https://www.facebook.com/104828965618509/

Golpo Zone

Home
Bangladesh
Sirajganj
Golpo Zone

Stay with Us
Thanks for like 🥰🥰🥰

31/01/2025

বাধ্যতার বাঁধনে বন্দী
পর্বঃ-০৩
ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হওয়ার অবস্থা পুতুলের। লাস্ট বিয়ার টা শেষ করে হিমাদ্রী বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় তারপর ধীরে পায়ে সুইমিং পুল টাতে এগিয়ে গিয়ে পুতুল কে কোল তুলে নিয়ে রুমের দিকে হাটা দিলো পুতুলে জ্ঞান নেই বললেই চলে। রুমে এসে পুতুল কে তার কোল থেকে নামিয়ে গা এর সাথে মিশিয়ে এক হাত দিয়ে ধরে অন্য হাত দিয়ে লাইটা বন্ধ করে ড্রিমলাইট টা জ্বালিয়ে দিলো। তারপর পুতুল কে বিছানায় নেওয়া আগে ওর ড্রেস টা খুলে দিয়ে হিমাদ্রীর একটা শার্ট পড়িয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কম্বল টা টেনে দিয়ে। সেও ফ্রেশ হতে গেলো ফ্রেশ হয়ে এসে পুতুলের চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিলো কাঁপতে কাঁপতে পুতুল চোখ খুলে তাকালো। চোখ খুলে হিমাদ্রী নামে পাষাণ পুরুষ টা কে দেখতে পেরে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। হিমাদ্রী আবার আলমারি টা খুলে লং ব্লেজার টা নিয়ে পুতুলকে পড়িয়ে দিয়ে পুতুল কে জড়িয়ে ধরিয়ে শুইয়ে পড়লো। হিমাদ্রীর বুকের আদ্রর্তায় পুতুলের কম্পন কিছুটা কমেছে কিন্তু শরীর টা কেমন গরম গরম লাগছে মনে হয় জ্বর আসবে। হিমাদ্রী বিছানা থেকে নেমে কিচেন রুমে এসে কাজের লোকদের বললো স্যুপ করে দিতে। ওর কথা মতো ওরা স্যুপ বানাতে বসলো। বেশ কিছুক্ষণ পর স্যুপ টা রেডি হতে স্যুপ টা নিয়ে রুমে আসলো হিমাদ্রী। শুয়া অবস্থায় পুতুলকে স্যুপ টা খাইয়ে পানিতে মেডিসিন টা গুলিয়ে খাইয়ে দিলো আর স্যুপের বাটিটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে পুতুল কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।
সকালে সবার আগে হিমাদ্রীর ঘুম ভাঙলো। রুমে নরম আলো ঢুকছে জানালার পর্দা ফাঁক করে। সে ধীরে ধীরে পুতুলের দিকে তাকালো। পুতুল তখনো ঘুমিয়ে আছে, তার মুখটা কেমন শান্ত। কিন্তু সেই শান্তির আড়ালে যেন অসহায়তার ছায়া লেগে আছে।
হিমাদ্রী ধীরে হাতে পুতুলের কপালে স্পর্শ করল। জ্বরটা প্রায় কেটে গেছে, তবে হালকা তাপ এখনো রয়ে গেছে। পুতুলের শ্বাস-প্রশ্বাসের নরম শব্দ তার কান ছুঁয়ে গেল।
তার চোখে হঠাৎ এক অদ্ভুত অনুভূতি খেলে গেল। কিন্তু সেটা ঠিক দয়া, মায়া, নাকি কিছু আরেকটা, সে নিজেও বুঝতে পারল না।
হিমাদ্রী পুতুলের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে রইল। পুতুলের নিঃশ্বাসের নরম ওঠানামা আর শান্ত মুখটা যেন এক মুহূর্তের জন্য তাকে থামিয়ে দিল। নিজের ইচ্ছাকে দমাতে না পেরে সে ধীরে পুতুলের ঠোঁটের কাছে ঝুঁকল। আলতো করে তার অধর ছুঁয়ে দিয়ে নিজের মধ্যে এক বিজয়ের অনুভূতি। এরপর সে আর এক ধাপ এগিয়ে পুতুলের গলায় মুখ গুঁজে রইল। তার গলার মৃদু ঘ্রাণ, ত্বকের উষ্ণতা—সবকিছু যেন হিমাদ্রীর ভেতরে এক অদ্ভুত আনন্দের স্রোত বইয়ে দিল। তার ঠোঁট ধীরে ধীরে আরও নিচে নামল।
পুতুলের পেটের উপর এক গভীর চুম্বন এঁকে, যেন নিজের ছাপ রেখে গেল। সেই মুহূর্তে সে যেন নিজের ইচ্ছার এক নতুন মাত্রায় পৌঁছাল। তার ঠোঁটের ছাপটুকু পুতুলের গায়ে রেখে, সে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল।
একবার পেছনে ফিরে পুতুলের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকাল। তারপর দ্রুত বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল, যেন তার মনের উত্তেজনা গোপন করার আর কোনো উপায় ছিল না। "এখনো অনেক কিছু বাকি, মেরি জান," মনে মনে বলল হিমাদ্রী, তার ঠোঁটের কোণে এক ডেভিলিশ হাসি ফুটে উঠল।
সূর্য তখন ধীরে ধীরে পূর্ব দিগন্তে উঠছে। হিমাদ্রী বাগানে হাঁটছে ধীর পায়ে, তার প্রতিটি পদক্ষেপে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা। বাগানের ঠান্ডা বাতাস তার মুখে এসে লাগছে, কিন্তু তার মন যেন কোনো গভীর ভাবনায় নিমগ্ন। গাছের পাতায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু সূর্যের আলোয় ঝকঝক করছে।
হিমাদ্রী এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা গোলাপের গাছের কাছে থেমে গেল। গাছের টাটকা লাল গোলাপটা তার নজর কেড়ে নিল। গোলাপের কাঁটা হাতে লাগতে পারে জেনেও সে খুব সাবধানে ফুলটা ছিঁড়ে নিল। গোলাপের সুগন্ধটা গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে নিল হিমাদ্রী।
তার চোখে তখনো পুতুলের সেই অসহায় মুখটা ভাসছে। সে নিজেকে নিয়ে একটা অদ্ভুত দ্বন্দ্বে পড়ে গেল। পুতুলের প্রতি যে অনুভূতিটা তার মনে জন্ম নিচ্ছে, সেটা কি আদৌ ভালোবাসা, নাকি অন্য কিছু? সে নিজেই তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।
গোলাপটা হাতে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে হিমাদ্রী আপন মনে বলল, "তুমি আমার নিয়তি, পুতুল। আমি চাইলেও তোমার থেকে দূরে সরে যেতে পারব না।"
একটা গভীর নিশ্বাস ফেলে সে বাগানের আরেক কোণে গিয়ে দাঁড়াল, যেখানে একজোড়া পাখি তাদের বাসায় ডানা ঝাপটাচ্ছে। সেই দৃশ্যটা দেখে তার মনে একটু প্রশান্তি এলেও, পুতুলের প্রতি নিজের অধিকারবোধ যেন তার মনে একরকম অস্থিরতা তৈরি করে।
সে পেছনে তাকাল। দূর থেকে জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে রুমের ভেতরটা কিছুটা দেখা যাচ্ছিল। পুতুল কি এখনো ঘুমিয়ে আছে? তার মনে আবার সেই প্রশ্নটা জাগল। নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলেও, তার পা আবার সেই রুমের দিকে অজান্তেই এগিয়ে যাচ্ছিল।
রুমে এসে দেখে পুতুল এখনো ঘুমাচ্ছে। তপ্ত শ্বাঃস ফেলে সে ওই দিকে এগিয়ে যায়। পুতুলকে বেশ কয়েকবার ডাকলো কিন্তু উঠলো না অবশেষে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিলো। পুতুল পিট পিট করে তাকিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো কি হয়েছে?
হিমাদ্রী তার গম্ভীর ভরাট মুখে বললো উঠ ফ্রেশ হয়ে নে বাবাকে দেখতে যাবি না?
বাবার নাম শুনে তড়াক করে চোখ মেলে তাকলো পুতুল। তারপর আশেপাশে তাকিয়ে অন্য একটা অচেনা রুম। তারপর আস্তে আস্তে মনে পড়ে কালকের কথা ভয়ে কুঁকড়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। তারপর আবার চোখ মেলে নিজের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ। ওর যতটুকু মনে আছে ও কাল বিয়ের লেহেঙ্গা পড়াছিলো আর সুইমিংপুল এ ছিলো বাকি মনে নেই।
নিজের দিকে তাকিয়ে আবার হিমাদ্রীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,, আমার ড্রেস কে চেঞ্জ করেছে।
কাটখোট্টা উত্তর অবশ্য ই আমি কোন সন্দেহ আছে।
আপনি এইটা কি ভাবে করলেন?
