31/05/2025
আল্লামা আবদুল মান্নান রাহ.র" #স্মৃতি কথা।
সমকালীন সময়ে উত্তর সিলেটের অন্যতম ইসলামী ব্যক্তিত্ব ছিলেন আল্লামা আব্দুল মান্নান নন্দির গাঁও হুজুর রহ.।বিখ্যাত এই আলেমে দ্বীন ব্যক্তিগত ভাবে ছিলেন নির্লোভ, নিঃঅহংকার, প্রচার বিমোখ সাদামাটা একজন মানুষ।০৩মুহারম ১২ আগষ্ট বৃহঃবার সকাল ৭ঃ৩০
ঘটিকার সময় নিজ বাসগৃহে ইহকাল ত্যাগ করেন। হযরতের মৃত্যকালে বয়স ছিল সত্তর ছুইছুই।
হযরতের জন্মঃ ৬ মার্চ ১৯৫১খ্রিষ্টাব্দে। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার ৭নং নন্দির গাওঁ ইউনিয়নের মানাউরা গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তার পিতাঃহাজী মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী,বিন শেখ মামন আলী,বিন শেখ গোলাল। এবং মাতাঃমোছাম্মাৎ আমিনা বিবি।তার পিতা ছিলেন তৎকালীন একজন ইউপি সদস্য।
উলেখ্য তার পিতা ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ সামাজিক ও আলেম ভক্ত মানুষ, সততা ও ন্যায়পরায়নতা ছিল অবিশ্বাস্য! ফলে তার পিতার ইন্তেকালের অনেক দিন অতিবািহিত হওয়ার পরও লোকমুখে তার কথা শ্রদ্বাভরে বলতে শুনা যায়।তিনি মেম্বার হাজী নামে ছিলেন বেশ পরিচিত। অনেক সময় লোকজন নীতিগত কথা বলতে গিয়ে মেম্বার হাজী সাহেবের কথাকে দৃষ্টান্ত সরুপ গ্রহণ করে থাকেন।
তার সততা এমনই ছিল যে, গভর্মেন্ট থেকে ত্রান হিসেবে চাল,গম ইত্যাদি আসলে এতই সতর্কতা অবলম্বন করতেন যে দু চারটি শষ্য দানা পড়ে গেলে সেগুলোকে ও কুড়িয়ে ফের বস্তায় রাখতেন
এবং মানুষের মধ্যে তা বিলিয়ে দিতেন। আমানত দারির ব্যপারে ছিলেন একজন বিরল মানুষ!
লোকজন এখনো বলে থাকেন, একবার মেম্বার হাজী সাহেব অর্থাৎ আমার দাদা সাহেবের ঘর লুট হয়।তখন তিনি মসজিদের আমানতদার মুতাওল্লী ও বটে!
ডাকাত দল তার ব্যক্তিগত টাকা, পয়সা ও মসজিদের ক্যাশ হাতিয়ে নিয়ে যায়।
তখন তাকে গ্রাম্য পাঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মসজিদের টাকা দিতে হবেনা বলে তাকে জানানো হয়।তিনি তা পত্যাখান করে বলেন আমার ঘর থেকে আপনাদের আমানত খুয়েছে, এটা আমার গাফলতি! সমুদয় টাকা মসজিদের ফেরত দেন।
আব্দুল মন্নান রাহঃ র' শিক্ষা জীবনঃ
যার সুচনা হয় মহিয়িষী মাতা আমেনা বেগমের কাছ থেকে। ধর্মীয় মৌলিক শিক্ষা তার মায়ের কাছ থেকেই সম্পন্ন হয়।তার মা ছিলেন একজন বিচক্ষণ, ধার্মিক ,পর্দানিশীন, জাহিদাহ মহিলা।
উল্লেখ্য সেই মহিয়িষী মায়ের সবচেয়ে বিরল একটি গুন ছিল। যা অন্যের মধ্যে পাওয়া বড়ই দুস্কর! যে তিনি সক্ষম ছিলেন তার নিজের সকল সন্তানাদিকে সহিহ শুদ্ধ ভাবে কোরান ও ইসলামের মৌলিক শিক্ষা প্রদানে।মাসনুন দোয়া সমুহ পালনে ছিলেন বড়ই পাবন্দ!যা অনেক সময় বহু আলেমদের ও পাওয়া বড় কষ্টের!
