https://www.facebook.com/196955920174622/

Arifa Khatun

Home
Bangladesh
Savar
Arifa Khatun

Assalamualaikum 💚💚
(8)

28/05/2025

#দগ্ধ 🍁🍁
লেখিকা
পর্ব-২৭

[বিনা অনুমতিতে কপি করা নিষিদ্ধ ]

সোফায় বসে রয়েছে থীবান,ফাইলটা এখনো হাতেই যেটা দিয়ানকে দিতে এসেছিল সে।তবে মনোযোগ ফাইলের দিকে নয়, কান পেতে মনোযোগ সহকারে শুনছে সে, রান্নাঘর থেকে "ঠক ঠক " আওয়াজ আসছে।অধীর আগ্রহের সহিত সেদিকে চেয়ে রয়েছে।ধীরে চলা পায়ের শব্দে মাথাটা নিচু করে নেয়।দিদান আসছে, অতি সাবধানতার সাথে হাতে ট্রে নিয়ে হাঁটছে, একটু উনিশ-বিশ হলেই যেনো সকল পরিশ্রম বৃথা চলে যাবে।ভদ্রতার খাতিরে চোখ তুলে তাকায়,ক্রিম কালারের সালোয়ার কামিজ, মাথায় সাদা ওড়না, কোমড়ের পাশ দিয়ে উকি মারছে বিনুনি করা কালো চুল।গালে রক্তিম আভা, খুব সযত্নে সামনে থাকা টি টেবিলের উপর ট্রেটা রাখল।

-"তুমি এগুলো আনতে গেলে কেনো? অসুস্থ মানুষ, রেস্ট নেওয়া উচিত।শুধু শুধু ধকল পোহাচ্ছো।"

দিদান স্নান হেসে উত্তর দিল;"কে বলল আমি অসুস্থ? আমি তো একদম সুস্থ। "

মৃদু কন্ঠস্বর থীবানের হৃদয়ে ঝংকার তুলে দিল।নেশাভরা চাহনিতে দিদানের দিকে তাকিয়ে পরপর দুবার ঢোক গিলল,দিদান লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেলল।থীবান নিজেও নিজের কাজে বিব্রত হলো।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সে পুনরায় বলে উঠল,

-"কিন্তু তভলীন যে বলল তুমি অসুস্থ তাই দিয়ান অফিসে যেতে পারবে না একারণে ফাইলটা বাসায় দিয়ে যেতে বলেছে।"

-"তভলীন ভাইয়ার হয়তো শুনতে ভুল হয়েছে।আমার মামা অসুস্থ তাই ভাইয়া আম্মুকে নিয়ে মামাবাড়ি গেছে।আমাকে রেখে গেলো, যদি আমি ওখানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে যায় সেই ভয়ে।"

-"ওহ,হতে পারে ভুল শুনেছে।"

-"ভাইয়া হয়তো বলেছে আমি বাড়িতে থাকব আর মামা অসুস্থ তাই ভাইয়া সেখানে যাবে। তভলীন ভাইয়া হয়ত শুনেছে আমি অসুস্থ তাই ভাইয়া বাড়িতে থাকবে।"

-"হ্যাঁ, এটাই বোধহয় হবে, ও হয়ত শুনেছে আমি অসুস্থ তাই দিয়ান বাড়িতে... "

-"আমি ভাইয়া, আমি অসুস্থ "

-"হ্যাঁ , ওইটাই, আমি অসুস্থ "

-"আমি বলতে দিদান।"

দিদানের দিকে এক নজর তাকিয়ে মাথা নাড়ায়।

-"ও হ্যাঁ সরি, তুমি, তুমি অসুস্থ। "

দিদান থীবানকে নার্ভাস হতে দেখে মুচকি হাসে।থীবান মাথা নিচু করে হাটু খামচে ধরে চোখ বুজে নেয়।থীবান নওশাদ, যাকে দেখে মেয়েরা হুঁশ হারিয়ে ফেলে, সে কিনা এই পিচ্চি মেয়ের সামনে হুঁশ হারাচ্ছে।আর বেশিক্ষণ থাকলে সে হয়তো সত্যিই ভুলভাল কিছু বলে দিবে অথবা করে বসবে তার চেয়ে বরং এখন চলে যাওয়াটাই ভালো হবে।তাই ফাইলটা সোফার উপর রেখে ফট করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়াল।দিদান ঠোঁট চেপে হাসি আটকে বলল,

-"ভাইয়া, নাস্তা করলেন না তো"

-"না,বোন। যে নাস্তা আছে তার থেকে লোভ সামলানো মুশকিল,তবে না সামলাতে পারলে মহা মুশকিল।সুতরাং আজ উঠি,নাস্তা যেদিন আমার নিজের হবে সেদিন আর তোমার বলার অপেক্ষায় থাকব না।নিজ দায়িত্বে খেয়ে নিব।"

দিদানের দিকে তাকিয়ে দেখে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই প্লেট থেকে মিষ্টির এক কোণা খেয়ে নিল।

-"এই মিষ্টি খুব একটা মিষ্টি না। আমি আমার মিষ্টি খেতে আবার আসব। ততদিনে মিষ্টি যেনো সযত্নে থাকে।"

বলেই দ্রুত চলে গেলো।দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে দিদান সশব্দে হেসে উঠল।প্লেটের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় নুইয়ে গেলো।সোফায় বসে থীবানের খাওয়া মিষ্টিটা নিজেই পুরোটা খেয়ে নিল।

-"সযত্নেই থাকবে, শুধু আপনার আসার অপেক্ষা "

খাওয়ার শেষ করে ট্রে রান্নাঘরে রাখতে গেলে ফোন বেজে উঠে।হাতে নিয়ে দেখে দিয়ান ফোন করেছে।

-"কিরে, দিদান তুই না বললি মামা অনেক অসুস্থ। এসে তো দেখি মামা দিব্যি নাচানাচি করছে।"

-"মামা সত্যিই অসুস্থ ভাইয়া।পা কেটে গেছে।"

-"হ্যাঁ তো কেটেছে, কাঁচের টুকরোয় সামান্য কেটেছে তাও সপ্তাহ খানিক আগে। এখন তো সে দাগও দেখা যাচ্ছে না। "

-"আহা, ভাইয়া,কেমন ভাগ্নে তুমি?সপ্তাহ খানেক আগে মামার পা কেটে গেছে তোমার তখন যাওয়া উচিত ছিল, একেতো গেছো দেরি করে তার উপর আবার বলছ ছোটো কাটা।কি মানুষ তুমি? দয়া মায়া কিছু নেই? সেই ছোটো কাটাটাই বড়ো হতে পারত।তারপর সেইখানে জীবাণু ঢুকে ইনফেকশন হতে পারত।তখন? তখন তো পা পচে যেতো। তারপর তো বেচারার পা কেটে ফেলতে হতো।"

-"থাম বোন থাম।তুই তো মামারে মেরে ফেলার ধান্দায় আছিস।আর আগাস না, নইলে সত্যিই মরে যাবে।আচ্ছা তভলীন কি ফাইল দিয়ে গেছে?তোর জ্বালায় আমার অফিসেও যাওয়া হলো না।"

-"আবার ভাইয়া? আমার জ্বালায় মানে কি? তুমি তো আচ্ছা ungrateful মানুষ। মামার কত কিছু হতে পারত, তার আগেই শেষ দেখা করার জন্য ইনফরমেশন দিলাম আবার আমারই দোষ দিচ্ছ?"

-"আচ্ছা, বোন। মাফ কর, ভুল হয়ে গেছে।ফাইল এর কি হলো?"

-"ওই যে তোমার একটা বেস্ট ফ্রেন্ড আছে না? চুলগুলো উল্লুকের পশমের মতো হাওয়ায় উড়ে, নাকটা
আর্কিওপটেরিক্সের মতো,কান দুইটা কুমিরের লেজ আকৃতির। ঠোঁট দুইটা শোবিলের মতো।হাত আর পা বড় বড়। দেহ দানবের মতো। সেই ফ্রেন্ড এসে ফাইল দিয়ে গেছে।"

-"আচ্ছা বোন, আমার কানে মনে হয় সমস্যা হয়েছে।আমি পরে ফোন দিচ্ছি। যেই ই ফাইল দিয়ে যাক না কেনো, ফাইলটা সামলায়ে রাখ।অনেক দরকারি,আর সাবধানে থাকবি। আমরা তাড়াতাড়ি চলে আসব। আল্লাহ্ হাফেজ। "

-"আল্লাহ্ হাফেজ।"

দিয়ান এবার দ্রুত থীবানকে কল করে।একবার রিং হয়ে কেটে যায়,দ্বিতীয়বারের বেলায় রিসিভ করে।

-"হ্যালো.."

-"তোর হাই হ্যালো রাখ আগে বল,আমি তুই আর আরনিয়াত বাদে আমাদের কোনো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো?"

-"হঠাৎ এই কথা কেন?"

-"আরে বলনা, আচ্ছা আমি বর্ণনা করছি,, চুলগুলো নাকি উল্লুকের পশমের মতো, ফুঁ দিলে উড়ে,তারপর নাকটা আর্কিওপটেরিক্সের মতো,কান কুমিরের লেজ টাইপ আর কি জানি,, উফ মনে পরছে না,, কি,, কি,, ও হ্যাঁ ঠোঁট দুটো শোবিলের মতো।বলনা এমন কোনো ফ্রেন্ড ছিলো আমাদের?"

