04/06/2024
#পিবিআই নরসিংদী কর্তৃক লিবিয়া থেখে মানব পাচার মামলার ভিকটিম উদ্ধার* গ্রেফতার -০৩
লিবিয়া থেকে মানব পাচার মামলার ভিকটিম রোমেল মিয়া (৩৪) উদ্ধার সহ ঘটনার সাথে জড়িত মানব পাচার চক্রের ০৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই নরসিংদীর জেলা। গত ২৪ মে ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে তাকে হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে পিবিআই পুলিশ হেফাজতে গ্রহণ করে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা হলেন ১। ওয়াসিম হোসেন (২৮), ২। সোহেল (২৪) এবং ৩। আকারিছ মিয়া (৫৪)
আজ ৪ জুন ২০২৪ তারিখ সকাল ১১.৩০ টায় পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঘটনার বিস্তারিত তুলেন ধরেন পিবিআই নরসিংদী জেলার ইউনিট ইনচার্জ অতিরিক্ত ডিআইজি জনাব মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান। এ সময় পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের পুলিশ সুপার (সিআরও এন্ড মিডিয়া) জনাব আবু ইউসুফ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) জনাব নাসিম মিয়া এবং পিবিআই নরসিংদী জেলার পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম উপস্থিত ছিলেন।
বাদী অভিযোগে উল্লেখ করেন যে, আসামী ১। রহমত উল্লাহ(৩৫) ২। মোঃ বিল্লাল মিয়া (৩৫), ৩। ফাতেমা (৩০), ৪। ওয়াসিম হোসেন (২৮), ৫। সোহেল (২৪), ৬। ছানাউল্লাহ (২৫), ৭। আকারিছ মিয়া (৫৪), অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করে যে, আসামী রহমত উল্লাহ এর সাথে পূর্বে থেকে বাদীর চাচাতো ভাই আরাফাত লিবিয়া থাকতেন। তারই সুবাদে মোবাইলের মাধ্যমে পরিচয় হয়। বাদীর ভাই রোমেল(৩৫) কে লিবিয়ায় নেওয়ার বলে ৪ লক্ষ টাকা করে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গত ০৬/০৩/২০২৪ ইং তারিখ ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকের একাউন্ট নং ২০৫০২১৮০২০২৮২৫৭০৫ এবং ২০৫০২১৮০২০২৮২৫৭০৪ তে ২,০০,০০০/-(দুই লক্ষ) টাকা দেয় এবং গত ১৪/০৩/২০২৪ ইং তারিখ বাংলাদেশী ১,২৪,০০০/-টাকার সমপরিমান ইউএস ডলার সাথে করে নিয়া বিবাদীর দেওয়া টুরিস্ট ভিসায় প্রথমে ঢাকা হইতে দুবাই যায়। পরে দুবাই হতে মিশর হয়ে লিবিয়ায় নিয়ে যায় এবং বাকি ২,০০,০০০/-(দুই লক্ষ) টাকা গত ২৩/০৩/২০২৪ ইং তারিখ নেয়। এরপর হতে ১নং আসামী যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কিছুদিন পর সহযোগি অজ্ঞাত আসামীগন বাদীর ইমু নম্বরে ভিডিও কলে লাইভে এসে ভিকটিমকে মারধর করতে থাকে এবং বাঁচাতে চাইলে মুক্তিপন বাবদ ১২,০০,০০০/-(বার লক্ষ) টাকা দাবী করে। ০৭/০৪/২০২৪ তারিখ আসামী মোঃ বিল্লাল হোসেন বাদীর চাচাতো ভাই তৌহিদের ইমুতে ১টি ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ও ১২ টি বিকাশ নম্বর দিয়ে মুক্তিপন হিসেবে দ্রুত ১২,০০০০০/-(বার লক্ষ) টাকা পাঠাতে বলে। এছাড়াও ১টি ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর দেয়। ০৭/০৪/২০২৪ তারিখ বাদী ১নং আসামীর বাড়ীতে গিয়ে ৩নং আসামী ফাতেমার নিকট ঘটনার বিষয়ে জানালে বাদীর সাথে বাকবিতন্ডা হয়। পরবতীর্তে আসামী বিল্লাল ও তার সহযোগী আসামীরা বাদীর ইমুতে ১২ টি বিকাশ নম্বর পাঠিয়ে ১২ লক্ষ টাকা তাৎক্ষনিক পাঠাতে বলে।
