Choto Dairy 01

Choto Dairy 01 আল্লাহ সর্বশক্তিমান
(5)

বিয়ের প্রথম রাতে স্বামী তালাক দেয় হিয়াকে। নিজ বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য তার হাতে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দেয়।   সদ্য বিব...
11/08/2025

বিয়ের প্রথম রাতে স্বামী তালাক দেয় হিয়াকে। নিজ বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য তার হাতে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দেয়। সদ্য বিবাহিত বউয়ের হাতে ডিভোর্স পেপার ধরিয়ে দেয় ধ্রুব যেখানে স্পষ্ট তার সাইন রয়েছে। আর অন্য হাতে টাকার ব্যাগ ধরিয়ে দেয় যেখানে এক কোটি টাকা কাবিন হিসাবে বিয়ের সময় ধার্য্য করা হয়েছে। বেডের উপর বসে থাকা মেয়েটা টাকার ব্যাগ নিচে রেখে হাতে থাকা কাগজ ভালো করে পড়ে দেখে। যেখানে স্পষ্ট স্বরে তার আর ধ্রুবর ডিভোর্স কথা লিখা রয়েছে। ধ্রুব বলে -

"- দেখুন আপনার নাম কি সেটা আমি জানি আর আর যানার কোনো আগ্রহ আমার নাই। তবে শুনে রাখুন আপনার সাথে সংসার করা আমার দ্বারা সম্ভব না তাই ডিভোর্স পেপারে সাইন করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান "।

ধ্রুব কথাটা শুনে বসে থাকা মেয়েটা উঠে দাঁড়ায় আর ওর সামনে এসে আশেপাশে কিছু খুঁজতে থাকে। ধ্রুব অবাক হয় কারণ রুমে সে আর এই মেয়েটা ছাড়া আর কোনো মানুষ নাই। সেই মেয়ে অনেক সময় ধরে খুঁজে কোনো কিছু না পেয়ে বাধ্য হয়ে ধ্রুবকে জিজ্ঞেস করে -

"- ক্যামেরা কোথায়? ডিরেক্টর কোথায়? রুমে মধ্যে কি ক্যামেরা লুকিয়ে রাখা হয়েছে? কিন্তু কোথায় ক্যামেরা আমাকে একটু দেখান সিনেমা কেমন হয়েছে সেটা আমাকে একটু দেখতে দেন?

সামনে থাকা মেয়ের এমন অবুঝ কথা শুনে ধ্রুবর অদ্ভুত লাগে। ধ্রুব বলে -

"- ক্যামেরা কোথায় মানে? আর রুমের ভিতরে ক্যামেরা লুকিয়ে রাখা কোনো হবে? এখানে কোনো সিনেমা চলছে না.

ধ্রুবকে এতোখন যার সাথে কথা বলতে দেখা গিয়েছে তার নাম হিয়া। হিয়া বলে -

"- যদি এখানে সিনেমার শুটিং না হয়ে থাকে তাহলে আপনি কোনো নায়কের মতো ডায়লগ দিচ্ছেন।কারণ আপনার কোনো কথা বাস্তব ধর্মী না ধ্রুব "।

"- শুনুন আপনাকে কোনো সিনেমার ডায়লগ দেওয়া আগ্রহ আমার নাই। আর আমার কথা সব সত্য আর বাস্তব আপনার সাথে সংসার করার কোনো আগ্রহ আমার নাই। মা বাবা জোর করে আমাকে আপনার সাথে বিয়ে দিয়েছে বাধ্য হয়ে বিয়ে করতে হয়েছে আমাকে "।

ধ্রুবর কথা শুনে হিয়া হাসে আর বলে -

"- আপনি কি ফিটার খান ধ্রুব? মানে এই তিরিশ বছর বয়সী কোনো যুবক যে ফিটার খায় সেটা আমার জানা ছিলো না আগে।

"- হোয়াট আমি ফিটার খায় কে বললো আপনাকে? দেখুন আপনার সাথে কোনো তর্ক করার ইচ্ছা আমার নাই ডিভোর্স পেপারে সাইন করে বেরিয়ে যান এই বাড়ি থেকে।

"- একজন তিরিশ বছর বয়সী যুবকে তার মা বাবা জোর করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে কথাটি কি বিশ্বাস যোগ্য? আর কোনো কারণ ছাড়া আপনাকে ডিভোর্স কোনো দিতে যাবো আমি? আর এইটা আমার শশুড় বাড়ি এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া কোনো কথায় আসে না.

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা ধ্রুবর সাথে সাথে তর্ক করছে সেটা তার বিশ্বাস হচ্ছে না। কারণ বাড়িতে কেউ আজ অবধি ধ্রুবর সিদ্ধান্তের উপর কথা বলে না আর এই মেয়ে রীতিমতো তাকে অপমান করছে। আর ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে না করছে ধ্রুব বলে -

"- দেখুন আপনাকে আমি ভালোবাসি না? আর এই বিয়ে সংসার করতে চাই না আমি? আর সেইজন্য বে*হায়ার মতো কোনো আমার সাথে থাকতে চান বলুন?

"- প্রথম কথা আমার নাম হিয়া সো নাম ধরে কথা বলেন। আর যদি আপনার আমাকে পছন্দ নাই ছিলো তাহলে এই বিয়ে করলেন কোনো? বিয়ে কোনো মজা না যে যখন আপনার ইচ্ছা হলো কবুল বলবেন আর যখন ইচ্ছা হবে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন।আমি আপনার বিবাহিত বউ সেটা আপনাকে মেনে নিতে হবে।

"- বউ মাই ফ্যুট যেখানে এই বিয়ে আমি মানি না সেখানে আপনাকে বউ হিসাবে মেনে নেওয়া হাস্যকর বিষয়।

"- বিয়ে আপনার কাছে মজার বিষয় হতে পারে কিন্তু আমার কাছে না। বিয়ে মানে একটা পবিত্র সম্পর্ক যার মাধ্যমে স্বামী স্ত্রী একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়। যখন বিয়ে দুইজনের সম্মতি নিয়ে হয়েছে তখন ডিভোর্স পেপারে সাইন করার সময় ও দুইজনকে রাজি থাকতে হবে। কারণ বিয়েতে কবুল শুধু আপনি একা না আমি ও বলেছি তাই আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার সঠিক কোনো কারণ না দেখালে সাইন আমি করব না "।

হিয়ার এমন কথা শুনে ধ্রুবর রাগ উঠে যায় এতোখন হিয়ার সাথে সুন্দর করে কথা বললে ও আর সেটা পারে না। ধ্রুব গিয়ে হিয়ার হাত থেকে কাগজ নিয়ে নেয় এরপর হিয়ার হাত ধরে জোর করে সেখানে সাইন করাতে চাই। যদিও পুরুষ মানুষের শক্তি অনেক হয় তবে হিয়া ও কম না সে এক ধাক্কা দেয় ধ্রুবকে আর হাতে থাকা কাগজ ছিঁড়ে টু*ক*রো টু*করো করে মেঝেতে ফেলে দেয়। হিয়া বলে -

"- ধ্রুব আমাকে দিয়ে জোর করে কোনো কাজ করাতে যাবেন না। কারণ এই হিয়া যদি কোনো কাজ নিজের ইচ্ছায় না করে সেটা কেউ তাকে দিয়ে করাতে পারে না। ভুলে যাবে৷ না জেদ আর রাগ শুধু পুরুষের না নারী ও থাকে "।

হিয়া ধা*ক্কা দিয়ে ধ্রুবকে বেশি দূরে সরাতে পারে নাই তবে মেঝেতে পরে থাকা কাগজ ছিঁ*ড়া টু*করো দেখে ধ্রুবর রাগ উঠে যায়। ধ্রুব বলে -

"- আপনার সাহস কি করে হয় হিয়া এই ডিভোর্স পেপার ছিড়েঁ ফেলার? সত্যি করে বলুন হিয়া কোনো এই বিয়ে কন্টিনিউ করতে চান আপনি টাকার জন্য। কতো টাকা লাগবে আপনার বলুন?

"- এই টাকার গরম একদম আমাকে দেখাতে আসবেন না ধ্রুব। ভুলে যাবেন না আমি যদি মন্ত্রী রামিম খানের ছেলে হন তাহলে আমি ও মন্ত্রী হুমায়ুন চৌধুরীর মেয়ে। টাকা আমার বাবার ও আছে ছোটবেলা থেকে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছি আমি। সো টাকার লোভ আমার নাই.

"- তাহলে কোনো এই ডিভোর্স চান না আপনি হিয়া? আমি আপনাকে কখনো ভয় হিসাবে মেনে নিতে পারব না? নিজের জীবন কোনো ন*ষ্ট করছেন আপনি? কোনো ডিভোর্স দিতে চান না আমাকে?

ধ্রুবর কথা শুনে হিয়া একটু হাসে আর বলে -

"- বিয়ে কোনো মজা না।তবে আমি কোনো বে*হায়া মেয়ে না যে স্বামীর ভালোবাসা বা গুরুত্ব না পেয়ে শশুড় বাড়িতে পরে থাকবো? আপনাকে আমি ডিভোর্স দিবো ধ্রুব তবে একটা শর্ত আছে আমার.

"- কি শর্ত?

"- আগামী তিনমাস আমার সাথে সংসার করতে হবে আপনার। যদি এই তিনমাসের মধ্যে আপনার মনে আমার জন্য কোনো মায়া বা ভালোবাসা জন্ম না নেয় তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দিবো আমি।বলুন রাজি আপনি ধ্রুব?

"- হিয়া আপনি কি আমার সাথে বাজি ধরছেন?

"- হুম অনেকটা সেইরকম। যদি রাজি থাকেন তাহলে তিনমাসের জন্য একটা ভালোবাসার বাজি ধরতে চাই আমি। তবে একটা কথা মনে রাখবেন হিয়া কখনো হারতে শিখে নাই?

