15/10/2025
#গল্প_ভালোবাসা_বনাম_প্রতিশোধ
#লেখিকা_অনামিকা_সরকার
#পর্ব_০২
পরের দিন সকাল। ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস ভরে উঠেছে ছাত্রছাত্রীদের কোলাহলে। নতুন সেমিস্টারের উত্তেজনা এখনো কাটেনি। সূচনা তবুও গত রাতের ভয়াবহ ঘটনাটা ভুলতে পারছে না। হোস্টেল থেকে বের হতেই আইরা বারবার বলে দিল—
—“সন্ধ্যার পর টিউশন বাদ দে। যা বলেছি মনে রেখিস।”
—“হুম, বুঝেছি,” সূচনা মৃদু হেসে উত্তর দিলো, যদিও মনে ভীষণ অস্থিরতা।
সূচনা গভীর ভাবনাতে কোনো দিকে তাল নাই আইরা তাকিয়ে দেখে বললো কি রে কি ভাবছিস?
সূচনা--- ওই লোকটাকে কোথায় পাবো?
আইরা--- কি আবোল তাবোল বকছিস কোন লোক?
সূচনা--- ওই যে আমাকে বাঁচালো কাল রাতে
আইরা--- এটা ঢাকা শহর এখানে মানুষ খুজে পাবি কেমনে আর না নাম জানিস না মুখ চিনিস
সূচনা--- পেছন থেকে দেখলে চিনবো
আইরা--- নাউজুবিল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ মুখে হাত রেখে বলছে
সূচনা--- কি রে ওমন করছিস কেন?
আইরা--- তুই আজকাল মানুষের পিছন দেখা শুরু করেছিস বলে হাসতে হাসতে মাটিতে বসে পরলো
সূচনা--- আরে আমি কখন বললাম যে মানুষের পেছন দেখি আমি তুই না সত্যি খুব দুষ্ট
আইরা হাসতেই আছে
অর্কর বন্ধু রাহাত গেটের সামনে এসে দেখে একটা মেয়ে মাটিতে বসে হাসছে আর একজন দাড়িয়ে রাগি ফেস নিয়ে। রাহাত ভাবছে মেয়েটার কিছু হয়েছে
রাহাত---- এই মেয়ে কি হয়েছে তোমার মাটিতে বসে কেকাচ্ছো কেনো। সূচনার দিয়ে তাকিয়ে বলছে আপু ওর কি মিরকি রোগ আছে নাকি
সূচনা--- হ্যা ভাইয়া জুতাটা খুলে নাকে ধরেন বলে মিটি মিটি হাসছে
রাহাত জুতা খুলে যেই নাকে ধরবে ওমনি আইরা ধাক্কা দিলো
আইরা--- কি সব করছেন পাগল ছাগল ছি ওয়াক
রাহাত---- আরে আপনি ঠিক হয়ে গেছেন মিস
আইরা--- কেন আমার কি হবে
রাহাত--- তাহলে মাটিতে বসে মিরকি রোগীর মতো ছটফট করছিলেন কেন
আইরা--- ওহহ গড আপনাদের জ্বালাতে কি শান্তি মতো হাসতেও পারবো না
সূচনা হাসতে হাসতে পেছনে হাটছিলো হঠাৎ ধাক্কা খেলো শক্ত কিছুর সাথে। পেছনে ফিরে দেখে কালকের গান গাওয়া ছেলেটা
সূচনা--- স....
অর্ক---- চোখে দেখতে পাওনা? নাকি ইচ্ছা করে ছেলেদের গায়ে পরো।
সূচনা অপমানে চোখ টলমল করছিলো
অর্ক---- কি হলো বোবা নাকি কানা?