এমনি ভাবে সেই মহিয়িষী নারীর পাঠ দক্ষতা ছিল এমন যে, তার চার ছেলের ওদুই মেয়ের ঔরসে প্রায় সকল নাতি নাতিনকে তিনিই কোরান শিক্ষা দেন। ফলে যেতে হয়নি কাউকে মসজিদে বা ভিন্ন কোন মক্তবে!!
এমনি ভাবে মহিয়িষী সেই দাদির শাসন ছিল অবিশ্বাস্য মৃদু কঠোর! স্বাভাবিক ভাবে আমরা দেখতে পাই নাতি নাতিনদের সম্পর্ক দাদা এবং দাদির সাথে হয়,কেবল হাসি খুশি আড্ডা ও রস গল্পের! দূর্ভাগ্য দাদাকে দেখার মত সুযোগ আমাদের হয় নাই।কেননা তখনও আব্বা রাহ. ছিলেন মাদ্রাসার ছাত্র!
আলহামদুলিল্লাহ দাদিকে খুব কাছ থেকেই জীবনের শেষ পর্যন্ত খেদমত ও দেখার সুভাগ্য হয়েছে।
তবে আমরা চার ভাই দু বোন কোরান শিখি সম্পূর্ণ আব্বা রহঃ র কাছে। বাকি সকল চাচাতো ভাই বোনেরা গৃহশিক্ষক দাদির কাছে কোরান শিখেন।
আজ তিনি আছেন পরপারে! দোয়া করি তার জন্য প্রাণ খুলে হর হামেশা!!
আহঃ!স্বরণ পড়ে তার মৃদু কঠোর শাসনের কথা। যা আজ-কালের ছেলে মেয়েরা নিজ শিক্ষকেই এতটুকু সমীহ করছেনা। খেলা ধুলার সময় তিনি করে দিতেন, বাদ আসর অন্য সময় নয়।
এর বাহিরে খেলা টা ছিল সম্পুর্ন গোপনীয়তার সাথে! যদি দেখে ফেলেন বিচার কার্জ্য হত শিক্ষকদের মত।
আহ!কি যে মিস করছি সেই দাদিকে!
আব্বা রাহঃ র' মাতা আমেনা বেগম ছিলেন দৃঢ় চিত্তের অধিকারী ও বটে! মনোবল ও সাহস হারাতেন না কখনো। রেজা বিল ক্বাজা উপর ছিল পূর্ণ তুষ্টি।একবার আব্বা রাহঃ র আপন বড় ভাই মাওঃ আব্দুল লতিফ রাহঃ ২০০৬ সালে ইন্তেকাল করেন। মা শাল্লা তখন দাদি সুস্হ ও ভালো।
উল্লোখ্য আব্বা রাহ.র' বড় ভাই মাওঃ আব্দুল লতিফ রাহঃ সাহেব ও ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বিদ্বগ্ধ আলেমদ্বীন। তিনি গোয়াইন ঘাট থানাধীন পুর্ব সিলেট আযাদ দ্বীনি এদারার অন্যতম সু প্রতিষ্টিত
জামিয়া ইসলামিয়া তোয়াকুল মাদ্রাসার আমৃত্য অন্যতম সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন। আল্লামা নুরুল ইসলাম তোয়াকুলি রাহঃ সহচর ও অত্যন্ত আস্তাবাজন পরামর্শের লোক ছিলেন।
একদিকে তিনি ছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষক, অন্যদিকে এলাকার একজন সালিশ নিঃস্পত্তির নির্ভরযোগ্য বিচারক। আবার যে কোন বাতিল শক্তি রোদে ছিলেন বজ্র কঠোর। এলাকার যে কোন দুঃসময়ে এগিয়ে যেতেন নির্ভিগ্নে!
