12/07/2025
জঙ্গলে হারিয়ে
রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। আকাশে মেঘ জমেছে, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ ঝলকে উঠছে। গ্রামের পাশে ছোট্ট এক জঙ্গল। সেই জঙ্গলের গল্প নিয়ে নানা কাহিনি ছড়িয়ে আছে। কেউ বলে সেখানে নাকি অদ্ভুত শব্দ শোনা যায়, কেউ বলে সেখানে ভূত-প্রেতের বসবাস।
মোশাররফ ছিল দুঃসাহসী ছেলে। তার বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে সে বলেছিল,
“আজ রাতে আমি ওই জঙ্গলে ঢুকব, দেখব আসলে কী আছে।”
বন্ধুরা তাকে অনেক বোঝালো, কিন্তু মোশাররফের একগুঁয়ে স্বভাব। রাতে চুপিচুপি টর্চ লাইট হাতে সে বেরিয়ে পড়ল।
জঙ্গলের ভেতরে ঢুকতেই চারপাশে ঝোপঝাড়ের শব্দ, পোকামাকড়ের ডাক আর হালকা হালকা শীতল বাতাস। মোশাররফ ভয় পেলেও সাহস করে এগিয়ে চলল। হঠাৎ এক অচেনা শব্দ। সে পিছনে তাকালো — কেউ নেই। টর্চের আলোয় সামনে এক টুকরো সাদা কাপড় উড়তে দেখল। মনে হলো কেউ দৌড়ে পালাল।
ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো। মোশাররফ দৌড়াতে শুরু করল। কিন্তু দিকভ্রান্ত হয়ে গভীর জঙ্গলে ঢুকে গেল। চারদিকে অন্ধকার আর গাছের পাতা। টর্চের আলোও নিভে গেল হঠাৎ। তখন সে বুঝতে পারল, সে জঙ্গলে হারিয়ে গেছে।
পাখির ডাক, ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর দূর থেকে শেয়ালের ডাক। মোশাররফ মনে মনে বলল,
“এবার বুঝি আর বাঁচা হলো না।”
কিছুক্ষণ পর দেখতে পেল গাছের ফাঁকে হালকা আলোর রেখা। সাহস করে সে সেই আলো লক্ষ্য করে এগিয়ে চলল। কাছে গিয়ে দেখল — এক বৃদ্ধ বসে আগুন জ্বালিয়ে কিছু রান্না করছেন।
বৃদ্ধ লোকটা হাসিমুখে বলল,
“তুমি হারিয়ে গেছো নাকি বাবা?”
মোশাররফ মাথা নেড়ে বলল,
“হ্যাঁ চাচা। আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই।”
বৃদ্ধ লোকটা একটু হেসে বলল,
“ডরাইও না। আমি তো এখানকার পাহারাদার। চল, তোমারে পথ দেখায়ে দিমু।”
বৃদ্ধ লোকটার পেছন পেছন হেঁটে মোশাররফ অবশেষে গ্রামের রাস্তায় ফিরতে পারল। বাড়িতে পৌঁছে সব কথা বলল। সবাই অবাক হয়ে গেল।
পরদিন সকলে মিলে বৃদ্ধ লোকটিকে খুঁজতে গেল জঙ্গলে। কিন্তু কোথাও তার কোনো চিহ্ন পাওয়া গেল না। সেই আগুনের জায়গাটাও নেই।
অনেকেই বলে, জঙ্গলের রক্ষাকর্তা সেই বৃদ্ধ। বিপদে পড়া কাউকে সাহায্য করেন তিনি।
মোশাররফ আজও রাতে ঘুমানোর আগে সেই বৃদ্ধের কথা মনে করে।