পারছে না।হঠাৎই মাথার চুলে এক আলতো এবং সযত্ন স্পর্শ অনুভব করল। ইন্দ্র চমকে উঠে মুখ তোলে, চোখের কোণ এখনো সিক্ত।বাগানের সাদা আলোতে বোঝা যাচ্ছে একজন পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে।বয়সে হবে ২৯/৩০, লম্বা ৬ ফুট এর কাছাকাছি। চুল কালচে-বাদামী, হালকা ঢেউ খেলানো, বাতাসে ছন্দের তালে উড়ছে।চোখদুটো ঘন বাদামী তাতে যেন সোনালি আঁচ ছড়ানো। গালের হালকা দাড়ি, নাকটা ধারালো আর ঠোঁটে অনুচ্চ একটা রেখা, যা হাসে না, তবে কঠোরও নয়।

ইন্দ্রর কান্না থেমে গেছে। সে শুধু তাকিয়ে থাকে সামনে থাকা অচেনা ব্যক্তিটির দিকে।

-"মিস রূপছায়া, এতো রাতে এখানে যে কান্নাকাটি করে ছাদ ভাসাচ্ছেন যদি কোনো ভুতপ্রেত এসে উঠিয়ে নিয়ে যায় তখন কি করবেন?"

ইন্দ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ব্যক্তিটিকে চেনার কিন্তু ব্যর্থ হয়।

-"আপনি কে? আর এখানেই বা কি করছেন?"

-"কেনো আসা বুঝি বারণ?"

-"সেটা না কিন্তু আপনাকে তো... "

-"আহিয়ান তালুকদার"

-"আপনিই আশিয়ানা ফুফুর ছেলে?"

-"জ্বী মিস।তো মিস এখানে একা কান্না করার রিজনটা কি জানতে পারি?"

-"না"

ইন্দ্রর জবাব শুনে আহিয়ান অবাক হলেও হেসে ফেলে।
ইন্দ্রর দিকে সামান্য ঝুঁকে ফুঁ দিয়ে চোখের উপর পরা চুলগুলো সরিয়ে দেয়।হঠাৎ এমন কাজে ইন্দ্র চোখ বুঝে নেয়।

-"You know what you're very cute"

কান্নাকাটির ফলে নাক এবং গালের দু'পাশ লাল হয়ে গেছে। আহিয়ান পলকহীনভাবে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ইন্দ্র চোখ খুলে তাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে খানিকটা বিব্রতবোধ করে।দু'কদম পিছয়ে আসলে আহিয়ান হাতের কব্জি ধরে পুনরায় তার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

-"আমি যতক্ষণ না চাচ্ছি ততক্ষণ অব্দি আমার সামনে থেকে সরার অনুমতি নেই তোমার।"

ইন্দ্র ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।চেনা নাই জানা নাই এসেই অধিকার খাটাতে শুরু করে দিয়েছে।ইন্দ্র নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল।

-"আমার কারোর অনুমতির প্রয়োজন হয় না। আমার জন্য শুধু আমার কথাই খাটে।সুতরাং নেক্সট টাইম থেকে এইরকম বিহেভিয়ার করা থেকে সাবধানে থাকবেন।"

-"যদি না থাকি তো? খুন করবে?তোর এক কথায় আমি রাখব হাজার বাজি, তোর ইশারায় আমি মরে যেতেও রাজি। "

আহিয়ান এর গানের সুরে বেশ বিরক্ত হলো সে।একেতো আম্মির কথা শুনে মাথা আউলিয়ে গেছে তার উপর এই আজগুবি কথাবার্তা।

-"আমি খুন হওয়ার আগেই কি তুমি আমার উপর খুন হয়ে গেলে? চাইলে কিন্তু বাঁচাতে পারি।"

চোখ টিপ দিয়ে বলল আহিয়ান।ইন্দ্র ভ্রু কুচকে তার দিকে তাকিয়ে বিনাবাক্যে নিচে হনহনিয়ে নিচে নেমে আসে।আহিয়ান এবার তাকে আটকায় না।পরপর তিন রূপেই সে ঘায়েল।

-"রূপছায়া; আলোছায়ার খেলায় মোহিত করা এক রূপ।এক নিমেষেই এই আহিয়ান তালুকদারকে ঘায়েল করে দিলে।I will be the one to win you, Rupchhaya!"

-"কাকে জিতে নিবে আহিয়ান?"

পিছে তাকিয়ে দেখে আরনিয়াত পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পিছে তভলীন হাতে আইসক্রিম এর বক্স নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

-"হ্যালো ভাই, অনেকদিন পর দেখা।আইসক্রিম খাবা?"

-"নাহ, তুমিই খাও।"

-"আমার প্রশ্নের জবাব তো দিলে না"

-"Actually এই জায়গাটা অনেক সুন্দর so I meant adapting to the place."

-"That's good.Welcome to BD."

-"Thanks.এতোক্ষণ কোথায় ছিলে? আমি এসে দেখি পুরো বাড়ি ফাঁকা।"

-"একটু ঝামেলা বেঁধে গেছিল সেটাই ঠিক করতে বিজি ছিলাম। একটু আগেই ফিরলাম। "

-"ওহ,তুমি কি বিডি একবারের জন্য চলে এসেছো? রাশিয়া ফিরবে না আর?"

-"ভাই ১৫ বছর তো রাশিয়াতেই ছিল বাকি সময়টা না হয় বিডিতেই থাক।আর আমিও হাপিয়ে গেছি রাশিয়ান দেখতে দেখতে, এখন বাঙালী দেখি।"

তভলীন কথাটা বলে আইসক্রিম খাওয়াতে মনোযোগ দিলো।

-"তাও ১৫ বছর আর আমি তো ২০টা বছর সিডনিতে কাটিয়েছি।সবই আপনার বদৌলতে আরনিয়াত সাহেব।"

আহিয়ান এর কথায় আরনিয়াত আর আহিয়ান দুজনেই হেসে ফেলল। তাদের হাসি দেখে চামচ মুখে নিয়ে তভলীন ক্যাবলাকান্তের মতো দুজনের মুখের দিকে তাকাচ্ছে।মূলত সে নিজেও জানে না আহিয়ান কেনো এতো বছর বাড়ি থেকে বিদেশে ছিল।সে অনেক ছোটো থাকতেই আহিয়ান সিডনিতে চলে গেছিল তাই খেয়ালও নাই;কয়েকবার সিডনি গেছে সেকারণেই তার সাথে পরিচয় নইলে আজ অপরিচিতর মতোই থাকত। এখন আরনিয়াত এর কথা বলে তাকে আরও কনফিউজড করে দিলো দুজনে।তভলীনকে পাত্তা না দিয়ে দুজনে ঘাড়ে হাত দিয়ে গল্প করতে করতে নিচে চলে গেলো।

-"ঘাড়ে শিরশিরানি অনুভব করলে ভুলেও পিছে তাকাবা না তভলীন তাহলে ধড় ফেলে দেহ নিয়ে চলে যাবে কিন্তু। "

যেতে যেতে আহিয়ান তভলীনকে বলে গেলো।তার কথায় তভলীন আশেপাশে তাকিয়ে দুজনের পিছে ছুটতে শুরু করল।

দিয়ান দক্ষিণমুখো বারান্দার ঝুলন্ত চেয়ারে বসে আছে। চারপাশে শিমুল কাঠের টেবিল, সাদা অর্কিডে সাজানো ফুলদানির একপাশে রাখা কফির কাপ তবু তার চোখ আটকে আছে দূরের ফাঁকা আকাশে। যেন কোনো একটা পুরোনো দুপুরে সে ফিরে গেছে।

আজও মনে আছে তার বয়স তখন এগারো। এক বাড়ি গিয়েছিল সে। লোকজন, গল্পগুজব, দাওয়াতের ভিড়ে হঠাৎ একটা ছোট্ট মেয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। হয়তো পাঁচ বছর বয়স হবে তার। মুখে একরাশ আলো, হাতে একটা ছোট্ট মিনি পেঙ্গুইন পুতুল। মেয়েটা চুপ করে সেই খেলনাটা দিয়ানের হাতে দিয়ে বলেছিল "ভাইল্লা এই পেঙ্গুয়ো তা দরো।আমি আততি" বলে এক ঝটকায় আবার মিলিয়ে গিয়েছিল সেই ভিড়ের ভেতরে।

সেই মুহূর্তটার নাম নেই, কোনো ব্যাখ্যা নেই আছে শুধু একটা নাম "ব্রাউনি"ডার্ক খয়েরি চুলের বাহারে আনমনেই এ নামটি দিয়েছিলো সে।সেদিন কেনো হৃদয়ে একটা চাপা ব্যাথা জেগে উঠেছিল আজও পায় নি তার জবাব। কিন্তু আশ্চর্য, এত বড় হয়েও সেই মুহূর্তটা আজও ওই পেঙ্গুইনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।ওই একটা সুর আজও কানে ভাসে"পেঙ্গুয়ো তা দরো"।আজ অনেক বড় হয়ে গেছে সাথে অন্য কারোর মালিকানায় বন্দি। চাইলেও নিজের সাথে জড়াতে পারবে না সে।এইসব ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

---------

রাতের নিস্তব্ধতা ছিঁড়ে এক গ্রামের নিস্তব্ধ অলিগলিতে ছুটে চলেছে এক মানুষ,হাওয়ার মতো, নিঃশব্দ, আতঙ্কগ্রস্ত। তার পেছনে ধাওয়া করছে কালো পোশাকে আবৃত কয়েকজন, ঠিক যেন অন্ধকারের ছায়া।

চেনা গলি, তবুও এই মুহূর্তে প্রতিটি বাঁকই ভয়। ডানে-বাঁয়ে ঠাসা মাটির ঘর, সে জানে না সে কোথায় লুকোবে,কোথায় পালাবে। গ্রামের ঘরগুলো ঘুমে অচেতন, কারো দরজায় কড়া নাড়ার সময় বা সাহস—দুটোর একটাও নেই তার হাতে।

পেছনের পায়ের শব্দ স্পষ্ট। দিশেহারা হয়ে বাঁক ঘুরে একটা ভাঙা গ্যারেজে ঢুকে পড়ে সে। একটা মরিচা ধরা টিনের দরজা ঠেলে ভিতরে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ে, বুকের উপর হাত চেপে নিঃশ্বাস আটকে রাখে।

বাইরে তখনো খোঁজ চলছে। পায়ের আওয়াজ, চাপা কথাবার্তা। টর্চ মেরে দেখে পাশের গলিতে। কিন্তু গ্যারেজের ভেতরটা অন্ধকারের মতোই নিশ্চুপ।অবশেষে তারা সরে যায়। অলিগলি আবার নীরব।

কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর লোকটা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায়। গ্যারেজের ফাঁক দিয়ে বাইরে উঁকি মেরে দেখে,সব ফাঁকা। এরপর সে পা টিপে টিপে এগোয় আরেকটি অন্ধকার গলির দিকে।

সেই গলির শেষ মাথায় একটা ছোট, নড়বড়ে কাঠের ঘর। দরজাটা এমনিতেই আধখোলা। ঢুকে পড়ে ঘরের ভিতর। দেয়ালে সেঁটে রয়েছে অন্ধকার।