যাক তার ইন্তেকালে মরহুমের মাতা আমেনা বেগম দৃঢ়ভাবে নিজেকে এমন ভাবে সামলিয়ে রাখলেন, যা আমাদের এলাকার বিদ্বগ্ধ আলেমে দ্বীন, শায়খুল হাদীস শামসুল ইসলাম পাইকরাজি হুজুর দা.বা. দেখে আশ্চর্য বোধ করেন! এমন কি তাকে রিতীমত ভাবিয়ে তুলেছিল!
বিধায় এ ঘটনাটাকে বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজ মাহফিলে মহিলাদের উদ্দেশ্য প্রায়ই নাসিহতের জন্য বলে থাকেন, যা একাধিক বার আমার নিজ কানে শুনা হয়েছে! বোকাউল মায়্যিতের মাসআলায় তিনি এই নজির পেশ করেন,যে আমার বড় চাচা আবদুল লতিফ রাহ.র' ইন্তেকালে গোসলের কাজ সম্পাদনের পর নিজ ছেলেকে শেষ বারের মতো দেখার ইচ্ছে করেন, সেই মহিয়ীষি নারী,আমার দাদি।সচরাচর এই হালতে মায়েদের অবস্থা স্বাভাবিক থাকেনা আমরা দেখি!
বিচলিত হয়ে পর্দা পুশিদার ও তেমন খেয়াল রাখতে পারেননা!
কিন্তু সেই বান্দির ঘটনা ভিন্ন রকম!সম্পুর্ণ নিজেকে গুটিয়ে পূর্ণ পর্দার সহিত ছেলেকে শেষবারের মতো দেখবেন। কোরআনে কারীমের সেই আয়াত (কুল্লু নাফসিন যা ইক্বাতুল মাওত ও ইন্নমা তুওয়াফ্ফাওনা উজুরাকুম
ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি ফামান জুহজিহা আনিন নারি ওউদ খিলাল জান্নতা ফাক্বাদ ফাজ) এ পর্যন্ত
ধীরস্তির ভাবে তিলাওয়াত করে এ কথা বলতে বলতে দেখেন, যাও বাবা (তোমারে আল্লার হাওয়ালা খরলাম। কথা আছিল আমারে আগে যাওয়ার। তুমি আগে গেলায়গি। দোয়া খরমু তোমা লাগি!!)
তিনিই হচ্চেন আল্লামা আবদুল মান্নান রাহ. র' ইসলামের মৌলিক শিক্ষার গুরুজন।
পরে নন্দির গাঁও সরকারী প্রাঃ বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা কৃতিত্বের সাথে সমপন্ন করেন। তারপর চলে যান, গোলাপ গন্জ থানার বাঘা মাদ্রাসায় মুতাওয়াসসিতাহ ১ম বর্ষে ভর্তি হন। সেখানে প্রায় চার বছর পড়ালেখা করে আলিয়া আওয়াল পর্যন্ত সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপিঠ রানাপিং মাদ্রাসায় আলিয়া ২য় বর্ষে ভর্তি হন।তাতে জালালাইন ক্লাস পর্যন্ত পড়েন। তারপর উচ্চতর ডিগ্রি লাভের জন্য চলে যান আল্লামা বায়মপুরী রাহ.র' দ্বীনি মারকাজ দারুলউলুম কানাইঘাট মাদ্রাসায় ভর্তি হন।
সেখানে সর্ব উচ্চতর ডিগ্রি তাকমিল ফিল হাদীস পর্যন্ত অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে, ১৩৮৪ বঙ্গাব্দে পূর্ব সিলেট আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তা'লীম বাংলাদেশ বোর্ডে পরীক্ষা দিয়ে নাম্বার ওয়ান হন।
তিনি ছাত্র জামানায় ছিলেন অত্যন্ত বা আদব ও জি আখলাক্ব।যা তার অনেক উস্তাদ,সহপাঠীদের মুখ থেকে নিশৃত! আমাকেও শুনার সুযােগ হয়েছে
তার জীবনের অনেক গল্পগুচ্চ!!