না করার কোন কারণ আছে কি তুই আমার স্ত্রী তোকে স্পর্শ করার পূর্ণ অধিকার আছে। কাল তোর তিল দেখেছি। তোর সৌন্দর্যে প্রকাশ না করলেই নয়।
কতটা জঘন্য আপনি?
সেইটা সময় এলে বুঝতে পারবি এখন কি রেডি হবে না কি তোকে রেখে চলে যাবো৷
আপনার কাছে একটা রিকুয়েষ্ট কাল যে আপনাকে বিয়ে করেছি এই কথাটা বাবাকে বলবেন না বাবা সহ্য করতে পারবে না?
আমি কেন মানবো তোর কথা? মানলে কি দিবি ভাব পুতুল ভাব??
আমার দেওয়ার মতো কিছু নেই।
হিমাদ্রীর শয়তানি হাসি আরও বাড়ল। তার চোখে এক ধরনের তীব্র খেলা ছিল। পুতুলের দিকে তাকিয়ে সে বলল,
"তোর দেওয়ার মতো কিছু নেই বলছিস? কিন্তু আমি জানি তোর মধ্যে এমন কিছু আছে, যা আমি চাই।"
পুতুল অবাক হয়ে হিমাদ্রীর দিকে তাকাল, তার মুখের প্রতিটি রেখা প্রশ্নে ভরা।
"কী বলতে চাইছেন আপনি?"
হিমাদ্রী তার ঠোঁটের কোণে এক নিষ্ঠুর হাসি নিয়ে বলল,
"তোর আত্মসম্মান। তোর শক্তি। তুই জানিস, তুই যতটা সহ্য করতে পারবি, ততটা আমি নিব। তুই চাইলেও আমার হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারবি না, পুতুল। আমি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।"
পুতুলের চোখে ভয় আর সংশয়ের ছাপ ফুটে উঠল। সে মাটিতে মাথা নুইয়ে ফেলল, কিছু বলার মতো অবস্থায় ছিল না।
হিমাদ্রী ধীরে ধীরে পুতুলের কাছে এগিয়ে এসে বলল,
"তোর ভেতরে এক শক্তি আছে, যা তুই নিজের চিত্তে লুকিয়ে রেখেছিস। আমি সেটা চেয়েছি, পুতুল। তুই আমার হয়ে গেলেই, আমি তোর সবচেয়ে বড় চাহিদা পূরণ করব। তুই আমার হতে পারবি, একদম আমার, তোর কিছু বাকী থাকবে না।"
পুতুল বাধ্য হিমাদ্রীর কথা শুনতে। পুতুল কান্নারত কন্ঠে বললো,, আপনি যা চান তাই হবে।
ভেরি গুড পুতুল। আজ রাতের জন্য রেডি থাকিস। আজ রাত টা তোর জন্য কষ্টের হবে আর আমার জন্য মধুর মিলন হবে। উফ্ফ কি আনন্দ মাই সুইটহার্ট বলেই পুতুলের পেট টেনে ধরে নিজে কাছে নিয়ে এসে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়।
ঠোঁট ছাড়া পেতে টেনে টেনে শ্বাঃস নিয়ে তারপর ওয়াশ রুমে যায়। হিমাদ্রী ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো তারপর অফিসের সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে। পুতুল ফ্রেশ হয়ে আসতেই একবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে বললো চল ব্রেকর্ফাস্ট করে নেই।
হিমাদ্রীর কথায় পুতুল মাথা নিচু করেই বলল, "এই তো খাচ্ছি।"
হিমাদ্রী চোখ কুঁচকে বলল, "খাওয়ার লক্ষণ তো দেখতে পাচ্ছি না। প্লেটে নেড়েচেড়ে রাখলে সেটা খাওয়া হয় না, পুতুল।"
পুতুল চুপচাপ রইল। তার হাতে চামচটা ধরা থাকলেও প্লেট থেকে আর খাবার তুলতে পারছিল না। তার মনে অজস্র চিন্তা ভিড় করছিল, কিন্তু কোনোটাই মুখে আসছিল না।
হিমাদ্রী চেয়ারটা পিছনে ঠেলে বসা ভঙ্গি বদলাল। তার চোখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠল। "তুই কি চুপ করে বসে থাকার জন্য আমার স্ত্রী হয়েছিস? নাকি আমার জন্য কিছু করার জন্য?"
পুতুল মাথা তুলে তার দিকে তাকাল। চোখে অপমান আর অভিমানের ছায়া। "আপনার জন্য তো সব কিছুই করছি। আর কী করতে হবে?"
হিমাদ্রী একগাল হেসে বলল, "তুই জানিস না, পুতুল। আমার জন্য তোর অনেক কিছুই করার বাকি আছে। তবে তার আগে ঠিক মতো খেয়ে নে। তোর শরীর দুর্বল থাকলে আমার কোনো কাজে আসবি না।"
পুতুল একটুও কথা না বলে প্লেট থেকে এক চামচ খাবার মুখে তুলল। তার চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল। কিন্তু সে সেটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করল।
হিমাদ্রী সেটাও লক্ষ্য করল, কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। সে আবার তার চেয়ার টেনে পুতুলের আরেকটু কাছে এনে তারপর পুতুলের সামনে খাবার টা তুলে ধরলো।
আকস্মিক এমন হওয়াতে পুতুলের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। সে বুঝার চেষ্টা করছে যা হচ্ছে তা কি চোখে ভ্রম না সত্যি ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো। তার হাতের চামচটা টেবিলে রেখে ধীরে বলল, "আপনার যত ইচ্ছা খেলান, কিন্তু এভাবে আপনি আমাকে দুর্বল করে ফেলছেন। নিজের ইচ্ছায় কিছু করার শক্তি আমি আর পাচ্ছি না।"
হিমাদ্রী গভীর দৃষ্টিতে পুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল, "তুই শক্তি হারাচ্ছিস না, বরং শক্তি যোগাচ্ছিস। তুই এখনো বুঝতে পারছিস না। সময় হলে সব বুঝবি। এখন মুখ খুলে খা।"
পুতুল বাধ্য হয়ে মুখ খুলল। চামচটা তার ঠোঁটে ছুঁইয়ে হিমাদ্রী একটুও হাসি লুকাল না। তার চোখে তখনো সেই আগ্রাসী নিয়ন্ত্রণের ঝিলিক।
"তুই যত আমার উপর রাগ করবি, ততই তোর উপর আমার অধিকার বাড়বে, পুতুল।"
পুতুল নিচু গলায় বলল, "আপনার অধিকার তো পুরোপুরি আছে। এখন আর নতুন করে কিছু বলার নেই।"
হিমাদ্রী হেসে বলল, "তোর এই কথা শুনতে আমার ভালো লাগে। তবে শোন, আজ তুই একদম আমার ইচ্ছামতো চলবি। আমি চাইলেই তোর মুখে হাসি আনতে পারি, আবার চাইলেই কান্না। সেটা যেন তুই ভুলে যাস না।"
পুতুল আর কিছু বলল না। তার ভেতরের তোলপাড় যতই গভীর হোক, সে মুখে কিছু প্রকাশ করল না। পুতুল খাবার শেষ করে ধীরে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। তার মনে তখন অস্থিরতার ঝড়। চোখে-মুখে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতার ছাপ নিয়ে সে হিমাদ্রীর দিকেই না তাকিয়ে সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল।
"কোথায় যাচ্ছিস?" হিমাদ্রী গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করল।
পুতুল কিছুটা থমকে দাঁড়িয়ে, পেছনে না তাকিয়েই বলল, "বাবাকে দেখতে হসপিটাল যাব।"
হিমাদ্রী তার চেয়ারটা পেছনে ঠেলে দাঁড়িয়ে বলল, "তুই একা কোথাও যাবি না। আমি সঙ্গে যাচ্ছি। তুই এখন আমার স্ত্রী, আর তোর প্রত্যেকটা পদক্ষেপ আমার অধীনে। এটা যেন তুই ভুলে যাস না।"
পুতুল ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ হলেও সেটা প্রকাশ করল না। ধীর গলায় বলল, "আপনার ইচ্ছা মতো সব কিছুই তো হচ্ছে। তাই যেটা আপনি ঠিক মনে করেন, সেটাই করুন।"
হিমাদ্রী এক চিলতে হাসি নিয়ে পুতুলের দিকে এগিয়ে গেল। "ঠিক বলেছিস। তবে শোন, তোর বাবার সামনে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলবো না। তুই যা বলেছিস, আমি সেটা মেনে নিয়েছি। তবে এটা যেন তুই ভুলে যাস না, আমি যা করব সব আমার নিজের শর্তে। তোর বাবার জন্য আমার এই এতটুকু সৎ থাকার কারণ শুধু তুই।"
পুতুল চোখ নামিয়ে বলল, "ধন্যবাদ। বাবাকে আঘাত দিয়ে আমার আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।"
হিমাদ্রী তার চশমাটা চোখে লাগিয়ে বলল, "তুই এখন রেডি হ, আমি গাড়ি বের করছি।"