হিয়ার কথা শুনে ধ্রুব অট্ট স্বরে হেঁসে উঠে কারণ হিয়া এই বাজি কখনো জিততে পারবে না। ধ্রুব কোনোদিন কাউকে ভালোবাসবে না তাই ধ্রুব বলে -

"- কিন্তু এই বাজি আপনি হেরে যাবেন হিয়া। তবে আমার আপনার বাজি ভালো লেগেছে দেখা যাক আপনি এই ধ্রুবর মনে ভালোবাসার ফুল ফুটাতে পারেন কি না?

"- ধ্রুব আমি আপনাকে কখনো ইমপ্রেস করবো না বরং আপনি এই হিয়ার প্রেমে পড়বেন। বাজি রইল ভালোবাসতে বাধ্য হবেন আপনি হিয়াকে "।

"- দেখা যাক কি হয়।

"- অবশ্য সময় সব বলে দিবে "।

হিয়ার সাথে ধ্রুব কথা শেষ করে অন্যদিকে রামিম খান ফোনে কারো সাথে কথা বলে -

"- সওদাগর সাহেব কালকে তাহলে মিটিং করা যাক। আর আপনাকে কোনো টেনশন করতে হবে মাল সময় মতো পৌঁছে যাবে আর পুলিশ সেটা জানতে ও পারবে না "।

ধ্রুব আর হিয়া বাজি ধরে ধ্রুব রুম থেকে বেরিয়ে যায় হিয়া একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বলে -

"- ধ্রুব আপনি যানেন না এই বাজি ধরে কি ভুল করেছেন আপনি? একদিন এই বাজি আপনার গ*লার ফাঁ*সি হয়ে উঠবে। এই হিয়ার আসল রূপ এখনো দেখেন নাই আপনি.

চলবে
তুমি_আমার_প্রিয়তমা
কলমে_নুসাইবা_এহসানা_হিয়া
সূচর্না_পর্ব

আরেক টক কথা এখন থেকে প্রত্ত্বেক গল্পের সম্পুর্ন গল্প দেওয়া হবে।

[যারা পেজ কে ফলো না করে গল্প পড়ছেন তারা নিল লেখার উপর চাপ দিয়ে পেজ কে ফলো করে রাখুন, যাতে পরের পর্ব গুলা মিস না হয়। 👉 Choto Dairy 01 ]

ইংলিশ_টিচার৩+৪ পর্বসুমনা হকবাসরঘরে বসে মিলি শ্বশুর আংকেল, শ্বশুর আংকেল বলে চিৎকার করছে। শুভ ব্যাপার টা আর বেশিদূর যেতে ন...
11/08/2025

ইংলিশ_টিচার
৩+৪ পর্ব
সুমনা হক

বাসরঘরে বসে মিলি শ্বশুর আংকেল, শ্বশুর আংকেল বলে চিৎকার করছে। শুভ ব্যাপার টা আর বেশিদূর যেতে না দিয়ে মিলির মুখ চাপা দিয়ে ধরে ধমকের সুরে বললো
-চুপ,একদম চুপ।তোমার সাথে না জ্বিনেরা দেখা করে? তাহলে তুমি অযথা ভয় পাচ্ছো কেন? এসব তো তোমার অভ্যাস হয়ে যাওয়ার কথা।

মিলি এবার চুপ হয়ে গেলো।সে ভাবছে সত্যিটা কি বলে দিবে যে সে কোনো জ্বিন দেখেনি, শুধু ভয় দেখাতে চেয়েছিল শুভকে নাকি আপাতত চুপ থাকবে আর সকাল সকাল বাসায় চলে যাবে।

মিলির খুব ইচ্ছা ছিলো শুভকে তার বাসর রাতে রুম থেকে বের করে দিবে যেমন টা শুভ মিলির সাথে কলেজ এ করেছে। আপাতত মিলি এই ইচ্ছে টা পূরণ করতে পারছেনা কারন একা থাকা আজ আর তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছেনা।মিলি মুখ গোমরা করে বসে আছে কিছুই বলছেনা, আসলে মিলি নিজেই নিজের করা ফাঁদে আটকে গেছে।

শুভ মিলিকে বললো
-মিলি একটু এদিকে এসে বসবে, কথা আছে আমার।
-দেখেন স্যার আমি আপনার ছাত্রী, আর আপনি আমার শিক্ষক।
-তো?
-শিক্ষক কিন্তু বাবার সমান।
-আমি তোমার বাবার সমান? তাহলে আমাকে বিয়ে করছো কেন? ওয়েট এক সেকেন্ড এই মিলি তোমার মনে হচ্ছে আমি এখন তোমাকে ১৮+ এমন কিছু কথা বলবো?
-না মানে বলতে ও তো পারেন।
-মাইর চিনো? আচ্ছা এসব বাদ দেও এবার এটা বলো তোমার বোন কোথায়?
-আমি কি জানি, আপনি তো স্যার জানেননি আমি মিথ্যা কথা বলিনা।
-তুমি যে কত সত্যবাদী তা আমি জেনে গেছি। এখন বলো তোমার বোন কোথায়?
-আচ্ছা এসব শাড়ী পড়ে আর থাকতে পারছিনা আপাতত আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসি তারপর বলছি।
-মিলি তুমি কিন্তু কথা ঘুরানোর চেষ্টা করছো।
মিলি শুভর কথা পাত্তা না দিয়ে ওয়াশরুম এ যায়।সেখান থেকে এসে মিলি এবার শুভকে বলে
-আমার খিদা লাগছে।আপনার জন্য সারাদিন কিছুই খাওয়া হয়নি।আর রাতেও তেমন কিছু খাওয়া হয়নি।
-তো আমি কি করবো?
-আমার জন্য খাবার নিয়ে আসেন।
-এই রাতে আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসবো? মাথা খারাপ হয়েছে?
-না খাবার পেলে তো বলবো না। খিদা রেখে আমি এত্ত কথা বলতে পারবোনা।

বেচারা শুভ বাসর রাতে বিড়াল এর মতো নিজের বাসায় নিজে খাবার চুরি করে।কেউ দেখলে তো শুভর আজ কপাল খারাপ হয়ে যাবে।

শুভ মিলিকে খাবার এনে দিতেই মিলি বললো

-আপনি না ঠিক আমার বাবার মতো
শুভ রেগে আগুন হয়ে বলে
-বাবার মতো মানে কি বুঝতে চাচ্ছেন?
-আরে আমার বাবা ও মাঝেমধ্যে অনেক রাতে আমার রুমে খাবার নিয়ে আসে আর আমাকে খাইয়ে দেয়। আমি বাবাকে অনেক মিস করছি। এখন আপনি আমাকে খাইয়ে দিবেন বুঝছেন?

শুভ ভালোই বুঝতেছিলো মিলি আসলে শুভকে বিরক্ত করতে চাচ্ছে। শুভ তো বিরক্ত হবেনা, কারণ সে মিলির সব কারসাজি বুঝতে পেরেছে।
শুভ মিলিকে খাইয়ে দেয়ার পর জানতে চায় তার বোন কোথায়।
মিলি তখনি তার ফোন থেকে মিলির বাবাকে কল দিয়ে বলে
-বাবা শুনো তোমার বালিশের নিচে দেখো একটা চাবি। আর সে চাবি নিয়ে আমাদের ষ্টোর রুমে যাবে সেখানে গিয়ে তালা খুললে আপুকে দেখতে পাবে।আপু হয়তো ঘুমিয়ে আছে কিন্তু তুমি টেনশন করোনা আপুর কিছু হয়নি। বেশি না ৪ টা ঘুমের ঔষদ খাইয়ে ছিলাম।চোখ মুখে পানি দিয়ে লেবুর সরবত খাওয়ালে ঠিক হয়ে যাবে।

ওপাশে মিলির বাবা কি বলছিলো সেটা অবশ্য শুভ শুনতে পারেনি।

ফোন রাখার পর শুভ বলছে
-তুমি তোমার বোনকে স্লিপিং পিল কেন খাওয়ালে?
-কারন সে বুঝতেই চাচ্ছিলো না যে আপনি মানুষ হিসেবে কত খারাপ।লাস্ট পর্যন্ত উপায় না পেয়ে এই কাজ কররে হলো। কি করবো বলেন,বোনকে তো এমন অপাত্রের হাতে তুলে দিতে পারিনা।

শুভর মাথা ঘুরছে এটা ভেবে এই মেয়ে কখন না জানি শুভকে কত্তগুলা স্লিপিং পিল খাইয়ে দেয়।

চলবে,,,,

#ইংলিশ_টিচার
পর্ব-৪
সুমনা হক

মিলি শুভর দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসি দিচ্ছে আর তা দেখে শুভ বললো
-আর কি শয়তানি করা বাকি আছে? সেগুলা করে ফেলো।
-স্যার আসলে আপনার জন্য মায়া হচ্ছে, কত আশা করেছিলেন আজ আপনার বাসররাত হবে আপুর সাথে।আহারে স্যার মায়া হচ্ছে।
-মিলি তুমি ঠিক চাও টা কি? আর এমন কেনো করলে?
-স্যার আপনি তো জানেন আমি মিথ্যা বলি না, আসলে আপনি খারাপ মানুষ আর আমি এটা জেনে শুনে আমার বোনকে আপনার সাথে কিভাবে বিয়ে দেয় বলুন?
-তো নিজে করলে কেন?আমি খারাপ মানুষ।
-আপনার বাবা রিকুয়েস্ট করছে যেন আপনাকে ভালো মানুষ বানিয়ে দিয়ে যায় তাই আর শ্বশুর আংকেল এর কথা ফেলতে পারিনি।

-মিলি এইটা কি কথা? শ্বশুর আংকেল আবার কি?
-সে আগে ছিলো আংকেল পরে হলো শ্বশুর তাই শ্বশুর আংকেল।
-তুমি মানসিক ভাবে অসুস্থ।অসহ্য লাগছে সব আমার মিলি।