আব্বা রাহঃ র' কর্ম জীবনঃ
কর্ম জীবনের গোড়ায় রয়েছে চমকদার কিছু কথা!
তখনও তিনি দাওরা পাশ করেননি।জামেয়া ইসলামিয়া তোয়াকুল মাদ্রাসা কতৃপক্ষ আব্বা রাহঃ র' কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েই ফেলেছিলেন, যে তাদের ওখানে দাওরা পাঁশ করে চলে যাবেন!
এমনকি ঠিকমতো যোগাযোগ ও রাখা হয়েছিল,তাদের তরফ থেকে।
ওপর দিকে পূর্ব সিলেটের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপিট জামেয়া মুশাহিদিয়া খাগাইল কোম্পানিগন্জ মাদ্রাসা কতৃপক্ষ,যেখানে আল্লামা বায়মপুরী রাহঃ র' ছিল আত্মার সম্পর্ক। তাদের প্রতিষ্টানে নেওয়ার জন্য চলল জুর তদ্বির!
অৎপেতে যেন তারা অপেক্ষা করছেন! কবে হবে তার লেখাপড়ার ইতি!
তারা খবর রাখছেন, হর হামেশা। কবে বাড়ি ফিরছেন, পরীক্ষা শেষ করছেন এর প্রতিক্ষায়।
কারণ, তখন তো আর ছিলনা মোবাইল বা তার যোগাযোগ।এমনকি রাস্তাঘাটের ও ছিলনা তেমন কোন ভাল ব্যাবস্হা। সালুটিকর বাজারের চেংগের খাল নদীর উপর ও ছিলনা কোন সেতু!
নদী পারাপার ব্যবস্হা ছিল, খেয়া নৌকা, বা ফেরি।
যাক! এমনি করে তার উলুমে নাবওয়িয়ার দারসি নেযাম শেষ করে, কানাইঘাট থেকে বাড়ী ফিরছেন। সালুটিকর বাজার পর্যন্ত কোন রকম পৌঁছেন! সাথে কিতাব ও বিছানা পত্র তো আছেই। এমনি করে প্রহরীর মত দাঁড়িয়ে আছেন! পূর্ব সিলেটের কিংবদন্তি শায়খ আল্লামা আব্দুল মান্নান দলইরগামী রাহঃ ও তখনকার জামেয়া মুশাহিদিয়ার নাজিমে তা' লীমাত আল্লামা আব্দুল মতিন দা. বা. র' মত বিদ্বান আলেমদ্বয়! তাকে রিসিভ করবার জন্য!তিনি হতবাক!!
আব্বা রাহঃ বাড়ি আসবেন, তারা বলেন আমাদের সাথে চলেন। আপনি আগামী কাল বাড়ি যাবেন!! এই বলে জোর করে নিয়ে যান তাদের মাদ্রাসায়। তখন রাত হয়ে গেল! ভালো মেহমানদারি করে আরাম করার সুযোগ করে দিলেন। রাত পেরুলো কোন রকম। দিন আসলে কথা শুরু হয়ে গেল। আমরা আপনাকে মাদ্রাসায় খেদমতের জন্য এনেছি। আপনাকে ঘন্টা দিচ্ছি, এগুলি করেন তারপর বাড়ি যান! এ দিকে আব্বা রাহঃ ও তাদের এই ভালোবাসার উপর কথা রাখতে পারছিলেননা।
কারণ দুনুজনই ছিলেন তার উপর দাবি রাখার মতো মানুষ।
ওপর দিকে তোয়াকুল মাদ্রাসা কতৃপক্ষ ও অপেক্ষমাণ। তাদের সেই দাবিকে কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। কি আর করা একটা ক্ষোভ থেকেই গিয়েছিল তাদের মনে!