পুতুল মাথা নিচু করে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল। তার মনে তখন শুধু একটাই ভাবনা—সে কি আর কোনোদিন নিজের ইচ্ছেমতো জীবনযাপন করতে পারবে? নাকি এই সম্পর্কের অদৃশ্য শিকল তাকে চিরদিন বেঁধে রাখবে?
কিছুক্ষণের মধ্যে দু'জনেই রেডি হয়ে গাড়িতে উঠল। হিমাদ্রী স্টিয়ারিংয়ে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করল। গাড়ির ভেতরে অদ্ভুত এক নীরবতা। পুতুল জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল, কিন্তু তার চোখে যেন কোনো দৃশ্যই ঠিকঠাক পৌঁছাচ্ছিল না। ছুটে চলল শহরের ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে হসপিটালের দিকে।
------
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর, হিমাদ্রী ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে রোগীর অবস্থা নিয়ে কথা বলছে। আর পুতুল বাবার কেবিনে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ল। বাবার কপালে আলতো করে হাত রাখল, তারপর তার হাত ধরে আস্তে করে ফিসফিস করে বলল, "চিন্তা করো না, বাবা। তোমাকে সুস্থ করার জন্য যা করার দরকার, আমি সব করব। তুমি শুধু সুস্থ হয়ে ওঠো। আমি তোমার পাশে আছি।"
পুতুলের চোখে জল জমে উঠল, কিন্তু সে সেটা মুছে ফেলল যাতে কেউ দেখতে না পায়। বাবাকে এমন অসহায় অবস্থায় দেখে তার মন ভেঙে যাচ্ছিল। মেডিসিনের প্রভাবে তার বাবা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। তার শান্ত নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে পুতুল কিছুটা স্বস্তি পেল, কিন্তু তার মনে তখনো অজানা আশঙ্কা ঘুরপাক খাচ্ছিল।
ডাক্তারের সাথে কথা বলে হিমাদ্রী কেবিনে এল। ঢুকেই তার নজরে পড়ল, পুতুলের চোখ ভিজে গেছে। সে ধীরে ধীরে পা টিপে পুতুলের কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রাখল। স্পর্শ পেয়ে পুতুল মাথা ঘুরিয়ে দেখল হিমাদ্রীকে, কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। তার মুখে কেমন যেন এক নীরব অভিমান।
হিমাদ্রী একটু ঝুঁকে হাঁটু গেড়ে বসে পুতুলের চোখের পানি মুছে দিল। তার কণ্ঠস্বরে মিশে ছিল নরম দৃঢ়তা, "কাঁদছিস কেনো? তোর বাবা ভালো আছেন। অপারেশন হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এত সহজে হার মানলে চলবে না। শক্ত হতে হবে তোকে।"
পুতুল চুপ করে রইল। হিমাদ্রী আবার বলল, "তোর থেকে ছোট বয়সে আমি আমার মা-বাবা হারিয়েছি। একা বড় হয়েছি। তোর মাথার ওপর তো এখনো ছাদ আছে। আমার কুটিরে আশ্রয় তো পেয়েছিস।"
পুতুল কষ্টে ভরা গলায় বলল, "আপনার কুটির আদৌ নিরাপদ তো?" তার প্রশ্নে অভিমানের সুর যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল।
হিমাদ্রী একটু থমকে গিয়ে গভীর দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। "তোর কি মনে হয়, সেটা নিরাপদ নয়?"
পুতুল তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। কিন্তু আর কোনো উত্তর দিল না। তার মনের গভীর ক্লান্তি এবং অসহায়তা যেন মুখে এসে জমা হয়েছিল। কথা বলার মতো শক্তিও যেন সে হারিয়ে ফেলেছিল। সে শুধু এক দৃষ্টিতে তার বাবার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, যেন সব উত্তর সেখানেই লুকিয়ে আছে।
হিমাদ্রী কিছুক্ষণ নীরবে তাকিয়ে থাকল পুতুলের দিকে। তার মনের ভেতর যেন অজানা এক অনুভূতি খেলে গেল। কিন্তু সে সেটা চেপে রেখে উঠে দাঁড়াল। কেবিনের জানালার কাছে গিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল, "সব ঠিক হয়ে যাবে, পুতুল। বিশ্বাস রাখতে শিখ।"
পুতুল কে নিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে গেলো হিমাদ্রী। এক পলক পুতুল এর দিকে তাকিয়ে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করলো। পুতুল নিরবতার দেয়াল ভেঙে বললো,, আমি লেখা পড়া শেষ করতে চাই আপনি লেখা পড়ার করার অনুমতি দিবে?
দিতে পারি একটা শর্তে।
কি শর্ত?
বাড়ির গাড়ি নিয়ে যেতে হবে আর গাড়ি নিয়ে আসতে হবে। মেয়ে বন্ধু রাখা যাবে কিন্তু ছেলে বন্ধু নয়। রাজি থাকলে কাল থেকে কলেজ জয়েন কর আর হ্যাঁ অবশ্যই বোরকা হিজাব মেইনটেইন করতে হবে। আমি চাই না আমার বউ কে আমি ছাড়া অন্য কেউ দেখুক।
পুতুল হিমাদ্রীর কথায় থমকে গেল। এক মুহূর্তের জন্য তার চোখে মিশে গেল অবাক ও ক্ষোভ। কিন্তু সে নিজেকে শান্ত রেখে বলল, "আপনার শর্ত মানলে যদি আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, তবে আমি রাজি। তবে একটাই প্রশ্ন—আমি কি কখনো স্বাধীন হতে পারব না? সবসময় কি আপনার শর্তে চলতে হবে?"
হিমাদ্রী গাড়ি চালাতে চালাতে একবার পুতুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল, "স্বাধীনতা মানে কি জানিস? নিজের সীমা বোঝা। আমি তোর সীমা বেঁধে দিচ্ছি যাতে তুই ভুল পথে না যাস। আমার বউ হিসেবে তোর জায়গা শুধু আমার পাশেই থাকবে, কারও নয়।"
পুতুল কোনো উত্তর দিল না। তার মন বিষণ্ণ হয়ে উঠল। মাথা জানালার কাঁচে ঠেকিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। বাইরের রাস্তা তার চোখের সামনে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক যেমন তার জীবন, যেটা এখন হিমাদ্রীর শর্তে বাঁধা।
গাড়ি এগিয়ে চলল। দুইজনের মাঝের নীরবতা যেন আরও ঘনীভূত হয়ে উঠল।
ট্রাফিক সিংগনেলে থামলো গাড়ি টা। হিমাদ্রীর চোখ পড়ে রাস্তার ধারে এক পিচ্চি ফুল বিক্রি করছে। মনে মনে ভাবলো ফুল দিলে যদি ম্যাডামের মন টা ভালো হয় তাই জানালার কাঁচ টা নামিয়ে চোখের ইশারায় পিচ্চিকে ডাকলো। পিচ্চি টি ফুল নিয়ে এলো। হিমাদ্রী পিচ্চিটির গল টেনে দিলো তারপর বললো একগুচ্ছ লাল গোলাপ আর সাদা কাঠগোলাপের সংমিশ্রণ তোড়া বানিয়ে আমার পাশে বসা ম্যাডাম কে দেও।
মেয়েটি তাই করলো ফুলের তোড়া বানিয়ে পাশের সাইডে গিয়ে দরজা জানালাতে টোকা দিলো। জানালাতে টোকা পড়তে চোখটা খুলে তাকালো দেখলো একটা পিচ্চি। জানালা টা খুলে দিতে পিচ্চি টি ফুলের তোড়া তার দিকে এগিয়ে দিলো। হাত বাড়িয়ে ফুলের তোড়া টা নিলো পুতুল তারপর আফসোস এর সুরে বললো আমার কাছে টাকা নেই।
হিমাদ্রী ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,, তোর কাছ থেকে টাকা চাইছে ননসেন্স একটা আমি সাথে থাকলে তোর টাকা লাগবে না আর না টাকা নিয়ে চিন্তা করতে হবে তোর জামাইয়ের অঢেল টাকা। তারপর পাঁচশত টাকা বের করে পিচ্চি টির হাতে দিয়ে বললো সব তোমার টাকা।
পিচ্চি মুগ্ধ চোখে টাকার নোটটা হাতে নিয়ে বলল, "আপনার মতো ভালো মানুষ খুব কম দেখেছি, স্যার। আল্লাহ আপনাদের দু’জনকে সুখে রাখুক।" বলেই সে দ্রুত চলে গেল।
পুতুল হিমাদ্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, "আপনার এইসব দেখানোর দরকার ছিল না। আমি তো আর এইসব ফুল-টাকা দিয়ে সুখী হওয়ার মতো মানুষ নই।"