এই কথা বলে শুভ রুম থেকে বের হয়ে যায়।মিলি শুভ আসবে ভেবে বসে ছিলো কিন্তু শুভ আসেনি। মিলি তো এবার ভয় পেয়ে গেছে এমনি বেচারি জ্বিন আছে এ বাসায় মনে করছে।মিলি তার ফোন থেকে শুভ কে কল দেয় অনেকবার কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। মিলি উপায় না দেখে ফেইসবুকে খুঁজ নেয় শুভ এক্টিভ কিনা।শুভ কে অনলাইন দেখে ম্যাসেজ দেয় মিলি " প্লিজ স্যার রুমে আসেন।"
১০ মিঃ পর উত্তর না পেয়ে আবার ম্যাসেজ দেয় "প্লিজ শুভ রুমে আসেন।"

শুভর ফোন সাইলেন্ট মুড এ ছিলো তাই সে আর খেয়াল করেনি প্রায় ১ ঘন্টা পর শুভ যখন ফোন টা হাতে নিলো দেখলো ১ টা নাম্বার থেকে অনেকগুলো ফোন, অনেক রাত বলে শুভ আর কল ব্যাক করেনি। শুভ ডাটা কানেকশন অফ করবে এমন সময় একটা ম্যাসেজ দেখে আর, সেটা মিলির ম্যাসেজ।

শুভ অবাক হয়ে আছে! কিভাবে মিলি তার বন্ধু তালিকায় আসতে পারে। এমন একটা পাগল মেয়ে তার সাথে এড কিভাবে থাকতে পারে সে ভাবছে।
ম্যাসেজ দেখে শুভ রুম এ গিয়ে দেখে মিলি ঘুমাচ্ছে।
মিলির ঘুম থেকে শুভ ভাবছে এই পাগলী মনে হয় আমার বলা জ্বিন এর গল্প শুনে ভয় পেয়ে আমাকে কল আর ম্যাসেজ দিয়েছে,আমাকে এত্ত জ্বালাচ্ছে তার একটু জ্বলার দরকার আছে।

শুভ নিজের অজান্তেই মিলির দিকে তাকিয়ে আছে
কি আশ্চর্য ঘুমের মধ্যে মিলির মুখটা কত পবিত্র লাগছে আর কত মায়াবতী মনে হচ্ছে।

শুভ খেয়াল করলো যে নাম্বার থেকে মিলি কল দিয়েছে এটা থেকে মাঝেমধ্যে কল আসতো। শুভর স্পষ্ট মনে আছে কেউ একজন কল দিয়ে আর কথা বলতো না।
এইটা তাহলে মিলি ছিলো তা ক্লিয়ার হলো শুভর কাছে।
ঠিক তখনি শুভ মিলির ফেইসবুক প্রোফাইল যায়।
শুভ তার প্রোফাইল এ গিয়ে চুপ হয়ে আছে, এই সে মিলি যে এখন তার বেড এ ঘুমাচ্ছে।

মিলি খুব ভালো গল্প লিখে আর তার প্রত্যেক টা গল্প শুভ পড়েছে।মিলির গল্প পড়ে কেউ বুঝতেই পারবেনা সে এই পাগলী যে তার বোনকে স্লিপিং পিল খাইয়েছে।
মিলি একটা রহস্যময় মেয়ে যার রহস্যভেদ করা সহজ না।

মিলি পুরো খাট নিয়ে শুয়ে আছে, শুভ তাই ছুফায় বসেই ঘুমিয়ে গেছে।
ফজর এর আজান দিতেই শুভ উঠে নামাজ পড়লো আর সেটা মিলি চোখ খুলে দেখছে কিন্তু বুঝতে দেয়নি শুভকে ।
শুভ এবার একটা বই পড়তে বসে গেলো আর তখন মিলি উঠে সোজা চলে গেলো শুভর বাবার রুমে।
গিয়েই তার রুম থেকে তাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বললো
-শ্বশুর আংকেল আপনি আমার সাথে এইটা কি করলেন??
-কি করলাম মা?
-আপনি জেনে শুনে আমাকে এই ভুতুড়ে বাড়িতে নিয়ে আসছেন।
-কি বলো এসব মা? আমাদের বাসা ভুতুড়ে কেন হবে?
-স্যার সব বলে দিছে, আপনার বাবা তো জ্বিন পোষাত।
-মা শুভ এসব বলছে? আরে পাগলী মেয়ে তোমাকে সে বোকা বানিয়েছে।
-কি বললেন আপনি শ্বশুর আংকেল। এত্ত দিন তো সে আমাকে মিথ্যাবাদী বলতো এখন সে নিজে কি করলো।
শুভর বাবা মিলিকে বললো তুমি শান্ত হও।আজকে আর কিছু করো না আপাতত চুপ থাকো পরে এর প্রতিশোধ নিও।
এরপর মিলির শাশুড়ি এসে মিলিকে বললো আজ মিলিকে রান্না করে খাওয়াতে হবে আর তাও সেটা মাগুর মাছ আলু দিয়ে, এইটাই রান্না করতে হবে কারণ এইটাই এই পরিবার এর নাকি নিয়ম।
মিলি নখ কামড়াতে কামড়াতে রান্নাঘর এর গেলো আর এটা শুভ জানতে পারলো আর তখনি শুভ দেখতে গেলো মিলি কি কাহানী করে।

মিলি মাগুর মাছ ধরতে যায় আবার যায় না।একবার সাহস করে যেয়ে মাছটাকে ধরে আবার ভয় পেয়ে ছেড়ে দেয়।
শুভ গিয়ে মিলিকে বললো
-কি ব্যাপার মিলি? মানুষ কে কল দিয়ে দিয়ে বিরক্ত করতে পারো আর মাছ ধরতে পারো না?
মিলি বুঝে গেছে গতরাতে সে নিজের নাম্বার দিয়ে কল দিয়ে কি বোকামি করেছে। আর তখনি মনে পড়েছে ভয় এর জন্য তার সেন্স ও ঠিকমতো কাজ করেনি যার জন্য এখন শুভ তার আইডি টাও জেনে গেলো।
আজ মিলির কপালটাই খারাপ আজ সারাদিন তার সাথে কি কি হবে কে জানে।
মিলি শুভর কথার কোনো উত্তর দিচ্ছেনা আর তাই শুভ আর এই প্রসঙ্গ কথা বলেনি।

মিলির মাছ ধরতে হবে বলে মন খারাপ দেখে শুভ বললো
-সাহায্য লাগবে কি?
-আর যায় হোক আমি আপনার সাহায্য নিবো না।খারাপ মানুষ সাহায্য করে নিজ স্বার্থে।
-ওকে তা হলে গেলাম।দুপুরে খাবার টেবিলে দেখা হচ্ছে।

দুপুর হয়ে গেলো সবাই খাবার টেবিলে এসেছে আজ নতুন বউ রান্নাবাড়া করেছে। শুভ শিওর যে আজ মিলি তার মায়ের কাছে বকা শুনবেই।
সবাই আসার পর মিলি যখন খাবার পরিবেশন করলো শুভ জাস্ট হা হয়ে ছিলো।

শুভ ঠিক বুঝতেই পারছেনা যে মেয়ে মাছটাই ধরতে পারছিলনা সে কিভাবে এই রান্না করলো।শুভর প্রশ্ন একটাই মিলি কিভাবে পারলো?

চলবে

- মিস তায়্যিরাত উম্মে আহি।তোমার কাছে দুটো অপশন আছে। হয় নিজের পরিবারের মানসম্মান বাচাঁনোর জন্য আমায় বিয়ে করো,নয়তো আমার সা...
11/08/2025

- মিস তায়্যিরাত উম্মে আহি।তোমার কাছে দুটো অপশন আছে। হয় নিজের পরিবারের মানসম্মান বাচাঁনোর জন্য আমায় বিয়ে করো,নয়তো আমার সাথে যে গুজব রটিয়েছে সেটাই মেনে নাও। সিদ্ধান্ত এবার তোমার হাতে।

লোকটার সুদৃঢ় কথা শুনে টুপ করে একফোটা জল গড়িয়ে পড়লো আমার চোখ বেয়ে।তবে সে দাঁড়িয়ে আছে কঠোর ভঙ্গিমায়,যেন এসব পরিস্থিতি উনার কাছে কোনো ব্যাপারই না। আমি জড়ানো গলায় বললাম,

-আপনি কি চান মিঃ আনভীর ?