গত ১০/০৪/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ বাদী বাবুল ও তার আত্মীয় স্বজন পিবিআই নরসিংদী কার্যলয়ে এসে পুলিশ সুপার মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) কে কান্না ভারাক্রান্ত ভাবে জানান তার ভাই ভিকটিম রোমেল (৩৪) কে একটা চক্র লিবিয়াতে জিম্মি ও আটক করে রেখে ব্যপক অত্যাচার নির্যাতন করছে এবং ইমু এর মাধ্যমে ভিডিও কল লাইভ এ দেখিয়ে দেখিয়ে ব্যপক মারপিট করছে ও মুক্তিপন হিসেবে ১২ লক্ষ বাংলাদেশী টাকা দাবী করছে। মুক্তিপন দাবীকারী আসামীগন বাংলাদেশী এবং বাংলায় কথা বলে। ভিকটিম রোমেলকে লাইভে মারপিট করায় সে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছে এবং বাবা মা স্ত্রী ভাইদের ভিডিওতে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে টাকা না পাঠালে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে বলে কান্নাকাটি করে এবং জিম্মিকারীদের মুক্তিপনের টাকা পাঠাতে বলে। এছাড়া জিম্মিকারীগন প্রতিদিন অনেকবার করে টাকা পাঠানোর তাগাদা দিতে থাকে এবং টাকা না পাঠালে কখনো বলে হাত কেটে ফেলব, কখনো বলে মেরে ফেলব, লাশও দেখতে পাবিনা।
পুলিশ সুপার পিবিআই নরসিংদী এর প্রত্যেক্ষ দতারকি ও নেতৃত্বে বিষয়টি যাচাই পূর্বক সত্যতা পাওয়া যায় এবং জানা যায় যে, ভিকটিম রোমেল(৩৪) কে কার্পেট ফ্যাক্টরীতে কাজ দেওয়ার কথা বলে লিবিয়াতে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে একটি চক্র ৪,০০,০০০/- টাকা দুবাই হয়ে, মিশর হয়ে লিবিয়াতে নিয়ে যায় এবং একপর্যায়ে লিবিয়ার মিশরাতা লাকায় বন্ধি করে অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। ১২ লক্ষ টাকা দাবী করে। পরবতীর্তে আরো জানা যায় যে, লিবিয়ার উক্ত ঘটনাস্থলে ভিকটিম রোমেল সহ আরো অনেক বাংলাদেশী আটক ছিল। চক্রটি তাদেরকে অত্যাচার করে নিয়মিত মুক্তিপন আদায় করছে এবং অভিযোগের বিষয়টি পিবিআই প্রধান জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার) পিপিএম, ডিআইজি জনাব মিরাজ উদ্দিন আহমেদ, বিপিএম (সেবা) পিপিএম স্যার ও অতিরিক্ত ডিআইজি জনাব মোঃ সায়েদুর রহমান স্যারগনকে জানানো হয় এবং তাদের প্রত্যেক্ষ দিক নির্দেশনায় ভিকটিম রোমেলকে লিবিয়ার জিম্মি দশা হতে নিরাপদে উদ্ধার ও জিম্মিকারী ও মুক্তিপন চক্রের বাংলাদেশে অবস্থানকারী সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হয়।
উল্লেখ যে, আসামীগন লিবিয়া থেকে বারবার ভয় দেখায় ঘটনাটি পুলিশকে জানালে ভিকটিম রোমেলকে হত্যা করা হবে এবং তার লাশও পাওয়া যাবে না। প্রতিদিন অনেকবার টাকার জন্য তাগাদা দিতে থাকলে পিবিআই এর কার্যক্রম গোপন রেখে অপরাধীদের ব্যাংক একাউন্ট ও বিকাশ নাম্বর চাওয়া হলে তারা একটি ব্যাংক একাউন্ট ও অনেকগুলো বিকাশ নাম্বর দেয়। ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে ০৪ টি বিকাশ একাউন্টে মোট ১,৫০,০০০/- টাকা পাঠানো হয়। চক্রটি টাকা রিসিভ করে তারা আরো টাকা পাঠাতে তাগাদা দেয়। এই পর্যায়ে পিবিআই নরসিংদী ও পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের মোট ৩টি টিমের সমন্বয়ে একসাথে ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের ভৈরব এবং নরিসিংদীর রায়পুরা থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে মুক্তিপন দুইজন আসামী (ওয়াসিম হোসেন ও আকারিছ মিয়া) গ্রেফতার করা সহ অপরাধ কর্মে ব্যবহৃত ৯টি মোবাইল সেট, মুক্তিপনের ১,৫০০,০০০/- টাকা ও বিকাশ সিমসহ মোট ২২টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।
