31/07/2025
"ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল"
— গৃহবাসীর মন কি জানালা খুলেছে?
সদ্য প্রয়াত রতন খিয়ামের নাতনির সূত্রে গানটা আরেকবার শোনা হলো আমাদের অনেকের। চলেন একটু ডীপ ডিগ করি এই গানটার গভীরে।
রবীন্দ্রনাথ যখন লেখেন, “ওরে গৃহবাসী, খোল্ দ্বার খোল”, তখন সেটা কেবল বসন্ত-বরণ নয়, এক গভীর আত্মিক জাগরণের ডাক।
এ গান প্রকৃতি আর হৃদয়ের একান্ত সংলাপ—যেখানে বাইরের ফুল-পাতার দোলন আর ভেতরের অন্তর্লীন স্পন্দন একসূত্রে বাঁধা।
কবি যে “লাগল যে দোল” বলছেন—এই দোল কেবল দোলযাত্রা নয়, এটি জীবনের প্রতি এক দোলাচল প্রেম।
পলাশ আর অশোকের রক্তিম হাসিতে যেমন প্রকৃতি নিজেই রঙে মাতোয়ারা, তেমনি প্রভাত-আকাশও ‘রাঙা নেশা’ ছড়ায়।
কবি বলেন, “নবীন পাতায় লাগে রাঙা হিল্লোল”—রঙও যেন ঢেউ হয়ে উঠছে, রঙও যেন সুর!
এই গান শুধু দৃশ্য নয়—শ্রবণ, স্পর্শ, ঘ্রাণ সবকিছুর মিলন। মৌমাছির গুঞ্জন এখানে “ভিখারির বীণা”, বাতাসে মিশে থাকা মাধবীলতার সুবাসে “বায়ু বিভোল”- প্রকৃতির আত্মা নিজে এসে হৃদয়কে নাড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
আর যে বারবার বলা হচ্ছে, “দ্বার খোল, দ্বার খোল”—সেটা কি শুধুই ঘরের দরজা?
নাকি শ্রোতার ভেতরের ভয়, আত্মকেন্দ্রিকতা আর ক্লান্তি ছুঁড়ে ফেলে জেগে ওঠার ডাক?
কবি সম্ভবত বলতে চাচ্ছেন, বসন্তের প্রকৃতি কেবল বাহ্যিক নয়—এ এক দর্শন: উদারতা, সৌন্দর্য, সহাবস্থান আর ভালোবাসার মিলন।
রাগ বিভাস ও বাউল–সুরের মিশেলে তৈরি হয় এমন এক সংগীত, যেখানে ভোরের নির্মলতা আর শিশুর আত্মার সরলতা মিলেমিশে এক আশ্চর্য প্রার্থনায় পরিণত হয়। দাদরা তাল সেই দোলকে আরও জাগিয়ে তোলে, শব্দ ও সুরে স্পন্দন তুলে।
এই গান রবীন্দ্রনাথের সেই কণ্ঠস্বর, যা আমাদের গৃহ–অন্তরে গৃহবাসী হয়ে থাকা মনটিকে বলে,
"এই তো জীবন! রঙে, সুরে, বাতাসে—দ্বার খোলো, প্রাণ খোলো, ভালোবাসো।"
---
রচনাকাল: ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ (১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দ)
রাগ: বিভাস-বাউল | তাল: দাদরা
#রবীন্দ্রনাথ