
12/08/2025
মাত্র ৩০ হাজার টাকা মোহর নির্ধারণ করে আমার বাবা আমাকে বিয়ে দেন একজন কওমি মাদ্রাসার হুজুরের কাছে।
আমি জানতাম না আমার মোহর ৩০ হাজার। আমি ভাবছিলাম ফাতেমী মোহর হবে যা সাধারণত অনেক হুজুররা দিয়ে থাকেন। বিয়ের দিন কাবিননামায় দস্তখত দেয়ার আগে আমার হাতে ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয়। আমি ভাবছিলাম হয়তো এখন ৩০ হাজার দিছেন পরে বাকিগুলো দেয়া হবে।
বিয়ের পরদিন ওয়ালিমা হয়। সেদিন বিকালবেলা তিনি আমার কাছে এসে বসলেন। আমার দিকে অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছেন। পরে বললেন, এই যুগে এসেও এতো স্বল্প মোহরে সন্তুষ্ট হয়ে আপনার মতো মেয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাওয়া সত্যিই অবিশ্বাস্য। সচরাচর সমাজে এরকম হয়না।
তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমার মোহর কি শুধু ৩০ হাজার ই ছিলো? আমি তো জানতাম ফাতেমী মোহর হবে?
তিনি বললেন, এই ৩০ হাজার ই সব। আমি একটু চিন্তিত হয়ে গেলাম। মনটা কালো হয়ে গেল। তিনি তা বুঝতে পেরে আমাকে বললেন আপনি কি তাতে সন্তুষ্ট নন? অন্যথায় এ ব্যাপারে আবারো আলাপ করি আপনার বাবার সাথে। আমি বললাম, দরকার নেই। তিনি চলে গেলেন, বুঝলাম উনার ও মন খারাপ হয়ে গেল আমার আচরণে।
এরপরদিন আমাদের বাড়িতে এসে আমার আব্বার সাথে মোহর নিয়ে আলোচনা করলাম। মোহর এতো স্বল্প কেন ধার্য করা হল, কমপক্ষে তো ফাতেমী মোহর যা বর্তমানে প্রায় ২ লক্ষ ৮০ হাজার এর মতো ধার্য করা উচিৎ ছিল।
আব্বা আমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে আমাকে বুঝালেন,
বিয়ের সম্পর্ক ঠিকে থাকে ভালোবাসা, বিশ্বাস, আর আনুগত্যের মাধ্যমে। উচ্চ পরিমাণের মোহরের মাধ্যমে নয়।
একে অপরকে ভালোবাসো, এমন কোন কাজ করোনা যা ভালোবাসার পথে বাঁধা সৃষ্টি করে। এবং তোমাদের মাঝে মনোমালিন্য তৈরী হয়।
কখনো স্বামীর বিশ্বাস ভঙ্গ করোনা, এমন কাজ করোনা যা তার বিশ্বাসের বিপরীত হয়। ফলে তোমাদের মধ্যে বিবাদ তৈরী হবে।
সবসময় স্বামীর আনুগত্য ও সেবায় নিয়োজিত থাকো। কখনো স্বামীর অবাধ্য হয়ে কোন কাজ করতে যেওনা যার ফলে সে তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবে।
ভালোবাসা, বিশ্বাস, এবং আনুগত্য না থাকলে ৩০ কোটি টাকা মোহর ধার্য করলেও সে তোমার থেকে বিচ্ছিন্ন হতে সময় নিবেনা। সে তোমার থেকে আলাদা হয়ে যাবে। কারণ তুমি যখন তার মানসিক প্রশান্তি হতে পারবেনা তখন সে তোমাকে নিয়ে থাকতে চাইবেনা। এমন কাজ যদি করো যা তার ভালোবাসা, বিশ্বাস, আর আনুগত্যের পরিপন্থী তাহলে সে তোমাকে নিয়ে সংসার করতে পারবেনা, একসময় সে তোমার থেকে আলাদা হয়ে যাবে। তখন সে উচ্চ পরিমাণের মোহরের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেনা।
মোহরের স্বল্পতা বা আধিক্যতা বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিকিয়ে রাখেনা। সম্পর্ক ঠিকিয়ে রাখবে তোমার আচার-আচরণ ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
সুতরাং, জামাই তার সামর্থ্য অনুযায়ী নগদ ৩০ হাজার মোহর দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন, এবং বাকি কোন মোহর তিনি রাখতে চান না। এটা শুনার পর আমি রাজি হয়ে যাই। এবং জামাই সম্পর্কে আমি সবকিছু ভালোই জেনেছি। এটা নিয়ে মন খারাপের কিছু নেই। তুমি তার মনের মতো হওয়ার চেষ্টা করো, ভালোবাসা কখনো শেষ হবেনা, বৃদ্ধি পাবে।।
ওইদিন রাতে যখন আমি উনার সাথে কথা বলি, তখন আমার পরিস্থিতি বুঝে তিনি আমাকে মোহর সম্পর্কে কুরআন সুন্নাহ থেকে কিছু আলোচনা শুনান আমাকে। তার কথাগুলো শুনে আমার চোখে পানি চলে আসলো। তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলাম। গতদিন আমার চিন্তিত চেহারা দেখে তিনি কষ্ট পেয়েছিলেন, আমি ক্ষমা চাইলাম তার কাছে। এবং বললাম আমি সন্তুষ্ট আছি আলহামদুলিল্লাহ! ইনশা-আল্লাহ এই স্বল্প মোহরের বিয়ে অনেক বরকত ও কল্যান বয়ে আনবে। এবং আমি এই বাস্তবতা এখন থেকে লক্ষ্য করছি।
নোটঃ মোহরের স্বল্পতা বা আধিক্যতা বৈবাহিক সম্পর্ক ঠিকিয়ে রাখেনা। সম্পর্ক টিকে থাকে আচার-আচরণ, চারিত্রিক ও নৈতিক বৈশিষ্ট্য, ভালোবাসা, বিশ্বাস ও আনুগত্যের মাধ্যমে।
সুতরাং, মোহরকে স্বল্প করুন, ছেলেদের জন্য বিয়েকে সহজ করুন। ইনশাল্লাহ অনেক কল্যাণময় সংসার হবে।
❤️ ভালো লাগলে শেয়ার করবেন।