আলতো হাসলেন উনি। চোখের দৃষ্টি আমাতে দৃঢ় করে বললেন,

-আমার চাওয়া পাওয়া সব এখন বাবার হাতে। আমার বাবা চায় যে আমি তোমায় বিয়ে করি , এতে আমার মত হোক বা না হোক। তুমি রাজি হলেই বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে।

আমার গলার স্বর ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে আসছে। আজ আমার ছোট্ট একটা ভুলের জন্যই এ পরিস্থিতির শিকার। ভরা বিয়ে বাড়ি এখন কেমন যেন নিস্তব্ধ পুরী। বিয়েটা আজ আমারই ছিলো তবে আনভীরের সাথে না, অন্য একজনের সাথে। আনভীর হলেন আমার বাবার বন্ধুর ছেলে। আমার বিয়ে উপলক্ষে সপরিবারে তারা এসেছিলেন আমাদের এই মফস্বল শহরে। তবে পরিস্থিতির শিকারে সব কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।
আমি তায়্যিরাত উম্মে আহি। মা'কে ছোটবেলাতেই হারিয়েছি। বাবা সরকারি চাকরির জন্য সারাবছর এ শহর ও শহর চলে যেত। আমি বড় হতে লাগলাম আমার চাচা-চাচীর কাছে। আর আনভীরের সাথে সে সূত্রেই আমার পরিচয়। আমাদের পাশের বাড়িটিতে উনারা থাকতেন। আমার এখনও মনে আছে উনার সাথে আমার প্রথম দেখার কথা। ক্লাস নাইনে পড়তাম আমি। আনভীর ছিলেন আমাদের এ পাড়ার সবচেয়ে সুদর্শন ব্যাক্তি। তাই তার কাছে প্রেমপত্র জিনিসটি অহরহ ব্যাপারই ছিলো। কেউ কেউ তো সরাসরিই উনাকে প্রপোজ করেছে। তবে উনি সেসবে খুব বেশি নজর দেননি। হঠাৎ আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের মারু আপু হুট করে আমায় একটা চিঠি ধরিয়ে দিলেন হাতে। আমায় বললেন ছাদে পাশের ছাদে এক ছেলে আছে তাকে চিঠিটা দিতে হবে। নাইনে পড়তাম আমি । এসব শুনে কিছু একটা আন্দাজ করে নেওয়াটা খুব কঠিন হতো না আমার কাছে। আমি দ্বিধায় না করলেই আপু ধমকের স্বরে বলে ওঠলো ,'যা তো। নাহলে তুই যে আবারও কেমিস্ট্রিতে ফেল করছোস ; বলে দিবো তোর চাচী কে।'
এতটুকু হুমকি যথেষ্ট আমার জন্য। অগ্যতাই তাই ছাদে যেতে হয়েছিলো আমায়। তখন ছিলো শেষ বিকেল। শীতের আবরণে দূর দূর কুয়াশায় ছেয়ে গিয়েছিলো । আমি কাপা কাপা পায়ে ছাদে উঠে পাশের ছাদে উকি দিলাম। সত্যি সত্যি এক ছেলে বসে আছে রেলিংয়ে। পাশে মনে হয় বায়োলজির একটা বই উপুর করে রাখা সাথে গরম চায়ের একটা মগ। চা যে কেউ মগভর্তি খায় এটা আমার জানা ছিলো না। তবে ছেলেটা সেগুলো একপাশে রেখে গিটারে টুং টাং শব্দ তুলতে ব্যাস্ত ছিলো আনমনে।আমি শুধু পেছন থেকে দেখতে পারছিলাম তাকে। তার পরনে হলদে কমলা রঙের টিশার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। আমি কৌতুহলতার জন্য উনার নাম জানতে গিয়ে অজান্তেই খুলে ফেললাম মারু আপু দেওয়ার চিঠিটা। উপরের একটা লাইনও পড়িনি আমি,,,,,শুধু শেষ নামটিই দেখেছিলাম.....আনভীর। চিঠিটি ভাঁজ করে আমি কাঁপাকাঁপা স্বরে বলে ওঠলাম,,,
-'এইযে একটু শুনুন?'

আমার কন্ঠে পেছনে ফিরলেন উনি।আমি যেন বড়সড় এক ধাক্কা খেলাম এবার এমন মানুষটিকে দেখে। ফর্সা মুখে চিকন ফ্রেমের খয়েরি চশমা,,,বাতাসের দোলায় উড়ে যাচ্ছে মসৃন কালো চুল ; যার কারনে উনার কপাল দৃশ্যমান আমার কাছে। খাড়া নাক....লালচে ঠোঁট এসব সৌন্দর্য আমার ১৫ বছর বয়সী মনে তোলপাড় শুরু করেছিলো আবছাভাবে। আমি বিলম্ব না করে চিঠিটা এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠলাম,,
-'এই নিন।'

কৌতুহলবশত উনি নিয়ে নিলেন চিঠিটা। পুরোটা পড়া শেষ করে উনি শান্ত কন্ঠে আমায় জিজ্ঞেস করলেন,
-'কিসে পড়ো তুমি?'

-'ক্লাস নাইন।'

-'এই বয়সেই এই অবস্থা ! আমি কিসে পড়ি জানো? অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে। আর এইটুকু একটা পুচকি মেয়ে কি হিসেবে লাভলেটার লিখো আমায়?'

ভড়কে গেলাম আমি। তাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম , 'মানে?'

-'মানে হলো.........এসব প্রেম-ট্রেমের চিন্তা বাদ দাও। ছোট তুমি। আগে পড়াশুনা করো। এসব করার জন্য দিন অনেক আছে। এখন তোমার প্রেম করার বয়স না পিচ্চি,,,,হামাগুড়ি দেওয়ার বয়স !'

অপমানে আমার মুখখানা থমথমে হয়ে ওঠলো এবার। নিশ্চয়ই মারু আপু নিজের নাম চিঠিতে লেখিনি তাই এই চশমিশ বিলাইটা মনে করেছে আমি লিখেছি এটা।আমায় পিচ্চি বললেন উনি? এবার তাই রাগে গজগজ করতে করতে বলে ফেললাম,

-'দেখুন চিঠিটা আমি না,,,,,,,আমার পাশের ফ্ল্যাটের মারু আপু দিতে বলেছিলো আপনাকে। তাই দিয়ে দেই। এখন এসব উদ্ভট চিন্তা বাদ দিন।আর হ্যাঁ,,,,আমি জানি আমি পিচ্চি। প্রেম করার বয়স এখনও আমার হয়নি। কিন্ত যদি প্রেম বা বিয়ে করার বয়স হয়েও যায়,,,আর যাই হোক; আপনার মতো চশমিশ বিলাইকে আমি বিয়ে করবো না।'

সেই প্রথম সাক্ষাতের কথা মনে পড়ে হঠাৎ আমার ঠোঁটকোলে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠলো এবার। এতসময় পর আজ পরিস্থিতি বাধ্য করছে আমায় উনাকে বিয়ে করতে। আনভীরের সাথে ছোটবেলা থেকেই খুব বেশি একটা কথা হয়নি আমার। পরবর্তীতে আমি ক্লাস টেনে পড়াকালীন সময়েই উনারা সপরিবার ঢাকায় চলে যান। আমার বাবার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ থাকলেও একপ্রকার আমি ভুলেই গিয়েছিলাম তাকে। আর এতবছর পরে উনারা এসেছিলেন আমার বিয়েতে।
ঘটনাটি হয়ে ছিলো গতকাল গায়ে হলুদের রাতে।অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর আমি ঘুমিয়ে পড়ি আমার রুমে। আমাদের এ ভিটে শহর থেকে তুলনামূলক একটু দূরে হওয়ায় নীরবতার প্রকোপও বেশ। এমন কোলাহল বিহীন সময় আমার রুমের দরজায় হালকাভাবে টোকা পড়লো হঠাৎ। রাত প্রায় ৩ টা বাজে। এমন সময় দরজায় টোকা পড়াতে একটু চমকে যাই আমি। মনে জাগছে অজস্র চিন্তা। তাই উঠে দরজা খুলে দেখলাম আনভীর দাঁড়ানো আছে দরজায় ভর দিয়ে। শরীরটা ক্লান্ত...চোখ-মুখ লাল। আমায় দেখে অপ্রস্তুত হয়ে বলে ওঠলো,
-'ওহ সরি , তোমায় ডিস্ট্রাব করার জন্য। আমি এটা আমার আব্বু আম্মুর রুম ভেবে নক করেছিলাম।'

-'কি হয়েছে আপনার?'

আমি না চাইতেও উনার গায়ে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে উনার শরীর। হয়তো ওষুধের জন্যই এসেছিলেন। উনার দাঁড়াতে একটু কষ্ট হচ্ছে দুর্বলতার জন্য। আজ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে তো বড্ড ব্যস্ত ছিলো,,,এ জ্বর নিয়ে চলাফেরা করলেন কিভাবে উনি?আমি নরম কন্ঠে এবার বললাম,,

-'আপনি ভেতরে এসে বসুন প্লিজ। আমি ওষুধ নিয়ে আসছি।'

উনি প্রথমে চাচ্ছিলেন না ভেতরে আসতে। কিন্ত দুর্বলতার জন্য আর না করতে পারেননি। আমি ওষুধ দিলাম এবার। কিন্ত কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো আনভীরের শরীর ভার হয়ে আসছে। আমি এবার বললাম....

-'এমন জ্বর নিয়ে ঘুরাফিরা করলে তো এমনটাই হবে। ওষুধের কাজ শুরু হতে একটু সময় লাগবে। আপনি এখানেই ঘুমিয়ে পড়ুন।'

-পাগল তুমি? আমি কখনোই এতরাতে একটা মেয়ের ঘরে ঘুমাতে পারবো না।'

-'এমন দুর্বল শরীর নিয়ে যাবেন কিভাবে শুনি? তাছাড়া আঙ্কেল আন্টি এই বিয়ে বাড়িতে কোন ঘরে শুয়েছে তাও আমার জানা নেই। এতরাতে পরে আপনার জ্বর নিয়ে হৈ হুল্লোড় শুরু হয়ে যাবে।'

আনভীর ভাবলেন কিছুক্ষণ। উনার মাথাটা এতটাই ধরেছে যে উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তি নেই। চোখ-মুখ যেন রক্তিম লাল। আমার কথায় সায় দিয়ে উনি খাটে ঘুমাতেই আমি নিচে একটা বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়লাম। আর উনাকে আমার ঘরে আনাটাই ছিলো আমার জীবনের চরম একটি ভুল। আমি কখনও ভাবতেই পারিনি যে আমার চাচি বা চাচির বোনেরা সকালে আমার ঘরে এসে বিষয়টা এভাবে নোংরা বানিয়ে দিবে। আমি তো শুধু উনার জ্বরের জন্য এখানে ঘুমাতে দিয়েছিলাম। কারন তখন হেঁটে চলার মতো তার অবস্থা ছিলো না। আর এত রাতে কাকেই ডাকতাম আমি? আমি সবাইকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি যে আমাদের মধ্যে কোনোরূপ সম্পর্ক নেই এমনকি রাতের বিষয়টাও বলেছিলাম । কিন্ত আমার চাচি মোটেই এ কথা বিশ্বাস করলেননা। একপর্যায়ে বরপক্ষের কানে বিষয়টা যাওয়াতে বিয়ের দিনই আমার বিয়ে ভেঙে গেলো।
,
আমার বাবার অবস্থা খারাপ । বিয়ের দিন বিয়ে ভেঙে যাওয়ার মতো ভয়াবহ দৃশ্যের সম্মুখীন হয়ে উনার বুকে চাপ পড়েছে।তারপরই আনভীরের বাবা হঠাৎ প্রস্তাব দিলেন তার ছেলের সাথে আমার বিয়ের জন্য। আমার কাছে আর কোনো উপায় নেই আর এটি ছাড়া। হ্যাঁ, এটা সত্য যে মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আমায় একপ্রকার ফেলনা বানিয়ে রেখেছিলো। কিন্ত তাকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি। আমি মাথা নাড়ালাম এবার। আনভীরকে মৃদুভাবে বললাম,,