হিমাদ্রী ঠান্ডা গলায় বলল, "তুই সুখী হওয়ার মতো মানুষ কিনা সেটা আমি ঠিক করব। তুই শুধু দেখবি, আমি তোকে কীভাবে খুশি রাখি।"
পুতুল তিক্ত স্বরে বলল, "যে খুশি অন্য কারও শর্তে আসে, সেটা কি খুশি হয়? না শুধু একটা বোঝা?"
হিমাদ্রী এক গাল হেসে বলল, "বোঝা নাকি খুশি, সেটা সময়ই বলবে। তবে একটা কথা মনে রাখ, পুতুল, তোর যা কিছু প্রয়োজন, সেটা আমি ঠিক বুঝি। এখন এই তোড়া নিয়ে তোর মুখে হাসি দেখতে চাই।"
পুতুল মাথা ঘুরিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল। ফুলের তোড়া তার কোলে পড়ে ছিল। হিমাদ্রী তার প্রতিক্রিয়া দেখে আর কিছু না বললেও তার চোখে একটা বিজয়ের হাসি ফুটে উঠল।
গাড়ি সিগন্যাল পেরিয়ে আবার চলতে শুরু করল। পুতুলের হাত আলতো করে ফুলের তোড়া স্পর্শ করল। হয়তো তার মনে এক ঝলক নরম অনুভূতি খেলে গেল, কিন্তু সে তা প্রকাশ করল না।
----
বাড়ির সামনে গাড়ি টি এসে থামলো পুতুল নামতে হিমাদ্রী ও নামলো। হিমাদ্রী পুতুলকে ডেকে উঠলো পুতুল থেমে পিছন ফিরে তাকাতে হিমাদ্রি দ্রুত পায়ে তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,, এখন রেস্ট নিবি,, দুপুরে ঠিক মতো খাবি। তুই খেয়েছিস কি না আমি কিন্তু ঠিক খেয়াল রাখবো মনে করে মেডিসিন নিবি আর শুন আমি তো সারাদিন কাজে থাকবো এই মিটিং তো সেই মিটিং আমার তো এনার্জির দরকার আয় আমার কাছে বলে কোমর টা টেনে নিয়ে কপালে গভীর ভাবে একটি চুম্বন করলো।
এতে করে চোখ বড় বড় হয়ে যায় পুতুলের। পুতুল বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল হিমাদ্রীর দিকে। তার চোখে লজ্জা, রাগ আর হতবাক হওয়ার মিশ্র অনুভূতি স্পষ্ট। সে নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত পেছনে সরে গেল।
"আপনি এমন করলেন কেন?" পুতুল ক্ষীণস্বরে বলল, তার কণ্ঠে অসন্তোষ স্পষ্ট।
হিমাদ্রী হেসে বলল, "আমার বউ তুই। তোকে আদর করব না তো কাকে করব? এটা তো আমার অধিকার।"
পুতুল ঠোঁট চেপে রইল। সে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। তারপর মাথা নিচু করে বলল, "আপনার অধিকার মানে এই নয় যে আমার ইচ্ছাকে উপেক্ষা করবেন।"
হিমাদ্রী কপাল কুঁচকে বলল, "তোর ইচ্ছার কথা আমি ঠিকই বুঝি, পুতুল। তবে তুই যত দ্রুত এটা মেনে নিবি, ততই ভালো। আমার ভালোবাসা জোর করে নয়, তুই একদিন নিজেই এটা চাইবি।"
পুতুল কিছু না বলে দ্রুত বাড়ির ভেতরে চলে গেল। তার মনে এক অজানা অস্বস্তি, হিমাদ্রীর আচরণে সে নিজেকে অদ্ভুত এক দ্বন্দ্বের মধ্যে আটকে ফেলেছে।
পুতুলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়িয়ে হেসে হিমাদ্রী বললে উঠলো,,, তোমাকে বাঁধিবো আমারোও বাহুডোর।
আজ রাতেই পাখিকে খাঁচায় বন্দী করতে হবে নয়তো উড়ে যাওয়ার সম্ভব না আছে। হিমাদ্রী গাড়ি নিয়ে অফিসের দিকে চলে গেল। সেদিনের মিটিংগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আর সে জানত, তার সময়টা এখন কাজে ডুবে থাকার। অফিসে পৌঁছানোর পর, সে তার কাজের মধ্যে পুরোপুরি ডুবে গেল। ফোন, ইমেল, মিটিং—সব কিছুতেই তার মনোযোগ ছিল, কিন্তু মনে এক জায়গায় পুতুলের কথা ঘুরছিল। পুতুলের মুখ, তার নিরবতা, তার চোখের জ্বলন্ত প্রশ্ন, সব কিছুই তার মনে আঁকশি হয়ে ছিল।
--------
হিমাদ্রী মিটিংয়ের দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিলো। তার ভেতরের উদ্বেগ এবং চিন্তা সত্ত্বেও, সে জানতো এই মিটিং তার ক্যারিয়ারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি কথা, প্রতিটি সিদ্ধান্তের পরিণতি তার ভবিষ্যতের ওপর নির্ভর করবে।
মিটিংয়ের শুরু থেকেই সে লক্ষ্য করলো, অংশগ্রহণকারীরা তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে, অপেক্ষা করছে তার পরবর্তী নির্দেশনার জন্য। সে ঘাড় উঁচু করে দাঁড়িয়ে, স্পষ্ট এবং আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে শুরু করলো।
"এটি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত," হিমাদ্রী বলল, "আজকের মিটিংয়ের ফলাফল আমাদের সামগ্রিক পরিকল্পনাকে সামনে এগিয়ে নেবে। আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট, এবং আমি নিশ্চিত যে, আমরা একসঙ্গে তা অর্জন করতে পারব।"
তার দৃঢ় বক্তব্য এবং বিশ্লেষণী মনোভাব দেখেই সবাই বুঝতে পারলো, হিমাদ্রী তার কাজের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। তার এই পেশাদারিত্বে, এই শক্তিতে কেউ কোনো ভুল খুঁজে পেল না।
এই মিটিংয়ের শেষে, হিমাদ্রী নিজের ভিতর এক ধরণের প্রশান্তি অনুভব করলো—এটা তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল, এবং সে জানতো যে এই মিটিংয়ের সিদ্ধান্তগুলো তার ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।
হিমাদ্রী কাজ করতে করতে অনুভব করলো সময়টা বেশ দ্রুত চলে গেছে। ডেস্কের সামনে বসে বসে তার দৃষ্টি অনেক কিছুতেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল, তবে এখন লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে।
সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে, একবার অফিসের রুমের দিকে তাকালো। কিছু মুহূর্তের জন্য থেমে রইলো, তারপর নিজের দৃষ্টি সোজা করে লাঞ্চ রুমের দিকে পা বাড়ালো।
তার মনোযোগী মিটিং এবং কাজের মাঝে সময় কিভাবে চলে গেছে, সে নিজেও অবাক। কিন্তু এখন মনে হলো একটু বিরতি নেওয়া উচিত। শরীর আর মন কিছুটা সতেজ হলে কাজের ফল আরও ভালো আসবে।
লাঞ্চ রুমে পৌঁছানোর পর, হিমাদ্রী নিজের পছন্দের খাবার নিয়ে এক পাশে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণের জন্য মাথা ফাঁকা করে, একটু বিশ্রাম নিয়ে।
বাড়ির ল্যান্ড লাইনে ফোন দিলো। কাজের মেয়েদের মধ্যে একজন ফোন ধরতে হিমাদ্রী বললো,, তোমাদের ম্যাডাম কোথায়?
স্যার ম্যাডাম তো ঘুমাচ্ছে। সেই যে এসে ঘুমাচ্ছে আর উঠেনি।
ওহ্ এক কাজ করো ওকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে বলো। বলো যে স্যার বলেছে।
কাজের মেয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে বলল, "স্যার, কিন্তু ম্যাডাম তো একটু অসুস্থ। কেমন যেন মেজাজ খারাপ ছিল সকাল থেকে।"
হিমাদ্রী একে একে শ্বাস টানল এবং দৃঢ়ভাবে বলল, "তুমি শুধু বলো, আমি বলেছি। আর বেশি কিছু নয়।"
কাজের মেয়ে রয়ে গিয়েছিল কিছুটা বিভ্রান্ত, তবে হিমাদ্রীর নির্দেশ না মানলে তার পরিণতি কী হতে পারে সেটা সে জানতো। তাই সে ফোনের সাথে কথা বলেই ঘরটার দিকে চলে গেল, পুতুলকে ঘুম থেকে উঠানোর জন্য।
হিমাদ্রী ফোন রেখে নিজের কাজের দিকে মনোযোগী হতে থাকল, তবে মনে মনে পুতুলের প্রতি কিছুটা চিন্তা ছিল। "পুতুল যদি আজও মানসিক ভাবে শক্ত না হতে পারে, তাহলে তো ব্যাপারটা আরো জটিল হবে," ভাবছিল সে। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বাসায় যেতে হবে। .........চলবে