শায়খদ্বয়ের পিড়াপিড়িতে ১৩৮৪ বঙ্গাব্দে জামেয়া মুশাহিদিয়া খাগাইল, কোম্পানিগন্জ, মাদ্রাসায় আত্মনিয়োগ করে ফেলেন তাতে।সেখানে তিনি টানা পাঁচ বৎসর ১৩৮৯ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে ইলমে দ্বীনের খেদমত আঞ্জাম দেন।অতপর ১৩৯০ বঙাব্দেই বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ, ও প্রতিতযশা আলেমে দ্বীন শায়খ ইসহাক রাহঃ র' সান্নিধ্যে লাভের জন্য কানাইঘাট রাজাগঞ্জ মাদ্রসায় ফের দাওরায়ে হাদিসে ভর্তি হন।
অতঃপর পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করলে বাংলাদশ বেফাক বোর্ডে কৃতিত্বের সাথে বৃত্তি পেয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৩৯১ বঙ্গাব্দে জামেয়া মুশাহিদিয়া ক্বাসিমুল উলুম খাগাইল মাদ্রাসা কতৃপক্ষের পিড়াপিড়িতে পুনরায় সেখানে ফিরে আসেন।
উল্লেখ্য একটি জিনিস পরিলক্ষিত হল আব্বা রাহঃ র' ইলম অন্বেষণে ছিলেন একজন বিরল মানুষ। তার মধ্যে ইলমের হিরস ছিল অতুলনীয়। যা একদিন শায়খ আলিম উদ্দীন দূর্লভপুরী দা.বা.ও তার একান্ত শায়খ আল্লামা ইসহাক রাহঃ সহ অনেক সহপাঠীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ত্যাগের বর্ণনা শুনতে পাওয়া যায়।
যাক! পরবর্তীতে জামেয়া মুশাহিদিয়া খাগাইল মাদ্রাসায় টানা ১৫ বছর, অত্যন্ত দক্ষতা ওপ্রাজ্ঞতার সাথে দ্বীনি ইলমের খেদমত আঞ্জাম দেন।সেখানে তারই একজন শিষ্য, সাবেক মুহতামিম মাওলানা মুজিবুর রহমান সাহেব মহিষ খেড়ী হুজুর দা.বা.বলেন, হুজুর আমাদেরকে এখানে মওকুফ আলাইহি যত কিতাব আছে আমরা তার কাছেই পড়ার সুভাগ্য অর্জন করি।
তার মধ্যে অন্যতম হল মুসলিম শরীফ,তাফসিরে বায়জাবী,মুখতাসারাল মা'নী, হিদায়া,সুল্লাম,কাফিয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ কিতাব সমুহ।
যাক!সেখানেও তার অগনিত ছাত্র,মুহিব্বিন, মুতাআল্লিকিন রয়েছেন।যারা তাকে মনে প্রাণে ভালো বাসতেন।ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম হলেন শায়খুল হাদীস আতাউর রাহমান কোম্পানীগন্জি,