-'আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজী।'

____________

বড় ঘরটিতে সবার আকর্ষণ এবার আমার আর আনভীরের দিকে। কাজী সাহেব ইতিমধ্যে আমাদের বিয়ে সম্পন্ন করেছেন।এখন থেকে আমি আর আনভীর স্বামী স্ত্রী। কবুল বলার পরই আনভীর নিশ্চুপ হয়ে সোফায় বসে রইলেন। মুখ দিয়ে টু শব্দও বের করলেন না। আমি এখনও বুঝতে পারছিনা যে উনি এই বিয়েতে রাজী ছিলেন কি-না। উনার ভাবভঙ্গি একেবারই নির্মল। বাবা নিজের ঘরে শুয়ে আছেন এখন। উনার অবস্থা আগের তুলনায় এখন অনেক ভালো। আনভীর এবার হেসে উঠলে হঠাৎ। সবার উদ্দেশ্যে বললেন,

-'কি আজব না? বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছিলাম এখানে আর দিনশেষে আমারই বিয়ে হয়ে গেলো তাও একটা সো কল্ড গুজবের জন্য।'

সবাই চুপ। আনভীর আবার বললেন,,,

-'আমাদের মধ্যে এরকম কখনোই কিছু ছিলো না কিন্ত কি করলেন আপনারা?এই মেয়েটার বিয়ে ভাঙিয়ে আমার সাথে বিয়ে করাতে ওকে বাধ্য করলেন। সবসময় চোখে যা দেখা হয় সেটা সত্যি হয়না। কিন্ত আপনাদের চিন্তাভঙ্গি কি......দৃষ্টিভঙ্গিটাই পঙ্গু।

-মুখ সামলে কথা বলো,.......

চাচি বলা শেষ করার আগেই আনভীর চেচিয়ে বলে উঠলো, 'কি মুখ সামলাবো আমি? আপনাদের জন্য আমাদের দুজনের লাইফই যে একটা অন্য মোড় নিলো সেদিকে কারও খেয়াল আছে?.........(কিছুটা দম ফেলে) শুনুন সবাই,,, আহি যতদিন আমার সাথে থাকবে ততদিন আপনাদের কারও ছায়াও আমি দেখতে চাইনা আমি। এমন লো মেন্টালিটির মানুষদের থেকে দূরে থাকাই উত্তম। আপনাদের আমি কখনোই আমি আমার আত্নীয় হিসেবে মানবো না।'

ভয়ঙ্করভাবে রেগে আছেন উনি। আমি এবার সোফায় পাথর হয়ে বসে আছি। মনে অজানা ভয় হানা দিচ্ছে। আনভীরের বাবা এবার উনাকে জিঙ্গেস করলেন,,,

-আহিকে মানতে পারবে?

আনভীর শান্ত হলেন। অতঃপর জড়ানো কন্ঠে বললেন,,,

-সেটা দেখা যাবে। আহি,,,,,,,চলো এখান থেকে।

বলেই আনভীর কোনোদিকে না তাকিয়ে প্রস্থান করলেন জায়গাটি। আমার চোখে অজান্তেই পানি চলে আসলো এবার। বাবার সাথে এখন চাইলেও দেখা করতে পারবোনা। বাইরে এসে দেখি আনভীরের বড় ভাই আজরান ভাইয়া গাড়ি ইতিমধ্যে বের করে নিয়ে এসেছে । তার পাশেই বসা শিউলি ভাবি। আনভীর চুপচাপ ওই গাড়িতে বসে পড়লো। একবার বসতেও বললৈ না আমায়। আমি দ্বিধায় পড়েছি যে গাড়িতে বসবো কি-না। তারপর পেছন থেকে উনার বাবা বলে ওঠলেন....

-একি আহি? গাড়িতে বসো গিয়ে। আমরা অন্য গাড়িতে আসছি। আনভীর ওকে এভাবে দাঁড় করে রেখেছো কেনো?

ভেতরে বসেই দরজাটা খুলে দিলো আনভীর। আড়ষ্ট কন্ঠে বললো,

-ও কি এখনও পিচ্চি যে দরজা খুলে দিতে হবে?.......(কিছুটা থেমে আমার উদ্দেশ্যে বলো).......বসো।

কথা না বাড়িয়ে গাড়ির ভেতরে বসে পড়লাম আমি। আজরান ভাইয়া এবার গাড়ি স্টার্ট দিলো। আমি অশ্রুসিক্ত চোখে দেখে নিলাম আমাদের বাড়িটি। যা আপন মানুষের মতো সময়ের ব্যবধানে পর হয়ে গিয়েছে। আনভীরের সাথে আমার নতুন বিবাহিত জীবনের কোনো পরিণতি হবে তো?

___________

পরিশেষে গাড়িটি এসে থামলো বিলাসবহুল একটি এপার্টমেন্ট এর সামনে। এই কলোনিতে এরকম আরও বেশ কয়েকটি এপার্টমেন্ট আছে। শিউলি ভাবি দরজা খুলে দিতেই আমি বেরিয়ে এলাম। তারপর সবার পিছু পিছু বিল্ডিংয়ের ভেতরে একটি লিফটে ঢুকলাম আমি। আনভীর নিঃশব্দে লিফটের ৯ নম্বর চাপলো।আমি আমার শ্বাশুড়ির পাশেই দাঁড়িয়ে আছি।সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আজ এতকিছু হয়ে গেলো আর উনার মুখে টু শব্দও না পাওয়াতে আমি আগেভাগেই অবাক।নিজের ছেলের হঠাৎ বিয়েতে উনি খুশি আছেন নাকি রাগে আছেন সেটাও তার ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে না। একপর্যায়ে লিফটি ৯ তলায় এসে থামলো।
করিডোরের একেবারের শেষ প্রান্তেই উনাদের ফ্ল্যাট। ভেতরে প্রবেশ করেই বুঝলাম ফ্ল্যাটটি বিশাল। আনভীরের বাবা এবার বললেন,,

-রুমে গিয়ে রেস্ট নাও মা।শিউলি তোমায় রুম দেখিয়ে দিবে। আজ তোমাদের ওপর দিয়ে আসলেই অনেক ধকল গিয়েছে।যাও তাহলে।

-জ্বি আঙ্কেল।

-এখনও আঙ্কেল বলছো কেনো? আমায় বাবা বলে ডাকতে হবে। তুমি কিন্ত আমার মেয়ের মতোই আহি।

বিনয়ী হাসলাম আমি। সত্য কথা বলতে আমার প্রচুর পরিমাণ অস্বস্তি লাগছে। শিউলি ভাবির সাথে আমি এবার চলে গেলাম আনভীরের রুমে। শুনেছি যে উনি ভার্সিটিতে ম্যাথম্যাটিক্সের প্রফেসর। তাছাড়া উনি ম্যাথে আগে থেকেই অনেক দুর্দান্ত ছিলেন তাই এই বিষয় নিয়েই নাকি পড়াশোনাটা করা।রুমে গিয়ে তো মাথায় বাজ পড়লো আমার। একে রুম কম লাইব্রেরি বেশি মনে হবে। দুনিয়ার যত বই গিজগিজ করে বুকশেল্ফভর্তি করে রেখেছে।তবে রুমটা প্রচন্ড রকমের গোছালো। শিউলি ভাবি চলে যাওয়ার পর আনভীরের আসার আগেই জামা নিয়ে আমি ওয়াশরুমে চলে গেলাম আমি।

গোসল সেরে বাইরে আসতেই দেখি সিংগেল সোফায় আয়েশ করে উনি বসে আছেন পায়ের ওপর পা তুলে। চোখের দৃষ্টি আমার দিকে তীক্ষ্ণ। আমি বিব্রত হয়ে পড়লাম। ওড়নাটা গায়ে ভালোমতো পেচানোর চেষ্টা করতেই উনি বলে ওঠলেন,,,,,

-'হাউ স্ট্রেন্জ ! বিয়ে করা বউ তুমি আমার। তাহলে এত ওড়না প্যাচাপ্যাচি করছো কেনো?তুমি চাইলে ওড়না কেন সব খুলেই পেত্নীর মতো ঘুরতে পারো ।আই ডোন্ট মাইন্ড!
~চলবে~

এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়❤
কায়ানাত_আফরিন
পর্ব__১

নেক্সট পার্ট সবার আগে আইডিতে পোস্ট করা হবে, নীল লেখার চাপ দিয়ে সবাই আইডি ফলো করুন। Choto Dairy 01

চারুর_সংসারWritten_by_Nowshinপর্ব_২🍁গাড়ি এক বিরাট বাড়ির সামনে এসে থামলো।এত বড় বাড়ি😯।চকচক করছে পুরো বাড়িতে।চারু একদৃস্টিত...
11/08/2025

চারুর_সংসার
Written_by_Nowshin
পর্ব_২
🍁

গাড়ি এক বিরাট বাড়ির সামনে এসে থামলো।এত বড় বাড়ি😯।চকচক করছে পুরো বাড়িতে।চারু একদৃস্টিতে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ আনাফ বলল.....