30/01/2025

বাধ্যতার বাঁধনে বন্দী
পর্বঃ-০২
রাত তখন ২ টা হিমাদ্রী হসপিটালের সব কাজ সেড়ে ফিরে এসেছে। এসেই ফ্রেশ না হয়ে পুতুল এর রুমে গেলো দেখলো মেয়েটি ঘুমাচ্ছে। হিমাদ্রী বাঁকা হেসে সেও বিছানায় গিয়ে পুতুল গা ঘেঁষে শুয়ে পড়লো। জামার কিছু অংশ অল্প একটু তুলে দুহাতের ভাঁজে নিয়ে তার শক্ত পোক্ত হাত টা নরম তুলতুলে পেটে চেপে ধরলো। পুতুল ঘুমের মধ্যে একটু কেঁপে উঠলো। ওর কাঁপা দেখে হিমাদ্রী তীর্যক হাসলো। ওর হাতটা বিচলন করছে পুতুলের কোমল শরীরে। ঘুমের মধ্যে অস্বস্তি বোধ করছে পুতুল ঘুম ঘুম চোখে একবার তাকাতে ঘুম থেকে ধড়াস করে উঠে যেতে চেয়েও পারলো না শক্ত করে ধরে আছে হিমাদ্রী। লাল লাল চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে পুতুলের দিকে ভয়ে কেঁপে উঠলো। গম্ভীর কন্ঠে পুতুল কে সুধালো,,, সমস্যা কি এইভাবে নাড়াচাড়া করছিস কেন?
ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,,, আপনি আমার রুমে কি করছে?
হিমাদ্রী ছোট ছোট চোখ করে ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলে বললো,, তোর রুম কি রে এইটা আমার বাড়ি আমার রুম। আর তুই ও আমার সম্পত্তি কথাটা বলে পুতুল কে ধরতে নিলে পুতুল বললো ধরবেন না আমাকে।
তোর কি আমাকে ক্যারেক্টারলেস মনে হয় পুতুল। ট্রাস মি একটু ছোঁব গভীর ভাবে ছোঁব তো কাল। এই কথা টা শুনে পুতুল খাট থেকে লাফ দিয়ে নেমে গিয়ে বললো হিমাদ্রীকে বললো আপনি আমার থেকে দূরে থাকবেন। আমি এই রুমে থাকবো না আপনি থাকেন বলে চলে যেতে নিলে হিমাদ্রী ও বিছানা থেকে নিয়ে লম্বা কদম ফেলে পুতুলের কাছে গিয়ে বলে,, এই রুমের বাহিরে তুই এক পা ফেলে দেখ তোর কি করি?
যা ইচ্ছে করুন আমি থাকবো না এই রুমে বলে চলে যেতে নিলে হিমাদ্রী এক ঝটকায় তাকে বাম কাঁধে তুলে নিয়ে বিছানায় কাছে এসে বিছানাতে ধড়াম করে ফেলে তারপর ওর ওড়না টা নিয়ে খাটের সাথে হাত বেঁধে দিয়ে বললো থাক তুই বাঁধা। আমি একটু ঘুমাবো। তোর পেট টা তো নরম তুলতুলে তোর পেটে মাথা রেখে ঘুমাবো। পুতুল মোচড়ামুচড়ি শুরু করতে বলে উঠলো না আমি চিল্লাবো। হিমাদ্রী ডেভিল হেসে পুতুল এর দিকে তাকিয়ে বললো,, ও মাই ডিয়ার পুতুল সোনা এইটা হিমাদ্রীর রাজত্ব এইখানে হিমাদ্রীর কথা ছাড়া কিছু হয়না। তবে তোর ভাঙ্গা রেডিওর জন্য আমার ঘুমের বেগড়া হতে পারে দাঁড়া ব্যবস্থা করছি তোর বলে বিছানা থেকে নেমে ড্রয়ার থেকে কষ্টিপ নিয়ে বিছানায় এসে পুতুল এর উপর ঝুঁকে ওর মুখ টা আটকে দেয়। এখন পুতুল উঁমম উঁমম সাউন্ড করছে। হিমাদ্রী পুতুলের উপর ঝুঁকে বললো উঁমম কি সাউন্ড আমি কি তোর সাথে কিছু করছি না কি কি সাংঘাতিক তুই আমাকে নেগেটিভ ফিল দিচ্ছিস। একবার যদি নেগেটিভ ফিল উঠে তুই মুখ দিয়ে কথা বলার অবস্থায় থাকবি না সো চুপচাপ থাক। পুতুল বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। কম্বল টা টেনে সে পুতুলের পেটের কাছে গিয়ে কাঁ"চি দিয়ে পুতুলের পেটের সাইডের জামার কিছু অংশটা কেটে পেটের মধ্যে নাক মুখ ঘষতে থাকে পুতুল নাড়াচাড়া করতে দেখে হিমাদ্রী দাঁত দিয়ে পেটটা চেপ ধরতে পুতুল চোখ মুখ খিঁচে উঁমম করে উঠলো। হিমাদ্রী পুতুলের পেটে মুখ গুঁজে বলতে লাগলো যদি নাড়াচাড়া করিস তাহলে কামড় ই খেতে হবে নাও ইউ চয়েস কি আর করার বাধ্য হয়ে পুতুল চুপটি করে রইলো। কিন্তু পেটে হিমাদ্রীর তপ্ত শ্বাঃস পড়তে কেঁপে উঠছে।
এইভাবেই রাত টা কেটে যায়। হিমাদ্রী ঘুম থেকে উঠে কম্বল থেকে মাথাটা বাহিরে বের করে দেখলো পুতুল ঘুমিয়ে আছে। বিছানা থেকে নেমে পুতুলের বাঁধন গুলো খুলে দিয়ে সুন্দর করে শুইয়ে দিয়ে তারপর রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে যায়।
হিমাদ্রীর রুমটা ছিলো রাজকীয়। বিশাল আকৃতির এই ঘরে প্রতিটি কোণ রাজকীয়তার আভা বহন করে। ঘরের মেঝেতে লাল ও সোনালি কারুকাজ করা মখমলের কার্পেট বিছানো, যা তার শৌখিনতাকে ফুটিয়ে তোলে।ঘরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি বিশাল চারপোস্টারের খাট, যা তৈরি হয়েছে মহামূল্যবান সেগুন কাঠ দিয়ে। খাটের উপর সাদা সিল্কের চাদর ও মখমল কাপড়ের ভারী বালিশ রাখা। খাটের চারপাশে ঝুলছে সোনালি রঙের নরম পর্দা, যা ঘরে এক নরম আলো তৈরি করে।
দেয়ালগুলোতে ঝুলছে বিভিন্ন দামী পেইন্টিং, যা বিশ্বের বিখ্যাত শিল্পীদের তৈরি। একপাশে রয়েছে একটি বিশাল শো-কেস, যেখানে সাজানো রয়েছে ক্রিস্টালের শো-পিস, দামী মদের বোতল, আর কিছু বিরল শিল্পকর্ম।
ঘরের এক কোণে আছে একটি বড় আরামদায়ক সোফা সেট, যার উপর রয়েছে পশমের কুশন। সোফার সামনের টেবিলে রাখা আছে দামী মার্বেলের তৈরি শো-পিস আর একটি সোনালি প্রাচীন ঘড়ি।
ঘরের একপাশে একটি বিশাল জানালা, যার পর্দা ভারী মখমল কাপড়ের তৈরি। জানালা দিয়ে বাইরের শহরের আলো দেখা যায়, যা রাতের বেলায় আরো মনোরম হয়ে ওঠে।
আরেক কোণে রয়েছে একটি ব্যক্তিগত বার, যেখানে সাজানো আছে বিভিন্ন দামী ব্র্যান্ডের মদ। তার পাশেই একটি ছোট পড়ার টেবিল, যেখানে তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আর দামী কলম সাজানো।
ছাদের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ঝুলছে একটি বড় দামী ঝাড়বাতি, যা ঘরের রাজকীয়তাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ঘরের প্রতিটি জিনিস হিমাদ্রীর ধন-সম্পদ আর ক্ষমতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
হিমাদ্রী নিজের রুমে এসে দরজা লক করে দিল। চারপাশে চোখ বুলিয়ে একবার নিজের রাজকীয় ঘরের দিকে তাকাল। তার ঠোঁটে এক মৃদু তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল।
তারপরে সে ধীরে ধীরে ওয়াক-ইনের জন্য বিশেষ ডিজাইন করা ড্রেসিং এরিয়ায় গেল। কাঠের সেগুনের মসৃণ আলমারি খুলে তার সিল্কের বাড়ির পোশাক বের করল। পাশে থাকা মার্বেলের বেসিনে গিয়ে হাত-মুখ ধুতে লাগল। কাচের বিশাল আয়নায় নিজের মুখ দেখল। চোখে রাজত্বের অহংকার, কিন্তু মুখে এক অদ্ভুত বিষণ্ণতার ছাপ।
বেসিনের পাশে রাখা দামী পারফিউমের বোতল তুলে নিজের হাত আর গলায় হালকা স্প্রে করল। তারপর নিজের সোনার ফ্রেমের চশমাটা খুলে ড্রেসিং টেবিলে রাখল। চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে নিজের বিশাল ঝাড়বাতির নিচে দাঁড়িয়ে আবার চারপাশের রাজকীয় পরিবেশ উপভোগ করল।
ফ্রেশ হয়ে সে নিজের কালো মখমলের স্লিপার পায়ে দিয়ে সোফায় গিয়ে বসল। এক হাতে ক্রিস্টালের গ্লাসে মদের বোতল থেকে একটু ঢেলে চুমুক দিল। তারপর সামনের কাচের টেবিলে গ্লাস রেখে নিজের ফোন তুলে কিছুক্ষণ স্ক্রল করল। তার চোখে-মুখে শীতল, অনড় ভাব ফুটে উঠল, যেন তার মনে কোনো দয়া বা সহানুভূতি নেই।
কিছুক্ষণ পর হিমাদ্রী নিজেকে প্রস্তুত করে রুম থেকে বের হলো। যাওয়ার পথে ডাইনিং রুমে কাজের মেয়েটিকে দেখতে পেল। তার গলায় একধরনের শীতল অথচ হুকুমের সুরে বলল,
"শোনো, পুতুল যখন ঘুম থেকে উঠবে, ওকে গিয়ে বলবে যেন ব্রেকফাস্ট খেয়ে নেয়। আর এই বাড়ির বাইরে এক পা ফেলা তো দূরের কথা, দরজার কাছেও যেন না যায়। আমার নির্দেশ স্পষ্ট।"
কাজের মেয়ে মাথা নেড়ে সায় দিল।
হিমাদ্রী একটু থেমে আবার বলল, "আর একটা কথা। ওকে মনে করিয়ে দিও, বিয়ের জন্য যেন নিজেকে প্রস্তুত করে। কাল যা হওয়ার, তার জন্য তৈরি থাকা উচিত। আমার কোনো ঝামেলা চাই না।"