যিনি সিলেট নয়াসড়ক মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস পদে হাদিসের খেদমত করে যাচ্ছেন। মাওলানা মুজিবুর রাহমান মহিষখেড়ী, যিনি মুশাহিদিয়া খাগাইল মাদ্রাসার মুহতামিমের দায়িত্বে ছিলেন দ্বীর্ঘদিন। মাওলানা আব্দুল গণি যিনি দারুল হাদিস দলইর গাঁও টাইটেল মাদ্রাসায় মুহাদ্দিস পদে হাদিসের দরস দিচ্ছেন,মাওলানা ইব্রাহিম আলী সাহেব যিনি আজ জামেয়া মাহমুদিয়া সোবহানীঘাট মাদ্রাসায় বহু দিন যাবত দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছেন। মাওলানা আজির উদ্দিন, মাওঃসুহেল,মাওঃ তাহির উদ্দীন সাহেব সহ অগণিত তালামিজিন রয়েছেন।এমনি ভাবে তার অনেক ভক্ত,অনুরাগী,মুহিব্বিন, মুতাআল্লিক্বিন ও রয়েছেন।
যাক!তিনি মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় মসজিদের ইমামতি ও খেতাবতের দায়িত্ব পালন করেন। তন্মধ্যে সালুটিকর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কিছু দিন খেতাবতের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম জনাব এম.তৈয়বুর রহমান সাহেবের গ্রাম পূর্ণ ছগাও জামে মসজিদে অনেক দিন, দরাকুল জামে মসজিদে এবং নওয়াগাও জামে মসজিদ সমুহে ইমামতি ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেন।
তখন ছিল আমাদের এলাকায় পায়ের যুগ! গাড়ি ঘোড়ার তেমন ব্যবস্তা ছিলনা! পায়ে হেঁটে যেতে হত ,তিন চার কিলোমিটার রাস্তা। এভাবেই কাটে তার শিক্ষকতার এই দাপ।অতপর আমরা ভাই বোন যখন বড় হতে লাগলাম, তিনি আমাদেরকে কুরআন পড়ানোর জন্য ছেড়ে দেন মসজিদের চাকরি। কেননা মসজিদ থাকলে আমাদেরকে পড়াতে পারবেননা। তাই রোজ বাড়ি থেকে প্রায় চার কিলোমিটারের মত পথ অতিক্রম করে মাদ্রাসার দায়িত্ব পালন করতেন। ফলে আমরা চার ভাই দু বোনের মসজিদে বা মক্তবে যেতে হয়নি কোরআন শিখতে। সম্পুর্ণ তার কাছেই আমরা শিখি।
জামেয়া মুশাহিদিয়া খাগাইল মাদ্রাসা র শিক্ষক ছিলেন আমাদের গ্রামের আব্বা রাহঃ সহ মোট তিন জন।আল্লামা আব্দুল মতিন দা.বা.,মাষ্টার নুরুল হক সাহেব রাহঃ। আহ! কি মজাদার এ তিনটি জুটি ছিল! যাদের তারণ্য ওযৌবন কাল প্রায় কাটিয়ে দেন এক সাথে।সকাল হলে একসাথে রওয়ানা, বিকাল হলে আবার একসাথে বাড়ী ফিরা! এ চিত্র যেন আজও চুখে ভেসে ওঠে।
মাষ্টার নুরুল হক সাহেব! আহ! তার মেধা ও স্মৃতি শক্তি এতই প্রখর ছিল। যে,বর্তমান সময়ের অনেক আলেম রা তার কাছে খেই হারিয়ে যাবে।তিনি আব্বা রাহঃ ও বিদ্বান আলেমে দ্বীন মাওঃ আব্দুল মতিন সাহেব দা.বা.র' সাথে একসাথে চলাফেরাও উঠাবসার দ্বারা এমন হয়েছিল, দুর থেকে কেউ কথা বল্লে বুঝা যেতনা যে তিনি একজন মাষ্টার মানুষ!