এক কোণায় কাঠের পুরনো খাটে শুয়ে আছেন এক বয়স্ক নারী চাদরে ঢাকা দেহটা স্থির, মাঝেমধ্যে ভারী, অস্ফুট নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তার পাশে মেঝেতে চটের বিছানায় ঘুমিয়ে আছে এক তরুণী, মুখে ক্লান্তির ছায়া ঘুমন্ত মুখেও যেন দিনের যত জেগে থাকা কাজের চিন্তা জমে আছে।

লোকটা নিঃশব্দে এগিয়ে যায় ঘরের এক কোণে থাকা এক জরাজীর্ণ টেবিলের দিকে। অর্ধভাঙা, পোকায় খাওয়া কাঠের গায়ে কালের ছাপ স্পষ্ট। ড্রয়ারটা সাবধানে টেনে খোলে। ভেতর থেকে বের করে কাগজে মোড়ানো কিছু একটা। মোড়কটা খুলতেই দেখা যায় ধবধবে সাদা এক চিমটি পাউডার।

সে পাউডারটা নাকের কাছে তুলে আনে, এক গভীর নিঃশ্বাসে গন্ধটা টেনে নেয় নিজের ভিতরে। চোখ বুজে থাকে কয়েক মূহুর্ত। সেই গন্ধ যেন তাকে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে হয়তো মুক্তি আছে, হয়তো ভাঙাচোরা সুখ।

পাশের খাটে নিদ্রা অটুট, কারো ঘুমে ব্যাঘাত হয়নি।
ঘরের ভেতর নেমে আসে গা ছমছমে এক স্তব্ধতা, আর সেই স্তব্ধতার ভেতর পড়ে থাকে এক পুরুষ ভয়, ক্লান্তি আর অপূর্ণতার ভার নিয়ে।

আজ ধরা পরলে প্রাণ যেত। তার কিছু হয়ে গেলে অসুস্থ মা আর ছোটো বোনের দেখাশোনা কে করত।গ্রামের পরিবেশ ভালো না। মায়ের চেয়ে বোনের ক্ষতি বেশি হয়ে যেত।টেবিলের কাছে বসেই ঘুমন্ত মা আর বোনের দিকে তাকায়।সে আছেই বলেই রাতের ঘুমটুকু অন্তত পায় বোনটা। কার ভরসায় রেখে যাবে সে দুজনকে।যা করেছে তার জন্য সে নিজে দায়ী, তার দায়ভার তার বোন কেনো বহন করবে।বাঁচতে হবে তাকে, যেকোনো উপায়ে বাঁচতে হবে।বোনের সুরক্ষার জন্য, মায়ের সুস্থতার জন্য তাকে টিকে থাকতে হবে।
এসব ভাবতে ভাবতে টেবিলের সাথেই হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে যায়।

একে একে সকলে ডাইনিং হলে জড়ো হয়।কান্নাকাটির ফলে ইন্দ্রর চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে রয়েছে। সকলে অদ্ভুত ভঙ্গিতে তার দিকে চেয়ে রয়েছে।নওয়াজ দেওয়ান এর আর বুঝতে বাকি নেই মেয়ের কি হয়েছে।স্ত্রীর দিকে রাগী চোখে তাকায়, ইনায়া দেওয়ানও বুঝে রাগের মাথায় অতিরিক্ত বলে ফেলেছে সে যেটা কোনো মায়েরই বলা বা করা উচিত না।নওয়াজ দেওয়ান ইন্দ্রকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞাসা করে ঠিক আছে কিনা ইন্দ্র হ্যাঁ বলে।সচারাচর সে নওয়াজ দেওয়ান এর পাশেই বসে তবে আজ আফাজ খান বসেছ আর ইনায়া দেওয়ান এর পাশে ফ্লেবিয়া।ফারাহ খান বা ফরিয খানকে দেখা যাচ্ছে না। ফ্লেবিয়ার পাশে আরশিয়া।এক সাইডে সকল তালুকদার বসেছে।ইন্দ্র মাঝে একটা চেয়ারে বসল।দুই পাশে দুই চেয়ার করে ফাঁকা রেখে।ফরিযদের না পেয়ে ইন্দ্র জিজ্ঞেস করে বসল;

-"ফরিয আর আন্টি কোথায়? উনাদের তো দেখছি না।"

-"ওরা এখনো আসে নি আম্মু। আমি ফ্লেবিয়াকে সাথে করে নিয়ে এসেছি।একটু পরই চলে আসবে ওরা।একা হাতে দুজনকে গোছগাছ করতে হচ্ছে তো সে কারণে একটু লেট হচ্ছে।"

আফাজ খান কিঞ্চিৎ হাসি দিয়ে উত্তর দিল। পরক্ষণে নওয়াজ দেওয়ান এর সাথে কথায় ব্যস্ত হয়ে গেলো।অপর পাশে কারোর মুখেই কোনো কথা নেই।সবাই চুপচাপ বসে রয়েছে।ইন্দ্র বেশ অবাক হলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল সকলে এসেছে তবুও খাওয়া শুরু করছে না কেনো ভেবে পাচ্ছে না।ইন্দ্রর ঘাড় ঘুরানো দেখে নীলজা তালুকদার বলে উঠলেন;

-"এ বাড়িতে আরও মানুষ থাকে। তারা এ বাড়িরই সদস্য।সামরিক সময়ের জন্য হয়ত ছিল না কিন্তু তাই বলে সদস্য থেকে নিশ্চয় বাদ পরবে না। "

ইন্দ্র অপরাধীর ন্যায় তাকায়।ফুপি টেবিলের উপর দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তার দিকে কঠোর চোখে তাকিয়ে রয়েছে। সে মাথা নিচু করে বসে থাকে।উপস্থিত কেউ কিছুই বলে না। নওয়াজ দেওয়ান শান্ত চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়।ইনায়া দেওয়ান চুপচাপ নিজের চেয়ারে বসে রয়েছেন।

কয়েকজন এর কথার আওয়াজ শুনে পিছে ফিরে দেখে আরনিয়াত, তভলীন আর আহিয়ান কথা বলছে আর হাসছে।আহিয়ান ইন্দ্রকে দেখে একটা মুচকি হাসি উপহার দেয়।তার দেখাদেখি আরনিয়াতও ইন্দ্রর দিকে তাকায়।ইন্দ্রকে দেখে বুকের মধ্যে কেঁপে উঠে।স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে অনেক কান্না করেছে।মুখের উপর কালো মেঘের ছায়া ছেয়ে রয়েছে। তার চোখ যায় সামনে বসা নওয়াজ দেওয়ান এর দিকে।অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়।তভলীন তার ঘাড়ে হাত রেখে শান্ত হতে বলে।দু'ভাই এর কথার মাঝে আহিয়ান গিয়ে ইন্দ্রর পাশের চেয়ারে বসে পরে।

-"আহিয়ান, ওখানে কেনো বাবা,মায়ের পাশে আসো।"

-"মম,অসুবিধে কোথায়।বসলেই হলো এক জায়গায়। তাছাড়া আমার তো রূপ.. I mean ওর সাথে পরিচয়ও হয় নি।এ সুবাদে পরিচয় হয়ে যাবে।"

-"কিন্তু আহিয়ান..."

-"থাক না আশিয়ানা। তোমার চোখের সামনেই তো আছে। উধাও তো আর হয়ে যায় নি।"

এসফার তালুকদার বিরক্তির সুরে বললেন।স্বামীর কথায় মুখটা কালো করে বসে রইলেন আশিয়ানা তালুকদার। ইন্দ্রর পাশে আহিয়ানকে দেখে আরনিয়াতও ইন্দ্রর অপর পাশে বসে পরল।এবার নীলজা তালুকদার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন।আভিশান তালুকদার তাকেও থামিয়ে দিল।ইন্দ্র হা করে আরনিয়াতের মুখের দিকে চেয়ে রয়েছে।যে মানুষটাকে কখনো ডাইনিং টেবিলে খেতে দেখে নি সে মানুষটাই আজ তার পাশে বসেছে।আরনিয়াত তার দিকে না তাকিয়েই এক হাত দিয়ে মুখ সামনের দিকে ঘুরিয়ে দেয়।

-"তভলীন, এখন তুমি কোথায় যাবে? এক কাজ করো তুমি বরং পিছে দাঁড়িয়ে বাতাস করো।"(আশিয়ানা তালুকদার)

-"আপনি একদম ঠিক বলেছেন। একটু আগে এক বক্স আইসক্রিম খেয়ে আসছে। ডিনার করার মতো মনে হয় পেটে জায়গায় নেই।দাঁড়িয়ে হাওয়া দিলে আমরা নিশ্চিন্তে খাবার খেতে পারব।তভলীন যা কাজে লেগে যা।"

তভলীন অসহায় চোখে ভাইয়ের দিকে তাকাল।আরনিয়াতের থেকে চোখ সরাতেই দেখল আরশিয়া বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে রয়েছে।

-"তভলীন বসো।"(আভিশান তালুকদার)

বাবার কথায় আরশিয়ার দিকে একটা বড়সড় হাসি দিয়ে চেয়ার টেনে বসে পরল।আরশিয়া রাগে দুঃখে আঙ্গুলের সাথে ওড়না প্যাঁচাতে শুরু করল।অনেক কষ্টে বড়দের নজর এড়িয়ে সে আইসক্রিম টা এনেছিল, Belgian chocolate flavour এর। ভেবেছিল রাতে খাবার পর চারজন মিলে খাবে।চারজনের খাবার তভলীন রাক্ষস একাই খেয়ে ফেলেছে। তার এ কষ্ট দেখে ফ্লেবিয়া তার পিঠে হাত দিয়ে স্বান্তনা দিল।

সার্ভেন্ট এসে খাবার একে একে সব খাবার সাজিয়ে গেলো।সকলে খাওয়ার প্রস্তুতি নিল।

-"আহিয়ান, আরনিয়াত আর তভলীন ওয়েলকাম ব্যাক।আজ তিন রাজপুত্রই একসাথে জড়ো হয়েছো আশা করব ভবিষ্যতে এভাবেই একত্রে থাকবে।"(নওয়াজ দেওয়ান)

নওয়াজ দেওয়ান সাদরে ওয়েলকাম জানালেন তিনজনকে।

-"আজ একদম পরিপূর্ণ পরিবার মনে হচ্ছে।কত বছর ধরে অপেক্ষা করেছি এ দিনটা দেখার জন্য। আজ ফাইনালি সে দিনের দেখা পেলাম।"(আভিশান তালুকদার)

ছলছলে চোখ দুটো মুছে আভিশান তালুকদার তিন ছেলের দিকে তাকালেন। প্রাণভরে দেখলেন কত বছর পরে তিনজনকে একসাথে দেখছে।

ঝলমলে ঝাড়বাতির আলোয় টেবিলটা রাজকীয় রূপ ধারণ করেছে।সবাই একে একে শুরু করল কিন্তু ইন্দ্রর বাধল বিপত্তি। এমন একটা পরিস্থিতিতে পরেছে যে গিলতেও পারছে না, উগলাতেও পারছে না।

ডানপাশে আহিয়ান তালুকদার ঠোঁটের কোণে রহস্যময় হাসি নিয়ে বসে রয়েছে আর বামপাশে আরনিয়াত তালুকদার শান্ত শীতল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

ইন্দ্রের প্লেট এখনো প্রায় খালি। হঠাৎ আহিয়ান ঝুঁকে রুপালি চামচে করে এক টুকরো হানি-বাটার গ্লেজড ফ্রাইড চিকেন তুলে ইন্দ্রর প্লেটে রাখল।

-"Try this, it melts in the mouth"বলেই একখানা স্মিত হাসি দিয়ে নিজের প্লেটেও তুলে নিল।

ইন্দ্র অবাক হয়ে আহিয়ানের মুখের দিকে তাকাল।
কিন্তু সেকেন্ড পেরোতেই আরনিয়াত এক্সিকিউটিভ ভঙ্গিতে হাতে তুলে নিল গার্লিক হার্ব রোস্টেড পটেটো আর সোজা ইন্দ্রর প্লেটে রেখে দিয়ে নিজের খাবারে মন দিল।

ইন্দ্র এবার তার মুখের দিকে আরও বিষ্ময় নিয়ে তাকাল।

ততক্ষণে আহিয়ান আবার চিজ স্টাফড বিফ রোল তুলে ইন্দ্রর দিকে এগিয়ে দিলেন।

-"Don’t mind him, he eats bland," বলে একটা হাসি দিল।

ইন্দ্র আবার আহিয়ানের দিকে তাকাল। চক্ষু ছানাবড়া।

আরনিয়াত এবার আর বসে থাকতে পারলো না, ট্রাফল ইনফিউজড মাশরুম পাস্তা তুলে বলল, "And you think this is bland?"