তারপর হিমাদ্রী জুতো পরে, গাড়ির চাবি হাতে নিয়ে বিলাসবহুল বাড়ির দরজা পেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। আজ তাকে বিয়ের জন্য সমস্ত কেনাকাটা করতে হবে, এবং তার সবকিছু নিখুঁত হতে হবে। তার মুখে ছিল এক রকমের আত্মতৃপ্তি। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।
অন্যদিকে, পুতুল তখনও ঘুমে ছিল, যেন অজান্তেই এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে।
পুতুল ধীরে ধীরে ঘুম থেকে উঠে বসে। চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু যখন তার চোখ পড়ল নিজের পোশাকে, সে দেখতে পেল জামার পেটের অংশটা কাটা। এই দৃশ্য দেখে সে কয়েক সেকেন্ড স্তব্ধ হয়ে রইল।
তার গলা শুকিয়ে গেল। হতাশার ভারে বুকটা ভারী হয়ে উঠল। মাথা নিচু করে নিজের পোশাকের দিকে তাকিয়ে সে গভীর শ্বাস নিল, যেন শ্বাস নিতে গিয়েও যেন কষ্ট হচ্ছে। মনে মনে বলল, "কীভাবে নিজের অস্তিত্বটা এইভাবে লাঞ্ছিত হতে দিলাম?"
কিন্তু হতাশার এই ভার সে নিজের মন থেকে সরাতে চাইল। সে জানে, যতই সে কষ্ট পায়, এখানে তার কান্নার কোনো মূল্য নেই। শক্ত মন নিয়ে সে ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠল। নিজের শরীর আর মনকে হালকা করার জন্য সে বাথরুমের দিকে পা বাড়াল।
ফ্রেশ হতে গিয়ে শাওয়ার চালিয়ে নিজের মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিল। জলকণাগুলো তার ত্বক ভিজিয়ে দিলেও মনে একটা অদ্ভুত শূন্যতা থেকেই গেল। পেটের কাছের জামার কাটা অংশ আর নিজের অপমান তাকে ভেতর থেকে যেন আরো ভেঙে দিচ্ছিল।
ফ্রেশ হয়ে পুতুল ধীরে ধীরে নিচে নামল। সিঁড়ির প্রতিটি ধাপ যেন তাকে ভারী মনে হচ্ছিল। তার মাথা নিচু, চোখে ক্লান্তি আর হতাশার ছাপ স্পষ্ট।
ডাইনিং টেবিলে কাজের মেয়ে এসে তার দিকে এগিয়ে বলল, "ম্যাডাম, স্যার বলেছেন, আপনি যেন ঠিকমতো খাবার খান আর বিয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। বাড়ির বাইরে যাওয়ার কোনো দরকার নেই।"
কাজের মেয়েটির কথা শুনে পুতুল চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। তার ঠোঁট একটু কাঁপল, কিন্তু কিছু বলল না। সে জানত, এখানে কথা বলার কোনো মানে নেই।
টেবিলে রাখা খাবারের দিকে তাকিয়ে তার খিদে একেবারে উবে গেল। পুতুল ধীরে ধীরে টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ল। খাবারের প্লেটে হাত বাড়াল, কিন্তু তার হাত কাঁপছিল। তার মনে হচ্ছিল, এই চার দেয়ালের মধ্যে যেন তার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে।
কাজের মেয়ে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে বলল, "আপনার যদি কিছু দরকার হয়, আমাকে বলবেন ম্যাডাম।"
পুতুল কেবল মাথা নাড়ল। খাবারের দিকে তাকিয়ে সে অজান্তেই চিন্তা করতে লাগল, "এই জায়গা থেকে কি আমার মুক্তি হবে কোনোদিন? না কি আমিই চিরকাল এই দুঃস্বপ্নের বন্দি হয়ে থাকব?"
কিছুটা খাবার মুখে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলেও তার গলা দিয়ে নামছিল না। মন যেন এক অদ্ভুত শূন্যতায় ডুবে ছিল। কিন্তু সে জানত, তার বাবার কথা ভেবে তাকে কিছুটা শক্ত থাকতে হবে।
পুতুল খাবার শেষে ধীর পায়ে নিজের রুমে ফিরে গেল। তার মনে হচ্ছিল, এই বাড়ির প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি আসবাব যেন তাকে বন্দি করে রেখেছে। সে চুপচাপ পুতুল বিছানায় বসে ছিল, যখন কাজের মেয়ে আবার দরজায় এসে দাঁড়াল। তার গলায় ভয় মেশানো কণ্ঠে বলল, "ম্যাডাম, স্যার বিয়ের কেনাকাটা শেষ করে এসে গেছেন। তিনি আপনাকে বলেছেন, এখন যেন তার রুমে যান।"
পুতুলের পুরো শরীরটা কেঁপে উঠল। মনে হচ্ছিল, পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। তার মুখ শুকিয়ে গেল, বুকের ধুকপুকানি যেন আরো বেড়ে গেল।
সে কিছু বলতে পারল না, কেবল চুপচাপ কাজের মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল। তার মন যেন দুই টুকরো হয়ে যাচ্ছিল—একদিকে ভয় আর অপমান, অন্যদিকে এক অজানা ভবিষ্যতের চাপ।
"ম্যাডাম?" কাজের মেয়ে আবার বলল, যেন তাকে তাড়াহুড়ো করছে।
পুতুল ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। সে জানত, এখানে তার কিছু বলার বা করার ক্ষমতা নেই। এই চার দেয়ালের মধ্যে সে বন্দি, আর তার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
"আমি যাচ্ছি," পুতুল মৃদু স্বরে বলল।
সে ধীরে ধীরে হিমাদ্রীর রুমের দিকে হাঁটতে লাগল। প্রতিটি ধাপ যেন তার জন্য একেকটি ভারী পাথরের মতো ছিল। রুমের দরজার কাছে এসে সে থেমে গেল। দরজার ওপাশ থেকে ভেসে আসা সিগারেটের গন্ধ আর হিমাদ্রীর কণ্ঠস্বর তাকে ভেতর থেকে আরও দুর্বল করে তুলল।
সে সাহস সঞ্চয় করে ধীরে ধীরে দরজায় কড়া নিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেতর থেকে গম্ভীর কণ্ঠে ভেসে এলো, "ভেতরে আসো, পুতুল।"
পুতুল দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। হিমাদ্রী আরাম করে বিশাল রকিং চেয়ারে বসে ছিল, তার চোখে ছিল এক ধরনের নির্মম হাসি। তার চারপাশে ছড়ানো ছিল বিয়ের জুয়েলারি আর পোশাকের প্যাকেট।
হিমাদ্রী পুতুলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। "তোর জন্য সব কিছু কিনে এনেছি। একবার দেখে নে। আর মনে রাখিস, আজ সন্ধ্যায় আমাদের বিয়ে। প্রস্তুত হয়ে যা।"
পুতুল চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। তার মুখ দিয়ে একটি শব্দও বের হলো না। হিমাদ্রী এক প্যাকেট তুলে তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, "এটা তোর বিয়ের গয়না। নিজের জন্য মানিয়ে নে। আর হ্যাঁ, আমার কথা তো মনে আছে, তাই তো?"
পুতুল মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। তার গলার স্বর শুকিয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিল, তার জীবনের শেষ অধ্যায় যেন শুরু হতে চলেছে।
হিমাদ্রী পুতুলের দিকে ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, "তুই আমার ব্যক্তিগত হতে যাচ্ছিস। জানিস তো, আমি কখন কী খাই বা না খাই, সবকিছু ঠিকঠাক জানা উচিত তোর। আজ থেকে আমার খাওয়ার চার্ট দেখে চলতে হবে তোকে। আর এখন আমি কফি খাবো।"
সে একটু থেমে মুচকি হেসে বলল, "উইথআউট সুগার। মনে রাখিস, আমি মিষ্টি পছন্দ করি না। এখনই কফি বানিয়ে নিয়ে আয়। দেরি করিস না, পুতুল।"
পুতুল কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। তার মন ভেতরে ভেতরে ফেটে যাচ্ছিল, কিন্তু তার মুখে কোনো প্রতিবাদ আসেনি। সে জানত, এই পরিস্থিতিতে কথা বলার কোনো উপায় নেই।
রান্নাঘরে গিয়ে পুতুল ধীরে ধীরে কফি বানাতে লাগল। গরম পানির ধোঁয়া আর কফির গন্ধ তার চোখে যেন আরও জ্বলন তৈরি করছিল। মনের মধ্যে কেবল একটাই কথা ঘুরছিল—"এই অত্যাচারের শেষ কোথায়? কীভাবে আমি এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাব?"
কফি তৈরি হয়ে গেলে সে কাপটা হাতে নিয়ে ধীর পায়ে হিমাদ্রীর রুমের দিকে ফিরে গেল। পুতুল দরজা নক করতে হিমাদ্রী বললো,, কামিং।
পুতুল কাঁপা কাঁপা পায়ে কফির মগটি নিয়ে ভিতরে ঢুকল। হিমাদ্রী চেয়ার থেকে উঠে বসে, তার মুখে এক ধরনের বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। পুতুল মগটি তার সামনে রেখে এক মুহূর্ত চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল, অথচ তার মনে গভীর অস্থিরতা ছিল।