মাসআলা মাসাইলে মনে হত যেন একজন দক্ষ আলেম।কিতাবাদির রেফারেন্স আরবীতে প্রয়োগ করে মাসআলা বলে ফেলতেন।যাকে আমি দাদা বলে ডকতাম!তার এই অর্জন ছিল এই দুটি মানুষের সাথে চলাফেরা করা।
আহ! এই মানুষটা আজ ঐপারে।দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে জন্নাতি পোশাকে আবৃত করে, জান্নাতের উচু মাক্বাম দান করেন।
অপরজন ছিলেন। আমাদের এলাকার উজ্জ্বল নক্ষত্র মাওলানা আব্দুল মতিন সাহেব দা.বা.।
তিনি ছিলেন মুশাহিদিয়া খাগাইল মাদ্রাসার তা'লীমাতের দায়িত্বে। যার স্মৃতি শক্তি এতই প্রখর!
আসহাবুর রিজাল সম্পর্কে কেউ জানতে চাইলে চমৎকার করে তিনি বলে দিতে পারতেন।মাসআলা মাসায়েল সম্পর্কে তার দক্ষতা অপরিসীম। জীবনের পুরোটা অংশ একই প্রতিষ্ঠানে কাটিয়ে দেন। মাত্র কয়েক বছর ছাড়া।
আহ! এই মানুষটি ও আর বেশী ভালো নেই। বয়সের ভার, ডায়বেটিস, পেশার সহ অনেক রোগ কাবু করে ফেলেছে। বিধায় এখন বাড়িতে অবসরে সময় পার করছেন।আমাদের জন্য এ ছায়াটি বটবৃক্ষ! দোয়া করি এ ছায়াটি হোক দ্বীর্ঘক্ষন আমাদের জন্য।
যাক এই ভাবে আব্বা রাহঃ র' প্রায় বিশ বছর অতিবাহিত করেন।অতপর ১৯৯৭ খৃষ্টাব্দে প্রথিতযশা আলেমে দ্বীন তার একান্ত হর লাইনের মুরব্বী আল্লামা শায়খ ইসহাক রাহঃ র' নিয়ে যান তার কাছে, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপিট জামেয়া মাদানিয়া কাজির বাজার মাদ্রাসায়। সেখানে তিনি মুহাদ্দিস পদে আত্মনিয়োগ করেন।
উল্লেখ্য আব্বা রাহঃ ছিলেন, আল্লামা ইসহাক রাহঃ র'একান্ত মহব্বতের আস্থাবাজন এক শিষ্য।
এমনি ভাবে তার উস্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, কানাইঘাট দারুল উলুমের শায়খুল হাদীস আল্লামা শাহরুল্লাহ সাহেব (চটির মেসাব)রাহঃ,আল্লামা ফয়জুল বারি (মহিষপুরী) রাহঃ আল্লামা আব্দুল লতিফ (চাউরী) রাহঃ যাকে বলা হত জীবন্ত লাইব্রেরী! আহ! তারা আছেন আজ পরপারে জান্নাতের মেহমান হয়ে!
আলহামদুলিল্লাহ! যারা আজও বেচে থেকে দ্বীনের খেদমত করে যাচ্ছেন অনায়াসে!আল্লামা ইদ্রিস লক্ষীপুরি,আল্লামা আলীমউদ্দিন দূৃর্লভপুরী, আল্লামা নাজির হুসাইন ঝিঙ্গাবাড়ি সাহেবের মত বিদ্বান আলেম জন। দোয়া করি এই মহা মনিষী গণের দ্বীর্ঘ নেক হায়াতের জন্য।
১৯৯৭ সালে জামেয়া মাদানিয়া কাজির বাজার মাদ্রাসায় আত্মনিয়োগ করে হাদিস, তাফসির, ফিক্বাহ, আক্বাঈদ,মানতিক ও ফুনুনাতের গুরুত্বপূর্ণ কিতাব সমুহ দরস
প্রধান করেন।তার প্রায় কিতাবের ইবারতই মুখস্ত ছিল।ইবারত পাটে ছিলেন অদ্বিতীয় এক ব্যক্তি!