------কী হলো নামেন!

চারু হচকিয়ে যায় এই কথা শুনে।কাপা কাপা কন্ঠে বলে জ্বী জ্বী!!

চারুরা সবাই গাড়ি থেকে নামে।বাড়ির ভিতরে ঢুকে সবাই।চারু যতো আগাচ্ছে ততো অবাক হচ্ছে,কত বড়,সুন্দর বাড়ি।চারুকে আনাফের রুমে নিয়ে বসানো হয়।চারু পুরো রুমটা ঘুরে দেখে।অনেক বড় রুম।সাথে বারান্দা।বারান্দা টা চারুর অনেক পছন্দ হয়েছে💕।চারু কী করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা।অনেক আনইজি ফিল হচ্ছে ওর😖😨।

-----চারু........

চারু নিজের নাম শুনতেই পিছনে ফিরে তাকায় দেখে আনাফের মা ডাকছে তাকছে😑।চারু কাপা কাপা গলায় বলল,,,,,

চারুঃজ্বী,বলেন
মাঃআমি তোমার কী হই?
চারুঃশাশুড়ি!!
মাঃতাহলে আমাকে মা বলে ডাকবে কেমন?
চারুঃআচ্ছা😊।
মাঃশুনো এখন থেকে আনাফকে দেখে রাখার দায়িত্ব তোমার।ওকে কখনো কস্ট দিও না🙂।ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলেটা একা একা বড় হয়েছে।দেখতে পায় না,একা একা থাকতো।আমি তোমাকে বিশ্বাস করু।আমি জানি তুমি আমার বিশ্বাস ভাংগবে না।
চারুঃআমি আমার যথাসাধ্য চেস্টা করবো!আচ্ছা একটা কথা জিগ্যেস করি?
মাঃসিউর!
চারুঃআচ্ছা উনাকে কেউ চোখ দিলো না?আপনারা বিভিন্ন হাসপাতালে খুজতেন পেয়ে যেতেন।
মাঃনারে মা অনেক খুজেছি😥।পাইনি!পেলেও ওর ব্লাডের সাথে মিলেনা।ওর ব্লাড গ্রুপ এবি-🥺।
চারুঃবলেন কী!! আমারও তো এবি-☺
মাঃতাই নাকি☹।আচ্ছা আমি এখন আসি।কিচ্ছুক্ষন পর আনাফ আসবে রুমে🥰।
চারুঃআচ্ছা।

এই বলে উনি চলে যান। চারু বসে থাকে একা একা।কিচ্ছুক্ষন পর আনাফ আসে রুমে।শবনম মানে আনফের বোন এসে রুমে দিয়ে যায়।আনাফ কে খাটে বসিয়ে চলে যায় শবনম।

আনাফঃতুমি কী জানো আমি দেখতে পাই না!
চারুঃহ্যা জানি!
আনাফঃতাহলে জেনেশুনে কেনো বিয়ে করলে আমাকে?কেনো জেনেশুনে নিজের জিবন নস্ট করলে?
চারুঃ.........(নিশ্চুপ)
আনাফঃআচ্ছা বাদ দাও।আচ্ছা ছাদে যাবে?আজকে আকাশটা অনেক সুন্দর।
চারুঃআপনি কিভাবে দেখলেন😯?
আনাফঃহাহাহাহা😅😅।আমি কীভাবে দেখবো?ফিল করেছি🙂।
চারুঃঅহহ আচ্ছা।চলেন যাই😚

আনাফ কে দুহাত দিয়ে ধরে চারু নিয়ে যায়।সিড়ির সামনে এসে আনাফ বলে আমি আর যেতে পারবো।ছেড়ে দাও।.....

চারুঃআজব তো!!সরেন আমি নিয়ে যাবো।
আনাফঃছাড়ো আমাকে আমি যেতে পারবো।
চারুঃজেদ ধরবেন না!

আনাফ একপ্রকার জোর করে চারুর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করে।টার্গেট করে ৩-৪ সিড়ি উঠতে পারে।আর বাকিগুলো উঠতে নিলেই পা পিছলিয়ে পড়ে যায়।চারু দৌড়ে আসে।

চারুঃদেখলেন তো?পড়ে গেলেন। বলেছিলাম না।ভালো কথা কানে যায় না।😕😡।এখন মাকে আমি কী বলবো??????

আনাফঃআগে তো আমাকে তুলো🙁😒।।

চারু অনেক কস্টে টেনে আনাফকে মাটি থেকে তুলে। এরপর নিচে চলে যায়।রুমে নিয়ে আসে।

চারুঃআরে আপনার পা তো মচকে গেছে।খুব ভালো হইছে।না পারলাম ছাদে যাইতো।বজ্জাত কোথাকার।

জোরে শব্দ করে হেসে দিলো আনাফ।চারুর রাগ সপ্তম আকাশে আনাফের হাসি দেখে।রাগে গজগজ করে আনাফকে বলে,,

-----খুব হাসি হচ্ছে না?? সরেন, আমি ঘুমাবো😡।
-----ইসস তোমার মুখের হাসিটা যদি দেখতে পারতাম।

আনাফের মুখে এমন কথা শুনে চারুর রাগান্বিত মুখ নিমিশেই ফ্যাকাসে হয়ে যায়।চারু আর কিছু না বলে আনাফকে ঘুমিয়ে যেতে বলে।আনাফও ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়।।চারু ওয়াশ্রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে।

চারুঃধুর ছাই☹।কারো বাথরুম এত্ত বড় হয় নাকি।মনে হচ্ছে আস্ত একটা হাতি🥴।আমাদের বাড়ির দুই রুম মিলেয়ও এত্ত বড় হবে না।উফফফ এখানে তো যে কেউ সংসার করতে পারবে সুখে শান্তিতে😒।ধুর ভাল্লাগেনা,এখানে কী আমি দৌড়াদৌড়ি করবো?🤦‍♀।আল্লাহ তুমি রহম করো যে এই বাথরুম টা বানাইছে🤦‍♀।(মনে মনে)

চারু বকবক করতে করতে বের হলো🤦‍♀।দেখে আনাফ ঘুমাই গেছে।চারু ও ঘুমিয়ে পড়বে ভাবে।কিন্তু কই ঘুমাবে সে?

চারুঃআচ্ছা আমি কই ঘুমাবো?আমি কী উনার পাশে গিয়ে শুবো?না না,,,🤦‍♀।আমার তো লজ্জা করে। কোথায় যে ঘুমাই☹।

চারু এদিক-ওদিক তাকায় দেখে পাশেই একটা সোফা আছে🤩।

----এই তো পেয়েছি এই সোফায় ঘুমাবো।

একটা বালিশ এনে ঘুমিয়ে পড়ে চারু।

🍁

ফজরের আজান শুনে চারুর ঘুম ভাংগে।আড়মোড়া ভাংতে ভাংগতে উঠে চারু।বারান্দায় যায় চারু।

বারান্দায় শীতল হাওয়া বইছিলো।চারুর মন ভরে যায়।

চারুঃইশসসস এক কাপ চা/কফি হলে অনেক ভালো হতো!😒😒😒কিন্তু আমি এখানকার রান্নাঘর কিছুই তো চিনি না জানিনা।কিভাবে বানাবো😒।(মনে মনে)

চারু বারান্দায় দাড়িয়ে চোখ বুজে শীতল হাওয়া মন ভরে অনুভব করতে থাকে।কিচ্ছুক্ষন পর চারু ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়তে যায়।নিজের নামাজ পড়া শেষে আনাফ কে ডাকতে যায়।আনাফের ঘুমন্ত শান্তশিষ্ট চেহারা দেখে আর ডাক দেয় না। ভাবে সকালে উঠে পড়ে নিবে💗।

এরপর চারুও ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে❤.........

চলবে........

 #গোলাপ_সুন্দরী!  #পর্ব:- ০৫+৬ও শেষ পর্ব রামিশা বললো, " আপনি নাদিমের কাছে কল করেছিলেন কেন? তাও আবার নতুন নাম্বার দিয়ে। "...
11/08/2025

#গোলাপ_সুন্দরী!
#পর্ব:- ০৫+৬ও শেষ পর্ব

রামিশা বললো, " আপনি নাদিমের কাছে কল করেছিলেন কেন? তাও আবার নতুন নাম্বার দিয়ে। "

নাতাশা এবার কেঁদে উঠলো। রামিশা চুপচাপ তার দিকে তাকিয়ে রইল। নাতাশা যেন হঠাৎ করে গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিল।
বললো,
" অফিসে বসে ফাহিমের সঙ্গে নাদিমের সকল কথোপকথন আমি শুনতে পাই। হঠাৎ করে নাদিম কেন আমার স্বামীর কাছে গেল, আর নতুন করে তার উদ্দেশ্য কি। এসব জানার জন্য নাদিমের সঙ্গে কথা বলতে কল করেছিলাম। "

" ৪ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড কথা হয়েছে। তারপর কল কেটেছিল কে? আপনি নাকি নাদিম? "

" নাদিম কেটে দিয়েছে, কল কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছিল। "

" আপনাদের মধ্যে কিরকম কথা হয়? "

" আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম আমার স্বামীর সাথে দেখা করার কারণ কী? তারপর আমার বাবার কাছ থেকে কত টাকা নিয়ে আমার জীবন থেকে চলে গেছে ইত্যাদি। "

" আপনার মেয়ে কিডন্যাপ করার কোনো হুমকি সে দিয়েছে? "

" না। "

" আপনি কল করার ১৮ মিনিট আগে আপনার স্বামী তাকে কল করেছিল। "

" আমি সেটা জানতাম না। "

" ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি, সাজু ভাই এলে হয়তো আবারও নতুন করে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে। আপনারা স্বামী স্ত্রী দুজন মিলে সবকিছু গন্ডগোল করে দিয়েছেন। "

