Choto Dairy 01

Choto Dairy 01 আল্লাহ সর্বশক্তিমান
(5)

02/12/2025

রিলেশনের তিন বছরের মাথায় আমার বয়ফ্রেন্ডকে আমারই বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে ইরোটিক সিচুয়েশনে দেখে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল যেন। এই দুইটা মানুষকে আমি আমার অস্তিত্বের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করেছিলাম। আর তারপর আমার সাথে যা করল তারা, তা কি আদৌ আমি ডিজার্ভ করি?

জামা-কাপড় থেকে শুরু করে পছন্দের সবকিছু, ইনফ্যাক্ট ফ্রেন্ড সার্কেলটাও শেয়ার করে নিয়েছিলাম যেই মেয়েটার সাথে, সে কেড়ে নিল আমার শখের পুরুষকে। আর যেই লোকটাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছিলাম, সে প্রতারণা করল; ছুড়ে ফেলে দিলো ভঙ্গুর প্রিয়ম মুর্তজাকে। তার প্রতি আমার এতটাই আস্থা ছিল যে, সে আমাকে ঠকিয়েছে–এই সত্যটাটাকে সত্য হিসেবে মেনে নিতেই তিনদিন লাগিয়ে ফেললাম। একটা ছোট্ট লাইনে যদি আমার এ অবধি লাইফটাকে ডিসক্রাইব করতে বলা হয়, তবে বলব–সে ছিল রেডফ্ল্যাগ আর আমি কালারব্লাইন্ড; রেড-গ্রীন আমার কাছে ধূসর।

দোষ শুধু এটুকুকেও দেওয়া যায় না। যখন আমরা নির্দিষ্ট একটা বিষয়কে ‘কখনো ঘটবে না’ বলে মেনে নিই, তখন সেই বিষয়টা ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়; মেনে নেওয়ার কষ্টটাও বাড়ে সমানুপাতিক হারে। সেই ঘটনাটা ছিল আমার লাইফের টার্নিং পয়েন্ট। একবিকেলের ব্যবধানে কত কিছু হারালাম–তার হিসেবে এলে আমি তাচ্ছিল্যভরা হাসি। পেয়েছিও নেহাত কম নয়। ডিপ্রেশন, এনজাইটি, ইনসমনিয়া, ডিমেনশিয়া, খিদেমন্দতা, কান্নারা গলার মধ্যভাগে আটকে গিয়ে শ্বাসেদের পথরুদ্ধতা আর নতুন করে বাঁচবার খোয়ায়িশ…

বাস্তবে ঘটা ওই দৃশ্যটা আমাকে স্বপ্নেও স্বস্তি দেয় না; ছটফট করতে থাকি একটুখানি ভালো থাকতে। যখন আমি সুখ খুঁজতে পুরোদস্তরভাবে মরিয়া হয়ে পড়লাম–আমাকে শান্তি এনে দিলো আমার প্রাণ। আমার ধ্রুব!
____

মেঝেতে পড়ে থাকা এই কালচে বাদামি রঙের ডায়ারিটা বাতাসের বদৌলতে শুরুর দিককার একটি পৃষ্ঠায় এসে থমকে আছে। প্রিয় বারান্দার মেঝেতে এসে বসল। বাঁ হাতে আলগোছে ডায়ারিটা তুলে নিজের কোলের ওপর রাখল। স্থির তাকিয়ে রইল সুবিশাল আকাশের দিকে, যার বিশালতার মাঝে ছড়িয়ে আছে তার গল্প। তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে সে বিড়বিড় করে উঠল, “প্রিয় অম্বর, বলো তো… কার হৃদয়ের দুঃখ গহীন? কার যন্ত্রণা বেশি তীব্র, তমসাচ্ছন্ন? তোমার না আমার? বলো বলো…”

শূন্যে ভাসমান মেঘেরা গর্জে উঠল ক্ষীণ শব্দে। স্মিত হাসল প্রিয়।

সেই ঘটনার আজ তিন বছর পেরোলেও, বুকের ভেতর চাপা পড়ে যাওয়া দুঃখেরা সময়ে-অসময়ে জ্বালাতন করা বন্ধ করেনি। এই যে–সে হাসে, সে আনন্দ-উল্লাসে মাতে, সে ঘোরাঘুরিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখে! এসবের মধ্যে থেকে কেউ কখনো দেখতে পায় না, তার বুকের কোন জায়গায় গিয়ে একটা কাটা তাকে প্রতিনিয়ত ক্ষত দিয়ে যাচ্ছে। অনুভূতির এতশত জ্বালাতনের মধ্যে অকস্মাৎ সে বড়ো করে শ্বাস টেনে নিজের বাঁ পাশে তাকাল। ধ্রুব বসে আছে নিশ্চুপ হয়ে। বিস্মিত প্রিয় শুধাল, “কখন এলেন?”