হিমাদ্রী মগটি দেখে ঠোঁটের কোণে এক হাসি খেলিয়ে বলল, "কফি টা আগে তুই খা। তোকে বিশ্বাস নেই, যদি কিছু মিশিয়ে দিস।"
পুতুল মনের মধ্যে দ্বিধায় ভুগে, তবে হিমাদ্রীর কথা শুনে কফির মগটি হাতে তুলে নিল। এক চুমুক খেয়ে সে মগটি আবার হিমাদ্রীর দিকে বাড়িয়ে দিল। তার চোখে কিছুটা অবিশ্বাস, কিছুটা ভয়ের মিশ্রণ ছিল, কিন্তু সে কোনো কথা বলল না।
হিমাদ্রী মগটি হাতে নিয়ে ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে বলল, "তবে মনে রেখ, এই ছোট ছোট কাজগুলোই তোর চাকরি। তুই যখন আমার সঙ্গে থাকবে, তোর সব কিছু আমি ঠিকঠাক বলে দেব।"
পুতুল কফি খেয়ে মগটি ফেরত দেয়ার জন্য উঠে যেতে উদ্যত হলো। কিন্তু হিমাদ্রী দ্রুত তার হাত টেনে ধরল, আর পুতুলকে তার কোলে বসিয়ে দিয়ে বলল, "আমি অফিসের কাজ করছি, আমাকে কফি টা খাইয়ে দে।"
পুতুল কোনো কথাই বলল না, তার হাত থেকে মগটি আবার নিয়ে হিমাদ্রীর কাছে রেখে দিল। তার চোখে নীরব কষ্ট ছিল, কিন্তু সে হিমাদ্রীর আদেশ অমান্য করতে পারল না।
হিমাদ্রী পুতুলের দিকে এক কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, "আর শুন, আমার সামনে ওড়না নিয়ে ঘুর ঘুর করবি না। ওড়না ছাড়া থাকবি। আমার প্রোপার্টি তুই, তোকে আমি যেইভাবে ইচ্ছে, সেইভাবে রাখবো। দেখবো।"
তার কথা শেষ হতে না হতেই হিমাদ্রী পুতুলের ওড়না ছিনিয়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল। তারপর গম্ভীরভাবে বলল, "নাও, তুই পারফেক্ট।"
পুতুলের চোখে এক ঝলক পানি চলে আসল। অপমানে তার হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছিল। চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু একে একে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। এই দৃশ্য দেখে হিমাদ্রী যেন আরও তৃপ্তি পাচ্ছিল। তার ঠাণ্ডা দৃষ্টিতে কোনো সহানুভূতি ছিল না, বরং যেন সে আনন্দ পাচ্ছিল পুতুলের কষ্টে।
পুতুল কিছু বলল না, কেবল মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল। তার মন যেন আরও এক ধাপ নিচে পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু মুখে কিছুই বের হলো না। সে জানত, এই মুহূর্তে কিছু বলার মানে নেই।
হিমাদ্রী পুতুলের সামনে এসে তার চুলের দিকে মনোযোগ দিল। চুপচাপ তার চুলে নাক ডুবিয়ে শ্যাম্পুর ঘ্রাণ নিতে লাগল। পুতুলের গা তখন ঘিনঘিন করে উঠছিল, শরীরের প্রতিটি কোষ যেন বিরক্তিতে সাড়া দিচ্ছিল। কিন্তু শিকলে বাঁধা থাকার কারণে সে কিছুই করতে পারছিল না। তার ভেতরে এক গভীর অস্বস্তি ছিল, তবে কিছুই বলার ছিল না। একটুও প্রতিরোধের শক্তি তার মধ্যে ছিল না। হিমাদ্রী আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল। সে পুতুলের পেট চেপে ধরল, ঘাড়ে মুখ ঘেঁষে দাঁত বসিয়ে দিল। পুতুল আর্তনাত করে উঠল। সেই আর্তনাত হিমাদ্রীর কাছে সেরা উপহার ছিল, যেন তার তৃপ্তি আরও পূর্ণ হয়েছে। পুতুলের শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠেছিল, কিন্তু সে কিছু বলার সাহস পেল না। তার কণ্ঠের সব আওয়াজ যেন গিলে খাচ্ছিল এই ঘৃণিত পরিস্থিতি।
হিমাদ্রী পুতুলকে ছেড়ে দিয়ে কড়া স্বরে বলল, "আজকে দুপুরের রান্নাটা তুই করবি। তোকে আমি লিস্ট দিচ্ছি, কিন্তু মনে রাখবি, কারও সাহায্য ছাড়া রান্না করতে হবে। সব যেনো ঠিকঠাক হয়। লিস্ট গুলো হচ্ছে,, বিরিয়ানি,, সাদাভাত,,চিকেন ফ্রাই,, স্যালাড,, ডাল।
পুতুল এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। সে জানত, এই আদেশ মানা ছাড়া তার আর কোনো পথ নেই। তার চোখে একধরনের অনিশ্চয়তা ছিল, কিন্তু তার মুখে কোনো প্রতিবাদ ছিল না। সে সবে মুখ ঘুরিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। যেন তার সমস্ত শক্তি, আশা, সব কিছুই সরে যাচ্ছে, শুধু একটাই অনুভূতি ছিল—বাঁচতে হলে হিমাদ্রীর সবকিছু মেনে চলতে হবে।
রান্নাঘরে ঢুকেই পুতুল তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করতে লাগল। তার হাতে যে লিস্টটা ছিল, তা দেখে তার মনে অদ্ভুত শূন্যতা চলে আসছিল। সমস্ত কাজ তার উপর চাপানো, একা একা সব কিছু করা—এটাই যেন তার জন্য একটি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। রান্নাঘরের চারপাশে এক নিঃশব্দ শূন্যতা ছিল। তার কেমন যেন অনুভব হচ্ছিল, সে এক টুকরো যন্ত্র হয়ে গেছে, যেটি শুধুমাত্র কাজ করে চলতে থাকে, কিন্তু এর মধ্যে কোনো সত্তা নেই।
রান্নার এক পর্যায়ে হিমাদ্রী গিয়ে পুতুল কে জড়িয়ে ধরে দাঁত চেপে বললতে রাখলো,,, কথা আছে না কারও পৌষ মাস তো কারও সর্বনাশ। তোকে দেখে এখন আমার এই কথাটা ই মনে হচ্ছে। হিমাদ্রী রান্না ঘর থেকে চলে যেতে তার চোখ গড়িয়ে পানি পড়লো। বাবার বাড়ি কখনো রান্না করে খেতে হয়নি আজ তাকে রান্না করতে হচ্ছে। হাত টা কেমন লাল হয়ে যাচ্ছে আগুনের তাপে। ওর এই অবস্থা দেখে হিমাদ্রী হেসে মনে মনে বললো,, সবে শুরু আর বাকি আছে।
লিভিং রুম থেকে হিমাদ্রী চেঁচিয়ে বললো, "আর কতক্ষণ রান্না করবি? তিনটা বাজতে চললো!"
সে তখন স্যালাড তৈরির কাজ করছে টমেটো, শশা, গাজর কাটতে কাটতে এই তো হয়ে গেছে।
পুতুল রান্নাঘরের প্রতিটি কোণ থেকে খাবার এক এক করে বের করে এনে টেবিলে সাজাচ্ছিল। তার চোখে ক্লান্তির ছাপ, হাত একটু থেমে গিয়ে আবার কাজ শুরু করছিল। প্রথমে সাদা ভাত, তারপর চিকেন ফ্রাই, ডাল এবং বিরিয়ানি। পুতুল তার কাজ শেষ করে পরপর সব খাবার সাজিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।সালাদ একপাশে রাখা ছিল, এবং খাবারের মাঝখানে তার জীবনের অস্থিরতা, হতাশা যেন লুকিয়ে ছিল। কিন্তু সে কিছু বলতে পারছিল না, কারণ প্রতিটি কাজই তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল যে, হিমাদ্রীর সামনে তার কোনো জায়গা নেই, সে শুধু একটা যন্ত্র।
হিমাদ্রী ডেভিল হেসে বললো আমার রুমে ছোট খাটো একটা বার আছে সেখান থেকে একটা ওয়াইন নিয়ে আয় তো। এই অপমান টারই বাকি ছিলো। সে ক্লান্তের পা নিয়ে ওর রুমে গেলো তারপর ওয়াইন এর বোতাল টা এনে দিয়ে। সে গ্লাসে ঢেলে দিলো।
পুতুল খাবার দিয়ে ফ্রেশ হতে যাচ্ছিল, তার মন কিছুটা ভারাক্রান্ত ছিল। হিমাদ্রী তার সামনে বসে খাচ্ছিল, কিন্তু আচমকা সে পুতুলকে থামিয়ে দিয়ে বলল, "কই যাচ্ছিস?"
পুতুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,, "ফ্রেশ হতে যাচ্ছি," পুতুল স্রেফ এটাই বলল।
হিমাদ্রী এক চোখে তাকিয়ে বলল, "ঠিক আছে, তবে তাড়াতাড়ি ফিরবি।"
পুতুল শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে নিচে এলো। শরীরটা কিছুটা শিথিল হয়েছিল, কিন্তু মনটা ছিল বিশাল এক অস্থিরতায় পরিপূর্ণ। শাওয়ারের ঠান্ডা পানিতে কিছুটা স্বস্তি মিলেছিল, তবে তার মধ্যে চাপের অনুভূতি কমেনি।
পুতুলকে দেখে হিমাদ্রী বলল, "তারাতাড়ি খেয়ে হাতে মেহেদী পড়বি। আমি পড়িয়ে দিবো।"
পুতুল কিছু না বলে চুপচাপ খাবার নিয়ে বসে পড়ল।
খাবার খেতে খেতে পুতুল অনুভব করছিল, সে শুধু শারীরিকভাবেই খাচ্ছে না, বরং তার সমস্ত অনুভূতি এবং মনোভাবও যেন অদৃশ্যভাবে গিলে ফেলছে। হিমাদ্রীর কথায় যেন কিছুটা চাপ তৈরি হচ্ছিল, আর মেহেদী পড়ানোর বিষয়টি তাকে আরও বিভ্রান্ত করছিল। মনে হচ্ছিল, কিছু একটা তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা সে আর দীর্ঘকাল সহ্য করতে পারবে না।
