26/09/2025
‘সব হারিয়ে’ মেয়েকে নিয়েই বেঁচে ছিলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল দুজনকে
স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পদসহ নানা বিষয় নিয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে কিছুটা মনোমালিন্য দেখা দেয়। একপর্যায়ে আবেদিতা চৌধুরী (আঁখি) একমাত্র মেয়ে প্রথমা চৌধুরীকে নিয়ে হবিগঞ্জ থেকে চলে আসেন সুনামগঞ্জে। শহরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। মেয়ে পড়ত শহরের সুনামগঞ্জ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে, অষ্টম শ্রেণিতে। মেয়েকে নিয়ে সব স্বপ্ন ছিল আঁখি চৌধুরীর। তাকে অবলম্বন করেই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় সব কিছু থেমে গেছে। আজ শুক্রবার সকালে সড়কে ঝরে গেছে মা ও মেয়ের প্রাণ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আবেদিতা চৌধুরীর (৪০) বাবার বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায়। তাঁর বিয়ে হয় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার নজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রণয় দাসের সঙ্গে। বছর আট আগে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বামী মারা যান।
আজ সকালে দুর্গাপূজা সামনে রেখে মেয়েকে নিয়ে হবিগঞ্জ শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন আবেদিতা। তাঁদের বহনকারী অটোরিকশাটি সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা এলাকায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আবেদিতা চৌধুরী, তাঁর মেয়ে প্রথমা চৌধুরী ও অটোরিকশা চালক সজল ঘোষ (৫০) মারা যান।
আবেদিতা চৌধুরীর আত্মীয় পবিত্র দাস বলেন, সড়কে একটি পরিবার শেষ হয়ে গেছে। মেয়েকে নিয়ে সব স্বপ্ন ছিল আবেদিতা চৌধুরীর।
সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য জানান, আবেদিতা চৌধুরী মেয়েকে নিয়ে মহিলা পরিষদের সাপ্তাহিক পাঠচক্রে নিয়মিত আসতেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়ের কথা ভেবে আর সংসার পর্যন্ত করেননি। তিনি বলেন, বেপরোয়া ট্রাক মহূর্তেই মা–মেয়েসহ তিনজনের প্রাণ কেড়ে নিল। আসলে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কেউ ভাবে না, যে কারণে সড়কে মৃত্যু বাড়ছে। একেকটি পরিবার শেষ হয়ে যাচ্ছে।
একই সড়কে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত আটজন মারা গেছেন। এর আগে ১৩ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস এলাকায় একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ ঘটনাস্থলেই জেলা প্রশাসনের জারিকারক সুহেল মিয়া (৩৮) ও সবদর আলী (৩৭) মারা যান।
একই সড়কে সদর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় ৬ সেপ্টেম্বর একটি অটোরিকশা ও যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী স্নেহা চক্রবর্তী, সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনিস্টিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আফসানা খুশি ও ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম (৭০) মারা যান। তাঁরা একটি অটোরিকশায় করে শান্তিগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে ফিরছিলেন।
সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি রবিউল লেইস ক্ষোভ প্রকাশ করে করেন, ‘এই সড়কের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে কিছু দিনের মধ্যে দুর্ঘটনায় দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, জেলা প্রশাসনের কর্মীসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা মহাসড়কে অটোরিকশা, ইজিবাইক চলাচল বন্ধের বিষয়ে বিভিন্ন ফোরামে কথা বলি। কিন্তু দায়িত্বশীলেরা কানে তোলেন না। যে কারণে সড়কে মৃত্যু বাড়ছে। অবিলম্বে মহাসড়কে অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করা উচিত।’
নিউজ: প্রথম আলো।