ধ্রুবর শান্ত ও গম্ভীর স্বর, “এইমাত্র।”

যখন যখন প্রিয়র খুব করে এই লোকটাকে প্রয়োজন হয়, কীভাবে কীভাবে যেন সে টের পেয়ে যায়! প্রিয়র খুশি বাঁধে আটকায় না। এখনকার এই ঝড়ের আগমুহূর্তের শান্ত পরিবেশে এই লোকটাকেই তো সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। সে একনিমিষেই পালটে গেল, উচ্ছ্বসিত বাচ্চার মতো ধ্রুবর কাঁধে মাথা রেখে বলল, “আপনাকেই খুঁজছিলাম।”

“আমি জানি।”

“হুম..সব জানেন। আমার সবজান্তা লোক!”

ধ্রুব হাসছে। একহাতে আগলে রেখেছে প্রিয়র কাঁধ, মাঝে মধ্যে এলোমেলো চুলগুলো হাতের সাহায্যে গুছিয়েও দিচ্ছে। তার এসব করতে ভালো লাগে, অদ্ভুত ও অনিন্দ্য শান্তি লাগে।

প্রিয় ধীরে ধীরে ঘুমে তলিয়ে যেতে লাগল। ধ্রুব অন্যহাতে ডায়ারিটা গুছিয়ে ফেলে মেয়েটার নিষ্পাপ মুখশ্রীর দিকে অপলক তাকিয়ে রইল।

কিছুক্ষণ পর প্রিয় ঘুম জড়ানো আওয়াজে ডাকল, “ধ্রুব?”

“শুনছি।”

“আপনিও কি ছেড়ে চলে যাবেন?”

“না।”

“সবাই তো চলে যায়। আপনি কেন যাবেন না?”

“আপনি জানেন প্রিয়দর্শিনী, কেন যাব না।”

প্রিয় ঘুমের ঘোরেই মুচকি হাসল, “আমার ধ্রুব! আর এজন্যই আপনাকে আমি এত ভালোবাসি। ঘুম পাড়িয়ে দিন এখন। আর তার আগে একশত আটচল্লিশটা চুমু।”

“এত কেন?”

“আপনি এতগুলো মিনিট আমার চোখের সামনে ছিলেন না। এখন এতটা চুমু খেয়ে আমায় শান্ত করবেন। আমি আদর খেতে খেতে ঘুমাব।”

ধ্রুব সত্যি সত্যি চুমু খেতে লাগল। মাথায়, কপালে, চোখে, গালে, নাকে, চিবুকে! এই স্পর্শে কেবল ও কেবলমাত্র ভালোবাসা আছে।

____

আজ শুক্লপক্ষের শেষ তিথি, পূর্ণচাঁদের রাত। চাকচিক্যময় এই শহরটিতে কখনো আঁধারিয়া দেখা যায় না। কখনো-সখনো মনের মলিনতাও যা খানিক আঁধারের স্রষ্টা সাজে, অন্যথায় তা-ও না। ওদিকে চাঁদের পূর্ণাঙ্গতায় আজ যেন আক্ষরিকভাবেই রাজধানীতে ঐশ্বর্য ফিরেছে।

গুলশানের একটি সিক্সথ ফ্লোরের অ্যাপার্টমেন্টের তমসাচ্ছন্ন বারান্দায় বসে চাঁদের সাথে কারো তুলনায় ডুবে ছিল আশফিক রহমান শ্রেয়ান। পরনে কৃষ্ণাভ টি-শার্ট, ট্রাউজার। ডান হাতটিতে একটা সলভড কিউব, একটু পর পর অক্রমিক করছে, তারপর আবারও সমাধানের ইচ্ছেতে সক্রিয় হয়ে উঠছে হাতদুটো। ভেজা চুলগুলোর পানি শুকোয়নি, ঝুঁকে বসে থাকার দরুন টপটপ করে সামনের চুল বেয়ে পানির ফোঁটা যত্রতত্র ছুঁয়ে ফেলছে। বাসায় ফিরতে আজ তার রাত হয়ে গিয়েছে। তারপর একটা ল-ম্বা শাওয়ার শেষে বিনিদ্র রজনী এই এত সুন্দর চাঁদকে সে উৎসর্গ করল আরেক চাঁদের বিভ্রমে। সেই চাঁদ তাকে আসমান ভাবত, বুকে আগলে রাখা আসমান। অথচ, আকাশের বুকে লক্ষ তারার বসতি কখনও নিয়ম-বহির্ভূত নয়। মেয়েটা যে কেন তা বুঝল না… খুব মায়া হলো শ্রেয়ানের। আবারও কিছু একটা ভেবে সে মোহাচ্ছন্নভাবে হাসল, মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে রইল শূন্যে। সে খুব করে টের পেল, এ ঘোর সহজে কাটবার নয়।

অথচ ঘোর কাটাতে প্রকৃতি তৎপর। তৎক্ষণাৎ তার মুঠোফোনটি সাইড বক্সের ওপর ভাইব্রেট করে উঠল। কপাল কুঁচকে ফেলল সে, ফোনটা হাতে তুলল। কল রিসিভ করে কানে নিতেই, ওপাশ থেকে এক মেয়েলি আওয়াজ ভেসে এলো, “হ্যালো...”

