14/02/2025
ছোটবেলায় শবে বরাত মানে আমাদের কাছে এক রকম উৎসব ছিলো। একটা সাজ সাজ রব। চারদিকে ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য। মাগরিবের নামাযের পড়ে হুজুর সুর করে কিছুক্ষণ সুরা পড়তেন, এরপর কিছুক্ষণ ওয়াজ নসিহা তারপর মোনাজাত হতো। দোয়া শেষে সবার জন্য জিলাপি বা হালুয়া থাকতো। এখনো সেই ধারাটা চালু আছে। কেউ হয়তো কেজি দুয়েক জিলাপি নিয়ে আসেন, হুজুরের কানে কানে বলেন 'আমার মেয়েটা অসুস্থ। একটু দোয়া করবেন।' মফস্বলের মহিলাদের সাধ্য অনেক সীমিত। তাঁরা একটু হালুয়া রান্না করে গোল গোল বলের সাইজে বানিয়ে ছোট ছেলেকে দিয়ে মসজিদে পাঠান। মুরুব্বি টাইপের কেউ নামায শেষে এগুলো বিতরণ করেন। বাচ্চাকাচ্চারা পিছনের সারিতে কিচিরমিচির করে, দুইটা জিলাপি নেওয়ার জন্য আরেকবার হাত বাড়ায়! কি চমৎকার দৃশ্য! শেষ কবে জিলাপির জন্য হাত বাড়িয়েছিলাম মনে নেই। বড় হওয়ার সাথে সাথে কতো রকম সংকোচ, দ্বিধা এসে মনের মধ্যে জমে গেছে। নামায শেষে আলগোছে বের হয়ে আসি, দাঁড়ানোর ধৈর্য্য হয় না। সময়ের সাথে আমরাও পরিবর্তন হয়ে গেছি।
বছর দুয়েক আগেও শবে বরাতের রাতে রাত জেগে নামায পড়তাম, দোয়া করতাম। আমার মনে আছে, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার আগে প্রায়ই রাত জাগতাম। মনে মনে দোয়া করতাম। মনে হতো আল্লাহ পাশে বসে আমার কথা শুনছেন। এখন সেই অনুভূতি পাই না। মোবাইল নামের নেশায় ডুবে থাকি, একটার পর একটা রিলস দেখি, ফেসবুকে বসে থাকি!
লাইলাতুল বরাত মানে মুক্তির রজনী। আর মাত্র পনের দিন পরে রামাদান মাস শুরু হবে। রামাদান আমাদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র বিশুদ্ধ একটা মাস। বরকতময় মাস। ছোটবেলায় একটা অলিখিত নিয়ম ছিলো, শবে বরাতে অবশ্যই ভালো খাবার খেতে হবে। গরু কিংবা খাসি, যারা পারবে না তারা মুরগি খাবে। এখনও কি সব জায়গায় এমন নিয়ম আছে? জানি না ঠিক। গত কয়েক শবে বরাতের কথা আমার মনে নেই। মনে আছে বেশ অনেক বছর আগের কথা। রাত দুটোর সময় মসজিদে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে আমরা ক'জন মিলে (আমি, ইফতি, সৌরভ ভাই, ফারহান মামা, তাহমিদ ভাই, তানজিল ভাই) গোরস্থানে গিয়েছিলাম কবর জিয়ারতের জন্য। তখন সেখানে শুধুমাত্র দাদা-দাদীর কবর ছিলো। এখন সেই অনেক লম্বা হয়ে গেছে। আমাদের সবচেয়ে প্রিয় ক'জন মানুষ এখন সেখানে চলে গেছেন!
আজকের রাতটায় আল্লাহ দুনিয়ার কাছাকাছি এসে তাঁর বান্দাকে ডাকেন, কেউ ক্ষমা চাইলে তাকে মুক্তি দেন। আমি জানি না, আমাদের প্রিয় মানুষ যারা ক্ষমা চাওয়ার উর্ধ্বে চলে গেছেন, তাঁরা মুক্তি পেয়েছেন কিনা?আমরা পাবো কিনা? পাওয়ার তো কথা। আশা করতে দোষ কি?
সন্ধ্যের পরে বাজারে বের হয়েছিলাম।দেখেছি চমৎকার লালচে একটা চাঁদ উঠেছে। চকচকে রং হয়নি, তাই আলো বেশি নেই। সুনামগঞ্জের ভাষায় শবে বরাতকে বলে 'বাত্তির রাইত'। বাত্তি মানে আলো। মনে হচ্ছে আজকে এই মহিমান্বিত রাতটাকে আল্লাহ নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছেন। পরের বছর বাত্তির রাইতে থাকবো কিনা জানি না। উপরে যিনি আছেন তিনি জানেন। আজকের বাত্তির রাইতটার উছিলায় যদি পৃৃথিবীর সকলে ক্ষমা পেয়ে যায় তবে কেমন হয়? আমার রব তো কখনো আমাদের নিরাশ করেন নি। তাঁরা কাছে এই চাওয়াটুকু বেশি কিছু না...
Copy from Muaz