05/08/2025
রেশমার সেই ছোট্ট মেয়ে মিষ্টি আজ একজন উজ্জ্বল মেডিকেল ছাত্র।
মা তাকে বড় করেছে অমানবিক কষ্ট, অপমান, এবং ঘাম ঝরানো পরিশ্রমে।
কিন্তু মিষ্টি কখনো ভুলেনি—তার মাকে কেন ঘর ছাড়তে হয়েছিল।
---
🌧️ মায়ের কষ্টের স্মৃতি
শীতের এক রাতে, জানালার পাশে বসে মিষ্টি বলল,
“মা, তুমি এত কষ্ট সহ্য করলে কেন? পালিয়ে গেলে, কিন্তু লড়লে না কেন?”
রেশমার চোখে অশ্রু জমল।
“লড়াই করতে শক্তি চাই, মিষ্টি… আর আমি ছিলাম একা।
কিন্তু আমি চেয়েছিলাম তুমি যেন শক্তি পাও, যাতে তুমিই সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াও।”
মিষ্টি মায়ের হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করল—
“মা, আমি প্রতিটি মায়ের জন্য লড়ব, যারা কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য অপমানিত হয়।”
---
🏚️ পুরনো বাড়ির কান্না
এদিকে রেশমার শ্বশুরবাড়ি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে।
আনিসের দ্বিতীয় স্ত্রী শান্তা তাকে ছেড়ে চলে গেছে, কারণ আনিস আবারও একটি মেয়ে সন্তানের বাবা হয়েছে।
শ্বশুর শাহ আলম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, শাশুড়ি জাহানারার চোখে অনুশোচনা স্পষ্ট।
রনি একমাত্র সন্তান হিসেবে সবকিছু সামলাচ্ছে, কিন্তু পরিবারের মর্যাদা মাটিতে।
একদিন রনি লুকিয়ে রেশমাকে খুঁজে বের করল।
“ভাবি, ভাইয়া… ভাইয়া মারা যাচ্ছে… শেষবারের মতো তোমার সাথে দেখা করতে চায়।”
---
🕯️ মুখোমুখি ১৮ বছর পর
রেশমা বহু বছর পর সেই বাড়িতে ফিরে এল।
পুরনো দেয়াল, উঠানের ধুলা, সবকিছুই যেন অতীতের ব্যথা মনে করিয়ে দিল।
আনিস শয্যাশায়ী, কাঁপা কণ্ঠে বলল—
“রেশমা… আমি তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি।
মেয়ে জন্মানোর জন্য তোমাকে দোষ দিয়েছি… অথচ আজ বুঝছি, দোষ আমার।
তুমি যদি পারো… আমাকে ক্ষমা করো…”
রেশমার চোখে পানি জমল।
কিন্তু সে চুপ থাকল।
হঠাৎ মিষ্টি এগিয়ে এসে বলল—
“বাবা, মা তোমাকে ক্ষমা করবে কি না জানি না…
কিন্তু আমি তোমাকে ক্ষমা করব না, যতক্ষণ না তুমি স্বীকার করছ
যে কন্যা সন্তান আশীর্বাদ, অভিশাপ নয়।”
আনিস কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় করল,
“হ্যাঁ মিষ্টি… আমি ভুল করেছি। তোমরা আমার গর্ব।”
---
⚡ সমাজের সামনে সত্য
মিষ্টি সেই ঘটনার পর স্থানীয় পত্রিকায় নিজের গল্প শেয়ার করল।
“একজন মেয়ে জন্মালেই পরিবার ভেঙে যায়—এমনটা কেন হবে?
আমার মা প্রমাণ করেছেন, মেয়ে চাইলে পুরুষের থেকেও বড় মর্যাদা আনতে পারে।”
পুরো গ্রামে ঝড় উঠল।
মানুষ বুঝতে শুরু করল—তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
---
🌟 গল্পের মোড়
যখন মনে হচ্ছিল সবকিছু স্বাভাবিক হতে চলেছে,
ঠিক তখনই খবর এলো—
রেশমার শ্বশুর শাহ আলম তার সমস্ত সম্পত্তি মিষ্টির নামে লিখে দিয়েছে।
রেশমা হতবাক হয়ে বলল,
“এটা কেন?”
শাহ আলম কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমার অন্যায় তোমাদের জীবনের ১৮ বছর কেড়ে নিয়েছে।
এখন আমার শেষ ইচ্ছা—মিষ্টি যেন এই সম্পত্তি ব্যবহার করে অন্য মায়েদের বাঁচাতে পারে।”
মিষ্টি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল—
“মা, এটা আমাদের সুযোগ… আমরা একটা আশ্রয় গড়ব,
যেখানে কোনো মা মেয়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য অপমানিত হবে না।”
রেশমা মিষ্টিকে বুকে টেনে নিল।
এবার তার চোখের জল দুঃখের নয়—এটা গর্বের, বিজয়ের।
---
📖 শিক্ষনীয় বার্তা
👉 সমাজ যতদিন না মেয়ে ও ছেলেকে সমান মর্যাদা দেবে,
ততদিন প্রতিটি রেশমাকে ঘর ছাড়তে হবে।
কিন্তু আজকের মিষ্টিরা সেই সমাজ বদলে দেবে।
🕊️ (চলবে – পার্ট ৩-এ দেখুন কিভাবে মিষ্টি একটি বিপ্লব তৈরি করে…)