পুতুলের হাতে মেহেদী পড়িয়ে দিচ্ছিল হিমাদ্রী। তার আঙুলগুলো মেহেদী দিয়ে আঁকাআঁকি করতে করতে পুতুলের মনের মধ্যে হাজারো চিন্তা ভিড় করছিল। তার চোখ বন্ধ হয়ে এসেছিল এক মুহূর্তের জন্য, যেন সে হারিয়ে যাচ্ছে কোথাও। মেহেদীটি তার হাতে খুব সুন্দরভাবে ফুটছিল, কিন্তু তার মন ছিল একেবারে আলাদা জায়গায়।
পুতুল ভাবছিল, বিয়ে নিয়ে কত মেয়ে স্বপ্ন দেখে। তারও ছিল। শুধু স্বপ্নই ছিল না, স্বপ্নের নায়কও ছিল। যে নায়ক সে কল্পনা করেছিল, সে একদিন তাকে সুখী করবে, তাকে ভালোবাসবে। কিন্তু এখন সে স্বপ্ন ভেঙে গেছে। যে নায়ক তাকে কখনো তার জীবনে সুখী করতে আসবে না, বরং তাকে একটি পুতুলের মতো ব্যবহার করে, যাকে কেউ কখনও জানত না—যে মেয়েটির স্বপ্ন বাস্তবে কখনো রূপ নেবে না।
মেহেদীটা পুতুলের হাতে শেষ হয়ে গিয়েছিল। সে ধীরে ধীরে চোখ খুলে হিমাদ্রীর দিকে তাকাল, কিন্তু মনে কোনো ইচ্ছা ছিল না। মনে হচ্ছিল, তার জীবনের এ যাত্রা একমাত্র তার নিজের হাতে শেষ করতে হবে। আর এই মেহেদী তার হাতে শুধু একটি চিহ্ন, একটি মেমোরি, যা তাকে তার অপূর্ণ স্বপ্নের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। হিমাদ্রী তাকে পা ও মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে। হাত পা সব মেহেদীতে রঙ্গিন হচ্ছে কিন্তু মনটা সাদা কাল হয়ে আছে। মন থেকে তো সেই মানুষটার মুখ সড়াতে পারছে না চোখের কোনে সেই মানুষ টির প্রতিছবি ভেসে উঠছে। মেহেদী পড়া শেষ সে এখন বসে আছে হিমাদ্রীর ঘরে হিমাদ্রী বলেছে যদি নাড়াচাড়া করে মেহেদী নষ্ট হয় তাহলে তাকে শাস্তি পেতে হবে ভয়ে বসে আছে। একসময় তার বাবা তাকে খুব ভালোবাসতেন, তাকে হাসাতে ও খেলাতে পছন্দ করতেন। বাবার কোলেই সে শান্তি পেত, বাবার হাতে হাত রেখে মনের কষ্টগুলো ভুলে যেত। তবে আজ, সেই বাবার ছায়াও তাকে ছুঁতে পারছে না। সে যেন ভুলে গেছে, কখন শেষবার বাবার মুখ দেখেছিল। এক অদ্ভুত শূন্যতা তার ভিতরে ঘুরছিল। ইচ্ছে হচ্ছিল, এখনই ছুটে গিয়ে বাবার কাছে চলে যেত। তার মনে হচ্ছিল, একবার যদি বাবা তাকে দেখতেন, তাহলে হয়তো সে আবার আগের মতো শক্তি পেত।
কিন্তু সে জানত, এই মুহূর্তে তা অসম্ভব। বাবার কাছ থেকে দূরে, হিমাদ্রীর অন্ধকার প্রকৃতির মধ্যে আটকে পড়ে, তার ইচ্ছেগুলো দূরের স্বপ্নের মতো হয়ে।
সন্ধ্যা হতে চলেছে। হিমাদ্রী পুতুলকে উদ্দেশ্য করে বলল, "যা, এখন রেডি হয়ে নে, একটু পর বিয়ে।"
বিয়ের শব্দটা শুনতেই পুতুলের বুকটা কেমন হু হু করে কেঁদ উঠলো। তার শরীর যেন আর তার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। বিয়ের এই শব্দটি তাকে এক ধরনের অদ্ভুত অস্থিরতায় ফেলে দিল। তার মনের মধ্যে আবেগগুলো এক সঙ্গে ঢেউ তুলছিল। একদিকে যেমন তার চোখের সামনে হিমাদ্রীর শীতল নির্দেশনায় ভরা ভবিষ্যত কল্পনা হচ্ছিল, অন্যদিকে তার মনে ভেসে উঠছিল তার বাবা, তার প্রিয় মানুষদের মুখ।
বাবার কথা, প্রিয় মানুষটার কথা, তাদের হাসি—সবকিছু একে একে তার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। সেই সব দিন মনে পড়ছিল, যখন তারা তাকে ভালোবাসতো, স্নেহ করতো, আর এখন সেই জীবনে এক এক করে নতুন অধ্যায় যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু এই অধ্যায় কি সত্যিই তাকে তার পরিচয় দিবে? তার ভবিষ্যত কি কখনো সত্যিকার অর্থে তাকে সুখ দেবে?
তার চোখের কোণে পানি জমেছিল, কিন্তু সে তা মুছতে পারেনি। এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল, সে যদি ফিরে যেতে পারত, যদি একবারও তার প্রিয় মানুষদের কাছে ফিরে যেতে পারত, তাহলে তার সবকিছু আলাদা হতো। কিন্তু জানত, এই মুহূর্তে সব কিছু পালটে গেছে।
তবে, তার মনেও এক অদৃশ্য শক্তি ছিল—সে জানত, এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে তাকে বাঁচতে হবে। এটাই তার বর্তমান জীবন, এই পথেই তাকে চলতে হবে।
হাতের পা এর মেহেদী টা তুলে রেডি হতে গেলো। লাল রঙের লেহেঙ্গার অসম্ভব সুন্দর। কিন্তু তার কাছে বিষাক্ত কাটা লাগছে। হিমাদ্রী রুমে এসে দেখে পুতুল কোন গহনা পড়ে নে ফুলের মালা পড়েনি রেগে গেলো। রেগে এসে ওর চুলের মুঠি ধরে বললো কিরে গহনা পড়িসনি কেন? সাজিস নেই কেন? আমি এইখানে বসলাম সুন্দর করে সাজ সে তার চোখ দিয়ে পানি ঝড়লো। বিরক্ত হয়ে গহনার বক্স থেকে গহনা পড়িয়ে দিলো। তারপর হাল্কা মেকআপ করিয়ে মাথা ঘোমাটা দিয়ে দিলো। নিচ থেকে একজন খবর দিলো কাজি এসেছে। ওকে নিয়ে গেল নিচে কাজি বিয়ে পড়াছে। মহেন্দ্রক্ষন এসে গেছে এখন কবুল বলার সময়। হিমাদ্রী সবার আগে কবুল বলে উঠলো। এখন পালা পুতুলের। পুতুল চুপ করে আছে তার কন্ঠনালী দিয়ে কোন সাউন্ড বের হচ্ছেনা। বাবার মুখটা চোখের সামনে ভাসছে তার সাথে ভাসছে আর একজনের মুখ। চোখ দু'টো ঝাপসা হয়ে উঠছে। আখি পল্লব ঝাপটা দিচ্ছে। টুপ করে পানির বিন্দু পড়লো। হিমাদ্রীর খুব রাগ উঠছে রাগে হাত পা কাঁপছে সে একটু পুতুলের দিকে চেপে বসে সবার আড়ালে ওর কোমরটা খাঁমচে ধরে ফিস ফিস করে বললো,,, বাবার কথা টা মনে আছে? এখন সবটা তোর উপর আমার কিছু যায় আসে না।
অনেক কষ্ট করে চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাস এ তিন বার কবুল বলে দিলো।
আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো আশেপাশের মানুষ। তারপর রেজিস্ট্রার পেপার এ সাইন করলো। বিয়ের পর্ব শেষ সবাই চলে যেতে লাগলো। হিমাদ্রী পুতুলের হাতের কব্জা ধরে টেনে রুমে নিয়ে এসে ছুঁড়ে মা"রে ফ্লোরে তারপর দরজাটা লক করে দিয়ে ধীরে পা এ ওর কাছে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে তার গাল টা চেপে ধরে বললো,, "ওয়েলকাম টু হেল" মিসেস ফৌজিয়া পুতুল হিমাদ্রী চৌধুরী কথা টা বলেই কেমন অট্টহাসি হাসিতে ফেটে পড়লো পুতুল কান চেপে ধরলো। ভয়ংকর লাগছে এই হাসি। এই হাসি টা ইঙ্গিত দিচ্ছি পুতুলের জীবন টা ঝড়ে পড়ে যাওয়ার। পুতুল কে তুলে উঠালো। তারপর কোলে তুলে নিয়ে সুইমিংপুল এর নিয়ে ফেলে দেয়। আর লোক ডেকে এতে বরফ দিতে বলে। একে তো শীতের দিন তার উপর সুইমিংপুল এর ঠান্ডা পানি তার-ও উপর বরফ এর টুকরো মনে হচ্ছে আগে থেকে ই প্ল্যান করা ছিলো। হিমাদ্রীর কথা মতো ওর লোকে পানিতে বরফ এর টুকরো নিয়ে এসে ঢেলে দেয়। হিমাদ্রী তীর্যক হেসে বললো,,, তোর শাস্তি এইটা কবুল বলতে দেরি করেছিস আমার কথায় অবাধ্য হয়েছিস এইটা তার ই শাস্তি। আয়েস করে চেয়ারে বসে একটা বিয়ার খুলে বিয়ার টা খাচ্ছে আর পুতুলের ঠান্ডা জড়সড় হয়ে কেঁপে উঠা দেখছে। আজ পুতুল অসহায় সময় এর কাছে নিয়তির কাছে। চোখের পানি টা সুইমিংপুলের পানির সাথে মিলে মিশে যাচ্ছে।
আগমী দিন গুলো তার জীবনের ভয়ঙ্কর দিন হতে চলেছে সে এইটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
চলবে,,
ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
কপি করা নিষিদ্ধ।

Address

Sirajganj Sador
Sirajganj

Website

facebook.com

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Golpo Zone posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Golpo Zone

31/01/2025

30/01/2025

Address

Website

Alerts

Shortcuts

Share

Category