ছাত্রদের সাথে তার ব্যবহার ছিল একদম নরম, কেউ তার মনের কথা বলতে করতনা কোন রকম ইতস্ততা।রম্য রসে কথা হত সারাক্ষণ। আবার কথার মধ্যে ছিলনা কোন রকমের কিত্রিমতা বা ছলনা।
সহজ সরল ভাবে বুঝাতে সক্ষম ছিলেন কিতাবের ইবারত ও মতন।
যাক ২০০০ সালে সিলেট সাগর দিঘির পার জামে মসজিদে প্রায় দুই বছর খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তিতে ২০০২ সালে মাদ্রাসার দরস ও তাদরিসের পাশাপাশি,সিলেট তালতলাস্হ বায়তুল মামুন জামে মসজিদের ইমামও খেতাবতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।সেখানে টানা ১৬ বৎসর মসজিদের খেদমতের দায়িত্ব আন্জাম দেন।এ ভাবেই চালিয়ে যান দুনু প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিরলসভাবে।
২০১৯ সালের মাত্র একমাস ছয় দিন বাকি ২৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে অসুস্থ হয়ে পড়েন।আলহামদুলিল্লাহ এর পুর্বে কখনো তিনি এরকম অসুস্থ হন নাই। যে মাদ্রাসা বা মসজিদের দায়িত্ব পালনে ছুটি কাটতে হয়েছে। আব্বা রাহঃ বুঝতে সক্ষম ছিলেন, বিদায় প্রায়ই আমাকে বলতেন, (আব্বা)!এটাই হচ্ছে আমার মরজুল মাওত!বিদায় আমাকে বেশী করে দোয়া করবে,ঈমানের হালতে যেন দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারি! এই মর্মে বলে প্রায়ই আরবী ফারসি অনেক শের পাঠ করেতে করেত কান্না করতেন! আব্বা রাহঃ র' একটা অভ্যাস ছিল আমাদেরকে অতন্ত্য মুহাব্বতের সুরে আব্বা বলেই ডাকতেন!নাম ধরে খুবই কম সময় সম্বোধন করতেন!
আহ!আজ অনেক দিন হতে লাগল শুনতে পাচ্ছিনা সেই মায়াবী ডাকের সুর! আব্বা!!
৩ মহররম ১২ ই আগষ্ট রোজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটের আমরা চার ভাই, দু বোন সহ অসংখ্য অগণিত ভক্ত, মুহিব্বিন,তালামিজিনকে শোক সাগরে ভাসিয়ে, মাওলায়ে হাক্বিক্বীর সাথে মোলাকাত করেন।এবং দিকবিদিক থেকে ছুটে আসা বহুসংখ্যক মানুষের সমাগমে জনাজা সম্পন্ন করে,নিজ বাড়ীর আঙিনায়ই তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।তিনি তার জীবনের বড় পুঁজি মনে করতেন এবং বলতেন।রেখে যাওয়া সব দেশ বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তালামিজিন!!তাঁরা যখন হাত উঁচিয়ে মাবুদের কাছে দোয়া করবে, তাদের মা বাবার জন্য,আমরাও হব তার অংশী!এটাই হবে আমার জীবনের বড় পাথেয় ও প্রাপ্তি!! এই কথা গুলি প্রায়ই বলতেন, যে কারও সাথে।দোয়া করি,মাবুদ! তোমার এই নেক বান্দাকে জান্নাতের উচু মাকামের মেহমান হিসেবে কবুল কর। আর তার ফায়েজ দিয়ে আমাদেরকে ফায়জিয়াব রাখো। আমীন।
মাওলানা মুহাম্মাদ মহিউদ্দিন
৷৷ তার রেখে যাওয়া অধম!
-----------------------------
#আলোকিত #নন্দিরগাঁও #ডটকম
#আলোকিতনন্দিরগাঁওডটকম
#ষষ্ঠবর্ষ #পূর্তি #অনলাইন #সংখ্যা
~~ #আমারগাঁও_আমারভাবনা ~~
:https://www.facebook.com/share/g/16itzzoEUT/
---------------------------------