রাহাত---- আরে কি করেছিস মেয়েটা ইচ্ছা করে পরবে কেন দেখ কেমন ভয় পেয়েছে
কায়নাত---- এসব এদের নাটক বড়োলোকের ছেলে দেখলে গায়ে ঢলে পড়ে।
অর্ক---- কি হলো চুপ করে আছো কেন কান ধরে সরি বলো।ধমক দিয়ে কথাটা বললো
শাহিন---- আরে কি করছিস জুনিয়র তো তাই বুঝে নাই এভাবে বকিস না
আইরা--- ভাইয়া সরি আসলে
অর্ক---- ও কি বোবা আমার কথা বোঝে না?
সূচনা চোখের পানি ছেরে দিয়ে আস্তে আস্তে কান ধরে সরি বলে পেছন ফিরে চলে যেতে নিলে
অর্ক---- এই মেয়ে আমি কি যেতে বলেছি? সিনিয়রদের রেসপেক্ট দিতে জানো না
সূচনা থেমে যায় বোকার মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে
অর্ক---- এরপর রাস্তা ঘাটে সাবধানে চলাফেরা করবে কারো গায়ে পরবে না। মনে থাকবে?
সূচনা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালো
অর্ক---- এখন যাও
বলতে দেরি সূচনা পারলে দৌড়ে পালায়
রাহাত ঠাট্টা করে বলল—
—“কিরে দোস্ত, গতকাল গান গাইলি, সবাই পাগল হয়ে গেল। আজ আবার কাকে ডেডিকেট করতে যাচ্ছিস?”
অর্ক শুধু হেসে বলল—
—“কখনো কখনো উত্তর না দেওয়াটাই শ্রেষ্ঠ উত্তর।”
ক্লাস শেষে সূচনা আর আইরা একসাথে বের হলো। গেইটে পৌঁছালে সূচনা চারপাশে তাকিয়ে কারো খোঁজ করতে লাগল। সে খুঁজছিলো অর্ককে ভালো ভাবে দেখে নিলো আছে নাকি ওই লোকটার সামনে কিছুতেই পরবে না আর
—“কাকে খুঁজছিস?” আইরা প্রশ্ন করল।
—“কিছু না… কিছু না,” সূচনা চুপ করে গেল।
তবে মনটা যেন সারাক্ষণ বলছিল—লোকটা আবার কোথাও না কোথাও আসবেই।
সন্ধ্যা নামতেই শহরের আলো জ্বলে উঠল। সূচনা সেদিন আর টিউশনি করতে গেল না, সরাসরি হোস্টেলে ফিরে এল। কিন্তু দূর থেকে কেউ যেন তাকে লক্ষ্য করছিল। অন্ধকার গলির ভেতর, হুডির ভাঁজের নিচে লুকানো চোখদুটি তীক্ষ্ণভাবে তাকিয়ে ছিল সূচনার দিকে।
তার চোখে ছিল রাগ, বেদনা আর গভীর কোনো অজানা রহস্য।
অন্যদিকে, অর্ক ক্যান্টিনে বসে আছে। চারপাশে হাসি-আড্ডা, কিন্তু তার চোখ বারবার ক্লাসরুমের করিডোরের দিকে চলে যাচ্ছে। রাইফা খেয়াল করেই বলল—
—“আচ্ছা অর্ক, তুই কি ওই নতুন মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছিস? সূচনা ইসলাম?”
অর্ক লজ্জা পেয়ে গেল। মাথা নীচু করে বলল—
—“বোকা বকিস না।”
কাইনাত ঠাট্টা করে বলল—
—“আরে সত্যি বল, নাহলে কাল থেকে তোর গিটারের সুরে প্রেমের গন্ধ পাই ক্যান?”