-"বাল, তুই মানষের বর্ণনা দিলি নাকি কোনো RIP হওয়া মিক্সড জানোয়ার এর বর্ণনা দিলি।"

-"ধুর হালা, জলদি ক আগে।"

-"না এমন কোনো ফ্রেন্ড ছিল না। কিন্তু কেনো?"

-"দিদান যে বলল।"

-"কি বলল?"

-"এইরকম একজন নাকি বাসায় গেছিলো ফাইল দিতে।আচ্ছা তুই কই বলতো, পারলে বাসা থেকে ঘুরে আসিস। "

-"আমি একটু আগে তোর বাসায় ফাইল দিয়ে বেরিয়ে আসলাম।এখনো অর্ধেক রাস্তাও যায় নি।"

-"ও আচ্ছা, তাহলে কি এমন কাউকে দেখেছিলি....."

দিয়ান আর কিছু বলতে পারল না, থীবান ফোনটা কান থেকে খানিকটা দূরে সরালো।একটু পরই ফোনেও ওপাশ থেকে গগনবিদারী অট্টহাসি শুনতে পেলো,কল কেটে ফোন দ্রুত পকেটে পুরে ফেলল।

----------

ঘড়ির কাটা ৯টা ছুঁই ছুঁই,বাইরে প্রচন্ড গরম পরেছে।ওড়নাটা মাথায় কোনোমতে প্যাঁচিয়ে তাওয়ান মঞ্জিলে প্রবেশ করল ইন্দ্রিয়াত দেওয়ান। হলরুমে যেতেই একজোড়া নতুন চোখের সাথে পরিচিত হলো, তার দিকে সরু চোখে চেয়ে রয়েছে চোখজোড়া।নওয়াজ দেওয়ান আর চোখের মালিক বসে রয়েছে।গাড়ি পার্ক করে হৃরতেশ এসে ইন্দ্রর পিছে দাঁড়াল।হৃরতেশকে দেখে চোখজোড়া খুশিতে চিকচিক করে উঠল।ব্যক্তিটি সোফা ছেড়ে উঠে এসে হৃরতেশকে জড়িয়ে ধরল।খানিক চাপা কান্নার আওয়াজ পেলো ইন্দ্র।সোফায় তখনও বসে রয়েছেন নওয়াজ দেওয়ান। চোখেমুখে কঠোরতা,ইন্দ্র মাথা নিচু করে গেলো।

-"আব্বি...আমি... "

-"রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নেও।ওষুধ আছে,খালি পেটে খাওয়া যাবে না। যাও।"

ইন্দ্র মাথাটা নারিয়ে রুমে যাবার জন্য উদ্যত হলো।সিঁড়ির উপর থেকে নিচে তাকালো, ব্যক্তিটি তখনও হৃরতেশকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।একপলক তাকিয়ে নিজের রুমে গেলো। কাবার্ড থেকে অফ হোয়াইট সালোয়ার কামিজ নিয়ে ওয়াশরুম এ ঢুকে গেলো।মিনিট দশেক পর ওয়াশরুমে দরজায় কড়া নারায় শব্দ পেলো।দু ঘা দিল কেউ,তারপর কিছুক্ষণ বিরতি,পুনরায় শব্দ শুনতে পেলো।সচরাচর কেউ এভাবে ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কায় না, খুবই প্রয়োজন থাকলে প্রাচী ডাকে।

কেউ কথা বলে উঠল কিন্তু ট্যাপ থেকে পানি পরার শব্দে শোনা গেলো না। ট্যাপটা অফ করে শুনতে গেলে সব নিশ্চুপ হয়ে যায়।শাওয়ার নেওয়া শেষে তোয়ালেটা চুলে ভালোভাবে প্যাঁচিয়ে বাইরে এসে দেখে কেউ নেই।করিডরে গিয়েও খুঁজে কিন্তু কাউকে পায় না।

তোয়ালে খুলে চুল মুছতে মুছতে ফোনের নোটিফিকেশন এর শব্দে ফোনটা হাতে নিল।ফোন আরশিয়া রেখে গেছে ।অচেনা নাম্বার থেকে Whatsapp এ মেসেজ এসেছে।চেক করতেই দেখে কয়েকটা ছবি, যেখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে একটা লম্বা কালো পোশাক পরা অবয়ব ২৪/২৫ বছর বয়সী কাউকে ছুরি দিয়ে আঘাত করছে।যুবক ছেলেটি গলা কেটে মাটিতে লুটিয়ে পরেছে।তাছাড়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহাংশ চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে সে ছবিও দিয়েছে।শেষ ছবিটাতে এসে ইন্দ্র থমকে যায়।কালো অবয়বটির চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সে আর কেউ নয়, আভিশান তালুকদারের বড় ছেলে আরনিয়াত তালুকদার। হাত থেকে ফোনটা বিছানায় পরে যায়।

ইন্দ্র যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। বিছানায় বসে ফোন হাতে নিয়ে নাম্বারটা চেক করল।এই নাম্বার থেকে কিছুদিন আগে তার ফোনে কল এসেছিল,যেখানে একটা পুরুষালী কন্ঠ তাকে বলেছে নাদীর খুনের পিছনে তার অনেক কাছের একজন এর হাত রয়েছে।তাওয়ান মঞ্জিলে এসে আহাজারি করা মায়ের ছেলেটি হারানোর পিছনেও নাকি এই বাড়িরই কারোর হাত রয়েছে।সেদিনের পর থেকে আরনিয়াতের উপর সন্দেহ ছিল, আর এখন তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে গেলো।জঙ্গলে ইন্দ্রকে মারতে আরনিয়াতই এসেছিল, তারপর নিজেকে বাঁচাতে রাতে ওই নাটক।ইন্দ্র যখন এসব ভাবছিলো তখন রুমে ইনায়া দেওয়ান, প্রাচী এবং আরশিয়া প্রবেশ করল।আরশিয়া আগে থেকেই সবাইকে ইন্দ্রর চোট পাওয়ার কথা জানিয়েছে।ইনায়া দেওয়ান এসেই মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।

-"এতো কেয়ারলেস হলে চলে নাকি। একটু সাবধানে থাকতে হয়,মা।মায়ের জান তুমি।এবার কিছু হয়ে গেলে মা সত্যিই মরে যাব।অন্তত আমাকে বাঁচানোর জন্য নিজেকে সাবধানে রেখো।"

-"আম্মি,আমি একদম ঠিক আছি।এই দেখো, এইযে আমার কিচ্ছু হয় নি।আপনি একদম চিন্তা করবেন না, এরপর থেকে নিজেকে সাবধানে রাখব।"

প্রাচীর দিকে তাকিয়ে দেখে চোখে পানি টলমল করছে। এখনই কেঁদে সাগর বানিয়ে দিবে।ইনায়া দেওয়ানকে ছেড়ে প্রাচীকে গিয়ে জড়িয়ে ধরল।আরশিয়া পাশ থেকে বলে উঠল,

-"আঙ্কেল-আন্টি এসেছে,প্রাচীকে নিয়ে যাবে।"

ইন্দ্র অবাক হয়ে আরশিয়ার মুখের দিকে তাকায়,তার তাকানো দেখে প্রাচী ইন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।এতো বছর একত্রে থেকে আজ আলাদা হয়ে যাবে।একে-অপরের এতো আপন হয়েও, এক ঝলক দেখার জন্য দিনের পর দিন, মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হবে।আজ থেকে সে এ বাড়ির মেহমান হয়ে যাবে।ক্ষণিকের জন্য আসবে, আবার অশ্রুভেজা নয়নে ফেরত যাবে।ইনায়া দেওয়ান মেয়েদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়;

-"এভাবে কান্না করে না, মেয়েদের আসল ঠিকানায় তাদের শ্বশুর বাড়ি,স্বামীর বাড়ি।মায়ের নাড়ি ছেঁড়া সন্তান, বাবার চোখের মণি হয়েও একটা সময় মেয়েদের সেই মা-বাবার জন্য অতিথি হয়ে যেতে হয়।১০মাস১০ দিন গর্ভে রেখে প্রতিটা মুহূর্ত মেয়ের মুখখানি দেখার জন্য মা যেভাবে ছটফট করে, মেয়ের বিয়ের পরেও মা সেভাবেই ছটফট করে।"

তাদের সাথে আরশিয়াও যোগ দেয়।ধীবর আসছিলো প্রাচীকে ডাকার জন্য, এসে দেখে চারজন চারজনকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি, নাকের পানি এক করছে।বেচারা ধীবরের খারাপও লাগছে, হাসিও পাচ্ছে, আবার ভয়ও করছে।এখন যদি প্রাচী বলে বসে যাবে না তার সাথে এ কারণে।

ইনায়া দেওয়ান ধীবরকে দেখে সবাইকে শান্ত হতে বলে।ধীবর প্রাচীর কানের কাছে এসে ধীর স্বরে বলে;

-"জান, আজ বাসায় চল। তারপর তো কান্নাকাটি বাকি আছে।এখনই সব পানি ফুরিয়ে ফেললে তখন কি করবি।"

প্রাচী কনুই দিয়ে ধীবরের পেটে গুতা দিল,মুখে হাসি রেখে এক হাত দিয়ে নিজের পেট চেপে ধরল সে।

-"মা,আম্মু আব্বু অপেক্ষা করছে।প্রাচীকে নিয়ে নিয়ে বাবা নিচে যেতে বলল।"

-"হ্যাঁ, বাবা। তুমি চলো আমরা আসছি।"