ইন্দ্রর মনে হতে লাগল এই প্লেটটা যেন যুদ্ধক্ষেত্র আর সে বেচারি মধ্যবর্তী রাজ্য, যার উপর দিয়ে দুই সাম্রাজ্য আক্রমণ চালাচ্ছে।

তার সামনে খাবার জমা হচ্ছিল দুর্দমনীয় গতিতে। ফ্রেঞ্চ ডিপ স্যান্ডউইচ, ক্রিমি স্পিনাচ লাসাগ্না, সালমনের পাশে এক্সট্রা ক্যাভিয়ার।ইন্দ্র চামচ হাতে বসে শুধু একবার আহিয়ানের দিকে আরেকবার আরনিয়াতের দিকে তাকাতে লাগলো। তাদের দুজনের কান্ড দেখে বাকিরাও হা করে তাকিয়ে রয়েছে।নীলজা আর আশিয়ানা তালুকদার এখনই রাগে ফেটে পরবে এমন একটা অবস্থা।

-"তোমরাও তো খাও।শুধু মেয়েটার উপর এভাবে জুলুম করছ কেনো?"(আফাজ খান)

আহিয়ান আর আরনিয়াত একে অপরের দিকে তাকিয়ে এবার নিজের প্লেটে মন দিল।ইন্দ্র দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে নিজের প্লেটে দেখল।খাবারের পাহাড় হয়ে গেছে। এতো খাবার সে তিনদিন ধরে খাই আর আজ একবারেই এক প্লেটে সাজানো।দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে খাওয়া শুরু করল।

খাওয়ার মাঝে আহিয়ান এর কি মনে হলো সকলের দিকে তাকাল।

-"কিছু লাগবে, বাবা?"(আশিয়ানা তালুকদার)

-"হুম "

-"কি লাগবে? বলো, এগিয়ে দিচ্ছি"(এসফার তালুকদার)

-"উত্তর"

সকলে চমকে তাকালেন তার দিকে।বড়দের সবার মুখেই চিন্তার ছাপ পরল।

-"কিসের উত্তর আহিয়ান?"(আভিশান তালুকদার)

সকলের থমকে যাওয়া মুখ দেখে আহিয়ান হেসে ফেলল।

-"রিল্যাক্স, আমি শুধু এটা জানতে চায় এ কে?"

ইন্দ্রর দিকে আঙ্গুল তাক করে দেখালো।সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।নওয়াজ দেওয়ান শান্ত স্বরে বলে উঠলেন;

-"আমার মেয়ে, ইন্দ্রিয়াত দেওয়ান।"

আহিয়ান অবাক নয়নে ইন্দ্রর দিকে তাকাল।

-"That means ইখতিয়াকের..."

-"আহিয়ান, আগে খাবার শেষ করো।"

আহিয়ানকে মাঝ পথে থামিয়ে দিলেন নীলজা তালুকদার। আশিয়ানা তালুকদার চোখের ইশারায় কিছু একটা বোঝালেন তা বুঝে আহিয়ান খাবারে মন দিল।তার কিছুক্ষণ পরই ইনায়া দেওয়ান উঠে চলে গেলেন।তাকে যেতে দেখে নীলজা তালুকদারও গেলেন পিছে।

ইন্দ্র আরশিয়ার দিকে তাকালো,সে ইশারায় বুঝালো জানে না কি হয়েছে।ইন্দ্রকে আরশিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরনিয়াত হাত দিয়ে ইন্দ্রর মাথা খাবারের প্লেটের দিকে ঝুঁকিয়ে দিল।

-"এদিক-সেদিক না তাকিয়ে খাওয়া শেষ করে রুমে যা।"

কথাটা বলে আহিয়ান যে খাবারগুলো দিয়েছিলো সেগুলো সব আরনিয়াত নিজের প্লেটে তুলে নিল।ইন্দ্র আর কোনোরকম প্রতিক্রিয়া না দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব খাওয়া শেষ করল।যে যার মতো খাওয়া শেষ করে নিজেদের রুমে চলে গেলো।

ইন্দ্র, আরশিয়া এবং ফ্লেবিয়া তিনজনে ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।ফ্লেবিয়ার কল আসাতে সে এক পাশে গেলো।

-"ইন্দ্র, ইখতিয়ার না ইখতিয়াক কার জানি নাম বলল সেটা শুনে সকলে ওরকম রিয়্যাকশন দিলো কেনো?আর আহিয়ান ভাইয়ায় বা কেনো তোর পরিচয় এ তার নাম তুলল?"(আরশিয়া)

-"আমিও বুঝছি না। আমাদের বাড়িটা দিনদিন গোলক ধাঁধাতে পরিণত হচ্ছে।নতুন নতুন মানুষ আসছে আর নতুন নতুন রহস্য জোট পাকাচ্ছে।"

আরশিয়া ইন্দ্রর এ কথায় ফ্লেবিয়ার দিকে তাকাল।তাকে অনুসরণ করে ইন্দ্র তাকাল।

-"আরশু, কি ভাবছিস?"

-"যেদিন থেকে খান পরিবার এ বাড়িতে এসেছে কিছু নতুন নতুন চমক দেখাচ্ছে।"

-"মানে?"

-"মানে ফরিয ছোটো আর ফ্লেবিয়া বড় তাহলে ফ্লেবিয়া আমাদের চেয়েও বয়সে বড়। ওকে দেখে যতটা সাধাসিধা মনে হয় আমার না খটকা লাগে আদেও কি এতো..."

-"যা তা বলছিস। ও শুনলে কষ্ট পাবে কিন্তু।"

-"আমি জাস্ট আমার অনুভূতিটা বলছি।আচ্ছা তুই ভেবে দেখ ফ্লেবিয়ার উচিত ছিল ফরিযদের সাথে আসা কারণ আফাজ আঙ্কেল তো চাচ্চুদের সাথে অফিস থেকে এসেছে, অফিসের ঝামেলা মিটিয়ে। সেখানে ফ্লেবিয়া কি করছিল?তাছাড়া এর আগে যেদিন আমরা ধলেশ্বরী পাড় থেকে ফিরলাম সেদিন না ফ্লেবিয়া অদ্ভুত আচরণ করছিল।পিলারে পিছনে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলো।আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলাম ওকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেখি নি কিন্তু ও বলে কিনা ও বাইরে থেকে এসেছে। In fact ওর পায়ে আমি কাদামাটিও দেখেছি। ওইদিন কাঠফাটা রোদ ছিল বাগান পুরো শুকনো তাও বলে বাগানে ছিল বলে কাদা লেগে গেছে।"

-"তুই বুঝাতে কি চাচ্ছিস ক্লিয়ার করে বল প্লিজ"

-"ইন্দ্র, এ পুরো বাড়ির এরিয়ার মধ্যে কোথায় কাদামাটি থাকে সবসময়? "

-"আরশু এটা স্বাভাবিক ওয়েতেই দেখ"

-"কিভাবে ইন্দ্র? ২১ বছর আমরা এ বাড়িতে আছি। আমরা কখনো পুকুর পাড়ে যায় নি, কেউ যেতে দেয় না অথচ ও কয়েকদিন এসেই..."

ইন্দ্রর মনে পড়ল সেও একদিন দেখেছিলো ফ্লেবিয়াকে কারোর সাথে কথা বলতে।তাই ভাবল আরশিয়াও হয়ত সেটাই দেখেছে। বাড়ির মধ্যে হয়ত পারে না সে কারণে পিছে গিয়ে কথা বলে।

-"আরশু তুই শুধু শুধু ভাবছিস, আমিও অকে দেখেছিলাম একদিন"

-"তাহলে বল সন্দেহ না করার কি কোনো কারণ আছে?"

-"সন্দেহ করারও কারণ নেই।ও কারোর সাথে ফোনে কথা বলছিলো।হবে হয়ত রেখে আসা কেউ।একটু বোঝার ট্রাই কর, যেহেতু আমাদের চেয়ে বড় সেহেতু হয়তো কেউ আছে।"

ফোনে কথা বলার কথাটা শুনে এবার আরশিয়া ভালো করে ফ্লেবিয়াকে পর্যবেক্ষণ করল।তখনকার দেখা কালো পোশাক পরিহিত মানুষটার মতোই হাত নারিয়ে নারিয়ে কথা বলছে।এবার আরও সন্দেহ দানা বাধল তার মনে। তাকে এক ধ্যানে ফ্লেবিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইন্দ্র ধাক্কা দিল।

-"চোখ দিয়ে গিলে খাবি মেয়েটাকে?"

আরশিয়া ইন্দ্রকে তখনকার দেখা ঘটনাটা বলতেই যাবে
তখন ফরিয এসে পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরল।আচমকা কারোর জড়িয়ে ধরা অনুভব করে আরশিয়া চমকে তাকাল।

-"আমি আরশু, ভয় পেয়ে গেলে?"

-"ফরিয কখন এলে?"

-"এসে শুনলাম তোমরা ছাদে তাই চলে এলাম।"

-"এতো দেরি হলো কেনো?"

