30/09/2025
অল্প শ্রমে অধিক আয়ের লোভ দেখিয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ‘এডিএ মিউজিক’ নামক একটি মোবাইল অ্যাপসের প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন কয়েকশ’ মানুষ। সহজ উপার্জনের মিথ্যা আশ্বাসে বিভিন্ন প্যাকেজে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছেন এসব ভুক্তভোগীর। প্রতারিতদের মধ্যে অনেক নারীও রয়েছেন।
প্যাকেজ কিনে দৈনিক উপার্জনের লোভে পড়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতারক চক্রটি ‘এডিএ মিউজিক’ নামের অ্যাপসের মাধ্যমে একটি অনলাইন গেইম খেলার প্রলোভন দেখাতো। বলা হতো, মোবাইলে মাত্র পাঁচ মিনিট গেইম খেললেই দৈনিক সর্বনিম্ন এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজর পর্যন্ত উপার্জন করা সম্ভব। তবে এই সুবিধার জন্য ব্যবহারকারীকে প্রথমে বিভিন্ন মূল্যের প্যাকেজ কিনতে হবে। সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্যাকেজ চালু ছিলো।
উপজেলার মুক্তিখলা গ্রামের বাসিন্দা রাসেল আহমদ। পেশায় তিনি রাজমিস্ত্রী ও ওয়াটার সাপ্লাই কর্মী। এই প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন তিনিও। বললেন, প্রথমে অন্যদের টাকা ইনকাম করতে দেখে উৎসাহিত হয়ে আমি ২৯ হাজার টাকার একটি প্যাকেজ কিনি, যেখানে দৈনিক এক হাজার টাকা উপার্জনের কথা ছিল। একপর্যায়ে লোভে পড়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ করে ৬৪ হাজার টাকার একটি বড় প্যাকেজে বিনিয়োগ করি। রাসেল আক্ষেপ করে বললেন, ‘৯৩ হাজার টাকার সবটাই ঋণ করে এনেছিলাম। এখন আমি পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেছি।’
উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, ১০ হাজার টাকা দিয়ে অ্যাপসটিতে অ্যাকাউন্ট খুলেছি। সেখানে প্রতি সোমবার এক হাজার তিনশ’ টাকা করে পাওয়ার কথা ছিল। একবার টাকা তুলতে পেরেছি। টাকা লেনদেন পুরোটাই অ্যাপসের মাধ্যমে বিকাশে করা হতো। কিন্তু দুই-তিন দিন আগে হঠাৎ করে অ্যাপসে ঢুকলে ‘সার্ভার সংক্রান্ত কাজ চলছে’ লেখা দেখায় এবং কোনো কাজ করা যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে যখন সার্ভার ঠিক হয়, তখন দেখা যায়, আমার নেয়া প্যাকেজে আর ঢোকা যাচ্ছে না।
অটোরিক্সা চালিয়ে সংসার চালানো মনিরুজ্জামান টাকা ধার করে এনেছিলেন। তিনি বললেন, যারা এই অ্যাপসের মাধ্যমে টাকা ঢুকিয়েছে, তাদের ৯০ শতাংশ মানুষই কিছুই তুলতে পারেনি।
একই গ্রামের বাসিন্দা কফিল আকঞ্জি তাঁর ধানের ব্যবসা থেকে জমানো এক লক্ষ ৯০ হাজার টাকা এই প্রতারণায় হারিয়েছেন। তিনি বলেন, জীবনে কখনো জুয়াতে যাই নি, কিন্তু কোন মোহের কারণে এখানে গিয়ে সব হারালাম বুঝতে পারছি না। টাকা-পয়সা হারিয়ে এখন খুব কষ্ট করে চলা লাগবে।
এই প্রতারণার ঘটনা বিশ্বম্ভরপুরে এখন সবচেয়ে আলোচনার বিষয়। এলাকার গণ্যমান্যরা বলছেন, লোভে পড়ে প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে শতাধিক মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা দেবনাথ বললেন, আমরাও এ ধরনের খবর পেয়েছি। তবে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা সভা সেমিনার ও আইনশৃঙ্খলা সভায় মানুষকে এ ধরনের বিষয়ে সতর্ক থাকতে এবং সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে কাজ করছি।
©️ প্রতিবেদনটি একটি স্থানীয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যম থেকে সংগ্রহিত। ২৯সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ইং এর আপডেট!
এসব জুয়ারো বা লোভনীয় সকল এপ্স/ওয়েবসাইট থেকে নিজেকে বিরত রাখুন অন্যকেও সাআধান করুন। নয়তো এগুলো আপনার আমার বংশকে একদম রাস্তায় নামিয়ে সর্বস্ব প্রতারণার জালে ফেলে দিবে। ছদ্ম নামের কোম্পনী হয়ে আজকাল যেখানে বড়রা প্রতারিত হচ্ছে সেখানে ছোটোদের কি হবে একটিবার চিন্তা করে দেখুন।