ধীবরের ইচ্ছে ছিলো প্রাচীকে সাথে করেই নিচে যাওয়ার কিন্তু শাশুড়ীর সামনে তো আর সে প্রস্তাব রাখতে পারে না, অগত্যা একাই যেতে হলো।কিছুক্ষণ পর প্রাচীকে নিয়ে সবাই নিচে নামল।নতুন লোকটি এখন আর নেই, সাথে হৃরতেশও। ইন্দ্রর অবস্থা দেখে ধীতি আরমান ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে তার জবাবে ইনায়া দেওয়ান উত্তর দিলেন।কথাবার্তা শেষ করে বাড়ি ফেরার জন্য উদ্যত হলেন রোশান আরমান। প্রাচী চলে যাবার সময়ে আরশিয়া, ইন্দ্র দুজনেই ডুকরে কেঁদে উঠল। সকলে তাদের কান্নার আওয়াজ এ চমকে তাকাল,পরক্ষণে সকলেই মুচকি হাসি দিলো শুধু ধীবর ব্যতীত। প্রাচী দুজনকে জড়িয়ে ধরলে সে টেনে প্রাচীকে সরিয়ে দেয়।

-"প্রাচী, ওদের দুজনের এখন রেস্ট করার প্রয়োজন। বাড়ি চলো এখন। "

-"না, ভাইয়া আমরা ঠিক আছি।"

আরশিয়া প্রাচীকে আবার জড়িয়ে ধরতে এলে ধীবর সামনে চলে আসে।

-"শালীকা, আমার বউকে এবার প্লিজ ছেড়ে দেও।কখন না জানি পালটি খেয়ে বলে আমি স্বামীর ঘরে যাব না। আমার এতো বড়ো সর্বনাশ করো না শালীকা।"

ধীবরের এ কথাই প্রাচী এবং আরশিয়া দুজনেই ধাক্কা দিয়ে তাকে সাইডে সরিয়ে দেয়।আরশিয়া এবং ইন্দ্র এসে প্রাচীকে বলতে থাকে;

-"যদি দেখেছিস ভাইয়া বাংলা সিরিয়ালের স্বামীদের মতো শুরু করেছে তাহলে ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা ঝাঁটার বারি দিয়ে ভুত তাড়াবি।তাও যদি না হয় তো আমরা আছি।"

-"আব্বে শালীকা নামক ঘসেঠি বেগমের দল, আমার পাকস্থলীতে নিউরন অ্যাটাক করে দিও না। আমাকে বউহীন এতিম বানিয়ো না।"

প্রাচী ধীবরের দিকে রাগী চোখে তাকায়।ধীবর সে তাকানো পাত্তা দেয় না।

-"দেখো বউ, বিয়ের পর এখন অব্দি আমি বাসর করতে পারি নি। এই জ্বালা তুমি বুঝবা না। সুতরাং ভালোয় ভালোয় বাসায় চলো।"

ধীবরের এ কথায় উপস্থিত সকলের কাশি উঠে যায়।ধীতি আরমান ছেলের কান ধরে এক পাশে সরিয়ে নিয়ে আসে।

-"মান-সম্মানের তেরোটা বাজাচ্ছো কেনো ধীবর?"

-"আম্মু কান ছাড়ো। আর তোমার বউমাকে নিয়ে চলো।"

-"আচ্ছা আচ্ছা নিয়ে যাব তো।প্রাচী মা,চলো। নইলে তোমার স্বামী বেচারা এবার সত্যিই নিউরন অ্যাটাক করবে।"

শ্বশুর এর কথা শুনে প্রাচীর দৌড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। এতো মানুষের সামনে ধীবরের জন্য এভাবে লজ্জায় পরতে হচ্ছে।অবশেষে প্রাচীকে নিয়ে চলে গেলো। ইনায়া দেওয়ান নিরবে কিছুক্ষণ চোখের পানি ফেললেন, জন্মদাত্রী মা না হোন,মা তো তিনি।প্রাচীর বিদায়ের পর সকলে নিজেদের মধ্যে স্বাভাবিক হচ্ছিল, কোথা থেকে পানির বোতল হাতে আরনিয়াত আসে।

-"তো মিস.ইন্দ্রিয়াত দেওয়ান,সারারাত আমার সাথে ফান করে সকালে কার সাথে ফিরলেন?"

ইন্দ্র কঠোর চোখে তার দিকে তাকায় কিন্তু তার কোনো হেলদুলই নেই।নওয়াজ দেওয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-"কি পিতা আপনি? গভীর রাতে মেয়েকে পরপুরুষ এর হাতে তুলে দিতে লজ্জা করে না?"

-"আরনিয়াত, মামার সাথে এভাবে কেউ কথা বলে, বাবা? আমরা সবাই বড়রা আছি আর তুমি..."

-"আপনি তো চুপই থাকে মিসেস আশিয়ানা। উফফ অসহ্য, যতসব পোকামাকড়ের বাস এ বাড়িতে।"

নীলজা তালুকদার ইনায়া দেওয়ান এর হাত শক্ত করে ধরে একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে।ছেলের সাথে কথা বলার সাহস অব্দি বেঁচে নেই।তার ছেলে পুরোই পাগল হয়ে গেছে।যখন তখন যেটা সেটা করে দিতে পারে।

-"আরনিয়াত আমি এখন এইসব বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক নয়।"

-"তাহলে কোনসব বিষয় এ ইচ্ছুক? মেয়েকে আবার গভীর রাতে পাচার করে দিতে?"

-"আপনার সমস্যাটা কি? আব্বির সাথে এভাবে কেনো কথা বলছেন?"

-"তোর এই সো কলড আব্বিই কাল রাতে আমাকে বলেছে তোকে নিয়ে যেতে"

-"মানে?"

-"মানেটা সিম্পল, তোর আব্বি তোকে ইউজ করছে..."

-"শাট আপ আরনিয়াত। আমার মেয়েকে উস্কে দিয়ে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া প্লানিং যদি থাকে তাহলে আগে থেকেই তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।আমার মেয়ের সুরক্ষার জন্য আমাকে যতদূর অব্দি যেতে হয় আমি ততদুর অব্দিই যাব।এইসব ভন্ডামো বাদ দিয়ে ছোটো ভাই এর মতো অফিসের কাজে মনোযোগ দেও,কাজে দিবে।তোমার সাথে অযথা কথা কাটাকাটি করার সময় আমার নেই,আমি অফিসে গেলাম।"

নওয়াজ দেওয়ান অফিসের জন্য বেড়িয়ে পরলেন। আভিশান তালুকদার এবং এসফার তালুকদার আগে থেকেই অফিসে রয়েছে। আরনিয়াত নওয়াজ দেওয়ান এর যাওয়ার পানে তাকিয়ে ক্রুর হাসি দিয়ে ইন্দ্রর দিকে ফিরল।

-"সো মিস,খেলা কেবল শুরু। এই খেলার শেষ কোথায় তা দেখার জন্য প্রহর গুনতে থাকেন।"

-"আপনি আমাকে চিনেন না, আপনাকে দেখিয়ে দিব খেলার শুরু যেই করুক না কেনো, বাজিমাত সবসময় সত্যেরই হয়।"

-"উহু উহু, মুরুব্বি উত্তেজিত হবেন না প্লিজ। আসল সত্য তোমার নিকট অজানা, যেদিন সে সত্য নিয়ে আসব তোমার সামনে সেদিন হয়ত এই ভাবনার পরিবর্তনও ঘটতে পারে।"

-"বলতে কি চান আপনি? আপনার বিরুদ্ধে সব তথ্য বের করে যদি হাজতবাস না করিয়েছি তো আমার নামও ইন্দ্রিয়াত দেওয়ান না।"

-"এমনিতেও কয়েকদিন পর চেঞ্জ হয়ে যাবে।আর কি বললে হাজতবাস!হাও ফানি।আসল সত্য যখন উন্মোচিত হবে তখন কি প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখার জন্য আমি খুবই আগ্রহী। "

-"আরনিয়াত, এগুলো কেনো করছ? কি চাও তুমি?

-"আমি কি চাই সেটা আপনি খুব ভালোমতোই জানেন, মামী।"

-"বেশ, তাহলে তোমার এইসব বেয়াদবি থামাও, কয়েকদিন ভদ্রতার সাথে থাকো, অফিসের কাজ ঠিকমতো বুঝে নেও।এক সপ্তাহের মধ্যে যদি যোগ্যতা অর্জন করে সামনে দাঁড়াতে পারো তাহলে আমি নিজে কথা দিচ্ছি, ইন্দ্র তোমার..."

-"ভাবী..."

-"নীলজা,অনেক তো হলো। আর কত? ১৫টা বছর কম না, অনেক চেষ্টা করা হয়েছে আর না।"

-"আম্মি, আপনি কি বললেন একটু আগে, ভেবে বললেন তো?"

