27/12/2023
আল্লাহর ওলীরা যেমন হন বা সহজ-সরল জীবনযাপন :
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলাধীন কামারচাক ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড মৌলভীচক গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন আল্লাহর একজন ওলী সর্বজন শ্রদ্ধেয় হযরত মাওলানা হাবিবুল্লাহ ছুফি সাহেব (রহঃ)।
হযরতকে যারা খুব কাছে থেকে দেখেছেন উনারা খুব ভালো করে জানেন দুনিয়াবিমুখ-প্রচারবিমুখ এই বুজুর্গ কেমন ছিলেন।
মায়-মুরব্বিয়ানদের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি এবং নিজের চোখে যা দেখেছি তা বিস্তারিত লিখে বুঝানো হয়তো আমার পক্ষে সম্ভব হবেনা। হযরত ছুফি সাহেব (রহঃ) জীবনের আমলীয় অনেকগুলো চমৎকার বিষয় থেকে আপনাদের সামনে অল্প কিছু কথা তুলে ধরার চেষ্টা করবো যা সর্বশ্রেণীর মুসলমানদের জন্য একটা উদাহরণ স্বরূপ এবং আমলীয় বিষয়।
হযরত ছুফি সাহেব (রহঃ) কখনো নাকি আরামদায়ক বিছানায় শুয়ে-বসে নিজের শরীরকে তৃপ্তি দিতেন না। সব সময় তিনি অতি সাধারণভাবে চলাফেরা করতেন। অপরিচিত কোনো ব্যক্তি হযরতকে প্রথমে দেখলে (আল্লাহ যেনো মাফ করেন) দেখতে পাবেন হুজুরকে কোনো এক ভিক্ষুকের বেশে এরকম সাদাসিধে দুনিয়াবিমুখ একজন আল্লাহওয়ালা।
হযরত ছুফি সাহেব (রহঃ) আল্লাহর প্রেমে নিজেকে এমনভাবে বিলিয়ে দিয়েছেন যে উনার রাতের ঘুম ছিল না বললে চলে। রাতের প্রথম দিকে কিতাব মু'তায়ালা করতেন, মাঝে-মধ্যে মধ্যরাতে নিজের ছেঁড়া জামাগুলো নিজ হাতে তিনি সেলাই করতেন, শেষ রাতে আল্লাহর প্রেমে নিজেকে বিলিয়ে দিতেন।
হযরত ছুফি সাহেব (রহঃ) বেশিরভাগ সময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে রিক্সা/গাড়ীতে না চড়ে পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল আল্লাহর জিকির করে করে তিনি যাতায়াত করতেন।
হুজুর চলার পথে সবসময় হাতে একটা ছাতা থাকতো। তিনি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় গর্দান সামনের (নিচের) দিকে কাত করে চেহারা নিচের দিকে রেখে হাতের ছাতা দিয়ে তিনি নিজেকে এমনভাবে ঢেকে রাখতেন দূর থেকে দেখলে মনে হত,কোনো এক পর্দানশীন বয়স্কা মহিলা মনে হয় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন!
আগের যুগে গ্রামের বয়স্কা মহিলারা কোথাও যাওয়ার পথে পুরুষ দেখলে ছাতা দিয়ে যেভাবে নিজেকে ঢেকে রাখতেন ঠিক তেমনিভাবে হযরত ছুফি সাহেব (রহঃ) রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় নিজেকে এভাবে ঢেকে রাখতেন কারণ তিনি চাইতেন কোনো বেগানা নারীর দিকে উনার দৃষ্টি যেন না পড়ে এবং কোনো পরনারীর দৃষ্টি উনার চেহারা না দেখে। এজন্য পরিচিত সকলে হুজুরকে ছুফি সাহেব নামে ঢাকতেন এবং এই ছুফি সাহেব নামেই সবাই উনাকে চিনতেন।
আহ্ কত বড় মাপের আল্লাহর একজন ওলকে আমরা হারিয়েছি! আমাদের এই শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার মতো নয়।
মহান রাব্বে কারীম যেনো আমাদের হযরতকে জান্নাতুল ফেরদাউসের সুউচ্চ মাকাম দান করেন।আমীন।