সবাই হেসে উঠলো, কিন্তু অর্কের চুপ থাকা যেন অনেক কথাই বলে দিচ্ছিল।
কায়নাতের বুকে চিনচিনে ব্যাথা লাগলো
রাত গভীর হলো। হোস্টেলে আইরা ঘুমিয়ে পড়েছে। সূচনা একা জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মনে হলো—কেউ যেন তাকে নজর করছে। বুক ধড়ফড় করতে লাগল। ভয় আর কৌতূহলের মিশ্র অনুভূতি তাকে গ্রাস করল।
ভার্সিটির কথা মনে পরতেই মন খারাপ হলো মনে মনে ভাবলো যার গানের গলা এতো মিষ্টি তার ব্যাবহার এতো না বিস্রি। আর কি রাগ
গরীব বলে অবহেলা করলো চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি পরলো আল্লাহ আমাকে এতিম করে দিলে বাবা নাই মা কে নিয়ে একা জীবন।
এই ঢাকা শহরে কি আমি এদের ভীরে টিকতে পারো!
আমাকে পারতেই হবে আমি আর ভয় পাবো না অর্ক চৌধুরী আবার আমাকে অপমান করতে আসলে দেখিয়ে দিবো গ্রামের মেয়েরা সস্তা নয়
অর্ক অনেক রাতে বাসায় ফিরলো দেখে বাবা বসে আছে
অর্কর বাবার নাম আরমান চৌধুরী মায়ের নাম মিসেস নাজমা চৌধুরী
আরমান চৌধুরী বললেন অর্ক এতো রাত হলো কেন
অর্ক---- বাবা একটু কাজ ছিলো
আরমান চৌধুরী --- যাই হোক কাল একটু বাসায় থেকো তোমার বোনকে দেখতে আসবে পাত্রপক্ষ
অর্ক---- ঠিক আছেঢাকার এক কোণে, পুরনো গুদামঘরটায় অন্ধকার নেমে এসেছে। দেয়ালের গায়ে লাল আলো ঝিকমিক করছে, সিগারেটের ধোঁয়ায় চারপাশ ভারী। ভেতরে বসে আছে কয়েকজন গুণ্ডা, কণ্ঠে টেনশন—
—“ভাই, খবর খারাপ… সেই হুডি পরা ছেলেটা আবার এলাকায় দেখা গেছে।”
হঠাৎ ভারী দরজা “ঘড়র ঘড়র” শব্দে খুলে গেল। ধোঁয়ার কুয়াশা ভেদ করে ঢুকলো একজন— কালো শার্ট, কালো ব্লেজার, চোখে ঠান্ডা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। সে-ই আরভিন শেখ
পা টিপে টিপে আসতেই চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল।
সে ধীরে ধীরে সোনার মোড়ানো লাইটার বের করে সিগার ধরাল। তারপর ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এক কোণে বসা গুণ্ডাটার দিকে তাকালো—
—“খবর খারাপ বলছিস? নাকি তোদের সাহসই খারাপ হয়ে গেছে?”
গুণ্ডাটা কাঁপতে কাঁপতে বলল—
—“না ভাই… আসলে লোকটা হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায়…”
আরভিন টেবিলের ওপর রাখা গ্লাস তুলে হঠাৎই ছুঁড়ে মারলো তার দিকে। গ্লাস ভেঙে চূর্ণ হয়ে গেল, রক্ত ঝরে পড়লো লোকটার কপাল থেকে।
আরভিন দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলল—
—“এই শহরে আমার ইচ্ছের বাইরে কারও নিঃশ্বাস চলবে না। হুডি পরা একটা ছোকরা আমার নামটা কলঙ্কিত করবে? তার গলায় রশি পড়বে, না হলে তোমাদের গলায়।”
চারপাশে আবারও নিস্তব্ধতা। তার ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটে উঠল, কিন্তু সেই হাসির মধ্যে কোনো উষ্ণতা নেই— কেবল শীতল আতঙ্ক।
এরপর আস্তে করে বলল—
—“এখন যাও… রোট লাল করে আনো।”
লোকগুলো মাথা নিচু করে দৌড়ে বের হয়ে গেল, আর অন্ধকার ঘরে ভেসে রইলো কেবল সিগারের ধোঁয়া আর আরভিন শেখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি।
চলবে...