-"ইন্দ্র, তুমি কিছুই জানো না, সুতরাং বড়দের মাঝে কথা না বলায় ভালো... "

-"কিন্তু আমি তো সব জানি। সুতরাং আপনার কথাতে আর গলছি না।আর আপনার কি এখনো মনে হয় আমি, এই আরনিয়াত তালুকদার সামান্য ইন্দুরের জন্য পাগল হয়ে যাব? জিন্দেগীতেও না, আমার প্লানিং এখন চেঞ্জ হয়ে গেছে।আগে আগে দেখিয়ে হোতা হে কেয়া।"

-"এটা আবার কেমন কথা, ভাবী যখন.... "

-"উফ মিসেস তালুকদার, আপনার স্বভাব আর বদলাবে না তাইতো? যখন যে যেটা বলবে তার কথায় তখন নাচতে শুরু করে দিবেন।"

-"সবাই মানলেও আমি কখনো মানতে পারব না। আমি আরনিয়াতের মা, সুতরাং আমার ছেলের ভবিষ্যতের চিন্তা করার সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে।"

-"সে অধিকার আপনি ১৫ বছর আগেই হারিয়েছেন।দেখুন আমার মুখ চলা অব্দিই সীমাবদ্ধ থাকেন, হাত চললে পস্তাতে হবে।"

-"কি ছেলে তুমি, নিজের মায়ের ক্ষতি করার কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতেও লজ্জা করছে না। "

-"আসলে ফুপি,রাশিয়ায় থেকে মনুষ্যত্ববোধও কুরবানি করে দিয়েছে,মানুষের জীবনের সামান্যতম মূল্যও উনার কাছে নেয়।আপনারা সাবধানে থাকবেন নতুবা দেখা যাবে কখন হুট করে এসে খুন করে দেয়।"

ইন্দ্র দোতলায় চলে যায়,আরনিয়াত সামান্য ভ্রু কুচকে তার যাওয়ার পানে তাকায়। হঠাৎ করে খুন-খারাবি নিয়ে কথা বলায় কিছুটা সন্দেহ হচ্ছে আরনিয়াতের। নিজ মনে কিছু একটা ভাবতে ভাবতে আরনিয়াত নিজের রুমে চলে যায়।আরশিয়া এক কোণায় রোবটের ন্যায় দাঁড়িয়ে সবার কথা শুনছিল, হলরুমের বড় পিলারের দিকে চোখ যেতেই খেয়াল করল ফ্লেবিয়া অদ্ভুত ভঙ্গিতে দোতলায় নীর মঞ্জিলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আরশিয়া পিছন থেকে গিয়ে ফ্লেবিয়ার ঘাড়ে হাত রাখল।ফ্লেবিয়া চমকে পিছে তাকিয়ে আরশিয়াকে দেখে ঘাবড়ে গেলো।

-"এখানে কি করছ?"

-"কি...কি..মানে কিছু না, কিছুই করছি না। "

-"তোতলাচ্ছো কেনো? আর সবার থেকে আড়ালে দাঁড়িয়ে কি দেখছ?"

-"আসলে তোমাদের ফ্যামিলি ম্যাটার তো, আমি ওখানে গেলে কেমন দেখাতো। সে কারণে এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি।"

-"তা না হয় বুঝলাম কিন্তু প্রাচীর কাছে শুনলাম তুমি নাকি অসুস্থ, তোমার তো রুমে রেস্ট নেওয়ার কথা তুমি এখানে,মানে বাইরে থেকে এসেছো নাকি?"

মুহূর্তেই তার মুখ আঁতকে বিবর্ণ হয়ে গেলো।কিছু একটা যেনো লুকোতে চাইল।

-"রুমের মধ্যে ভালো লাগছিলো না তাই বাগানে, আচ্ছা তুমি বলো, তোমরা যেকাজে গিয়েছিলে, হয়েছে সেটা?"

ফ্লেবিয়ার কথাটা আরশিয়ার বিশ্বাস হলো না। এতোক্ষণ দরজার কাছেই ছিল সে কিন্তু তাকে তো এক নজরও দেখল না, তবুও সন্দেহটাকে দমিয়ে রেখে জবাব দিল;

-"না, সেটা এখন পুলিশের হাতে।ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ করতে বারণ করেছে।"

পুলিশের কথা শুনে ফ্লেবিয়ার মুখ চকচক করে উঠল।মুখের হাসিটাকে দমিয়ে রেখে সে পালাতে চাইলো।

-"আচ্ছা আরশিয়া, আমি রুমে গেলাম। মাথা ব্যাথাটা আবার উঠেছে।"

ফ্লেবিয়া চলে যেতে গিয়েও পিছনে ফিরে আরশিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো।সে হাসিতে আলো আঁধারের লুকোচুরি খেলার নির্মম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের স্বস্তি প্রকাশ পেলো কিন্তু তা আরশিয়ার চোখ এড়িয়ে গেলো।

ফ্লোরের দিকে চোখ যেতেই দেখল কাদামাটি লেগে রয়েছে।মাথার উপর জলন্ত সুর্য, বাগানে পানি দেওয়া হয়েছে ভোরের দিকে, এখন কাদা থাকার কথা না। তাহলে কাদামাটির দাগ কিভাবে এলো ভেবে পায় না,সেখানে এতোক্ষণ ফরিয দাঁড়িয়ে ছিলো।

ফরিয যেদিক দিয়ে হেটে গেছে সেদিকেই ছাপ ছাপ দাগ রয়েছে।কেমন একটা খটকা লাগা শুরু হলো, যেদিন থেকে খান পরিবার এ বাড়িতে উঠেছে কিছু না কিছু হয়েই চলেছে।শুরুর দিকে ঠিক থাকলেও ফ্লেবিয়া দিনকে দিন অদ্ভুত চরিত্রের হয়ে যাচ্ছে।

প্রাচীর কাছে শুনেছে ফ্লেবিয়া আর ফরিযের মধ্যে বয়সে আসলে বড় ফ্লেবিয়া, আর ফরিয ছোটো। ছোটো থেকেই ফ্লেবিয়া লেখাপড়ায় দুর্বল, এছাড়া একটা রোড এক্সিডেন্টের জন্য প্রায় ২ বছর হসপিটালে ভর্তি ছিল যার ফলে পড়াশোনার আরও ক্ষতি হয়ে যায়।সময় চলে যায় কিন্তু বয়স থামে না, একারণেই দুজনের জন্ম নিবন্ধন অদলবদল করে ফেলেছে।পৃথিবীর সামনে ফরিয বড়ো আর ফ্লেবিয়া ছোটো।প্রাচীর কাছেও ব্যাপারটা অদ্ভুত লেগেছে। যেদিন থেকে এ সত্য সবাই জেনেছে সেদিন থেকে নাকি ফ্লেবিয়ার আচরণ, ভাব ভঙ্গিমায় পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে।ফরিযের সাথে এখন অব্দি দেখা হয়নি, সে নাকি এখনো ঘুমাচ্ছে।একদিনের মধ্যে এতো পরিবর্তন সব।কিছুই মাথায় ঢুকছে না আরশিয়ার।

তারপর উপর আবার ইন্দ্র আর আরনিয়াতের কাহিনি। প্রাচী সবটায় বলেছে। যে মানুষটা দীর্ঘ ১৫টা বছর একজনকে ভালোবেসে কাটিয়েছে সে মানুষটাই এখন তার প্রিয়তমার সাথে এমন ব্যবহার করছে।ভালোবাসার মানুষটার সাথে কেউ কীভাবে এমন ব্যবহার করতে পারে।সে এখনো কাউকে ভালোবাসে নি সে কারণে হয়ত এসব বুঝে না। এতোক্ষণে সকলে নিজেদের রুমে চলে গেছে, হলরুম শূন্য।

আরশিয়া ফরিযের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল।হুট করে সুঠাম দেহি কারোর সাথে ধাক্কা খেলো।তাকিয়ে দেখে হৃরতেশ, কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে,চোখে মুখে ক্লান্তি।সারাক্ষণ রোবটের মতো ছুটে বেড়ায়।চোখে ক্লান্তি ছাড়াও আরও একটা জিনিস লক্ষ্য করল সে, ভীতি, গভীর তীব্র অজানা একটা আতঙ্ক। যখন দেখেছে তখনই কোনো না কোনো আতঙ্কের ছাপ লেগেই থাকে চেহারায়।আরশিয়ার দিকে না তাকিয়েই পাশ কেটে যেতে গেলো পুনরায় ধাক্কা খায়।এবার তাকায় সে আরশিয়ার পানে।মুচকি একটা হাসি দেয় কিন্তু সে হাসি প্রাণহীন, সৌজন্যতার খাতিরে দেওয়া তা বুঝতে বেগ পেতে হলো না। প্রত্যুত্তরে আরশিয়াও একটা মুচকি হাসি ফিরিয়ে দেয়।হৃরতেশ পিছে ফিরে চলে যেতে গেলে আরশিয়া থামায়।

-"ভাইয়া"

-"হু, বলো"

-"আপনি আবার কোথায় যাচ্ছেন?"

আরশিয়ার দিকে ভালো করে তাকায়।

-"অফিস"

-"নাস্তা করবেন না?"

-"নাস্তা, হ্যাঁ আমি বাইরে থেকে করে নিব নি।"

-"বাইরে কেনো? বাড়িতেই করেন,আপনি হাতমুখ ধুয়ে বসেন, আমি দিচ্ছি।"

-"না,না, দেরি হয়ে যাবে নি।"

-"কিচ্ছু দেরি হবে না। আমি এখনই দিচ্ছি।আপনি আসেন।"

আরশিয়ার কথামতো হাতমুখ ধুয়ে দোতলায় একবার চোখ বুলালো,ফ্লেবিয়া দাঁড়িয়ে রয়েছে। হাতের ইশারায় কিছু একটা বলল তার উত্তরে হৃরতেশ মাথা নাড়িয়ে ডাইনিং হলে চলে গেলো।

আশিয়ানা তালুকদার পানি নেওয়ার জন্য কিচেনের যাচ্ছিলেন, দেওয়ান কুঞ্জের সিড়িতে ফ্লেবিয়াকে দেখেন কাকে যেনো কিছু ইশারা দিচ্ছেন,নিচে তাকিয়ে দেখেন হৃরতেশ ডাইনিং হলে যাচ্ছে।ফ্লেবিয়ার সাথে হৃরতেশ এর এতো খাতির কিভাবে হলো সেটা না বুঝলেও মাথায় নিলো না। ফ্লেবিয়া চলে যেতেই নিজেও কিচেনে গেলেন।

চলবে.......