" আমার মেয়ে। "

" আপনার মেয়েকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে হয়রানি করছেন। তাই না? "

" না, বিশ্বাস করুন এরকম কিছু না। "

" আমার কাছে প্রশ্ন করার মতো আর কিছু নেই। বাদবাকি সব সাজু ভাই এসে বলবে। "

কেবিন থেকে বের হয়ে গেল রামিশা। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে সিএনজি নিয়ে সরাসরি আপুর বাসায় রওনা দিল।

★★★

নাতাশাদের বাসার দারোয়ান বারবার একই কথা বলে যাচ্ছেন। ফাহিম সাহেবকে পুলিশ যখন ধরে নিয়ে যায় তখন পুলিশ ছাড়া আর কোনো মানুষ গেইট দিয়ে প্রবেশ করে নাই।

সাজু ভাই ও দারোগা আকাশ শেখ দুজন মিলে ফাহিমদের ফ্ল্যাটে গেল। উপর থেকে ফাহিমের বন্ধু পাভেল সাহেবকে ডেকে আনা হয়েছে। সাজু ভাই বললেন,

" গভীর রাতে যখন পুলিশ আসে তখন আপনি কীভাবে জানতে পেরেছেন? "

" আমি তখন বেলকনিতে বসে আছি। হঠাৎ করে বাসার সামনে পুলিশের গাড়ি দেখে অবাক হয়ে গেলাম৷ তারপর ইন্টারকমে দারোয়ানকে কল দিয়ে জানতে পারি। "

" একটা ভেজাল আছে। "

" মানে? "

" আপনি যদি পুলিশকে দেখে দারোয়ানকে কল দিয়ে জানতে পারেন। তাহলে উপর তলা থেকে ফাহিম সাহেবের ফ্ল্যাটে আসতে আপনার সময় লাগবে সর্বোচ্চ দুই মিনিট। "

" সেরকমই তো লেগেছিল। "

" পুলিশ বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে, তারপর এসে কলিং বেল বাজালো, দরজা খোলা হলো, ফাহিম সাহেবের সঙ্গে কথা হলো। সবমিলিয়ে ২০/২৫ মিনিটের কম হবে না। তারচেয়ে আরো বেশি হতে পারে। তাহলে আপনার দুই মিনিট কোই? "

পাভেল সাহেবের স্ত্রী বললেন,
" আসলে উনি প্রথমে একটু সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল। আসবো কি আসবো না, এরকম চিন্তা করতে করতে সময় কেটে যায়। "

" আচ্ছা আপনার কথা মেনে নিলাম। কিন্তু যখন আপনার স্বামী জানলেন যে ফাহিমের বাসায় পুলিশ এসেছে। তখন অন্তত ফাহিমের নাম্বারে একটা কল দেবে তাই না? আমরা তো এটাই করি সচারাচর। কেন পুলিশ এসেছে, কি কারণ ইত্যাদি জানার জন্য। "

" আমাদের কারো মোবাইলে ব্যালেন্স ছিল না। "

সাজু একটু চুপ করে রইল। তারপর দারোগা আকাশ শেখকে বললেন,
" পাভেল সাহেবের নাম্বারটা কললিস্ট চেক করে দেখবেন। সেই রাতে তিনি ওই সময় কারো সঙ্গে কল দিয়ে কথা বলেছে কিনা। "

অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ফাহিম সাহেবের বন্ধু পাভেল রহমান। সাজু আর সময় নষ্ট করতে চাইল না। রামিশা কিছুক্ষণ আগে টেক্সট করেছে। তার বোনের বাসায় যেতে বলেছে, জরুরি কথা আছে। কি জরুরি কথা সেটা বলে নাই। তাই এখান থেকে বের হয়ে বাইক নিয়ে সরাসরি রামুর আপুর বাসায় রওনা দিল সাজু ভাই।

★★★

দরজা খুলে মলিন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রামিশা। সাজু ভিতরে যাবার পথ পাচ্ছে না, কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থেকে দরজা থেকে সরে গেল। রামিশার সঙ্গে ড্রইং রুমে গিয়ে বসলো সাজু। রামিশা কিছু না বলে ভিতরে চলে গেল, সাজু ভাই তার সামনে রাখা আজকের সকালের পত্রিকা হাতে টেনে নিল।

দুই মিনিটের মধ্যে রামিশার বাবা ড্রইং রুমে এসে সাজুর সামনে বসলো। সাজু ভাই দাঁড়িয়ে সালাম দিলেন।

" আসসালামু আলাইকুম। আঙ্কেল কেমন আছেন? "

" ওয়া আলাইকুমুস সালাম, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। বসো বাবা। "

সাজু বসলো, রামিশাকে এখনো দেখা যাচ্ছে না। সাজু একটু ইতস্তত করতে লাগলো। রামিশার বাবা নিজেই আবার বললেন,

- তোমার বাড়ির সবাই কেমন আছে?

- সবাই ভালো আছে।

সাজুর মোবাইল বেজে উঠলো। অনুমতি নিয়ে সেখানে বসেই কল রিসিভ করলেন সাজু ভাই। মিনিট খানিক কথা বলে কলটা কেটে দিল। তবে তার কথা বলার ভঙ্গিতে আঙ্কেল বুঝতে পেরেছে সাজুকে এক্ষুনি যেতে হবে।

- তোমাকে কি এখনই বের হতে হবে?

- একটু তাড়া ছিল আঙ্কেল, একটা খু/নের তদন্ত চলছে। সেদিকে একটু ব্যস্ততা।

- আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে কথা শেষ করবো।

- বলেন আঙ্কেল, সমস্যা নেই।

- দেখো বাবা, আমি আমার ছোট মেয়ে রামিশাকে খুব ভালোবাসি। আমি জানি তোমরা দুজন অনেক ভালো বন্ধু। একজন আরেকজনকে খুব ভালো করে চেনো।

- জ্বি।

- তুমি খুব ভালো একটা ছেলে। কিন্তু সবসময়ই আমার একটা ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়।

- ঠিক বুঝলাম না আঙ্কেল।

- তোমার যে পেশা, এতে সবসময় টুকটাক কিছু বিপদের সম্ভাবনা থাকে। শত্রুদের সঙ্গে তোমার কাজকর্ম, তাদের নিয়েই তোমার সবকিছু। তাই আমি আমার মেয়েকে এরকম বিপদের মধ্যে রাখতে চাই না।

- আচ্ছা।

- ডিটেকটিভ পেশা না হয়ে তোমার যদি যেকোনো একটা পেশা হতো তাহলে আমি হাসতে হাসতে আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিতাম।

- বুঝতে পারছি, আঙ্কেল এটা আমার পেশা নয়। নিজের সখ থেকে এটা করা হয়। তাছাড়া নিজেকে একপ্রকার ব্যস্ত রাখার একটা কৌশল।

- হ্যাঁ সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি তো পুরোপুরি এটা ছেড়ে দিয়ে নতুন করে কোনো পেশায় নিজেকে জড়াবে না তাই না?

- সেরকম ইচ্ছে নেই। টাকাপয়সার প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ আমার নেই। বাবা লন্ডনে আছে, গ্রামের বাড়িতে দাদা-দাদি এখনো জীবিত। আজ এখানে কাল সেখানে, এরকম চলছে জীবন।

- সেজন্য আমি বলছিলাম যে....

- এ ব্যাপারে রামিশার সঙ্গে কথা বলেছেন?

- হ্যাঁ।

- তার মতামত কী?

- সে আমাকে সম্মান করে, বাবা হিসেবে আমার কথা সে রাখবে।

- ঠিক আছে। তবে আপনার কাছে অনুরোধ যে আমাদের মাঝে মাঝে যোগাযোগ হবে। জীবন সঙ্গী হবে না তাই বলে যে যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে এমনটা তো নয়। বন্ধুত্ব বজায় থাকুক।

- সেটা অবশ্যই।

- আমি তাহলে আসি?

- দাঁড়াও রামিশাকে ডাকি, একটু নাস্তা করে যাও।

- থাক ডাকতে হবে না, আমার একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে। এক নিরপরাধ ব্যক্তি জেলে আছেন, তার স্ত্রী হাসপাতালে, আবার তাদের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে কিডন্যাপ হয়েছে। মেয়েটাকে উদ্ধার করতে হবে তাই সেখানেই যাবো এখন।

- ঠিক আছে বাবা, আবার দেখা হবে।

- ইন শা আল্লাহ, ভালো থাকবেন আঙ্কেল।

খুব দ্রুত দরজা খুলে বের হয়ে গেল সাজু ভাই। বাসার নিচে এসে বাইক নিয়ে গেইট দিয়ে বাহির হয়ে রাস্তায় নামলো। হঠাৎ কি মনে করে তিনতলা বেলকনিতে তাকালো। রঙিন লাইটের আলোতে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। চিনতে মোটেই অসুবিধা হলো না সাজু ভাইয়ের।

পকেটে মোবাইলে মেসেজ আসার শব্দ হলো। মোবাইল বের করে মেসেজ চেক করলেন।

" সাবধানে থাকবেন সাজু ভাই, যেখানেই থাকেন, নিজের খেয়াল রাখবেন। "

মোবাইল রেখে বাইক স্টার্ট দিলেন। তাকে এখন দ্রুত যেতে হবে নাদিম যেখানে খু/ন হয়েছে তার ঠিক অপজিটের বিল্ডিংয়ে। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ রাতের মধ্যে খুনিকে পাওয়া সম্ভব হবে।
!
#পর্ব:- ০৬ (সমাপ্ত)

যে বিল্ডিং থেকে নাদিমকে গু/লি করা হয়েছে সেই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে গ্রেফতার করা হলো। দারোগা আকাশ শেখ লোকটাকে গাড়িতে তুলে নিলেন।
সাজু বললো,
- আপনার মেয়েকেও তার জামাইসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনজন মিলে যে পরিকল্পনা করে এগিয়ে গেছেন সবটাই প্রশংসার।

