07/09/2023
বন্ধুর মৃতদেহ/লাশ নিয়ে এম্বুলেন্সে তার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। সময় কাটানোর জন্য মোবাইলটা বের করলাম। ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মোবাইলে একটা মেসেজ এলো। আমার সামনেই প্রিয় বন্ধু কফিনের মধ্যে লাশ হয়ে ঘুমিয়ে আছে।
মেসেজ করেছে অবন্তী। চেক করে দেখি নাম্বারে প্রায় ১০/১২ টা মেসেজ করেছে। সম্ভবত মেসেজ এর শব্দ সংখ্যার লিমিটের কারণে বারবার মেসেজ করেছে। আমি সবগুলো একসঙ্গে পড়লাম,
ফাহাদ...
আমাকে মাফ করে দিও৷ যে বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে কোনদিন কথা বলতে পারিনি। সেই বাবা যখন সেদিন অসহায়ের মতো আমার সামনে দুটো হাতজোড় করে কান্না করলো। তখন বাবার সেই ভালোবাসার কাছে তোমার আমার ভালোবাসা হার মেনে গেছে। আর তাই আজ ১১ দিন ধরে আমি অন্য মানুষের স্ত্রী। কথা দিয়েছিলাম জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকবো। আমার সবসময় ভয় হতো তুমি হয়তো আমাকে কষ্ট দেবে। হয়তো আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবে। অথচ দেখো, আমি নিজেই তোমাকে কষ্ট দিলাম। আমি নিজেই তোমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলাম। জীবন অদ্ভুত তাই না?
তোমার কি মনে আছে, যখনই আমি কাঁদতে কাঁদতে তোমাকে বলতাম
" আমাকে ছেড়ে যাবে না তো কোনদিন? "
তুমি হাসতে হাসতে বলতে, " আমি কোনদিন যাবো না অবন্তী, কিন্তু তুমি হয়তো চলে যাবে। "
তখন আমি রাগ করতাম। কারণ আমি তো তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসতাম। তুমি নেই এরকম একটা পৃথিবী আমি কল্পনা করতে পারতাম না। অথচ আজ অন্য কেউ আমার স্বামী। রোজ তার সাথে আমাকে ঘুমাতে হয়। সকাল বেলা চোখ মেলে তাকিয়ে তার মুখটাই দেখতে হয়।
মানুষের জীবন এমন কেন?
যে যাকে চায়,
যদি তাকে পায়,
প্রকৃতির তাতে কি আসে যায়?
কেন প্রকৃতি তাদের কদায়?
হুট করেই সবকিছু ঠিকঠাক হয়েছিল। আমি তাই ইচ্ছে করেই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছি। নাম্বারটা বন্ধ করলাম। বিয়ের দিন ভাইয়ার মোবাইল ফেসবুকের আইডি ডিলিট করলাম। তুমি কষ্ট পেয়েছ জানি, যার সঙ্গে সারাজীবন সুখে দুঃখে কাটাবো ভেবেছিলাম। তাকেই কষ্ট দিলাম।
আমার পরিবারে সবাই খুব খুশি। আমার স্বামী মানুষটাও খুব ভালো। এখন পর্যন্ত ভালোই মনে হচ্ছে আমার কাছে। ভবিষ্যতে কি হবে জানি না।
তোমার কি আমাদের সেই প্রথম দেখা করার কথা মনে আছে? সেটাই প্রথম ছিল, আর ওটাই যে শেষ দেখা হবে কোনদিন তো ভাবিনি। আসলে মানুষের চিন্তার বাহিরেও তো কতকিছু ঘটে তাই না। সেদিন তোমার সাথে তিন ঘন্টা ছিলাম তাই না? অথচ তিন ঘন্টার মধ্যে আমরা কেউ কাউকে স্পর্শ করলাম না।