22/05/2025

#দগ্ধ🍁🍁
লেখিকা
পর্ব-২৬

[বিনা অনুমতিতে কপি করা নিষিদ্ধ ]

সকাল ঠিক ৭টা। পূর্বদিকের জানালা দিয়ে সোনালি আলো ঢুকছে ধীরে ধীরে, আর আলো-আঁধারির সেই খেলায় ঘরের ভেতরটা যেন এক অদ্ভুত থমথমে নাট্যমঞ্চ। পূর্বমুখী সেই ঘরের এক কোণে মুখোমুখি বসে আছে আফাজ খান আর ফারাহ খান— ঠোঁটের কোণে চওড়া হাসি,চোখে অদ্ভুত পরিকল্পনার ঝিলিক।

ঘরের দরজা আধখোলা। বাইরের রোদ জানালায় ধাক্কা খেয়ে ছায়া হয়ে মেঝেতে গড়াচ্ছে। টেবিলের ওপর পুরোনো কিছু নথি, একটা কলম, আর দুটো কাঁচের কাপ—ধোঁয়া ওঠা চায়ের গন্ধ যেন ষড়যন্ত্রের হালকা মশলা হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে বাতাসে।

-"তাহলে কাজ শুরু হয়ে গেছে,প্লান মাফিকই চলছে।"

স্ত্রীর এহেন কথায় আফাজ খান হেসে উঠে, চোখ দুটো সূর্যরশ্মির কিনারায় চকচক করে ওঠে।

-"তা তো ঠিক আছে কিন্তু ছেলেটাকে রাজী কিভাবে করাব?ছেলের বাপকে কিছু গাঁজাখুরি কথা বলে দিলেই বেচারা উজবুক তাতেই মহাখুশি কিন্তু বিপত্তি ঘটাবে আরনিয়াত। "

-"এতো চিন্তা করো না তো, বস তো বলেছে সেসব কিছু বস দেখে নিবে, তুমি খালি মন দিয়ে কাজ করো।কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝলাম না, মেইন টার্গেট যদি আভিশান তালুকদার হয় তাহলে আমাদের নওয়াজ দেওয়ান এর আন্ডারে কেনো পাঠালেন? নওয়াজ দেওয়ানকে দেখে যতটা গম্ভীর মনে হয় তেমনটা মোটেও না, তার গম্ভীরতার আড়ালে রয়েছে খুবই নাজুক একটা হৃদয় যাকে একটা ধাক্কা দিলেই নড়বড়ে হয়ে যাবে। বেচারা খুবই নরম এবং দয়ালু মনের মানুষ, মাঝে মাঝে কষ্টও লাগে বেচারার জন্য। "

-"গিন্নি কষ্ট পেয়ো না, এখনও তো খেল সেরকম শুরুই হয় নি,দু চারটা দিন যাক, আরও ভালো করে বিশ্বাসটা অর্জন করি তারপর না দেখো আসল খেলা।"

-"প্রস্তাবটা তুলবে কবে?"

-"এই নাদীর কাহিনিটা নিয়ে লাফালাফি শেষ হোক,নইলে আবার হীতে বিপরীত হতে পারে। মানব দরদী নওয়াজ দেওয়ান সামান্য গার্ডের মেয়েকে নিয়ে দেখছ কেমন মাতামাতি করছে।"

-"অসহ্যকর বিষয়। আমরা মেহমান কোথায় আমাদের খাতির যত্ন নিয়ে ব্যাস্ত থাকবে সবসময় তা না... "

-"আর এই কথাগুলো কারোর কানে গেলে এমন খাতিরদারি করবে যে বাপের জন্মেও কেউ ভুলবেন না।"

ফারাহ খানের মাঝে হঠাৎ করে ফ্লেবিয়া এসে হাজির হলো।

-"তুমি এখানে?"

-"এইরকম সাতসকালে দরজাটা আধখোলা করে যে গীত দুজনে শুরু করেছেন তাতে ভান্ডা ফাটতে আর বেশি দেরি লাগবে বলে তো মনে হচ্ছে না।ভাগ্যিস আমি আসছিলাম নইলে কি হতো জানেন কিছু"

-"কি হতো?"

-"প্রাচী আসছিলো,আপনাদের ডাকতে। কোনোমতে বুঝিয়ে সুজিয়ে নিচে পাঠিয়েছি নইলে আমার জায়গায় এখন সে থাকত আর সব কিছুই বুঝে যেত।"

-"আল্লাহ বড়ো বাচানো বাঁচিয়ে দিয়েছে।মাথাতেই নেই যে দরজাটা অর্ধেক খোলা.. "

-"বসের প্লানিং এ পানি পরে গেলে আমাদেরকেও বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে চুবিয়ে মারবে, মা। সুতরাং সাবধানে আলোচনা করবেন, আশেপাশের পরিবেশ ভালো করে বুঝে নিবেন।"

-"ঠিক কথা বলেছো তুমি ফ্লেবিয়া। আমাদের বোঝা উচিত আমরা কোথায় আছি,ভুলে গেলে চলবে না। "

-"আমরা মনে রাখলেও আপনাদের আদরের ছোটো মেয়ে তো সে কথা ভুলে বসে রয়েছে।"

-"মানে?" ভ্র কুচকে জিজ্ঞাসা করল আফাজ খান।

-"মানে সে পিরিতের তেল মেখে গড়গড় করে সব কিছু সেই ছাগলমুখো তাহির তাইয়ানকে বলে দিয়েছে"

-"মাথা ঠিক আছে তোমার ফ্লেবিয়া, সব বলে দিয়েছে মানে কি বুঝাতে চাচ্ছ?"

-"তাহির তাইয়ান মানে ওই ছেলেটা যাদের বাড়িতে প্রথম এসে উঠেছিলাম"

-"হ্যাঁ ওইটাই, সারাক্ষণ সন্ধ্যাবতী সন্ধ্যাবতী করে পিছে গ্লুর মতো লেগে থাকে।"

-"কি কি বলেছে?"

-"তা জানি না, কিন্তু কাল দেখলাম ওর সাথে বাগানে কথা বলছিল। আমি যখন ফরিযকে আটকাতে গেছিলাম তখন ছেলেটা বলল আমি ফরিযের বড় হতে পারি কিন্তু তার না এইসব বলে আমাকে থাপ্পড়ও মেরেছিল।"

-"এতো বড় স্পর্ধা আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলে।"

-"এইগুলো ছাড়ো, ফ্লেবিয়া আগে বলো কি কি বলেছে।"

-"ফরিযকে ডাকো,ওর মুখ থেকেই শুনি,যদি ওর জন্য কোনো সমস্যা হয় তাইলে ওকেই রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে হবে।"

-"ফ্লেবিয়া ফরিযকে ডেকে আনো।"

ফ্লেবিয়া চলে যায় ফরিযকে ডাকতে।আফাজ খান সোফার উপর বসে পরে।

-"ফারাহ, আল্লাহকে ডাকো যেনো তোমার মেয়ে বেশি কিছু না বলে থাকে,নইলে বস সবাইকে আস্ত মাটির নিচে পুঁতে ফেলবে।"

-"তুমি এতো উত্তেজিত হয়ো না, ওরা আসুক তারপরই জানা যাবে কি বলেছে আর কি বলে নি।"

ফ্লেবিয়া ফরিযকে নিয়ে আসল।ফরিযকে দেখে আফাজ খানের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।কোনো কিছু না শুনে মেয়ের কাছে গিয়ে একটা থাপ্পড় দিয়ে বসলেন।ফরিয অবাক নয়নে বাবার দিকে চেয়ে রইল।তার ভুলটা কি সেটা বুঝে উঠতে পারল না।

-"যে পাতিলে খাও সেই পাতিলই ফুঁটা করো।এতো বড় সাহস,ওই ছেলের সাথে এতো কিসের খাতির, দুইদিন এসেই এতোবছরের বাপ মা কে ভুলে যাচ্ছো।পিঠের চামড়া তুলে রেখে দিব কিন্তু ফরিয, আমাকে তুমি চিনো না। তোমার জন্য আমার পরিবারের উপর কোনো বিপদ আসতে দিব না। "

ফরিয গালে হাত দিয়ে ব্যথিত কন্ঠে বলে উঠল,"আমি কি আপনার পরিবারের অংশ নয় বাবা?"

ফরিযের কথা শুনে ফারাহ খান এর মনে হলো তার বুকের মধ্যে কেউ কাটা ফুটিয়ে দিচ্ছে।১০ মাস গর্ভে রাখা সন্তান তার, তাকে কিভাবে পরিবারের অংশ হিসেবে অস্বীকার করা যায়, সে তো তার নিজেরই অংশ।

-" তুমি কোনোকিছু না শুনে আগেই কেনো গায়ে হাত তুলছ?"

-"আর কি শুনব ফারাহ,ফ্লেবিয়া তো বললই..."

-"তবুও ওর থেকে শুনে নেওয়া ভালো। "

-"মা আপনি কি আমায় অবিশ্বাস করছেন?"

-"বিশ্বাস অবিশ্বাস এর ব্যাপার না ফ্লেবিয়া,যেহেতু তুমি সবটা জানো না, তাহলে যে জানে বা যে বলেছে তার থেকেই শোনা ভালো, তাই নয় কি?"

-"আপনারা কিসের কথা বলছেন?"