-"আর বলোনা সব প্যাক করতে করতে আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। মাও ক্লান্ত হয়ে শুয়ে ছিল। পরে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তারপর সব ঠিকঠাক করে বেরোতে লেট হয়ে গেলো।"

-"খাওয়া তো হয় নি, তাহলে চলো আগে খেয়ে নেও।আমাদের খাওয়া শেষ।"

আরশিয়া আর ইন্দ্র ফরিযকে নিয়ে নিচে গেলো।ফ্লেবিয়া তখনও ফোনে ব্যস্ত।তাদের যাওয়ার দেখে সে বলল একটু পরে আসছে। তাই তাকে রেখেই গেলো তিনজন।

-----------

রাত ১০টা; আকাশ জুড়ে গর্জে উঠছে মেঘ, ঘন অরণ্যে টুপটাপ করে নামছে ভারি বৃষ্টির ফোঁটা। অন্ধকার আর কুয়াশায় ঢেকে থাকা সেই জঙ্গলের এক ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে AA নির্মম, নীরব, শীতল।

তার কাঁধে ভেজা কালো কোট, চোখদুটো স্থির, যেন প্রতিটি শব্দকেই ছেঁকে নিচ্ছে । পিছে দাঁড়িয়ে পাঁচ-ছয়জন কালো পোশাকে মোড়া মানুষ যারা ব্যর্থ হয়েছে লোকটিকে আনতে।

বৃষ্টির ফোঁটায় তাদের কাপড় ভিজে কাদায় মাখামাখি, কিন্তু তারা দাঁড়িয়ে আছে নিঃশব্দ, মাথা নিচু। বৃষ্টির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে তাদের নিঃশ্বাসের ।

হঠাৎ করে গর্জে পিছে তাকাল,চোখদুটো অমানবিক অগ্নিতে দগ্ধ।এখনই যেনো সামনে থাকা মানুষগুলোকে পিষে ফেলবে।

-"একটা কাজ দিয়েছিলাম, ৬জন মানুষ মিলে একজনকে খুঁজে আনতে পারো নি, ধরা দিতে গিয়েও চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।তাহলে কি কাজে রেখেছি তোমাদের?হাইড এন্ড সিক খেলার জন্য? AA কখনো বিনা কারণে কারোর প্রাণ নেয় না। ড্রাগ নেওয়ার সময় জানের ডিল করায় থাকে।সঠিক সময়ে মূল্য পরিপূর্ণভাবে পরিশোধ করতে না পারলে স্বেচ্ছায় জীবন আমার হাতে ত্যাগ করবে।স্বেচ্ছায় তো দূরের কথা মানুষ পাঠালে এমন লুকোচুরির খেলায় মেতে উঠে।বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ, তাদের জন্য আমার সাপ্লিমেন্টে কোনো ক্ষমা নেই,শুধু রয়েছে মৃত্যু ।আর তোমরা;তোমাদের মতো কামলাখোরদের জন্য অযথা আমার সময় নষ্ট। যারা আমার সময় নষ্ট করে তাদের আর এ জীবন রেখে লাভ কি তাইনা?"

ঠোঁটের কোণে ক্রুর হাসি নিয়ে AA ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যায়। এক হাতে একটা ধারালো দা অন্য হাতে ভেজা গ্লাভস। এক এক করে সবার দিকে তাকায়, এখন চোখে কোনও রাগ নয় বরং এক ধরণের ঠান্ডা নিষ্ঠুরতা, যেন এই শাস্তি আগেই স্থির ছিল।

ধীর গলায় বলে উঠল-"ব্যর্থতা আমার কাছে অপরাধ নয় এটা অভিশাপ। আর অভিশাপের ফল শুধু মৃত্যু না, কঠোর মৃত্যু। "

একটা ইশারা করতেই সঙ্গীরা একজনকে ধরে টেনে আনল। প্রথম লোকটার ডান হাতটা ধরে কাঁধ বরাবর তুলে নিল। কোনও হুঁশিয়ারি, কোনও বিলাপের সুযোগ না দিয়ে এক ঝটকায় কেটে দিল হাতটা। রক্ত ছিটকে পড়ল কাদার ওপর, যেন বৃষ্টির সঙ্গে মিশে তৈরি করল এক নতুন সুর।

লোকটা চিৎকার করতে চাইলো, কিন্তু গলায় যেন বাঁধা পড়ে গেল শব্দ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার বাঁ হাতটাও কেটে দেওয়া হলো। এরপর দুই পা এবং জিহবা টেনে কেটে দিল।হাত পা হীনভাবে মাটিতে ফেলে রাখা হলো তাকে।

অন্যদেরও একই পরিণতি। একে একে হাত, পা ছিন্ন হতে লাগল। গলা দিয়ে বের হচ্ছিল অস্পষ্ট গোঙানির শব্দ, ভয়ের, যন্ত্রণার, মৃত্যুর আগে বেঁচে থাকার শেষ চিৎকার।

তাদেরই চোখের সামনে কবর খোড়া হলো, কবর তো নয় গর্ত বলা চলে।গোল করে বড় একটা গর্ত করে একে একে হাত-পা এবং সবশেষে তাদের ফেলে দিল।তখনও তারা বাচার জন্য আকুতি মিনতি করছিলো চোখের পানি ফেলে কিন্তু শেষ রক্ষাও হলো না। উপস্থিত সকলে মিলে জীবন্ত কবর দিতে শুরু করল। রক্তমাখা দেহগুলো আর্তনাদ করছিল, কিন্তু তার কোনো কিছুই AA র হৃদয় গলাতে পারে নি।তার এর মুখে ছিল কেবল ঠান্ডা এক হাসি।

বৃষ্টির ফোঁটা মাটিতে পড়ছিলো, আর মাটি গড়িয়ে গড়িয়ে ঢেকে দিচ্ছিল জীবন্ত দেহগুলোকে।মৃত্যু আসার আগেই মাটি তাদের ঢেকে ফেললো।

সেই জঙ্গলের নিস্তব্ধতায় বজ্র আর বৃষ্টির মাঝে AA দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। তার চোখে তখনও কোনও অনুশোচনা নেই শুধু আরও গভীর এক অন্ধকার।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটা কালো অবয়বকে বললো-"কালই তুমি অথবা চেনা পরিচিত কাউকে পাঠাও। যেভাবেই হোক ওকে আমার চাই।আর এমন মৃত্যু দিব আত্মাও সে দৃশ্য কল্পনা করে বারবার কেঁপে উঠবে।কাল মানে কালই। মাইন্ড ইট।"

একটু আগে চাপা দেওয়া গর্তটা থেকে এখনো গোঙানির আওয়াজ ভেসে আসছে।সেদিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে জবাব দিল-"ওকে বস।দুজনকে পাঠাব আর কাল সকালের মধ্যেই।"

"করছি খুন গাইছি সুর;মরণ আমার চোখের নূর!
রক্ত আমার গানের ছায়া, তোর কান্না শান্তির মায়া!
শেষ নিঃশ্বাস জমাট বয়, এই তো জীবন বাকি কই!"

AA গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে গাড়িতে উঠে বসল।তার গান শুনে সকলের আত্মা উড়ে যাবার উপক্রম।
কালো অবয়বটি গর্তের দিকে আরেকবার তাকিয়ে নিজেও গাড়িতে গিয়ে বসল।এখনকার মতো কাজ শেষ। যে যার মতো বাড়ি যেতে পারবে।

ইন্দ্র ওড়নাটা গায়ের সাথে ভালো করে প্যাচিয়ে করিডরে দাঁড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটা গুনছে।বিগত দিনের ঘটে যাওয়া সকল ঘটনায় তাকে ভাবাচ্ছে।তাবাহুরের ব্যাপারে এখন অব্দি কিছুই জানে না। তাবাহুরের কথা মনে পরতেই আরনিয়াত এর জন্য আব্বিকে অপমানিত হতে হয়েছিল সেটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল।একটা মানুষ কিভাবে পারে এমন করতে।না কোনো শত্রুতা না কোনো প্রকার দ্বন্দ্ব তাহলে কি কারণে সারাক্ষণ এমন করে সেটাই মাথায় ঢুকে না।যে নিজের মামাতো বোনের সম্মান নিয়ে এভাবে ছিনিমিনি খেলতে পারে সে কিভাবে আবার ভালোবাসার দাবি তুলে।এসব ভাবতে ভাবতেই মুখমন্ডলে পানির ছিঁটা এসে পরল।চোখমুখ কুচকে সেদিকে তাকিয়ে দেখে ৩২টা দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে রয়েছে আহিয়ান তালুকদার।

-"রূপছায়া একা একা বৃষ্টিবিলাশ করে আনন্দ নেই তাই আমি এলাম তোমার সঙ্গ দিতে।"

-"আমার নাম রূপছায়া না, ইন্দ্রিয়াত।সুতরাং আমার নামেই দয়া করে ডাকেন নতুবা ভাগেন"

-"ইন্দ্রিয়াত? বাট এ নামে তো কাউকে ডাকতে শুনি নি।"

-"ইন্দ্র ডাকে সবাই।"

-"ইন্দ্র? বাট আমি যতদূর জানি এটা হিন্দু দেবতার নাম তাহলে তোমাকে এ নামে ডাকে কেনো?"

ইন্দ্র এবার হাসে।তার নাম শুনে সকলের মাথাতে প্রথমে এটাই আসে সুতরাং তার মাথায়ও আসবে এটাই স্বাভাবিক। সে আহিয়ানকে সুন্দর করে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেয়।

-"শুনে হয়তো মনে হতে পারে আমার নামটা কোনো দেবতার নামে কিন্তু আসলে তা নয়। আমার নামের মূল শব্দটা হলো 'ইন্দ্রিয়'। বাংলায় কিংবা সংস্কৃতে 'ইন্দ্রিয়' মানে আমাদের জ্ঞানের দরজা। এই ইন্দ্রিয় দিয়েই আমরা দুনিয়াটাকে চিনি, ভালোবাসি আবার সৌন্দর্য অনুভব করি।আর 'ইন্দ্রিয়াত' মানে দাঁড়ায় ইন্দ্রিয়কে ধারণ করে যে বা ইন্দ্রিয়ের পথ বেয়ে জগৎকে উপলব্ধি করে যে। মানুষ যদি নিজের অনুভব, অনুভূতি আর জ্ঞান ইন্দ্রিয়কে সচেতনভাবে বুঝে ব্যবহার করে, তাহলেই সে সত্যিকারের মানুষ হতে পারে।আর 'ইন্দ্র'ওটা আমার শর্টকাট নাম। নামের সঙ্গে মিলে যায় বলে সবাই ডাকে। কিন্তু সেটা কোনো দেবতার পরিচয়ে নয় বরং নিজের অনুভবকে শ্রদ্ধা করার, নিজের মধ্যে আলো জ্বালিয়ে রাখার এক রকম চিহ্ন হিসেবেই।মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ তার নিজের ইন্দ্রিয়র সাথে, আর ইন্দ্রিয়াত নিজের ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। সে হিসেবে আমি ইন্দ্রিয়াত।"

ইন্দ্রর এমন মনোমুগ্ধকর ব্যাখ্যা শুনে আহিয়ান পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে।কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না।বিষ্ময়ের ঘোরে করতালি দিয়ে উঠে।তার এমন প্রতিক্রিয়া দেখে ইন্দ্র ফিক করে হেসে উঠে।

-"রূপছায়া আর কত রূপ দেখাবা?তোমার রূপের দিওয়ানা হয়ে গেলাম। কখনো আনমনা, কখন অবলা আবার কখনো অগ্নিমূর্তি আবার কখনো মায়াবতী। তোমার নামটা তোমার জন্য একদম পারফেক্ট।সবার ইন্দ্রিয় নাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখো।"

ইন্দ্র কিরকম প্রতিক্রিয়া দিবে বুঝে উঠতে পারছে না।
হঠাৎই আহিয়ান ইন্দ্রর দিকে খানিকটা ঝুঁকে কাছে চলে এলো।

-"জানো রূপছায়া, তোমার চেহারার সাথে না আমার অনেক কাছের একজনের চেহারার মিল রয়েছে।কোনো তফাৎ নেই মনে হচ্ছে সেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।"

দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে করিডরের রেলিং এ হাত রেখে আকাশের দিকে তাকাল-"I really miss that person. That person was incredibly important to me yet I lost due to my own fault."

