04/10/2025
হবিগঞ্জ জেলার পরিচিতি :
🏞️ ভূমিকা
হবিগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেট বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, চা বাগান, গ্যাসক্ষেত্র এবং ঐতিহাসিক স্থানসমূহের জন্য এটি দেশ-বিদেশে পরিচিত। “হবিগঞ্জ” নামটি এসেছে “হবিবগঞ্জ” শব্দ থেকে — যেখানে স্থানীয় জমিদার নবাব হাবিবউল্লাহ খানের নামে এ নামকরণ হয়।
📍 ভৌগোলিক অবস্থান
• অবস্থান: সিলেট বিভাগের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে।
• ভূমির আয়তন: প্রায় ২,৬৩৬ বর্গকিলোমিটার।
• সীমানা:
• উত্তরে: সিলেট জেলা
• দক্ষিণে: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা
• পূর্বে: মৌলভীবাজার জেলা
• পশ্চিমে: কিশোরগঞ্জ জেলা
• নদী: খোয়াই, কালনী, কুশিয়ারা, সোনাই, সুতাং, ঘাঘটসহ বেশ কয়েকটি নদী প্রবাহিত।
• প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: জেলার দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশ সমতল ভূমি, উত্তর ও পূর্বাংশ চা-বাগানপূর্ণ পাহাড়ি টিলা অঞ্চল।
🏛️ প্রশাসনিক কাঠামো
• গঠিত: ১৯৮৪ সালে হবিগঞ্জ মহকুমা থেকে জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়।
• উপজেলা সংখ্যা: ৯টি
1. হবিগঞ্জ সদর
2. নবীগঞ্জ
3. বাহুবল
4. বানিয়াচং
5. আজমিরীগঞ্জ
6. লাখাই
7. চুনারুঘাট
8. মাধবপুর
9. শায়েস্তাগঞ্জ
• ইউনিয়ন সংখ্যা: ৭৭টি
• মহানগর / পৌরসভা: ৬টি (হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং, মাধবপুর, চুনারুঘাট)
🕰️ ইতিহাস
• ব্রিটিশ আমলে হবিগঞ্জ ছিল সিলেট জেলার অংশ।
• ১৮৯৩ সালে হবিগঞ্জ মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়।
• রেলওয়ে ও চা শিল্প: ১৯২০–৩০ দশকে রেলপথ নির্মাণের ফলে চা শিল্পের প্রসার ঘটে। হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ-বল্লা লাইন চা পরিবহনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
• বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ (১৯৭১): হবিগঞ্জে টেলিয়াপাড়া চা-বাগানে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহাসিক “টেলিয়াপাড়া সম্মেলন”, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার পরিকল্পনা করা হয়।
• মহান মুক্তিযুদ্ধে: হবিগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় মুক্তিবাহিনীর একাধিক ঘাঁটি ছিল।
🌾 অর্থনীতি
হবিগঞ্জের অর্থনীতি মূলত কৃষি, চা শিল্প ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ভরশীল।
প্রধান অর্থনৈতিক খাতসমূহ:
1. চা শিল্প:
• হবিগঞ্জে প্রায় ২৪টি বড় চা বাগান রয়েছে।
• সিলেট বিভাগের চা উৎপাদনের একটি বড় অংশ এখান থেকেই আসে।
• শ্রমিকদের মধ্যে সাঁওতাল, মুণ্ডা, ওরাঁওসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কাজ করেন।
2. গ্যাস ও শক্তি:
• বাংলাদেশের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র Bibiyana Gas Field এই জেলাতেই অবস্থিত।
• এছাড়াও Rashidpur ও Habiganj Gas Field গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
3. কৃষি:
• প্রধান ফসল: ধান, আখ, ডাল, শাকসবজি, ফলমূল।
• খোয়াই ও কালনী নদীর তীরবর্তী অঞ্চল উর্বর কৃষিজমি।
4. শিল্প ও ব্যবসা:
• ছোট ও মাঝারি শিল্প (চা প্রক্রিয়াকরণ, রাবার, কাঠ, হস্তশিল্প)।
• শহরাঞ্চলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বাড়ছে।
Q
🏫 শিক্ষা
• জেলার সাক্ষরতার হার: প্রায় ৭৩% (২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী)।
• উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:
• ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ
• হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
• হবিগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ
• মাধবপুর সরকারি কলেজ
• বাহুবল আদর্শ ডিগ্রি কলেজ
• বানিয়াচং সরকারি কলেজ
• টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
🕌 ধর্ম ও সংস্কৃতি
• জনসংখ্যা (২০২৫ আনুমানিক): প্রায় ২৫ লক্ষাধিক।
• ধর্ম: মুসলমান প্রায় ৮৩%, হিন্দু ১৫%, অন্যান্য ধর্ম ২%।
• সংস্কৃতি:
• লোকগান, জারি-সারি, পল্লীগীতি জনপ্রিয়।
• পিঠা উৎসব, চা শ্রমিকদের পার্বণ “কাতিক পুজা” ও “রাই বাঁধন” ঐতিহ্যের অংশ।
🌳 পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
হবিগঞ্জ জেলায় অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত ও ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে:
1. মাধবপুর লেক (চুনারুঘাট): চা-বাগানের ভেতরে অবস্থিত মনোরম প্রাকৃতিক হ্রদ।
2. রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য: দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক বনাঞ্চল; এখানে বানর, উলুক, ময়ূর ও নানা বিরল প্রাণীর দেখা মেলে।
3. টেলিয়াপাড়া চা-বাগান: ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ পরিকল্পনা কেন্দ্র।
4. লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের নিকটবর্তী এলাকা: বন্যপ্রাণ ও প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য স্বর্গ।
5. বানিয়াচং গ্রাম: দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম গ্রাম, প্রায় ২৫ বর্গকিমি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
6. রাজনগর দুর্গাবাড়ি ও মাধবপুর দিঘি: ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় স্থান।
🛣️ যোগাযোগ ব্যবস্থা
• সড়কপথ: ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর ও শায়েস্তাগঞ্জ অংশ জেলার যোগাযোগের কেন্দ্র।
• রেলপথ: শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নবীগঞ্জ—ঐতিহাসিক রেললাইন থাকলেও কিছু অংশ বর্তমানে বন্ধ।
• নদীপথ: কালনী ও খোয়াই নদী নৌযান চলাচলে ব্যবহৃত হয়।
⚙️ চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা
1. চা শ্রমিকদের জীবনমান ও ন্যায্য মজুরি সমস্যা।
2. বন্যা ও নদীভাঙন দক্ষিণাঞ্চলে প্রায়ই দেখা দেয়।
3. গ্যাসক্ষেত্র থেকে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা।
4. শহরাঞ্চলে যানজট ও পরিকল্পনাহীন নগরায়ন।