-"ফরিয একদম ন্যাকামি করবি না। কাল তুই তাইয়ানকে সব বলে দিস নি? বল মা বাবাকে।"

-"নাহ" অস্ফুটস্বরে চিৎকার করে উঠল।"না, বাবা আমি কাউকে কিচ্ছু বলি নি। "

-"তাহলে জানল কিভাবে ছেলেটা?মিথ্যা কথা বলো না ফরিয, আমি যদি জানতে পারি তুমি পিঠপিছে ছুরি চালাচ্ছো, ফল কিন্তু ভালো হবে না।কি কি বলেছো এখনই সব বলে দেও।"

-"আমি কিছুই বলি নি। "

আফাজ খান এক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে পাশে থাকা টেবিলের উপর ঘুষি দিলেন, ফরিয ভয়ে কেঁপে উঠল।

-"শুধু শুধু বেচারিকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই মি.আফাজ খান।"

দরজার ওপাশ থেকে পুরুষালি কন্ঠ শুনে সকলে সেদিকে তাকাল।হাতদুটো বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে রয়েছে ধীবর।

-"আরেহ, ধীবর বাবা, তুমি। তুমি এখানে? কোনো দরকার ছিল।"

ভেজা বিড়ালের মতো করে বলল আফাজ খান।ফ্লেবিয়া পলকহীনভাবে তাকিয়ে রয়েছে ধীবরের দিকে,কালো শার্ট, কালো প্যান্ট, চুলগুলো এক সাইড করা। ধীবরকে দেখলে সে যেনো আর নিজের মধ্যে থাকে না। ফ্লেবিয়ার এ ব্যাপারটা ফারাহ খান খেয়াল করলেন। ফরিয তখনও গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

-"আপনাদের আসল পরিচয় সবাই ই জানে, সুতরাং তাহিরের জানাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর জেনেছে তো অসুবিধা কোথায়? তার জন্য এভাবে মেয়ের গায়ে হাত তুলতে হয়?"

-"আসলে বাবা, তোমার শ্বশুর সবটাই জানেন। আর কেনো আমরা পরিচয় লুকিয়েছি সেটাও সবাইকেই বলেছি... "

-"তাহলে ফরিযকে বকাঝকা কেনো করছেন?"

-"তেমন কিছুই না শুধু একটু শাসন...."

-"হ্যাঁ সেটা করতেই পারেন। আপনার মেয়ে অবশ্যই আপনার অধিকার আছে কিন্তু একটু মাথায় রাখবেন এটা আপনাদের বাড়ি নয়, সুতরাং একটু ভেবে চিনতে কথাগুলো বললে বোধহয় ভালো হয়।"

-"হ্যাঁ, হ্যাঁ ঠিক বলেছো, আসলে আমার মাথাটা ইদানীং... "

-"আপনার মাথা আপনার ব্যাথা, এতে আমার কিছু বলার নেই। আমি শুধু বলতে এসেছিলাম বাবারা ফিরছে,আর আপনাকে জানিয়ে দিতে বলেছেন এটা।"

-"ওহ, তা যে কাজে গিয়েছিল সে কাজ কি...."

-"তা তো বলতে পারব না। আসলে আপনিই জিজ্ঞাসা করে নিয়েন।আমি অফিসে যাব। "

-"আচ্ছা বাবা,যাও। সাবধানে যেয়ো।"

ধীবর চলে গেলো।ফ্লেবিয়া তখনও হা করে তার যাওয়ার পানে চেয়ে রয়েছে।

-"হয়েছো এবার,করো আরও চিৎকার চেচামেচি। কোনোকিছু না শুনে না বুঝে অযথা রাগারাগি শুরু করে দেও।আর ফ্লেবিয়া, বোন হয় ফরিয তোমার, সুতরাং সব সময় পিছে লেগে থাকবে না। "

মায়ের কথায় ফ্লেবিয়ার হুঁশ ফিরল।ধীবর যে এতোক্ষণ ফরিযের পক্ষ নিয়ে কথা বলছিল তা ভেবেই ফ্লেবিয়া আরও চটে গেলো।রাগী দৃষ্টিতে ফরিযের দিকে তাকিয়ে রইল।

-"ফ্লেবিয়া, আমি তোমাকে কিছু বলেছি..."

-"শুনতে পেরেছি।"

ফ্লেবিয়ার কন্ঠস্বরে পরিবর্তন দেখে ফারাহ খান ঘাবড়ে গেলেন সাথে আফাজ খানও।দুজনেই ছুটে মেয়ের কাছে গেলেন।ফ্লেবিয়া হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে রক্তচোখে ফরিযের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

-"মা, ঠিক আছো তুমি? শান্ত হও, আচ্ছা তোমার মা তোমাকে কিচ্ছু বলবে না। আমার মেয়ে যা করবে সেটাই ঠিক। তুমি শান্ত হও,গভীর নিঃশ্বাস নেও।"

-"হ্যাঁ, ফ্লেবিয়া, মা অনেক সরি। আর তোমাকে কিছু বলব না। তুমি কোনো ভুল করো না। জানি আমি। কয়েকবার গভীরভাবে নিঃশ্বাস নেও।"

আফাজ খান আর ফারাহ খান যখন নিজের বড় মেয়েকে সামলাতে ব্যস্ত, ঘরের এক কোণায় ফরিয ছলছল চোখে সে দৃশ্য দেখতে মগ্ন।একই গর্ভে থেকে পৃথিবীতে এসেছে দুজনে কিন্তু দুজনের স্থান সম্পুর্ন দু'রকম। মাঝে মাঝে মনে হয় তার জন্ম হয়েছেই বা কেনো?কেনো এতো অবহেলা করা হয় তাকে।একটুও কি ভালোবাসা যায় না? মা-বাবার কাছে তো সব সন্তানই সমান তাহলে তাদের ক্ষেত্রে কেনো এতো ভিন্নতা সে বুঝতে পারে না।আস্তে করে দরজা দিয়ে বেরিয়ে নিজের রুমে যায়, আর দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না তার পক্ষে।সে চলে গেলো কিন্তু সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করল না কেউ, হয়ত যখন দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে তখনও কেউ তার জন্য সামান্যতম আহাজারিও করবে না।

-----------

সবেমাত্র তাওয়ান মঞ্জিলে পা রাখলেন নওয়াজ দেওয়ান আর আরশিয়া।জোহা আর খুরশিদ ধলেশ্বরী পাড়েই রইল, থাকবে কিছুদিন।পুলিশের হাতে ছেড়ে দিতে হয়েছে কেসটা, সবকিছু পুলিশই দেখবে তদন্ত করে, ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ করতে বারণ করে দিয়েছে অগত্যা নওয়াজ দেওয়ান এর কিছুই করার নেই।তাছাড়া সেখানে সকালে যে তামাশা হয়েছে, গ্রামের মাটিতে পা রাখার মতো মুখ রইল না। বেঁচে থাকতে অন্তত ও গ্রামের আলও মাড়াবেন না তিনি।

আসার কথা শুনে ইনায়া হলরুমেই অপেক্ষা করছিলেন।স্বামীকে দেখে তার কাছে ছুটলেন।পিছনে উঁকি দিয়ে কিছু খুঁজলেন কিন্তু পেলেন না।

-"আরশু, ইন্দ্র কোথায়?"

নওয়াজ দেওয়ান আর আরশিয়া একে অপরের দিকে অবাক নয়নে তাকায়।

-"ইন্দ্র, কোথায় মানে? ইন্দ্রর তো বাড়িতেই থাকার কথা।"

-"তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? ইন্দ্র গেলো তোমার সাথে, তাইলে ফিরবেও তোমার সাথে;আর তুমি এসে কিনা জিজ্ঞাসা করছ ইন্দ্র কোথায়।"

-"হ্যাঁ গেলো তো আমার সাথে কিন্তু.. "

-"ভাইয়া,তোমাদের কাজ হলো?"

নীলজা তালুকদার এসে জিজ্ঞাসা করলেন,ইনায়া দেওয়ান তার দিকে এক নজর চেয়ে পুনরায় স্বামীর দিকে তাকালেন।নওয়াজ দেওয়ান চোখমুখ শুকিয়ে গেছে।

-"ভাইয়া, কি হয়েছে? খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে?"

-"আরশু আমার ইন্দ্র কই? "

নীলজা তালুকদার আশ্চর্য হয়ে ভাবীকে জিজ্ঞেস করলেন,"ইন্দ্র কোথায় মানে? ইন্দ্র কোথায় যাবে? আরশুরা যেহেতু চলে এসেছে ওউ এসেছে।"

-"আসলে মামনি, ইন্দ্র তো....."

-"রাতে আরনিয়াত ইন্দ্রকে সাথে করে নিয়ে বাড়িতেই আসার কথার ছিল।"

নীলজা তালুকদার যেনো এবার অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলেন।ছেলেটা কাল রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিল, তারা ভেবেছিল হয়ত নিরিবিলি কোথায় গেছে, কিন্তু ইন্দ্রর কাছে চলে যাবে তা ভাবে নি।

-"আরনিয়াত এর সাথে ইন্দ্র? মানে কি ভাইয়া? আমার ছেলেটার মাথা এতোটাই খারাপ করে দিয়েছে যে..."