ইন্দ্র ভাবল আহিয়ান হয়তোবা গার্লফ্রেন্ড এর কথা বলছে।কাউকে ভালোবেসে জবরদস্ত ছ্যাঁকা খেয়ে কাঁদতে কাদঁতে সিডনি থেকে বাংলাদেশ চলে এসেছে।সেও তো হৃরতেশকে ভালোবাসে যদি হারিয়ে ফেলে তখন কি হবে। বাড়িতে কি বলে দিবে সে হৃরতেশকে জীবনসঙ্গী হিসেবে চায় তারপর? তারপর কি সবাই মেনে নিবে? আরনিয়াত! তার কি প্রতিক্রিয়া হবে?মারবে হৃরতেশকে?আব্বি-আম্মি?নাকি হৃরতেশ নিজেই মানা করে দিবে?তার মনে কি অন্য কেউ বাসা বেঁধে রয়েছে?বৃষ্টির মতোই কি না বলা কথাগুলো বলার আগেই ঝরে পড়বে?ফোঁটাগুলোর যেমন কোথাও কোনো ঠাঁই মেলে না হৃরতেশ এর জীবনেও কি তার ঠাঁই মিলবে না।

এসব ভাবতে ভাবতে সেও আনমনে বাইরে তাকিয়ে থাকে।ইন্দ্রর কাছে মনে হচ্ছে আকাশটা আজ একটু বেশিই গর্জে উঠছে!

চলবে......

20/08/2025

#দগ্ধ🍁🍁
লেখিকা
পর্ব-৩০

[বিনা অনুমতিতে কপি করা নিষিদ্ধ ]

বিকেল চারটা প্রায়;সূর্যের আলোটা নরম হয়ে এসেছে। নীর মহলের সামনে গোলাপ বাগান, আর সেই বাগানের এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে ইন্দ্র।

এই দিকটায় সে আগে কখনো আসেনি। ফুপির কড়া নিষেধে পা মাড়াত না তবে আজ এলো, কেনো এলো নিজেও জানে না।

খুব যত্মের সহিত গাছগুলো এবং গাছে থাকা ফুলগুলো দেখতে লাগল।লাল, গোলাপি, হলুদ তিন রঙেরই গোলাপ রয়েছে।তিন রঙের সমাহারে জায়গাটার নির্জনতা আর নির্লিপ্ততাতে এনেছে স্নিগ্ধতা।প্রায় সব গাছেই দুই একটা করে ফুল ফুটে রয়েছে।শুধু ব্যতিক্রম একটা। গাছটাতে কোনো ফুল নেই আবার অন্যান্য গাছের থেকে আলাদা,বুশ টাইপ গাছ।

ইন্দ্র ভালো করে গাছটাকে পর্যবেক্ষণ করল।হঠাৎ তার চোখে পড়ল পাতার ফাঁকে লুকিয়ে থাকা একটুকরো রঙ,একটা কলি।রোদে ভেজা গাঢ় অ্যাপ্রিকট মাঝে একটু পিংক টোন ফুটে উঠেছে, যেন এক দীর্ঘ নিস্তব্ধতার পর হঠাৎ নিঃশব্দে জেগে ওঠা।

তার বুকের ভেতর কেমন হালকা আলোড়ন জেগে ওঠে।হাতটা একটু বাড়িয়ে কলিটাকে ছুঁয়ে দিল।মনে প্রশ্ন উঁকি দেয় কি গাছ এটা, কে লাগিয়েছে,কার জন্য লাগানো। গাছটার একটা ছবি তুলে নেয় সে, পরে গুগল থেকে জেনে নিবে কি গাছ এটা।

ইন্দ্রর মনে হয় যেন এই কলির ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে কোনো অসমাপ্ত গল্প।কারোর না পাওয়া ভালোবাসার হাহাকার। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে, এই কলি যেনো তার জন্যই ফুটেছে।

ইন্দ্র যখন গভীর ধ্যানে গাছ দেখতে ব্যস্ত তখন তাওয়ান মঞ্জিলের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে তার দিকে মুগ্ধ চাহনিতে তাকিয়ে থাকে এক পুরুষালী নেত্র।

গ্রীষ্মের উষ্ণ ঝিরিঝিরি বাতাসে উড়তে থাকা ডার্ক খয়েরি চুল যা রোদের কিরণে চিকচিক করছে,ধ্যানমগ্ন হয়ে চেয়ে থাকাটা ব্যক্তির দৃঢ় চিত্তে হানা দিচ্ছে বারবার।বহু বছর পর এ বাড়িতে পা রাখাটা যেনো তার সার্থক হয়েছে।মৃদু একটা হাসি খেলে যায় তার ঠোঁটের কোণে।কোনো কিছু না বলেই সে ধীর পায়ে তাওয়ান মঞ্জিলের ভেতরে প্রবেশ করে।

গাড়ির শব্দে ইন্দ্রর হুঁশ ফিরে।রাস্তার ধারে পরপর তিনটে কালো গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। সে ভেবেছিলো বোধহয় আব্বিরা বা আম্মিরা এসেছে কিন্তু গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো আশিয়ানা তালুকদার। এয়ারপোর্ট থেকে ছেলের সহিত ফিরেছে।সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল সে।আশিয়ানা তালুকদার গাড়ি থেকে বেড়িয়েই সোজা ভেতরে প্রবেশ করল অথচ তার ছেলের কোনো চিহ্ন অব্দি পেলো না ইন্দ্র।আকাশের দিকে তাকাল, একদম সাফ নীল আকাশ মাথার উপর, সুতরাং ফ্লাইট কেন্সেল হওয়ার কোনো চান্স নেই তাহলে একা কেনো ফিরল সেটা মাথায় ঢুকল না।

পিছনের গাড়ি থেকে কালো পাঞ্জাবী পরা একজন মধ্যবয়স্ক লোক নামল।তাকে দেখে ইন্দ্র তার কাছে গেলো।

-"ওয়াসিফ চাচা,আব্বিরা ফিরে নি?"

-"না, ইন্দ্র মা। এখনো ওদিকের কাজ শেষ হয় নি।তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে।আর ম্যাডামরা ফিরছে, রাস্তার মাঝে।"

-"ওও, তা আশিয়ানা ফুফু একা ফিরল কেনো? মানে উনি তো এয়ারপোর্টে গেছিলেন উনার..."

-"উনার ছেলেকে আনতে, মানে আমাদের আরেক স্যার আহিয়ান তালুকদার কে রিসিভ করতে।"

-"কিন্তু উনাকে তো দেখলাম না। "

-"উনি আগেই ভেতরে চলে গেছে।"

-"ওওও,আচ্ছা। "

ইন্দ্র আর কিছু না বলে নিজেও ভেতরে চলে এলো।হলরুমে কেউ নেই।দোতলায় নীর মঞ্জিলের দিকে এক ঝলক তাকালো, করিডর ফাঁকা।

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে "আহিয়ান তালুকদার" নামটা কয়েকবার উচ্চারণ করল।যতটুকু শুনেছে "আহিয়ান তালুকদার" অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকে। কার কাছে থাকে, কেনো থাকে এসব জানে না। আর এতো বছর কেনোই বা দেখেনি সেটাও তার অজানা।মাঝে মাঝে তার নিজের উপরই সন্দেহ হয় সে আদেও এ বাড়ির সদস্য কিনা।

দেওয়ান কুঞ্জে এসে আরশিয়ার রুমের দিকে তাকাল। দরজা বন্ধ, বোধহয় ঘুমাচ্ছে।দরজা কাছে গিয়ে হালকা ধাক্কা দিতেই সেটা খুলে গেলো।যা ভেবেছিল তাই, চার পাশে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে।কাছে গিয়ে ইন্দ্র তার মাথায় হাত বুলিয়ে গায়ের উপর কাথা টেনে দিল।এসি চলার কারণে ঠান্ডা হয়ে এসেছে।আরশিয়ার ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিল।আজ হয়তো কোনো কারণে রেগে ছিল অথবা কোনো বিষয়ে কষ্ট পেয়েছিলো তাই এমন ব্যবহার করেছে নইলে কখনোই এমন ব্যবহার করে না।আরশিয়াকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে নিজের রুমে চলে গেলো।

ইন্দ্র যেতেই আরশিয়া চোখ মেলে তাকাল।তখনকার করা ব্যবহারের জন্য মনে মনে সে নিজেও বেশ কষ্ট পেয়েছে।হুট করে কি হয়ে গিয়েছিল সে নিজেও জানে না। হঠাৎ করেই ইন্দ্রর উপর তার প্রচন্ড ক্ষোভ জন্মেছিল যা পরবর্তীতে অনুতাপে রুপান্তর হয়েছে।

__________

গত এক ঘন্টা নাগাদ বউ তার পায়চারি করছে আর বেচারা বিছানার উপর বসে দুই গালে হাত রেখে দেখছে, বারবার দুইদিকে ঘাড় ঘুরাতে ঘুরাতে ব্যাথা হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে রগগুলো সব ছিঁড়ে গেলো।বউ বেজায় রেগেও আছে এ কারণে কিছু জিজ্ঞাসা করলে ঝাড়ি মেরে চুপ করিয়ে দেয়।তবুও বুকে সাহস নিয়ে আরেকবার জিজ্ঞাসা করার কথা ভাবল,জীবন বাঁচানো ফরজ। এভাবে আর কিছুক্ষণ চলতে থাকলে পাক্কা ঘাড়ের রগ ছিঁড়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে।

-"বউউ,কি হয়েছে? আমাকে বলো আমি দেখি সমাধান পায় কিনা। আর কতক্ষণ এভাবে..."

-"সমস্যা হচ্ছে তোমার? ভালো লাগছে না? ওও পুরনো হয়ে গেছি তো তাই এখন আর আমাকে কারোরই ভালো লাগে না। কি কপাল আমার, স্বামী দুচোখে দেখতে পারছে না। বাপের বাড়ির কেউ খোঁজ নিচ্ছে না। বোন ভুলে গেছে।আহা সোনায় মোড়ানো কপাল আমার।"

ফট করে ফ্লোরে বসে মাথায় হাত দিয়ে কান্না জুড়ে দিল।ধীবর বেচারা অসহায় চোখে তাকিয়ে রইল।প্রশ্ন কি করল আর জবাব কি পেলো।

-"বউ যে কষ্টে কান্না করছে তাতেও সাহেবের মন গলছে না। কি আরাম করে বিছানায় বসে আছে।আসলেই তো আমি পুরনো হয়ে গেছি, কেনো আমার চোখের পানি মুছতে আসবে।"

ধীবর প্রাচীর এ কথা শুনে হা হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি হা বন্ধ করে নিজের একমাত্র বউ এর কাছে গেলো। নাজানি আবার কিসের মধ্যে কি নিয়ে চলে আসে।ঘাড়ে হাত রাখতেই এক ঝটকা মেরে সরিয়ে দিল।

-"একদম পুরনো জিনিস ছুঁবে না। পুরনো হয়ে গেলে এভাবে ফেলে দিতে হয়। বুঝি তো আমি, সব বুঝি। বোঝা হয়ে গেছি আমি।এই দেখো এখন কি সুন্দর করে বসে আছে, মনে মনে তো খুশি হচ্ছো ছুঁতে দিচ্ছে না ভালো হয়েছে।বিরক্ত ধরে গেছে এই কয়দিনেই।"