তাৎক্ষণিক ভাবে লিবিয়াতে জিম্মিকারীদের মুল হোতা বাংলাদেশে অবস্থানকারী আসামী সোহেলকে গ্রেফতার করা না যাওয়ায় আরো ব্যাপক অভিযান ও তৎপরতা পরিচালনা করা হয়। যাহাতে আসামীগন পালিয়ে দেশের বাহিরে যেতে না পারে সেমোতাবেক সকল বিমান বন্দর ও স্থলবন্দরে আসামীদের নাম সহ ইমিগ্রেশনে চিঠি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আসামী সোহেল দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে গেলে গত ১৯/০৪/২০২৪ খ্রিঃ টঝ—ইঅঘএখঅ, অওজখওঘঊঝ ইঝ৩৪৫ যোগে শারজাহ দুবাই বহির্গমন ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করাকালে আসামী সোহেলকে আটক করা হয়। আসামী সোহেল রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বিষয়ে ব্যাপক তথ্য প্রদান করে এবং তার মোবাইল দিয়ে লিবিয়ায় অবস্থানরত অজ্ঞাতনামা আসামীগন দীর্ঘ সময় কথা বলে ভিকটিম রোমেলকে ছাড়তে রাজি হয় এবং ভিকটিমকে মারপিট বন্ধ করে।
অুতঃপর মোবাইল ফোনে দীর্ঘ আলোচনা ও নাটকীয়তার পরে আসামী সোহেলের কথামতো লিবিয়াস্থ অবস্থানরত আসামীরা ভিকটিম রোমেলকে একদিন সারাদিন ঘুরিয়ে রাত অনুমান ৩ টায় জিম্মি করার ঘটনাস্থ হতে মুক্ত করে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলীতে আসামী রহমত উল্লাহ কাছে পৌছে দিয়ে ভিকটিমকে ছেড়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেয়। দীর্ঘ ২২ দিন অত্যাচার নির্যাতন ও জিম্মি অবস্থায় থাকার পরে তারিখে প্রথমে লিবিয়ার ত্রিপলীতে কৌশলে নিয়ে আসা হয়।
পরবতীর্তে ভিকটিম রোমেলকে ত্রিপলী থেকে দেশে আনার জন্য পাসপোর্ট ভিসা ও বিমান টিকেটের জটিলতা দেখা দেওয়ায় পুলিশ সুপার, পিবিআই নরসিংদী মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান লিবিয়ান এ্যাম্বাসিতে একাধিকবার কথা বলে এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই নরসিংদীর টিম বহু চেষ্টার পর ভিকটিম রোমেলকে গত ২৪/০৫/২০২৪ খ্রিঃ নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয় এবং পিবিআই নরসিংদী টিম হযরত শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে ভিকটিম রোমেলকে রিসিভ করে। ভিকটিম রোমেল লিবিয়াতে জিম্মি দশায় সে ব্যতিত আরো অন্তত ১১ জন বাংলাদেশীকে মুক্তিপনের জন্য বন্ধি দেখেছে বলে জানায়। বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়া তদন্তে প্রাপ্ত ব্যাংক একাউন্ট ও ব্যাপক আর্থিক ট্রানজেক্শন যাচাই করা হচ্ছে। আসামীদের দেওয়া মুক্তিপন আদায়কারী চক্রের ভয়াবহ ও লোম হর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা দেয়। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক একাউন্ট ও ট্রানজেক্শন যাচাই করা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তাঃ পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম, পিবিআই নরসিংদী জেলা
তদন্ত তদারকি কর্মকর্তাঃ অতিরিক্ত ডিআইজি জনাব মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান, ইউনিট ইনচার্জ, পিবিআই নরসিংদী জেলা