-"নীলজা"

নওয়াজ দেওয়ান ধমকে উঠলেন। তার আওয়াজ শুনে প্রাচীও উপর থেকে নেমে এলো তার সাথে খান পরিবার।

-"বাবা, আপনি ঠিক আছেন? "

-"হ্যাঁ, মা আমি ঠিক আছি।আর নীলজা, আমার মেয়ের ঘাড়ে দোষ চাপানো বন্ধ করো।তোমার ছেলে সদ্য ভূমিষ্ঠ ছেলে না যে কিছু বুঝে না। সে ইন্দ্রর চেয়ে যথেষ্ট বড়। বারবার বুঝানোর পরেও যদি না বুঝে তাহলে কিন্তু আমিই কোনো স্টেপ নিতে বাধ্য হবো,আশা করি সেটা কারোর জন্যই ভালো হবে না। "

ইনায়া দেওয়ান যেনো ঘোরের মধ্যে চলে গেলো।ইন্দ্র আরনিয়াত এর সাথে, এই কথাটা তার মাথায় গেঁথে গেলো।সবাই মিলে যত চেষ্টা করছে ইন্দ্র আর আরনিয়াতকে আলাদা করার ওরা দুজন যেনো ততটাই কাছাকাছি চলে আসছে।

-"কিন্তু এখনো এলো না কেনো বাড়িতে? ইনায়া, তুমি ইন্দ্রর রুমে দেখেছো ও আছে কিনা?"

-"বাবা, আমি ইন্দ্রর রুম থেকেই আসলাম, ও নেই। "

-"তাহলে আরনিয়াতকে একটা কল করো, দেখো ওরা কোথায়।"

নীলজা তালুকদার ছেলেকে কল দেওয়ার জন্য দোতলা থেকে ফোন আনতে সিঁড়ির দুই ধাপ অতিক্রম করেছে, তখন প্রাচী বলে উঠল,-"ওইতো ভাইয়া চলে এসেছে।"

নওয়াজ দেওয়ান আরনিয়াত এর সামনে দাঁড়ালেন,

-"আমার মেয়ে কোথায় আরনিয়াত?"

-"আপনার মেয়ে কোথায় সেটা আপনার মেয়েই জানে"

-"মানে? আরনিয়াত ইন্দ্রকে নাকি তুমি রাতে..."

-"দেখুন, মিসেস তালুকদার এতো কিছু আপনাকে জানাতে আমি বাধ্য নয়।"

-"মা হয় তোমার। সুতরাং কথা বলার আর সবকিছু জানার পূর্ণ অধিকার রয়েছে আমার।"

-"এইসব ডায়লগ না কোনো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির রাইটার কে দিয়েন, স্ক্রিপ্ট লিখতে সুবিধা হবে।"

-"আরনিয়াত,মামির কথা শোনো, বলো না আমার ইন্দ্র কোথায়?"

ইনায়া দেওয়ান অসহায় ভাবে জানতে চাইলেন।আরনিয়াত এর মন কিছুটা নরম হলো, পরক্ষনেই নওয়াজ দেওয়ান আরনিয়াত এর কলার ধরায় চোখে মুখে কঠোরতার আবির্ভাব ঘটল।

-"আমার মেয়ের যদি কিছু হয় তোমাকে কিন্তু আমি ছাড় দিব না। অনেক লায় দিয়ে দিয়ে মাথায় উঠে গেছো।সভ্যতা, ভদ্রতা সব গুলিয়ে ফেলছো।"

আরনিয়াত আস্তে করে নিজের শার্টের কলার থেকে নওয়াজ দেওয়ান এর হাতটা সরিয়ে দিল।

-"আপনার মেয়ে আপনার মাথা ব্যাথা, আমার না। হ্যাঁ রাতে আমার সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম, পুরো রাতটা আমার সাথেই ছিল।আর সকালে উঠে বেশি তিড়িংবিড়িং করছিল তাই ফেলে রেখে আসছি।"

-"ফেলে রেখে আসছ মানে? কোথার রেখে এসেছো?"

-"যেখানে পুরোটা রাত একত্রে ছিলাম সেখানে।"

বাকা হেসে উত্তর দিল, তার কথা শুনে সকলে থ মেরে রইল।

নীলজা তালুকদার থাপ্পড় দিতে উদ্যত হলে আরনিয়াত সে হাত ধরে ফেলে।

-"এইটাই সে তেলে পোড়া হাতটা না? দেখি ভালো করে। হ্যাঁ এইটাই তো।এখনো দেখি ভালো মতোই কাজ করে কিন্তু ভুল জায়গায়। নট ফেয়ার।"

এক ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে দিল,"নিজের হাত নিজের কাছে রাখুন, otherwise খোয়াতে হতে পারে।"

বলেই শিস বাজাতে বাজাতে নিজের রুমের দিকে গেলো যেনো কিছু হয়ই নি।নীলজা তালুকদার দু'কদম পিছিয়ে গেলো, ইনায়া দুই হাত দিয়ে তাকে ধরে শান্ত করার চেষ্টা করল।

-"ভাইয়া,,ভাইয়া এটা আমার ছেলে? যে ছেলেকে নিজের জীবনের পরোয়া না করে পৃথিবীতে এনেছিলাম, এটাই সেই ছেলে?নিজের মাকে কিভাবে হুমকি দিয়ে গেলো, দেখলে ভাইয়া।পারলে তো জানেও মেরে দিবে।"

-"নীলজা, শান্ত হও। আর আমি আগে দেখি ইন্দ্র কোথায়।"

ফোন বের করে কাউকে ফোন করতে গিয়ে দেখে হৃরতেশ পরপর তিনবার কল করেছে। সচারাচর এইসময় কল করে না,হৃরতেশকে কল ব্যাক করলেন।পরপর দুবার রিং হয়ে তৃতীয়বারের বেলায় রিসিভ করল।

-"হৃরতেশ, কোনো দরকার ছিল?"

-"ওওও,আচ্ছা তাহলে আসো।"

নওয়াজ দেওয়ান কল কেটে শুধু বললেন, "ইন্দ্র আসছে" তারপর নিজের রুমে চলে গেলেন।প্রাচী আরশিয়াকে জিজ্ঞাসা করল,"আরশু, ওখানে কি হয়েছিল?"

-"সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ইন্দ্র নেই, আর বাইরে শোরগোল। বাইরে গিয়ে শুনি সবাই চাচ্চুকে নানা ধরনের কথা বলছে।মামা আর মামী সবাইকে সামলানোর চেষ্টা করছে।কিছুক্ষণ পর পুলিশ আসে, তখন সবাই মিলে পুলিশকে বলে চাচ্চু যেনো নাদীর কেস থেকে দূরে থাকে। কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, চাচ্চু নাকি মেয়েদের ভালো শিক্ষা দিতে পারেন নি। এক মেয়ে বেয়াদব হয়েছে, আরেক মেয়ে সারারাত পরপুরুষ এর সাথে গাড়ির মধ্যে ফুর্তি করে বেড়ায়।তারা আবার কীভাবে অন্যের মেয়েকে শিক্ষা দিবে,ইত্যাদি ইত্যাদি। "

-"ফুর্তি করে বেড়ায় মানে?"

-"কাল রাত এ ভাইয়া ইন্দ্রকে নাকি সাথে করে নিয়ে যায়, আমি ঘুমাচ্ছিলাম। চাচ্চুর সাথে ভাইয়ার কথা হয়েছে। গ্রামের কে যেনো রাতে ভাইয়ার সাথে ইন্দ্রকে দেখেছে। আবার সকালেও নাকি দুজনকে একসাথে... প্রমাণ হিসেবে কয়েকটা ছবি তুলে রেখেছিল সে, আর সেগুলো মামাদের বাড়ির সামনে বড় করে লাগিয়ে দিয়েছিল।"

ইনায়া দেওয়ান আর নীলজা তালুকদার দুজনেই ধপ করে বসে পরে।প্রাচী নিশ্চুপভাবে তাদের দিকে তাকায়,সে জানে এখন যা কিছু হচ্ছে এই সবকিছু পিছে এই চারজনই দায়ী।আরনিয়াত এর এভাবে পরিবর্তন হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা এনাদের।রাশিয়াতে যা যা হয়েছে তার পরে এমন আচরণ প্রাচীর কাছে স্বাভাবিকই মনে হচ্ছে।

-----------

আরনিয়াত এর চলে যাবার পর ইন্দ্র সেখানেই বসে থাকে।তার ধারণা এতোদিন যা কিছু হয়েছে বা হচ্ছে সবটার পিছনে আরনিয়াত এর হাত রয়েছে।এসফার তালুকদার এর রুমে, জঙ্গলে সে হয়ত আরনিয়াতকেই দেখেছে।কিন্তু আরনিয়াত কেনো এগুলো করছে তার মানে বুঝতে পারছে না।বাড়ির সকলের উপর রাগ করে নাকি অন্য কোনো রিজন এ।নাদীর মৃত্যুর সাথে কি তার সত্যিই কোনো সংযোগ আছে কিনা এসব ভাবতে ভাবতে একটা পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে এলো কানে;

-"হয়তবা সিনেমার নায়ক না, কিন্তু বাস্তবতার এ দ্বার প্রান্ত থেকে উদ্ধার হতে সাহায্য করতে পারি।"

ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে পাশে তাকিয়ে দেখে হৃরতেশ দাঁড়িয়ে রয়েছে।

-"ভাই, তুমি এখানে?"

-"তার আগে বলো, তুমি এখানে কি করছ তাও আবার এতো সকাল সকাল।কপালে আর হাতে কি হয়েছে? ব্যান্ডেজ কেনো? ব্যাথা পেয়েছো কিভাবে?"

-"কিছু না, বিকেলে ধানক্ষেত এ গিয়ে এমন হয়েছে।"

-"কি যে করো না তুমি। একটু সাবধানে থাকতে হয় তো।এতো বড় মেয়ে হয়েও নিজের খেয়াল রাখতে পারো না, এতো কেয়ারলেস হলে চলে নাকি?"