বলেই আবার কান্না শুরু করল বাচ্চাদের মতো।

ধীবর তাড়াহুড়ো করে প্রাচীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল।প্রাচী কনুই দিয়ে পেটে একটা গুঁতো মেরে দূরে সরিয়ে দিল।

-"আদিখ্যেতা করতে আসছ? আমি এখানে চিন্তায় মরছি আর তোমার কুরকুরানি উঠছে। মানে পুরুষ মানুষ বিয়েই করে শুধু জ্বালা মেটানোর জন্য, বউ এর কখন কেমন লাগে তা বোঝার প্রয়োজনই নেই।বউ কষ্ট পাচ্ছে পাক, চিন্তায় মরছে মরুক।উনার কুরকুরানি সাড়া লাগবে। যত্তসব।এই ঘরেই থাকব না আর আমি।স্বামী হিসেবে যাকে মানি সে তো বউ এর মনই বুঝে না। আল্লাহ কাকে যে বিয়ে করেছি, বাঁচাও আমাকে।"

ধীবরের দিকে কড়মড় করে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো প্রাচী আর ধীবর অতি বিষ্ময়ে তার তিন কবুলে বিয়ে করা বউ এর একটু আগে বলা কথাগুলোই আওড়াতে লাগল।তার দোষটা কোথায় এটাই খুঁজে পাচ্ছে না।

-"মেয়ে মানুষের মন এতো জটিল। আল্লাহ গো আগে জানলে মেয়ে মানুষ বিয়েই করতাম না। কি এক মুসিবত এ পরছি। বউ, ও বউ। বউ গো, কই গেলা।"

নিজের বিষ্ময়কে সাইডে রেখে বউ খুঁজতে গেলো।কয়েকদিনের বিয়ে করা বউ হারিয়ে গেলে বিপদ।

-"বউ আমি এখনো বাবা ডাক শুনি নি। সে ডাক শোনানোর আগে এভাবে হারিয়ে যেয়ো না। বউগোও।"

সারাবাড়ি জুড়ে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বউ খুঁজতে লাগল।সার্ভেন্টরা সবাই মালিকের এহেন কাজে মুখ টিপে টিপে হাসছে।দুই একজন তো নকলও করছে যার কোনো কিছুর দিকেই ধীবরের এখন হুঁশ নেই।

----------

আরশিয়া একা ছাদে দাঁড়িয়ে রয়েছে ।সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগ মুহুর্ত তবুও বাতাসের উষ্ণতা কমে নি।পুকুরের স্বচ্ছ পানির দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে রয়েছে।উষ্ণ বাতাসে পানিতে ঢেউ খেলছে।হঠাৎ চেনা দৃশ্যের মাঝে অচেনা কিছু জেগে উঠল।

পুকুরের পাশে গাছপালার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে কেউ। তাকে ঘিরে বাতাসও যেন স্তব্ধ। মাথা থেকে পা পর্যন্ত মোটা কালো কাপড়,একটা জ্যাকেট, লম্বা কালো প্যান্ট, হুড তুলে মাথা ঢাকা, এমনকি মুখ পর্যন্ত চাপা গ্রীষ্মের এই দাবদাহে এমন পোশাক, যেন উল্টো জ্বালাময় অস্বস্তি।

সে একটু ঝুঁকে ব্যাপারটা ভালো করে বোঝার চেষ্টা করল কিন্তু গাছপালার আড়ালে ঠিকভাবে বুঝতে পারল না। ব্যক্তিটি বোধহয় কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে, হাত নাড়ানোর অঙ্গভঙ্গিতে সেরকমই লাগছে।
একসময় ব্যক্তিটি চারদিকে তাকাল।আরশিয়া আর দেরি না করে বাড়ির পিছনের দিকে গেলো।কিন্তু গিয়ে কাউকেই পেলো না। সেখানে শুধু সে আর নিঃসঙ্গতা বিরাজমান। আশেপাশে খুঁজেও লাভ হলো না।আরশিয়ার বুক ধক করে উঠল। তাওয়ান মঞ্জিলের উপর কার নজর পড়েছে তা জানে না কিন্তু মনে হলো তাদের পিছে বড় কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে।

পুকুরের পানি এখন স্তব্ধ, গাছপালায় বাতাস নেই। আরশিয়া তাকিয়ে রইল, ঠোঁট চেপে ধরল। কি করবে তার বোঝার চেষ্টা করছে, বাড়িতে জানাবে নাকি মনের ভুল মনে করে উড়িয়ে দিবে।চারিদিকে এতো এতো গার্ড এর চোখ ফাঁকি দিয়ে অনায়াসে বাড়ির মধ্যে ঢোকা এতো সোজা না। বাড়ির চারিপাশেই গার্ড দ্বারা ঘেরা।দেয়াল টপকেও ভেতরে প্রবেশ সম্ভব না। উঁচু দেয়াল, উঠার কোনো রাস্তা নেই।

বাড়ির চারিপাশ দেখতে দেখতে বাগানে চলে এলো।সবাই চলে এসেছে, গাড়ি থেকে নামছে।নওয়াজ দেওয়ান হাতের ইশারায় তাকে কাছে ডাকল।

-"আরশু, এই ভর সন্ধ্যায় একা একা বাগানে কি করছ?"

-"এমনি চাচ্চু, হাঁটাহাঁটি করছিলাম।"

-"তো তুমি একা কেনো? ইন্দ্র কোথায়?"

ছাদে যাবার সময় দেখেছিল রুমে ঘুমাচ্ছে তাই সেটাই বলল।

-"ঘুমাচ্ছে।"

-"তোমরা না! পড়াশোনা চাঙ্গে তুলে অসময়ে খালি ঘুম দেও।"

ইনায়া দেওয়ান নামতে নামতে বলল।

-"ইনায়া, এই বয়সটাই তো আনন্দ করার। এখন করবে না তো কখন করবে, তাইনা মা?"

-"তুমিই ওদের মাথায় তুলে তুলে এমন করে ফেলেছো।বুঝলাম আনন্দ করবে তার একটা সময় সুযোগ আছে না। ভর সন্ধ্যাবেলা কে ঘুমাই, তুমিই বলো, এভাবে চললে তো পরীক্ষার ফেল করবে। তারপর নাক কান সব তোমার কাটা যাবে।কতদিন ভার্সিটিও যায় নি।"

স্ত্রীর মাথা এখনো গরম হয়ে রয়েছে বুঝে নওয়াজ দেওয়ান আর তর্কে জড়ালেন না। মাথা নিচু করে চুপচাপ শুনে গেলেন আর মাঝে মাঝে আরশিয়াকে ইশারায় বুঝাচ্ছেন এইসব এ কান না দিতে।ইনায়া দেওয়ান মেয়ের উপর রাগে গজগজ করতে করতে ভেতরে চলে গেলেন। বাকিরা আগেই চলে গেছে।

-"বুঝলে আরশু, তোমার মামনি বড্ড ওল্ড ফ্যাশোনড।ফেল করার মধ্যে যে আনন্দটা রয়েছে সেটা তোমার মামনির পক্ষে বোঝা সম্ভব না। চলো, এখন ভেতরে চলো।"

আরশিয়া মুচকি হেসে নওয়াজ দেওয়ান এর সাথে ভেতরে গেলো।পথিমধ্যে আরশিয়াকে কয়েকটা মজার মজার কাহিনি শুনালো যার কারণে আরশিয়া খিলখিল করে হেসে উঠল বারবার। নীর মঞ্জিল থেকে আরশিয়ার এ হাসি মন ভরে একজন দেখল যেনো তারই অপর সত্ত্বা সে।

____

প্রাচীকে ছাড়া যেনো দিন যাচ্ছেই না। আরশিয়ার রুম থেকে এসে পুরনো সব কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছিল।ঘুমের ঘোরে মনে হলো কেউ গালে হাত দিয়ে স্লাইড করছে আবার মাঝে মাঝে চুলগুলো নিয়ে খেলা করছে।এসির ঠান্ডা বাতাসের জন্য কম্বল গায়ে দিয়েছিল কিন্তু সেটা ভারী হয়ে যেনো তাকেই এখন জাপটে ধরেছে।দম বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম।এক ঝটকায় চোখ মেলে সামনে জ্বলজ্বল করা একজোড়া লাল মণি দেখল।কি হচ্ছে বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল।সামনে থাকা ব্যক্তিটিই তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে।

-"আপনি এখানে কেনো? ছাড়ুন আমায়, দম বন্ধ হয়ে আসছে।"

-"এ জন্মে আর তুমি আমার থেকে ছাড়া পাচ্ছো না, Heartthrob!!"

নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ইন্দ্র ছটফট করতে লাগল।

-"উফ প্রাণহানি, এভাবে ছটফট করো না তো। তোমাকে দেখতে অসুবিধা হয়।"

-"মরে গেলে প্রাণভরে দেখে নিয়েন।"

-"নাহ, এতো তাড়াতাড়ি মরবা না। প্রেমের কাহিনিতে নারীরা সহজে মরে না,তাদের ভালোবাসার প্রতিদান সরূপ পুরুষ মানুষকে জীবন বিলীন করতে হয়।"

-"হ আপনাকে বলছে।কোন নীতিতে পেয়েছেন? "

-"লায়লাকে ভালোবেসে মজনু মরেছে,রোজকে ভালোবেসে জ্যাক প্রাণ দিয়েছে,শিরিকে ভালোবেসে ফরহাদ জীবন দিয়েছে। আর প্রাণপাখি তোমাকে ভালোবেসে করা পাপের শাস্তি বোধহয় উপরওয়ালা তোমাকে এক মূহুর্তের ভালোবাসাতে রেখে দিয়েছে।"

-"আপনার হেয়ালি ভালোবাসা আপনার কাছেই রাখুন আর আমাকে ছাড়ুন। উফফ আমি বেডের সাথে মিশে গেলাম। উঠুন জলদি।"

-"আমি তো এখনো পুরোপুরি ভর ছাড়িই নি, যখন ছাড়ব তখন কি করবা।"

-"হাতির নিচে পিঁপড়া পরেছে।"

ইন্দ্রর মোচড়ামুচড়ির জ্বালায় ইন্দ্রকে ছেড়ে সে উঠে পরল।

-"আল্লাহ বড় বাঁচা বেচে গেছি নইলে বাচ্চাকাচ্চার মুখ থেকে আম্মি ডাক শোনার আগেই ইন্তেকাল করতাম।"

-"যদি তুমি চাও তাহলে আমি ব্যবস্থা করে দিতে পারি।Do you want that?"

ইন্দ্র রাগী চোখে তার দিকে তাকাল।

-"আচ্ছা আপনার সমস্যাটা কি? যখন তখন এভাবে চলে আসেন কেনো?"

-"ভালোবাসা দেখাতে"

-"আপনার ভালোবাসাটা কি রাতের আঁধারেই লুকোয়িত?রাত ঘনিয়ে আসার সাথে আপনার সাহস সঞ্চার হয় আর দিনের আলোয় ফুরিয়ে যায়।কোনটা আসল, রাতের প্রেমিক পুরুষ নাকি দিনের আরনিয়াত তালুকদার?"

