18/05/2025
আমার বন্ধু মরলো কেন?
এই ক্যাম্পাসে আছি ৩ বছরের মত হল। এই সময়ে ৩ টা মৃত্যু দেখলাম। আমি অন্যদেরটা না জানলেও আমার বন্ধুর কথা জানি৷ সে কেমন মানুষ তা জানি। কেমন ছাত্র তা জানি। মৃত্যুর সময় তার su***de note এর লেখা অনেক কথাই বলে।
আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থার এমন যে এটা মানুষ মারবে এইটাই স্বাভাবিক। আমার বন্ধু ধ্রুব। কাল আমাদের রুমে এসেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখে এই ৬ মাস টিচাররা যা পড়িয়েছে(আদৌ কি পড়িয়েছে?) তার সাথে প্রশ্নের মিল নেই। সে ভালো ছাত্র। পরীক্ষার হলে খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে আসার সাহস তার হয়নি৷ পরীক্ষা কমন না পড়লে আর, ১০ টা ছাত্র যা করে, আমার বন্ধু তাই করেছে। অন্যদের কাছ থেকে দেখাদেখি করে লিখেছে। পরীক্ষার লাস্ট অপশান হিসেবে যে পড়াটা রাখি সেই সূত্রটা হয়ত আমরা অনেকেই কোথাও না কোথাও লিখে নিয়ে যাই। যে যদি কিচ্ছু কমন না পড়ে তবে উত্তরতো করতেই হবে৷ কিন্তু দেখাদেখিতেতো আমার বন্ধু ভালোনা। স্যার দেখে ফেললো। খাতা জমা নিলো। প্রশ্নে কয়েকটা সূত্র লেখা দেখলো। তারপর প্রশ্নও জমা নিলো৷ admit card ও জমা নিল। এর মানে বন্ধু আমার ২ বছরের জন্য আটকে যাবে। স্যারের হাতে পায়ে ধরলো পুরো ক্লাসে। কান্না কাটি করলো। নিজের সকল ইগো বাদ দিয়ে স্যারকে যতভাবে বলা দরকার ততভাবে বললো। কারণ সে বাসায় জানিয়েছে আর ১ বছর পরেই সে বাড়ি ফিরবে। আজ স্যার খাতা নিলে মাকে মুখ দেখাবে কিভাবে। ক্লাসের সবাই জানে আমার বন্ধু অনেক ভালো স্টুডেন্ট, আজ খাতা রেখে দিলে সেই বন্ধুদের থেকে দুই year নিচে ক্লাস করে বন্ধুদের মুখ দেখাবে কিভাবে? জুনিয়রদের কি বলবে? এতো কান্না কাটি রিকোয়েস্ট কিছুতেই কিছু হলোনা। ক্লাসে উপস্থিত প্রতিটা স্টুডেন্টের চোখে জল এসেছে ওর এই অবস্থা দেখে। আসেনি শুধু কিছু জানোয়ারের৷ সে খাতা রাখলো ত রাখলোই। অনেক সততা, যার বিন্দুমাত্র পড়ানোতে দিলে হয়ত আজকে ধ্রুব এর এই অবস্থা হয়না। পরীক্ষা শেষ হওয়ার তখনো ১ ঘন্টা বাকি। স্যার (জানোয়ার) ধ্রুবকে বের করে দিল। ধ্রুব প্রচুর ইমোশনাল মানুষ। ও কি করবে কিছু বুঝতে পারছিলোনা। এই subject টাইতো ও পড়ছে জোর করে৷ ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ফার্মাসি নিয়ে পড়বে৷ ও আমাকে বারবার বলতো, এখান থেকে বের হয়ে কোনো সুযোগ থাকলে ও ফার্মাসি নিয়ে কোথাও ভর্তি হবে৷ ধ্রুব হলে রুমে গেল। রুমে কেউ নাই কারণ পরীক্ষার তখনো ১ ঘন্টা বাকি৷ ওর সাথে কথা বলার মতো কেউ নেই। ও যে কারো কাছে যাবে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনার জন্য তেমন কেউও নেই। রুমে গিয়ে পৃথিবীকে আজকে নিজের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবেই হয়ত আমার বন্ধুর মনে হল। পৃথিবী আজকে ওর জীবনের কাছে যে যে প্রশ্ন রাখলো তার উত্তর দিতে সে অসহায় বোধ করলো৷ সীদ্ধান্ত নিলো এই পৃথিবীর সামনে থাকা যাবেনা৷ পালাতে হবে৷ আমার বন্ধু ৩০ মিনিটের মধ্যে পালালো। চিরতরে পালালো৷ এই ৩০ মিনিট তার পাশে কেউ ছিলোনা। এর আগেও ছিলোনা। পরেও ছিলোনা। বন্ধুরা এসে যখন দেখলো তখন কোথায় নিবে৷ কোনো মেডিকেল সেন্টারতো আমাদের নেই৷ এম্বুল্যান্স? তাও নেই। শেষে তারাহুরা করে cng তে করে নিয়ে আসতে হল mmc তে। আর mmc এর emergency gate এর সামনে আসতে আসতেই তার আমার বন্ধু চিরতরে পালিয়ে গেল৷
১. এই সময় মনে আমার কিছু প্রশ্ন জাগে। আপনাদেরও জাগা উচিত। ধ্রুব তো এতো ভালো স্টুডেন্ট রাজ্যের সিলেবাস পড়েও কেন তার প্রশ্ন কমন আসেনা?
উত্তর: আমাদের পরীক্ষা হয় ৩ ক্যাম্পাসে মিলে। এক এক ক্যাম্পাস এক এক ভাবে পড়ে। এক এক ক্যাম্পাস এক রক বই ফলো করে৷ আমাদের পরীক্ষার আগে ৩ ক্যাম্পাসের সিলেবাসই কাভার করতে হয়ে। পরবর্তীতে আবার ২ ক্যাম্পাস প্রশ্ন করে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় modarate করে৷ modaration এর পর এমনও হতে পারে যে, কোনো ক্যাম্পাস পড়ায়নি এরকম প্রশ্ন চলে আসছে পরীক্ষায়৷
২. মৃত্যু কেন?
আমাদের একবার যদি স্যার পরীক্ষা হল থেকে admit card সহ রেখে দেয় তার মানে এই ছাত্র ২ বছরের জন্য সাসপেন্ড আপনি চিন্তা করে দেখেন আপনি একজন final year স্টুডেন্ট। এমন সময় আপনার সাথে এরকম কিছু ঘটলো। আপনার panic হওয়া কি স্বাভাবিক না।
৩. ফাসিতো অনেকেই দেয়। মৃত্যু কেন?
আমার নেই মেডিকেল সেন্টার, নেই ambulance . নেই কিছু। কিন্তু medical fee আমরা দেই। এতোদিন পরিবহন fee ও দিতাম। কিন্তু কিছুই কিছুই নেই৷ ও ফাসির পরেও অসহায়৷ আগেও অসহায়।
আমার প্রশ্ন আসে, মুখে গালি আসে, থুথু আসে এই শিক্ষা ব্যাবস্থার প্রতি, এই জানোয়ারের মতো শিক্ষকের প্রতি, আর এই অব্যাবস্থার মধ্যে থাকা প্রশাশনের প্রতি।
- শিবাজি রায় মৃদুল