হৃরতেশ এর মুখে নিজের জন্য এতো চিন্তিত বাণী শুনে বেশ খুশি খুশি লাগছে ইন্দ্রর। যার আশায় বসে থাকে সে তার জন্য চিন্তা করছে এর চেয়ে মধুর দৃশ্য আর কি হতে পারে।

-"আচ্ছা, আরনিয়াত কি তোমার সাথেই ছিল?"

আরনিয়াত এর কথা উঠে মুহুর্তের মধ্যে খুশির আমেজটা রাগে পরিণত হলো।তাছাড়া আরনিয়াত তার সাথে ছিল সেটা হৃরতেশ কিভাবে জানল তা না বুঝে সে হৃরতেশ এর দিকে চেয়ে থাকে। তারপর তাকানোর মানে বুঝে হৃরতেশ নিজ থেকে বলে,"রাস্তায় দেখলাম ওকে। কথা বলতে গেলাম কিন্তু পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। আমি একটা কাজে এসেছিলাম, গাড়ি চালাতে চালাতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম তাই ভাবলাম একটু বাইরের হাওয়া খেয়ে নি। হাঁটতে হাঁটতে দেখি তুমি এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাই মনে হলো হলো তোমার সাথে ছিল।"

-"ওহ,হ্যাঁ আমার সাথেই ছিল।"

-"তাহলে রেখে চলে গেলো কেনো?"

-"উনার যা স্বভাব"

হৃরতেশ এর চোখ দুটো যেনো জ্বলজ্বল করে উঠল।
ইন্দ্রর সেদিকে খেয়াল নেই, সে তো তার ভাবনায় মগ্ন।

-"তা এখানে থাকবা নাকি বাড়িতে যাবা?"

-"হ্যাঁ বাড়িতে যাব। তার আগে আব্বিকে একবার জানিয়ে দেওয়ার দরকার। "

-"তোমার ফোন?"

-"নাদীর মামা বাড়ি।"

-"ফোন-টোন কিছু না নিয়ে চলে এসেছো।"

প্রত্যুত্তরে ইন্দ্র আর কিছু বলল না। হৃরতেশ পরপর তিনবার কল দিল কিন্তু ধরল না কেউ।

-"হয়ত বিজি আছে চাচা। দেখলে ব্যাক করবে, চলো এখন যাওয়া যাক।"

-"আচ্ছা"

তভলীন ডেস্কে বসে ফাইল চেক করছে কিন্তু বারবার চোখ পাশে থাকা তাহিরের দিকে যাচ্ছে যে আনমনে জানালার দিকে চেয়ে রয়েছে।

"উহুম উহুম" তভলীন গলা পরিষ্কার করার ভান করল,কিন্তু তাহিরের কোনো হেলদুল নেই।পুনরায় আরেকটু জ্বোরে "উহুম উহুম" করে উঠল,এবারেও একই ঘটনা।

-"ওই পাত্তানাশ প্রেমিক, এইখানে পানির অভাবে এক মাইয়ার না হওয়া জামাই মইরা যাইতেছে আর তুই এখনো তার চিন্তাতেই বিভোর হয়ে আছিস যে তোর পাত্তার ডিজাইনে বারবার বাণ মাইরা বসে।"

তাহির তভলীন এর দিকে এক নজর তাকিয়ে হাতের কাছে থাকা পানির গ্লাস তুলে এক চুমুকে শেষ করে দিল।

-"লেংটা গোরুর আংটা বাধা ছাল,আমি পানি চাইলাম আর তুই খেয়ে নিলি কেন?"

-" পানি কেউ খাই না,পান করে সুতরাং তোর কথার কোনো যৌক্তিকতা নেই।চুপচাপ নিজের কাজ কর আর আমারে আমার কাজ করতে দে।"

তভলীন সশব্দে ফাইলটা বন্ধ করে তাহিরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বসল।

-"দেখ ভাই,এতো চিন্তা না করে তুই চাইলে আমি সাহায্য করতে পারি।"

-"নিজেরে কি প্রেম গুরু ভাবিস?"

-"আরেহ, হালদা নদী বলদা চিংড়ি, আমি এতো ভাবাভাবির ধার ধারিনা, এই তভলীন তালুকদার এর কারিশমাই এমন যে কারোর সমস্যা নিমেষেই সমাধান করে দিতে পারে।এখন বল সাহায্য লাগবে কিনা। "

-"হুম একটা সাহায্য করতে পারিস।"

তভলীন এর চোখ চকচক করে উঠল;-"বলনা ভাই কি করতে পারি।"

-"আমাকে তুই কোনো সাহায্যই করতে যাস না সেটাই হবে আমার সবচেয়ে বড় সাহায্য।"

তভলীন মুহুর্তের মধ্যে বেলুনের ন্যায় চুপসে গেলো।

-"রাশিয়ায় করা তোর সাহায্যের কথা আমি আজীবন মনে রাখব।"

তভলীন এবার ধীরগতিতে নিজের আগের জায়গায় ফিরে এসে পুনরায় ফাইল চেক করতে লাগল,তাহির সেদিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় নিজের ভাবনায় মগ্ন হয়ে গেলো।

রাশিয়ায় একবার তাহির আর তভলীন এক ট্রিপে মস্কো গিয়েছিল।বরফঢাকা স্থানে সকাল সকাল হাঁটতে বের হয়ে মহা মুসিবত এ পরে তাহির।তাহিরের পা আটকে যায় বরফের মধ্যে, তখন পিছনে থাকা তভলীন এর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে।ঠিক তখনই বিপত্তি ঘটে,তভলীন ভাইসাহেব হিরো হতে গিয়ে পিছন থেকে তাহিরের বেল্ট ধরে টান দেয়, প্যান্ট ছিল আগে থেকেই ঢিলা, বেল্টে টান খাওয়ার কারণে বেল্ট খুলে তভলীন এর হাতে চলে আসে।ফলস্বরূপ নিচের দিকে চোখ যেতেই দেখে তাহিরের প্যান্ট হাটুর নিচে আর উপরে জ্বলজ্বল করছে সুপার ম্যান এর লোগোযুক্ত উজ্জ্বল লাল জকি যেটাতে লেখা "My power is under control "
তভলীন হতবাক হয়ে পরক্ষণেই গলা ফাটিয়ে হেসে উঠে, তার হাসির চোটে আশেপাশের সকলে সেদিকে তাকায়।তাহির তড়িঘড়ি করে প্যান্ট পুনরায় উপরে তুলে নেয়।

-"সরি রে ভাই, আমি একটু বেশিই হেল্পফুল হয়ে গিয়েছিলাম।বাট তোর জকি কিন্তু জোস,তোর আন্ডার কন্ট্রোল পাওয়ারটা আরও জোস মাইরি।"

বলে পুনরায় অট্টহাসিতে ফেটে পরে।

সেদিনের পর থেকে তভলীন মাঝে মাঝে তাহিরকে "দোস্ত তোর আন্ডার কন্ট্রোল পাওয়া দিয়ে হেল্প কর না" বলে বলে টিজ করত। তাহিরও তেমন, তভলীন কোনো সাহায্যের কথা তুললে সেও বারবার ঘটনা মনে করিয়ে দিত।

সে কথা মনে পরতেই তভলীন খানিকটা হেসে বলে উঠে,"ভুলে গিয়েছিলাম তোর তো আবার সুপার ম্যান এর আন্ডার কন্ট্রোল পাওয়ার আছে"।

তাহির "চ" শব্দ করে সেখান থেকে উঠে চলে যায়।তভলীন এবার উচ্চশব্দে হেসে উঠে।

তাহির যেতেই থীবান কেবিনে প্রবেশ করে।তাকে দেখে তভলীন দাঁড়িয়ে যায়।

-"ভাই, তুমি এখানে?"

-"আরনিয়াত ফেরে নি এখনো? "

-"জানি না ভাই, আমি তো সকালেই চলে এসেছি, বাড়িতে ফোন দেওয়া হয় নি।কোনো দরকার ছিলো?"

-"ওহ, নাহ, কোনো দরকার না এমনি।"

থীবান চলে যেতে গেলে, তভলীন পিছন থেকে ডাক দেয়,সেদিকে ঘুরে দেখে একটা ফাইল হাত করে দাঁড়িয়ে আছে।

-"ভাই, এই ফাইলটা দিয়ান ভাইকে দেওয়া লাগবে। ভাই মেবি আজ আসবে না, দিদান নাকি অসুস্থ। "

দিদান অসুস্থ শুনে থীবান এর বুক ধক করে উঠল।

-"কি হয়েছে দিদানের?"

-"জানি না, ভাই শুধু বলল আজ আসবে না, দিদান অসুস্থ, ফাইলটা যেনো বাড়িতেই পাঠিয়ে দি।আমার একটা মিটিং আছে, যদি তুমি ফ্রি থাকো তো..."

-"আচ্ছা দেও, আমি ফ্রি আছি।"

ফাইলটা হাতে নিয়ে দৌড় দিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।তভলীন এখনো হাত সামনের দিকে বাড়িয়ে রয়েছে, থীবানের এমন বিহেভিয়ারের কূলকিনারা না বুঝে আবার নিজের ডেস্কে গিয়ে বসল।

চলবে......
Arifa Khatun

Address

Savar

Website

facebook.com

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Arifa Khatun posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Arifa Khatun

28/05/2025

22/05/2025

Address

Website

Alerts

Shortcuts

Share

Category