বৃদ্ধ কিছু বললেন না। পুলিশের গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের পিছনে পিছনে থানায় যাচ্ছে সাজু ভাই। শেষটা যদিও তার জানা, তবুও এদের মুখ থেকে শুনতে ইচ্ছে করছে।

সাজুর সবচেয়ে বেশি রাগ নাতাশা ও তার স্বামী ফাহিমের উপর। দুজন মিলে ঘটনার সত্যতা গোপন করতে গিয়ে গোলমাল করে ফেলেছে। একটা মিথ্যা লুকানোর জন্য অনেক গুলো মিথ্যা কথা বলতে হয়। মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বিনা প্রয়োজনে মিথ্যা কথা বেশি বলে।

নাতাশাদের বাসা থেকে বের হয়ে রামিশার আপুর বাসায় যাবার সময় রাস্তায় হঠাৎ বাইক দাঁড় করান সাজু ভাই। মোবাইল বের করে দারোগা আকাশ শেখকে কল দিয়ে পুনরায় ওই বাসায় যেতে বলে। পাভেল সাহেবের বাসা ভালো করে অনুসন্ধান করতে বলে দেয় সাজু।

পাভেল সাহেব ও তার স্ত্রীর কথা বেশ অবাক করে তাকে। পাভেলের স্ত্রীর মুখটা যেন পরিচিত পরিচিত মনে হচ্ছিল তখন। হঠাৎ করে তার মনে পড়ে যে দারোয়ানের সঙ্গে দেখা করতে যাবার সময় সেই বিল্ডিংয়ের সামনে এই মেয়েকে দেখেছিল সাজু। আর তখনই চট করে সাজু কল করে আকাশ শেখকে।

পাভেলদের বাসা থেকেই রুমকিকে পাওয়া যায়। গতকাল এরকম ঘটনার পরে সারাদিন চেষ্টা করে রুমকিকে বাসা থেকে বের করার সুযোগ পায়নি স্বামী স্ত্রী কেউ ই। রুমকি তার মা-বাবার জন্য কান্না করছিল বলে তাকে ওষুধ দিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

রামিশার বাবার সঙ্গে কথা বলার সময়ই দারোগা কল দিয়ে জানান রুমকিকে পাওয়া গেছে। আর তখনই সাজু তাদেরকে ওই দারোয়ানের কাছে যেতে বলেন। পুলিশ এসে তাকে ধরতে ধরতে সাজু নিজেও চলে এলো।

★★★

পাভেল যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তার স্ত্রী রাগে গজগজ করছে আর ফুলছে। ফাহিম কিছুটা জানতে পেরে অবাক হয়ে যায়। রুমকিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেছে শুনে আনন্দিত মনে হচ্ছে তাকে।

থানাতেই পরপর দুবার বমি করে সাজু। এদের তিনজনের কাউকেই প্রশ্ন করার শক্তি নিজের মধ্যে পাচ্ছে না। দারোগা আকাশ বারবার জিজ্ঞেস যতটুকু ফাইলে রেকর্ড করেছেন তা হলো,

বৃদ্ধ ওই দারোয়ান পাভেলের শশুর। তার স্ত্রী ও শশুর দুজন মিলে আট বছর আগে মারা যাওয়া পাভেলের স্ত্রীর বড়ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে। পাভেলের স্ত্রীর নাম পপি, ভার্সিটির মধ্যে কোন একটা বিশেষ কারণে পপির বড়ভাই মারা যায়। রহস্যজনক মৃত্যু হলেও কেউ তখন মৃত্যুর রহস্য বের করতে পারে নাই। কিন্তু বছর খানিক আগে হঠাৎ তারা জানতে পারে যে নাতাশা ও নাদিমই পপির ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী।

তারপর থেকে পরিকল্পনা শুরু। দুমাস আগে হঠাৎ নাদিম। যেখানে থাকতো সেখানে দারোয়ান হয়ে চাকরি নেয় পপির বাবা। তারপর থেকে পরিকল্পনা শুরু হয় আরেকটু ভিন্ন করে।

ঘটনাচক্রে জড়িয়ে ফেলে ফাহিম ও নাতাশাকে। খু/ন করে খু/নের অপরাধ অন্যের ঘাড়ে দেবার নিখুঁত চিন্তা করে তিনজন মিলে। পাভেল আপত্তি করে ঠিকই কিন্তু স্ত্রীর জন্য কিছু বলে না।

নাদিম সেদিন ফাহিমের সঙ্গে দেখা করার জন্য গেছে সেটা জানতে পারে পপি। তারপর বাবার কাছে কল দিয়ে বলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ফেলতে হবে।

বিকেলে জানালার পাশে নাদিম আসে। নিচ থেকে সেটা দেখা দ্রুত সাইলেন্সর লাগানো পি/স্তল দিয়ে গু/লি করে পপির বাবা।

সবকিছু তারপর স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করে ওরা। রাতে ফাহিমের বাসায় পুলিশ যাবার সময় আৎকে উঠে পাভেল ও তার স্ত্রী। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারে তাদের প্ল্যান সাকসেসফুল হয়ে গেছে। ঝামেলা আরেকটা পাকাপোক্ত করার জন্য সেই রাতে সুযোগ বুঝে রুমকিকে নিচ থেকে নিজের বাসায় নিয়ে যায় পাভেল।

নাতাশা নিচতলা থেকে এসে মেয়েকে দেখতে না পেয়ে কান্না করে। তখন স্বামী স্ত্রী দুজনেই আবার এসে উপস্থিত হয়।

সাজুর মাথা ঘুরছিল। ফাহিম সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো,

- মাঝখান থেকে আপনারা স্বামী স্ত্রী দুজনেই নাটক করেছেন। এরা তিনজন কেউ পেশাদার নয় তাই খুঁজে বের করা সহজ হতো। কিন্তু আপনি ও আপনার স্ত্রী যে হয়রানি করেছেন তার শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আপনাদের বিরুদ্ধে পুলিশ নিজেরাই মামলা করবে।

আর কোনো কথা না বাড়িতে দ্রুত থানা থেকে বেরিয়ে গেল সাজু ভাই। এখনই হাসান ভাইয়ের বাসায় যেতে হবে। তাদের কাছে বিদায় নিয়ে আজ রাতের মধ্যে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবার পরিকল্পনা আছে।

★★★

রাতের মধ্যে সাজু রওনা দিতে পারলো না। আপন ভাইয়ের মতো বড়ভাই হাসান ও তার স্ত্রী দুজন মিলে তাকে রেখে দেয়। সারাদিনের ক্লান্তি আর অসুস্থতার জন্য খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়।

সকাল আটটার দিকে সাজুর ঘুম ভেঙ্গে তার বাবার কল পেয়ে। মোবাইলের স্ক্রিনে বাবার নাম দেখে অবাক হয়ে যায়। লন্ডনে স্থানীয় সময় এখন রাত তিনটা। এতো রাতে বাবার জেগে থাকার কথা নয়।

- আপনি কেমন আছেন?

- আমি তো ভালো আছি। একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেল, তুই কেমন আছিস বাবা?

- আমি ভালো আছি। আপনি এতো রাতে কল দিবেন বুঝতে পারিনি। আমাদের এখানে তো সকাল আটটা বেজে গেছে।

- তুই এখন কোথায়?

- ঢাকা আছি, আজ বাড়িতে যাবো।

- সাজু শোন।

- বলেন।

- আমার কাছে এসে থাকা যায় না বাবা?

- যায়, আমি চাই না আপনার কাছে থাকতে।

- আমাকে তোর ভালো লাগে না তাই না?

- (চুপচাপ)

- ঠিক আছে সাবধানে থাকিস।

- আব্বু শুনুন।

- বল।

- মায়ের পরে এই পৃথিবীতে আমি আপনাকেই বেশি ভালোবাসি। মাকে বেশি ভালোবাসতাম, মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মা মারা গেল। সেজন্য আমি আর আপনার কাছে যাই না। আপনাকে যদি হারিয়ে ফেলি তাই। বাবা আমি কল রাখি তাহলে?

- সাজু শোন।

- জ্বি বলেন।

- তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।

সাজু কল কেটে দিল। জানালা দিয়ে রোদের কিছু আলো বিছানায় পড়েছে, বেশ চমৎকার সেই আলোমাখা আকাশপটের দৃশ্য।

★★★

বাতি বন্ধ করে মশারীর মধ্যে বসে ছিলাম। হঠাৎ করে বাতি জ্বলে ওঠে। আমার রুমমেটের নাম সবুজ। সবুজ ভাই বললো,

- এখনো ঘুমাননি সাইফুল ভাই?

- ঘুম পাচ্ছে না ভাই।

- সাহরি খেতে উঠতে হবে চলেন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাই।

- আপনি ঘুমাবেন?

- হ্যাঁ।

- তাহলে আপনার ফোনটা একটু দিবেন? গল্প লিখতে ইচ্ছে করছে খুব কিন্তু সপ্তাহ খানিক ধরে তো মোবাইল নেই। আপনার ফোন দিয়ে লিখতে পারতাম।

সবুজ ভাইয়ের মোবাইল দিয়ে গল্পটা শেষ করার চেষ্টা করছি। মাস খানিকের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কাহিনি সবকিছু ভুলে গেছি। কীভাবে কি পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম সবকিছুই ভুলে গেছি মনে হচ্ছে। তারপর নতুন করে চেষ্টা করছি যেন শেষ করতে পারি। অনেকটা হাত-পা বেঁধে রাখার মতো একটা যন্ত্রণা ছিল এটা নিয়ে।

,,,,,সমাপ্ত

জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন সবসময়। আসসালামু আলাইকুম।

এম.ডি. সাইফুল ইসলাম।

Address

Sylhet

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Choto Dairy 01 posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Choto Dairy 01:

Share