28/07/2025
স্টিফেন কিং হরর লিখে বিখ্যাত হয়েছেন, জে. কে রোলিং হ্যারি পটার লিখে ধনী হয়েছেন, জেমস পিটারসন থ্রিলার গল্প লিখে ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়েছেন।আমি " এক টিকেটে দুই ছবি" দেখা পাবলিক।
তসলিমা নাসরিনের মত দেশান্তরী হওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।দাউদ হায়দারের মতো একটা কবিতার জন্য মাতৃভূমি আর দেখার সুযোগ আমার আর নাও হতে পারে ।শুধু একটা বাক্য উচ্চারণের জন্যও যেই দেশে মানুষের মৃত্যু হতে পারে, সেই মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়ে শিবলীর মতো গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে কতক্ষণ আর বেঁচে থাকা যায়?
ম্যাক্সিম গোর্কির ' মা ' , ভ্লাদিমির লেনিনের " রাষ্ট্র ও বিপ্লব ' , কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিখ এঙ্গেলস এর " কমিউনিস্ট ইশতেহার" পড়ে আমরা যারা বিপ্লবী হতে চেয়েছি দিনশেষে তাদের পকেট ফাঁকা থাকতো। কিন্তু এই দেশে যারা ইমদাদুল হক মিলনের " বোরকা পড়া সেই মেয়েটি" পড়েছে তারা আজ অনেকেই সফল।গায়ক আসিফ আকবরের ' ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায় " বলে ভেড়ার ডাক দিতে পারিনি বলে বাঘিনী কন্যা সিঁথির " ইটস মাই টার্ন " এর মতো আমরা জীবনে কখনো ভাইরাল হইনি। হিরো আলম , পিনাকীদের ভাইরাল হতে রুচির দুর্ভিক্ষ দেখে নিজেই সেই পথ থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। এখন মনে হয় আমরা আসলে ভোদাই ছিলাম।
হুমায়ূন আহমেদের ' দেয়াল ' উপন্যাসের ' তুই রাজাকার ' বলতে গিয়ে আমাদের দেশছাড়া হতে হয়েছিল।জাফর ইকবাল স্যারের ' আমার বন্ধু রাশেদ ' চরিত্রের জয় বাংলা স্লোগানে মুগ্ধ হয়ে আমরা যারা চিৎকার করে " জয় বাংলা ' বলেছি, তারাই দেশে ফিরে দেখলাম , জয় বাংলা ব্যাবসায়িক সাইনবোর্ড হয়ে গেছে।বুড়ির হাত ধরে মাঝরাতে আকাশের চাঁদ দেখবো , লেকের পাড়ে একটু হাঁটবো, নদীর ধারে সিঁড়িতে বসে ভারত ও বাংলাদেশের রাতের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে সূর্যের মিষ্টি হাসিতে বুড়ির কপালে চুমু খাওয়ায় স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেছে।বাসায় ফেরার পর এজন্যই মা চিৎকার করে বলতো , " এইসব খাতা, কলম ও ডায়রী নিয়ে সিগারেট ফুঁকে ফুঁকে সারারাত কি সব ছাইপাশ লেখো, এসব কি ভাত কাপড় দেয়? শেষ পর্যন্ত মানুষ দেশপ্রেমকেও ভাত কাপড়ের দোকান বানিয়ে ফেললো।
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় স্টিফেন হকিং এর " অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম ' ও রিচার্ড ডকিন্সের " সেলফিশ জিন " অন্যতম। বাংলাদেশের কোন প্যারাডক্সিকাল প্যারাসিটামল ষান্ডা ব্যবসায়ী আরিফ আজাদ ভাবলো এইতো সুযোগ! দেশের সকল সাজিদকে ঘুম পাড়িয়ে সে লিখে ফেললো প্যারাডক্সিকাল সাজিদ।এক বইয়ে পয়সাওয়ালা! কে আর ঠেকায় তাকে যদি বিজ্ঞানকে বা হাত দিতে গিয়ে দেশের মানুষ তাদের পটুতে হাত দেয়।আসলে আরিফ আজাদরাই এই দেশে সবচেয়ে বড় বুদ্ধিমান।সে চিন্তা করে দেখলো , পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ৫-৭ বিলিয়ন কপি বিক্রি হওয়া বই হচ্ছে " বাইবেল"। পৃথিবীর মানুষ যে রোজ ধর্ম খায় ও গায়ে দিয়ে ঘুমায় , এই সহজ সুযোগটাই নিয়েছে বিজ্ঞানের " ব" না জানা আরিফ আজাদরা।আর দেশের একদল আবাল শত শত টাকা দিয়ে সেই বই কিনে পড়েছে।এসব আহম্মকদের আইনস্টাইনের ' থিওরি অফ রিলেটিভিটি ' পড়ার সুযোগ কোথায়? যদি ভুলক্রমে পড়েও ফেলে তবে আবার নিজেই নিজেকে আইনস্টাইন দাবি করে বসবে। এমন পঙ্গপালের দেশে ভালো লেখার পাঠক আশা করেন কীভাবে?
