12/03/2024
র*ম*জান বিষয়ে পড়াশোনা। পর্ব-৩
র*ম*জা*নের ফ*জি*লত ও তাৎপর্য।
এক.
সিয়াম ও কিয়ামের মাস
মুসলিম উম্মাহর নিকট রমযান মাসের আগমন ঘটে প্রধানত রোযা ও তারাবীহ’র বার্তা নিয়ে। এটি রমযান মাসের বিশেষ আমল। তাই প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য, পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে এ দুই বিষয়ে যতবান হওয়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ.
হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী (মুত্তাকী) হতে পার।
সূরা বাকারা ১৮৩
দুই.
ব*রকতপূর্ণ মাস।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন।
لَمَّا حَضَرَ رَمَضَانُ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلمَ: قَدْ جَاءَكُمْ رَمَضَانُ، شَهْرٌ مُبَارَكٌ، افْتَرَضَ اللهُ عَلَيْكُمْ صِيَامَهُ، تُفْتَحُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَتُغْلَقُ فِيهِ أَبْوَابُ الْجَحِيمِ، وَتُغَلُّ فِيهِ الشَّيَاطِينُ، فِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَ خَيْرَهَا، فَقَدْ حُرِمَ
যখন রমযান মাসের আগমন ঘটল, তখন রা*সূ*লুল্লাহ সাল্লা*ল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তোমাদের নিকট বরকতময় মাস রমযান এসেছে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের জন্য এ মাসের রোযা ফরয করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শিকলে বন্দী করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে তো প্রকৃতপক্ষেই বঞ্চিত।
মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৭১৪৮;
সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪১৬;
তিন.
মু*স*ল*মানদের জন্য সর্বোত্তম মাস
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা*ল্লা*ল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন।
مَا أَتَى عَلَى الْمُسْلِمِينَ شَهْرٌ خَيْرٌ لَهُمْ مِنْ رَمَضَانَ، وَلَا أَتَى عَلَى الْمُنَافِقِينَ شَهْرٌ شَرٌّ لَهُمْ مِنْ رَمَضَانَ، وَذَلِكَ لِمَا يُعِدُّ الْمُؤْمِنُونَ فِيهِ مِنَ الْقُوَّةِ لِلْعِبَادَةِ، وَمَا يُعِد فِيهِ الْمُنَافِقُونَ مِنْ غَفَلَاتِ النَّاسِ وَعَوْرَاتِهِمْ، هُوَ غنْم الْمُؤْمِن يَغْتَنِمُهُ الْفَاجِرُ
আ*ল্লা*হ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৮৩৬৮;
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস ৮৯৬৮;
সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস ১৮৮৪;
তবারানী হাদীস ৯০০৪;
বাইহাকী শুআবুল ঈমান, হাদীস ৩৩৩৫
চার.
প্রথম রাতে আহবান কারির আহবান।
إِذَا كَانَ أَوّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ .....وَيُنَادِي مُنَادٍ: يَا بَاغِيَ الخَيْرِ أَقْبِلْ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ، وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النّارِ، وَذَلكَ كُلّ لَيْلَةٍ
যখন রমযান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটে....আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে হে কল্যাণের প্রত্যাশী! অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী! থেমে যাও। আর আ*ল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামীকে মুক্তি দান করেন। জামে তিরমিযী, হাদীস ৬৮২
পাচ.
জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস এবং দুআ কবুলের মাস।
রা*সূলু*ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন।
إِنّ لِلّهِ عُتَقَاءَ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ(يعني في رمضان.) لِكُلِّ عَبْدٍ مِنْهُمْ دَعْوَةٌ مُسْتَجَابَةٌ
অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমযান মাসের প্রত্যেক দিবস ও রাত্রিতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দুআ কবুল করেন।
মুসনাদে আহমাদ হাদীস ৭৪৫০
মুসনাদে বাযযার, হাদীস ৯৬২
ছয়.
দানশীলতার মাস
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللّهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلمَ أَجْوَدَ النّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدَ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِّنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ القُرْآنَ، فَلَرَسُولُ اللَّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَجْوَدُ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ
রা*সূ*লুল্লাহ সা*ল্লা*ল্লা*হু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা। তাঁর দানশীলতা (অন্য সময় হতে) অধিকতর বৃদ্ধি পেত রমযান মাসে, যখন জিব্রীল আ. তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। জিব্রীল আ. রমযানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং তাঁরা পরস্পর কুরআন শুনাতেন। তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কল্যাণবাহী বায়ুর চেয়েও অধিক দানশীল।সহীহ বুখারী, হাদীস ৬,
সহীহ মুসলিম হাদীস ২৩০৮,
সাত.
আমলের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধির মাস
রমযান মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এ মাস মুমিনের নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধির মাস এবং আখেরাতের সওদা করার শ্রেষ্ঠ সময়। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে
قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لِامْرَأَةٍ مِنَ الْأَنْصَارِ...إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فَاعْتَمِرِي، فَإِن عُمْرَةً فِيهِ تَعْدِلُ حَجَّةً
وفي رواية أخرى لمسلم : فعمرة في رمضان تقضي حجة أو حجة معي.
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রা*সূ*লু*ল্লাহ সা*ল্লা*ল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী মহিলাকে বললেন,( বর্ণনাকারী বলেন, তার নাম ইবনে আব্বাস রা. উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু আমি তা ভুলে গিয়েছি (অন্য বর্ণনায় তার নাম উম্মে সিনান উল্লেখ করা হয়েছে) তুমি কেন আমাদের সাথে হজ্ব করতে যাওনি? তিনি বললেন, আমাদের পানি বহনকারী দুটি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার ছেলের বাবা (স্বামী) ও তাঁর ছেলে হজ্ব করতে গিয়েছেন, অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন। তিনি বলেন,)
রমযান মাস এলে তুমি উমরা করবে। কেননা এ মাসের উমরা একটি হজ্বের সমতুল্য। সহীহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রমযান মাসের উমরা একটি হজ্বের সমতুল্য। অথবা বলেছেন, আমার সাথে একটি হজ্বের সমতুল্য (সওয়াবের হিসাবে)।
সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৮২,
সহীহ মুসলিম ১২৫৬,
আট.
পাপ মোচন ও গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের মাস
হযরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন।
الصلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُن إِذَا اجْتَنبَ الْكَبَائِر
পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রমযান থেকে আরেক রমযান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহকে মুছে দেয় যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।
সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৩
নয়.
লাইলাতুল কদরের মাস
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে মুসলিম উম্মাহর জন্য আরেকটি বিশেষ দান হল এক হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম লাইলাতুল কদর। আল্লাহ তাআলা এ রাত সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন।
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِمْ مِنْ كُلِّ أَمْرٍ سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ
লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিব্রীল আ.) তাদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। যে রাত পুরোটাই শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
সূরা কদর ৩-৫
হাদীস:
হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন।
دَخَلَ رَمَضَانُ، فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِن هَذَا الشهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ، وَفِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَهَا فَقَدْ حُرِمَ الْخَيْرَ كُلَّه، وَلَا يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلَّا مَحْرُومٌ
রমযান মাসের আগমন ঘটলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের নিকট এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃতপক্ষে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র (সর্বহারা) দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যান থেকে বঞ্চিত হয়।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৬৪৪
চলবে...
🖋️
Arif Bin Habib