15/03/2024
আমার ৫০০তম উইকেট পাওয়ার পর, আমি আমার বাবা-মা এবং আমার স্ত্রীর কাছ থেকে একটি ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যে ৭টা বেজে যাওয়ার পরেও কারও কোনও ফোন আসেনি। আমার একটু অদ্ভুত লেগেছিল। তবে আমি ভেবেছিলাম, হয়তো ওরা আমার ৫০০ উইকেটের জন্য সাক্ষাৎকার দিচ্ছে। বা সকলে অভিনন্দন জানাচ্ছে, সেই নিয়ে ব্যস্ত
কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমি স্নান করতে যাওয়ার আগে আমার স্ত্রীকে ফোন করি। আমার বাবা-মা ফোন ধরেনি। এবং আমি শুনতে পেলাম, আমার স্ত্রীর কন্ঠস্বর ভাঙা। আমার স্ত্রী আমাকে আমার সতীর্থদের থেকে দূরে সরে যেতে বলে এবং তার পর জানায়, অসম্ভব মাথার যন্ত্রণা হওয়ার পর আমার মা কোলাপস করে গিয়েছে এবং সেই সময় হাসপাতালে ভর্তি আছে
আমার নিজেকে তখন অসহায় মনে হচ্ছিল। সবটা কেমন শূন্য হয়ে গিয়েছিল। আমি কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব, তা আমি জানতাম না। আমি কী জিজ্ঞেস করব, সেটাও বুঝতে পারছিলাম না। আমি কাঁদছিলাম, কিন্তু আমি চাইনি, আমার চোখের জল কেউ দেখুক। আমি আমার ঘরে একা বসে বসেই কাঁদছিলাম।’
কয়েক মিনিট এই ভাবে কাটার পর, আমার স্ত্রী কোনও উত্তর না পেয়ে, টিমের ফিজিয়োকে ফোন করে সব জানায় এবং আমি কোথায় তা জিজ্ঞেস করে। ফিজিয়ো নিশ্চয়ই রোহিত শর্মা এবং রাহুল দ্রাবিড়কে সবটা বলেছিল। আমি ওদের কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। আমি ভাবছিলাম যে, একাদশে রয়েছি, এখন আমি যদি মাঝপথে চলে যাই, দল ১০ জনের হয়ে যাবে। সিরিজটি তখন ১-১ ছিল। আমি ভাবছিলাম যে, আমি চলে গেলে ভারতীয় দলে একজন বোলার কমে যাবে।’
সেই সময়ে রোহিত এসে ভরসা জোগায়। রোহিত এবং রাহুল দ্রাবিড় ভাই আমার রুমে আসে। রোহিত আমাকে ভাবতে দেখে বলে, তুমি কি ভাবছ? শুধু তোমার ব্যাগ গুছিয়ে এখন বাড়ি চলে যাও এবং তোমার মা - কে দেখতে যাও । রোহিত আমাকে বলেছিল যে, ও চেষ্টা করবে, আমার জন্য একটা চার্টার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার। চেতেশ্বর পূজারাকে অনেক ধন্যবাদ। পূজারা অনেক লোকের সঙ্গে কথা বলেছে এবং চার্টার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে।
আমাদের দলের ফিজিয়ো কমলেশ আমার ভালো বন্ধু। রোহিত যা করেছে, তা অসাধারণ। কমলেশকে আমার সঙ্গে চেন্নাইয়ের ফ্লাইটে উঠে পড়তে বলেছিল রোহিত । আমি রোহিতকে বলেছিলাম যে, কমলেশ দলের সঙ্গে থাকা দু'জন ফিজিয়োর মধ্যে একজন এবং কী ভাবে ওকে আমার সঙ্গে পাঠাচ্ছো? দল যখন গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট খেলছে?
রোহিত বলেছিল, ঠিক আছে। কিন্তু আমি কমলেশকে বলেছিলাম দলের সঙ্গে থাকতে। যাইহোক, যখন আমি লবিতে গেলাম, কমলেশ এবং একজন নিরাপত্তাকর্মী সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল। কমলেশকে বারবার ফোন করে রোহিত আমার বিষয়ে সব সময় খোঁজখবর নিয়ে গিয়েছে।’
আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমি রোহিতের কাছ থেকে এমন সুন্দর আচরণ কল্পনাও করতে পারিনি। আমি যদি অধিনায়ক হতাম, তবে আমি সেই অবস্থানে থাকা যে কাউকেই বাড়ি যেতে বলতাম। এতে দ্বিতীয় বার ভাবার কিছু নেই। কিন্তু আমার সব সময়ের খবর রাখার জন্য সমানে ফোন করে যাওয়াটা সত্যিই অন্য বিষয়। কমলেশকেও আমার সঙ্গে থাকতে বলেছিল রোহিত, এটা অবিশ্বাস্য!
আমি রোহিত শর্মার মধ্যে একজন অসামান্য লিডার দেখছি। ও আলাদা কিছু। এত দয়ালু হৃদয়ের জন্য, ও ৫টি আইপিএল শিরোপা সহ এত সাফল্য পেয়েছে। আমি আশা করি, রোহিত আরও বড় কিছু অর্জন করবে
এমন স্বার্থপর সমাজে একজন মানুষ যে অন্যের মঙ্গল নিয়ে চিন্তা করে, সে তো বিরল। রোহিত শর্মা সেই লোক
~ রবি অশ্বিন