এই দেশের একদল পাঠক জানেই না পৃথিবীতে শুধু মাও সে তুং এর উক্তি নিয়ে লেখা বই বিক্রি হয়েছে এক বিলিয়ন কপি।চীন , ভারত, জার্মানি , জাপান , ফ্রান্স , আমেরিকা সহ পৃথিবীর সব উন্নত দেশে বই পড়ার অভ্যাস থাকলেও আমাদের দেশের মানুষের হচ্ছে চটি গল্প পড়ার অভ্যাস। এজন্য কেউ যখন খুব কষ্ট করে একটা কবিতা লিখে তখন তারা সেটা স্কিপ করে যায়। তাদের দরকার হচ্ছে নারী চেহারা। কমেন্ট সেকশনে গেলেই দেখবেন সব ডুলাজারি হয়ে গেছে।এরাই আবার ইনবক্সে ডার্ক ওয়েবের জাল পেতে আছে।এক ক্লিকে দুই মিনিটের ভিডিও দেখে মাষ্টারবেট করা জাতি একটা লেখার মূল্য কী করে বুঝবে?
চার্লস ডিকেন্সের মত লেখক তার অলিভার টুইস্ট , স্কুইজ , মিস্টার ডিকেন্স চরিত্রগুলোকে পুরো পৃথিবীতে বিখ্যাত করেছেন। মানুষ যদি শেক্সপিয়র না পড়বে তবে ম্যাকবেথ , হ্যামলেট , জুলিয়াস সিজার , রোমিও জুলিয়েট এসব চরিত্র বিখ্যাত হলো কী করে? তাই মাঝে মাঝে মনে হয় লিখে কী হবে? ঠিক তখনি ঝালমুড়ি বিক্রেতা আমার সময়ের জনপ্রিয় কবি জেমস হালদারের অশ্রুসজল চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে।আমি থেমে যাই , আমি বোবা হয়ে যাই। তার এত সুন্দর কবিতার বই কোন প্রকাশক ছাপায়নি। এজন্য দেশে স্যাটানিক ভার্সেস নকল করে স্যাটারিক ভার্সেস লেখা নকল মাসকাওয়াথ আহসানদের জন্ম হয়েছে। পিনাকীর মত মিল্টেফস ক্যাপসূলের কেলেঙ্কারির নায়কের বেশ কয়েকটা বই জনপ্রিয় হয়েছে। এমনকি খুনী ডালিমের লেখা বই পর্যন্ত মানুষ অন্ডকোষের হরমোন ভেবে গিলে খেয়েছে । এই জাতির জন্য লিখতে গিয়ে জাফর ইকবাল স্যার আজ অপরাধী। হুমায়ূন আজাদকে নিজের জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে। এজন্য মা সবসময় বলতো , " একটু চালাক হও বাবা, এত বোকা হলে পৃথিবীতে ভাত পর্যন্ত জুটবে না।"
এই দেশে একদল চালাক লোক জামায়াত শিবির শয়তানের বেশ ধরে সিনেমা শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য ' এক টিকিটে দুই ছবি ' নিয়ে এসেছে হলে। যাত্রাপালা ধ্বংস করার জন্য নর্তকী এনে নাচিয়েছে, অথচ যাত্রার সাথে এর কোন সম্পর্কই নেই। শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য কোচিং সেন্টারের ব্যবসা খুলেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের জন্য বাসা বাড়িতে ব্যাঙের ছাতার মতো লোটা বিজ্ঞান পাঠাগার খুলে বসেছে, মেধাবী লেখকদের ধ্বংস করার জন্য হত্যা ও তাদের জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার উপায় বের করে নিয়েছে। এজন্য কয়দিন পর বইমেলায় ' হকার সাইফুলের রাজনীতি" বই বের হলেও আশ্চর্য হবো না। আমাদের একুশের বইমেলা আর বইমেলা নেই, এসব এখন গবাদিপশুর হাঁট হয়ে গেছে।।
দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়া চীন ও বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী কাদের জন্য লিখে গেছেন? দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে শেখ হাসিনা 'ওরা টোকাই কেন' , "দারিদ্র্য বিমোচন , কিছু ভাবনা " আমার স্বপ্ন , আমার সংগ্রাম " এসব বই লিখতে গেলেন কেন?
রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে হো চি মিন ' নির্বাচিত রচনাবলী ' ও জহরলাল নেহরু " অ্যান অটো বায়োগ্রাফি" লিখতে গেলেন কেন? ওরা কি সবাই উন্মাদ ও পাগল ছিলেন?
বই মানুষের জীবনের কথা বলে, স্বপ্নের কথা বলে ড় রাজনীতির ভবিষ্যত দেখায়, পৃথিবী ও মহাকাশ বিজ্ঞানের কথা বলে, মানুষের সুখ ও দুঃখের গল্প বলার পাশাপাশি জীবন দর্শনের কথা বলে।বই পৃথিবীর ভবিষ্যৎ পর্যন্ত পাল্টে দেয়। চার্লস ডারউইনের " অরিজিন অফ স্পিসিস" ছাড়াও দাস ক্যাপিটাল ও ফাদার এন্ড সন্স বইগুলো পৃথিবীর মানুষের ভবিষ্যৎ পাল্টে দিয়েছিলো। বই , গান , কবিতা ও সাহিত্য লেখা কি এতোই সহজ?
কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পল্লিকবি জসীমউদ্দীন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুকুমার রায় , তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত লেখকরা লেখার সম্মানি নিতেন।লেখাই ছিলো তাদের জীবিকা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম।তাই বলে বিদ্রোহী কবি কখনোই টাকার কাছে নিজের বিবেককে বিক্রি করে দেননি, শরৎচন্দ্র কখনোই তার লেখায় আপোস করেননি। আপনারা কি করে ভাবলেন তসলিমা নাসরিন আপনার মত করে লিখবে ? সবাই বিবেক বিক্রি করে পিনাকী ও খুনী ডালিম হয় না। একেকজন লেখকের লেখার ধরণ একেকরকম। আপনার পছন্দ হলে পড়বেন , নয়তো এড়িয়ে যাবেন।
আজ খুব পুকুর পাড়ের কথা মনে পড়ছে। জাফর ইকবাল স্যারের অপমানের জবাব দিতে গিয়ে সেদিন আমি মৃত মানুষের হাড় দিয়ে সাইবেরিয়ার রাস্তার প্রসঙ্গ টেনেছিলাম। আমার কাছে সেটাই ছিল জাফর ইকবাল স্যারকে রক্ষার জন্য চীনের দূর্গ।কারণ এই দেশের মানুষকে যতোই বুঝান জাফর ইকবাল স্যার একজন বিজ্ঞানী।এই আহম্মকদের দল ততবারই আপনাকে প্রশ্ন করবে , জাফর ইকবাল স্যার কি আবিষ্কার করেছেন? আরে গর্দভ__ আইনস্টাইন , হকিং ও নিউটন এরা কি আবিষ্কার করেছে? এরা কেন বই লিখে বিখ্যাত হয়েছে?
এজন্য মাঝে মাঝে মনে হয় সব ছেড়ে পিনাকী হয়ে যাই।। এমনিতেই আমার মাথার চুলগুলো বড় । হাতে একটা বালা আর লিঙ্গের সাইজ তিনিঞ্চি তথা ( লাজহীন) হয়ে গেলে জনপ্রিয়তা পেতে খুব বেশি সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু ভাই , " আমি এক টিকিটে দুই ছবি '' দেখা পাবলিক। অনলাইন সেলিব্রিটি হওয়ার জন্য আসিনি।যে লেখা লিখতে গিয়ে আমাকে গৃহহীন হতে হয়েছে , আমার নয় মাসের বাসা ভাড়া বাকি ছিলো , এক বেলা পেটে খাবার জুটলে পরের দিন অনাহারে কাটাতে হয়েছে, প্রচন্ড শীতের রাতে মেঝেতে শুয়ে নিরবে চোখের জল ফেলতে হয়েছে , তখন কোথায় ছিল আপনাদের মানবতা, কোথায় ছিল নীতিবাক্য? লেখাও যে একটা জীবিকা এটা যদি সব লেখক বুঝতো!! এই লেখা জীবিকা থেকে ব্যবসা হয়ে গেলো। অসভ্য ও বর্বরের দেশে এটা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা যারা বিবেক বিক্রি করতে পারিনি তারাই হারিয়ে গেলাম জগৎ থেকে। এই জগতে হিরো আলমের পর্যন্ত বই বেরিয়েছে। এজন্য আমি হিরো আলমকে দোষী করবো না, দোষ আমাদের রুচির দুর্ভিক্ষের। কুত্তা কাফির মত পোলা পর্যন্ত হাবিজাবি গরুর রচনা লিখে কোটি কোটি টাকার মালিক! শত শত তরুণীর ক্রাশ! আমি শালা এখনও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি! বিয়েটাও করতে পারিনি! যোগ বিয়োগ সব ফলাফল শূন্য। এভাবে কি লেখক বাঁচে? এজন্যই আসিফ নজরুল পয়দা হয়।। জোসেফ গোয়েবলস তত্ত্ব সামনে আসে , আর ফ্রড মজহারদের জয়জয়কার হয়।কারণ ওইসব ফ্রডের পেছনে ইনভেস্ট করার মানুষের অভাব নাই। কিন্তু একটি কলমের পেছনে আমাদের দায়বদ্ধতা , মনূষ্যত্ব ও বিচক্ষণতার বড় অভাব । তাই ২৬ বছরের জেঞ্জিদের মুতে ১৭ কোটি মানুষ ভোদাই হয়ে খুব জোরে " কোটা না মেধা" আছাড় খেয়েছে। বই না পড়া রুচিহীন জাতির এটাই প্রাপ্য।।।
সত্য সবসময় সুন্দর।
লুসিড ড্রিম