ইন্দ্র ভেবেছিলো তার এ কথা শুনে আরনিয়াত চমকে উঠবে কিন্তু সেরকম কিছুই হলো না বরং শান্ত হাতে মুখ থেকে মাস্কটা খুলে ফেলল।

-"হৃদয়ের অন্তরালে দেখো স্বচ্ছ কাচের মতো দেখতে পাবে।ভালোবাসা দিয়ে অনুভব করো খোলা আকাশের মতো সবটা অনূভুত হবে।মায়ার মোড়ানো পর্দাটা সরাও শুধু নির্ভেজাল ভালোবাসাটা দৃষ্টিগোচর হবে।তুমি নিজেই তোমার প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবে।"

-"যে মানুষের দিনের আলোতে এসে সামান্য সম্মানটুকু করার সাহস নেই সে এভাবেই রাতের আঁধারে ভালোবাসার নীতিমালা শোনায়।"

-"তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটাকে অপমান করো না ইন্দ্রবতী। আমি সব মেনে নিতে পারলেও ভালোবাসার উপর দাগ সহ্য করতে পারব না।"

-"তো আপনি আমার থেকে কি আশা করেন?"

-"পিরিত করি আয় এই মনের আঙ্গিনায়
সোহাগের গান শোনাবো প্রেমের লহমায়।
ও মন ঘরে ফিরে আয়, আজও তোরই অপেক্ষায়
হৃদয়ের পিঞ্জিরাখানা খুব যে ছটফটায়"

ইন্দ্রর প্রশ্নের জবাবে আরনিয়াতের মিহি সুরে গাওয়া গান ইন্দ্রর সমস্ত হৃদয়ে আলোড়ন বইয়ে দিল।

-"আপনি কি আমার গায়ে কলঙ্কের দাগ লাগাতে চান?"

-"নারী হলো স্বর্ণের ন্যায় আর পুরুষ কয়লার ন্যায়।সুতরাং কয়লার ছোঁয়াতে স্বর্ণে দাগ লাগবে স্বাভাবিক বিষয়। "

-"কয়লার আগুনে স্বর্ণ পুড়ে যায় "

-"স্বর্ণ পুড়ে না, পরিশুদ্ধ হয়। আসমানের চাঁদেও কলঙ্কের দাগ রয়েছে তাহলে মাটির নারীতে দাগ থাকলে ক্ষতি কি।কিছু কলঙ্ক অনিচ্ছায় আসে আবার কিছু কলঙ্ক স্বেচ্ছায় নেয়। তুমিও নাহয় আমাদের কলঙ্কটা স্বেচ্ছায় বহন করলা।"

-"আপনি এখন দয়া করে নিজের রুমে যান। আমি যেমন আছি আমাকে তেমনই থাকতে দিন।আপনার ভালোবাসার আড়ালে বিষাক্ততার স্বাদ নেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই।"

-"একদিন এমন আসবে এই বিষাক্ততার স্বাদ গ্রহণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে।সেদিন যদি আমি না থাকি তাহলে কিভাবে বিষাক্ততা নিজ অন্তরালে আত্মসাৎ করবে?"

-"সেদিন কখনোই আসবে না। "

-"Okay let's see আসে কি আসে না।কাক বি নি বিলা, তিই বুদ্‌দ্যেশ্‌ ময়া। লিবা কাক বা, লিবা কাক মায়ো দ্রুগোয়ে ইয়া।ইলি তিই বুদ্‌দ্যেশ্‌ মায়া, ইলি উম্‌রিওশ্‌ আত্‌ মেন্যা।"

এক নাগাড়ে নিজের বয়ান শুনিয়ে আরনিয়াত উঠে দাঁড়ালো।পকেট থেকে একটা হেয়ার পিন বের করে ইন্দ্রর মাথায় লাগিয়ে বিনা বাক্যে চলে গেলো।ইন্দ্র হা করে বসে রইল।

আরনিয়াত যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আরশিয়া রুমে ঢুকে আলো জ্বালালো।তীব্র আলোর ঝলকানিতে চোখ বুজে নিল।

-"এভাবে হা করে বসে আছিস কেনো? আশ্চর্যজনক কিছু দেখেছিস নাকি?"

-"না, শুনেছি।"

-"কি?"

-"কালো কাকের বাচ্চা নাকি লাল কাকের অভিশাপ দিয়ে গেলো মনে হয়। কিচিরমিচির করে রাশিয়ান কাকের প্রেমের জ্বালা বুঝিয়ে গেলো।"

আরশিয়া ধাক্কা দিয়ে ইন্দ্রর হুঁশ ফেরানোর চেষ্টা করল।

-"কিহ!ইন্দ্র, এখনো কি ঘুমিয়ে আছিস নাকি? কি সব বকছিস?"

আরশিয়ার ধাক্কায় সম্ভ্রম ফিরল।

-"হুঁ, তুই? কিছু বলবি?"

-"মামনি এসেছে। তোকে ডাকছে।হাতে মুখে পানি দিয়ে আয়,আমি গেলাম। আর হ্যাঁ ভালো করে চোখে পানি দিবি নইলে দেখা যাবে ওখানে গিয়েও কাকের বাচ্চার মতো কিচিরমিচির শুরু করে দিবি।"

আরশিয়া চলে ফেলো। ইন্দ্র তখনও আরনিয়াত এর বলা কথাগুলো নিয়েই ভাবতে লাগল।ফোনের ভাইব্রেশনে ভাবনার জগৎ থেকে বেড়িয়ে এলো।হাতে নিয়ে দেখে সেই নাম্বার।রিসিভ করে কানে ধরল।

-"আজ কেউ তোমার উপর অ্যাটাক করেছিলো?কেমন দেখতে? ফেস দেখেছো?পুরুষ নাকি মহিলা? হ্যালো? কি হলো? কথা বলছ না কেনো??হ্যালো!!"

-"আপনি কে ভাই? অসময়ে ফোন দিয়ে মাথার ভুজিয়া বানাচ্ছেন।দেখুন আপনার যদি এইস আউল ফাউল মজা করতেই মন চাই তো অন্য কারোর সাথে করেন।আমার মাথার স্ক্রু ঢিলা করবেন না দয়া করে।"

-"লাইক সিরিয়াসলি সেস্ট্রা!! এখনো মনে হয় আমি তোমার সাথে মজা করছি!আজ তোমার উপর অ্যাটাক হয়েছিলো এইটা আমি জানি।তারপরও কিভাবে তুমি বলো যে আমি মজা করছি? আমি তোমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি।বড়সড় একটা ষড়যন্ত্রের গুঁটি তুমি।সেই ষড়যন্ত্র থেকেই তোমাকে রক্ষা করতে চাচ্ছি।"

-"Listen, আপনি যেই হোন না কেনো আমাকে বাঁচানোর জন্য কোনোপ্রকার চেষ্টা আপনার করার প্রয়োজন নেই।যদি আমার উপর কোনো বিপদ আপতিতই হয় তাহলে তা থেকে উদ্ধার করার জন্য আব্বি আছে,ফুফা আছে; উনারাই যথেষ্ট আমার জন্য।"

কথাটা বলেই ইন্দ্র ফোন কেটে দিল। নাম্বারটা ব্লক লিস্টে ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেলো চোখে মুখে পানি দিতে।

দোতলার প্রশস্ত মার্বেল বসানো বারান্দা। শ্বেতপাথরের রেলিং ধরে নিচে তাকালেই দেখা যায় ছিমছাম আলোয় ভেজা বাগান, ঝরনার মৃদু শব্দ। বারান্দার এক কোণে রাখা দামী টিক কাঠের রকিং চেয়ারটা আস্তে আস্তে দুলছে।

চেয়ারে বসা মানুষটার শরীরজুড়ে আছে এক ধরনের থেমে থাকা ব্যস্ততা। সিল্কের কালো শাল কাঁধে ঝুলে আছে, হাতে ধরা ফোনের পর্দায় বারবার জ্বলে উঠছে একটি নাম আর তার নিচে নিঃশব্দে ভেসে উঠছে “Switched Off”।

বাইরের রাস্তার হেডলাইটের প্রতিফলিত আলো এসে কাঁচ ঘেঁষে পড়েছে বারান্দায়। সেই আলোয় তার অবয়ব ধরা পড়ে চুলে হালকা রুপালি রেখা,মুখটা অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। যেন এ বাড়ির সব আলো তাকে স্পর্শ করেও অস্বীকার করে।

-"সেস্ট্রা, তুমি নিজেও জানো না তোমার উপর কতবড় বিপদ ঘনিয়ে আসতে চলেছে।তাওয়ান মঞ্জিলের সমস্ত চিহ্ন বিলীন হয়ে যাবে। এক গভীর ষড়যন্ত্রের ছায়ায় ঢেকে গেছে তাওয়ান মঞ্জিল আর সেই ষড়যন্ত্রে নিজের অজান্তেই তুমি হয়ে উঠেছো সেই অন্ধকার কাব্যিক নীলনকশার মূল্যবান চাল।যাকেই বিশ্বাস করে হাত ধরবে সেই মাঝ নদীতে তোমাকে ডুবিয়ে দিবে।সময় থাকতে সত্য খুঁজে নেও, অসময়ে ফাঁদে পতিত হতে হবে।"

আরও একবার কল করার ট্রাই করল কিন্তু পুনরায় বন্ধ পেলো।

-"নাহ, এবার তো দেখছি নিজেকে তোমার সামনে হাজির করতেই হবে। AA, প্রহেলিকা দুজনের হাত থেকে তোমাকে রক্ষা করা আমার দায়িত্ব আর সে দায়িত্ব থেকে আমি পিছু হটতে পারি না।দুই প্রান্তে দুই শিকার মাঝে তুমি এক বেচারি হরিণী অথচ দুজনেই তোমার অতি আপন।ভবিষ্যতে টক্কর হবে প্রহেলিকা আর AA র মধ্যে, হয় যেকোনো একজন টিকবে নতুবা দুজনেই শেষ হয়ে যাবে।কাকে ছেড়ে কাকে বেছে নিবে নাকি তোমার হাতেই শেষ হবে, সবটাই জানা যাবে শুধু সময়ের অপেক্ষা। "

হাত থেকে ফোনটা পাশে থাকা টেবিলের উপর রেখে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল।ভোরের অপেক্ষা, এক নতুন ভোর এক নতুন কাহিনির সৃষ্টি করে।

-----------

ছাদের রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে খুব মনোযোগ সহকারে নিজের অষ্টাদশীর ছবি দেখছে থীবান।কয়েকটা চুল চোখের উপর পরেছে তা কানের পাশে গুজতে গিয়ে আনমনে হাসছে অষ্টাদশী, সে হাসিই থীবানের হৃদয়ের অন্তরে গিয়ে বিধছে।এক হাত বুকের বা পাশে রেখে মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখছে সে।থাইবা নওশাদ পা টিপে টিপে এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনের দিকে উঁকি দিল।

-"রূপ তো ভালো আছে তা গুণের কি খবর?"

হুট করে মায়ের আওয়াজ শুনে ফোনটা হাত থেকে পরে যাচ্ছিলো, থাইবা নওশাদ তা ধরে নিজে ভালো করে দিদানের ছবি দেখতে লাগল।

-"মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগছে, কোথায় যেনো দেখেছি ঠিক মনে করতে পারছি না।"

-"মম,দিনদিন স্মৃতিশক্তি বিলুপ্ত হচ্ছে তোমার।"

-"তুমি কি আমাকে বুড়ি বললা থীবান? তোমার মমকে দেখে আজও শত শত পুরুষ ক্রাশ খায়।সে আমি তো লয়ান বান্দি একারণেই তোমার ড্যাড এর ঘাড়ে বসে আছি।"

-"তোমাকে একটা আইডিয়া দি মম। ড্যাড তো সারাদিন অফিসের কাজেই বিজি থাকে তুমি না হয় সেই ফাঁকে I mean If you want.. "

-"ছেলে হয়ে নিজেরই মম ড্যাড এর সংসার এ ফাটল ধরানোর ধান্দায় আছো?তোমার ড্যাডকে তো চিনোই, আমি যদি সেরকম কিছু করি তাহলে কেয়ামত শুরু করে দিবে।"

থীবান মুচকি হাসি দিল।তার ড্যাড যে তার মমকে কতটা ভালোবাসে সে খুব ভালো করেই জানে।নানার একমাত্র মেয়ে তার মম।নানার অমতে গিয়ে মমকে তুলে এনে বিয়ে করে ড্যাড যদিও নানির পূর্ণ সম্মতি ছিল।সুতরাং সেরকম ধকল পোহাতে হয় নি।

-"মেয়ের পরিবার এর সাথে কি কথাবার্তা বলব নাকি তুমিও তোমার ড্যাড এর মতোই, হুম, ড্যাড এর গুণধর ছেলে হয়ে তার কীর্তি বহাল রাখবা?"

-"এখনো কিছু শুরুই হয় নি মম।"

-"এখনো কিছু শুরু হয় নি মানে? থীবান নওশাদ এই রাতের বেলা ছাদে দাঁড়িয়ে একজন রূপবতী রাজকন্যার ফটো দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে তারমানে কি বোঝায়, থীবান নওশাদ পুরোপুরি ঘায়েল হয়ে গেছে।মেয়েটার গুণ আছে বলতে হবে, আমার ছেলেকে এইরকম পাগল বানিয়ে অসাধ্য সাধন করেছে সে।তা আমার বৌমার নাম পরিচয় কিছু বলবা নাকি অজানায় থাকবে? আমার নাতি-নাতনির থেকে জানা লাগবে?"

-"মম,তোমার স্মৃতিশক্তি আসলেই দুর্বল হয়ে পরেছে।তুমি সিরিয়াসলি চিনতে পারছ না?"

-"যতই না করি তবুও বয়স তো হয়েছেই। এখন বলো বাবা ইনি কে?"

-"দিদান। দিদান সানোয়াল"

-"সানোয়াল? মানে দিহান সানোয়াল এর... "

-"রাজকন্যা আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর একটা মাত্র বোন।"

-"শেষমেষ বেস্ট ফ্রেন্ড এর বোন?"

থাইবা নওশাদ এবার সিরিয়াস হয়ে গেলেন। তার থমথমে মুখ দেখে থীবান থমকে গেলো।

-"মম, বেস্ট ফ্রেন্ড এর বোন তো কি হয়েছে?অসুবিধা কোথায়? তুমি আমার সাথে আছো তো মম? তুমিই আমার লাস্ট হোপ।মম প্লিজ, আমার আশা ভেঙে দিও না।"

ছেলের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে থাইবা নওশাদ ফিক করে হেসে দিলেন।

-"আমি তো চিন্তায় পরে গেছিলাম তুমি না হয় দিয়ানের বোনকে বউ বানালে কিন্তু দিয়ান যদি তোমার বোন চাই? আমার তো একটাই ছেলে, মেয়ে তো নেই। নতুন করে মেয়ের প্লানিং করতে হবে কিনা সেটা ভাবছিলাম।"

-"মম তুমিও না পারো বটে।ভয় পাইয়ে দিছো।"

-"পাগল ছেলে, আমার একটা মাত্র চোখের মণি তুমি আর আমার চোখের মণির থেকে তার মণি কিভাবে কেড়ে নিতে পারি।চিন্তা করো না পুরো দুনিয়া তোমার বিরুদ্ধে গেলেও আমি, তোমার মম সব সময় তোমার সাথে থাকবে।"

থীবানের গালে হাত দিয়ে কথাগুলো বললেন থাইবা নওশাদ। মায়ের এমন কথা শুনে থীবান ইমোশনাল হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল।

-"I know mom, you are the best. চিন্তা করো না, তোমার ছেলে তার অষ্টাদশীকে ঠিক জয় করে নিয়ে আসবে।"

-"এখন নিচে চলো, তোমার ড্যাড দুজনকে না পেয়ে হার্ট
করে না বসে আবার।"

----------

মায়ের ঘরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইন্দ্র।৪৫ মিনিট ধরে মায়ের জ্ঞানী বাক্য শুনছে।শুধু একা না সাথে আব্বি এবং আরশিয়াকে নিয়ে।যদিও আরশিয়ার উপর তেমন ঝড় যাচ্ছে না, তার আর আব্বির উপরই তীব্র হচ্ছে বারবার।

-"তোমাদের বাবা মেয়ের জ্বালায় আমি আর পারি না। মেয়েকে কি আজীবন ঘরে রেখে দিবা? এইরকম অবস্থা হলে তো ফেল করা ছাড়া গতি থাকবে না।আর কে এই ফেলটুস মেয়েকে নিবে।কেউ নিবে না বরং মুখের উপর চুনকালি মাখিয়ে আসবে।এই বয়সে বাচ্চাকাচ্চা ঘরে কেনো বসে থাকবে?বাইরে যাবে, কলেজ-ভার্সিটি যাবে, বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডাবাজি করবে তা না, ঘরের গন্ডিতেই অস্তিত্বহীনের মতো করে পড়ে রয়েছো।আর তুমি, আরশু, ইন্দ্রর কথা তো বাদ দিলাম। তুমি অন্তত বন্ধুবান্ধবদের সাথে ঘুরতে পারো, কোথাও খেতে যেতে পারো।সারাক্ষণ ভুতের মতো দুজন দু কামরায় পড়ে থাকো।"

-"ইনায়া, ওরা বন্ধুবান্ধব কোথায় পাবে যে ঘুরবে ফিরবে"

-"সেটাই তো, ওরা ছাড়া তো পৃথিবীতে আর কোনো মানুষ নেই। সবাই উধাও হয়ে গেছে।বন্ধুবান্ধব কোথায় পাবে? এই তোমার জন্যই এমন হয়েছে। মাথায় করে রেখে রেখে এখন হাঁটতে ভুলে গেছে।"

-"ওদের হাঁটার প্রয়োজন নেই, আমিই সারাক্ষণ ওদের মাথায় নিয়ে ঘুরব। ওদের জন্য আমিই যথেষ্ট। "

-"তারপর দেখব নি তোমার জন্য কে যথেষ্ট হয়।অনেকদিন তান্দুরী ডান্ডার ঠান্ডা বারি খাও নি তো তাই এই দশা।"

নওয়াজ দেওয়ান এবার চুপচাপ গোমড়া মুখে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।তার এ হাল দেখে ইন্দ্র আর আরশিয়া দুজনেই মুখ টিপে হাসি দিল।

-"ইন্দ্র, ভালো করে শুনে রাখো, এমনিতেই যথেষ্ট কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছো দয়া করে আর না। ভালোয় ভালোয় পড়াশোনার গন্ডি চুকাও, আমি তোমার জন্য পাত্র খুঁজছি।যত দ্রুত সম্ভব তোমার বিয়েটা দিয়ে দিব।"

এক নিমেষেই হাসি উবে কালো মেঘ ঘনিয়ে এলো ইন্দ্রর মুখে।হৃরতেশ এর হাসিমাখা মুখ ভেসে উঠল।আরশিয়ার মুখও কালো হয়ে গেলো। না চাইতেও মনে হৃরতেশ এর নাম জপল।

-"ইনায়া কোন কথা থেকে কোন কথায় চলে গেলে?এখনো যথেষ্ট ছোটো আছে দুজনেই সুতরাং দ্বিতীয়বার এই কথা মুখে আনবে না।"

-"দুজন?আমি তো দুজনের কথা বলি নি। আমি শুধু ইন্দ্রর কথা বলেছি।ধলেশ্বরী পাড়ে যে কান্ড ঘটিয়ে এসেছে তাতে তো মুখ উজ্জ্বল হওয়ার কথা না তাইনা?"

-"আম্মি আমি কি ঘটিয়ে এসেছি?"

মায়ের কথায় অবাক না হয়ে পারল না। সে যে জঙ্গলে গেছিল সেটা কেউ দেখেছে কিনা এ নিয়ে ভয় হতে লাগল।ইনায়া দেওয়ান কিছু বলতে গেলে নওয়াজ দেওয়ান তাকে থামিয়ে দেয় তবুও স্বামীর কথায় কান না দিয়ে মেয়েকে সাবধান করে।

-"আরনিয়াত আর তোমার সে রাতে একসাথে নিরিবিলি স্থানে থাকার কথা সবাই জানে।কে বা কারা তোমাদের দুজনের ছবি তুলে সারাগ্রাম লাগিয়ে রেখেছিল।সকলে দেখেছে আর তোমার আব্বির উপর তার শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।আর এ ঘটনার জন্য নাদী আর তাবাহুরের কেস থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।তোমার জন্য তোমার আব্বিকে কতটা অপমানিত হতে হয়েছে তার কোনো ধারণা আছে তোমার?"

-"ইনায়া!!আমার মেয়ের সাথে এভাবে কথা বলার সাহস হয় কিভাবে তোমার?যা করেছে তোমার ননদের ছেলে করেছে, আমার মেয়ের দোষ কোথায়? আমি তোমার সব কথায় সায় দিতে রাজি আছি কিন্তু সেটা যদি আমার মেয়েকে আঘাত করে তাহলে কিন্তু নয়।দ্বিতীয়বার যেনো এ ভুল না হয়।"

নওয়াজ দেওয়ান এর গম্ভীর হুংকারে তিনজনেই চমকে উঠল।ইন্দ্র ছলছল চোখে আব্বির দিকে তাকিয়ে রইল।নওয়াজ দেওয়ান ইন্দ্রর মাথায় হাত রাখল।

-"মা, তুমি আর আরশিয়া রুমে যাও।ডিনারের সময় ডাইনিং হলে চলে এসো।"

নওয়াজ দেওয়ান এর কথা শেষ হতেই ইন্দ্র এক দৌড় দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।যে আব্বি তাকে এতো ভালোবাসে সে আব্বিকেই তার জন্য অপমানিত হতে হয়েছে এটা মানতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে না গিয়ে সোজা ছাদে চলে গেলো।রাতের নির্জনতা আর মনের নিঃসঙ্গতা যেন এক সুরে মিলে গিয়েছে।অন্ধকার আকাশের মতোই মনের ভেতর বাসা বেধেছে অনাহুত মেঘ।আব্বির অপমানের জন্য এবারেও আরনিয়াত তালুকদারই দায়ী!!!সব ঘটনার ঘুরে ফিরে একটা নামে এসেই আটকায় আর সেটা হলো আরনিয়াত তালুকদার।নিজেকে এই বিষাক্ত প্রণয়নের গন্ডি থেকে বের করতে হবে যেটার অস্তিত্ব কখনো ছিলোই না!!!!

চলবে.....

Address

Savar

Website

facebook.com

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Arifa Khatun posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Shortcuts

Want your business to be the top-listed Media Company in Savar?