আননোওন নম্বর। ট্রু কলারে কলার-আইডি ভেসে আসছে ‘তুশি’ নামে। শ্রেয়ানের মনে পড়ছে না সে তুশি নামের এই মেয়েটিকে চেনে কি না। মনে করার চেষ্টাও করল না।

ওপাশ থেকে জবাব না পেয়ে তুশি হাঁসফাঁস করে যাচ্ছে। একহাতে ক্রমাগত ওড়নাটা পেঁচাচ্ছে, খুলছে। পায়চারি থামানোর নাম তো নেই-ই। সে আবার ডাকল, “আশফিক ভাই?”

শ্রেয়ান গা এলিয়ে দিলো সোফাটিতে। আকাশের দিকে চোখ দুটো স্থির রেখে বলল, “বলো, তুশি।”

তুশি অবাক হলো। চোখ বড়ো বড়ো তার, ফোন নিয়ে এলো সম্মুখে। পাশ থেকে আয়াত ইশারায় শুধাল, “কী হয়েছে?”

তুশি নিজেকে সামলাতে গুণে গুণে আড়াই সেকেন্ড নিল। এরপর ফোন আরেকটু দূরে সরিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “আমার নাম বলল.. চিনল কী করে!”

আয়াত মোটেও অবাক হলো না, “চিনলে চিনেছে।”

তুশি প্রচণ্ড উত্তেজিত। ফোনটা আবার কানে তুলে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল, “ভালো আছেন, আশফিক ভাই?”

“কী জন্য কল দিয়েছ?”

যাহ্ বাবা! এ কেমন কথা? তুশির গাল ফোলাতে ইচ্ছে করল খুব। কিন্তু মান ভাঙানোর নিশ্চয়তা যেখানে নেই, সেখানে অভিমান করাটা ভীষণ বেখাপ্পা। আপাতত এরকম বেখাপ্পা কাজ তার করতে ইচ্ছে করল না। প্রশ্নের উত্তরে বলল, “এমনিই।”

“এমনিই কেউ কিছু করে না, তুশি। অভিয়েসলি ইউ হ্যাভ আ স্ট্রং রিজন টু কল মি। নাউ টেল মি দ্য রিজন।”

তুশি শুকনো ঢোক গিলল, এরপর সত্য-মিথ্যের খেলায় বলে দিলো, “কাজিনের বিয়েতে ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার গেইম খেলার সময় আমাকে ডেয়ার দেওয়া হয়েছে—রাত একটা বাজে ক্রাশকে কল দিয়ে ১০ মিনিট কথা বলতে হবে এবং কনফেস করতে হবে। আই ডোন্ট হ্যাভ এনি ক্রাশ, এক্সেপ্ট ইউ। প্রথমে রাজি না হলেও, পরে কী ভেবে যেন আমি ডেয়ারটা এক্সেপ্ট করেছি। ঠিকঠাকভাবে করি যেন, এজন্য কাজিন বাসায় এসে বসে আছে। আ'ম সরি অ্যান্ড আই লাভ ইউ...”

পাশ থেকে আয়াত নিম্নস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠল, “প্রিয় বোনু, আমাকে ফাঁসানোর আর জায়গা পাও না?”

তুশি ঠোঁট ফুলিয়ে বলল, “সরিইই।”

ওদের এহেন কর্মকাণ্ডে অন্যমনস্কভাবে শ্রেয়ান কিঞ্চিৎ হাসল। তুশি তখন শ্রেয়ানকে বলল, “দশ মিনিট ডান। আশফিক ভাই, আমি এখন রাখি?”

“কল দেওয়ার সময় আমার পারমিশন নিয়েছিলে?”

“উঁহু।”

“তাহলে এখন?”

“আচ্ছ সরি!”

শ্রেয়ান কিছু বলল না, তুশিও কল কাটল না। আয়াত তাকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, “বারান্দায় গিয়ে কথা বল।”

সে আনমনে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল। পথিমধ্যে শ্রেয়ান ডাকল, “তুশি?”

বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সম্বোধন হলো প্রিয় মানুষটার মুখে নিজের ডাকনাম। এমন কিছু কল্পনায় এনে বিশ্রী রকমের ভালো লাগছে তুশির, সেই সাথে ভয় হচ্ছে। বড়ো নাজুক বাচ্চা মেয়েটা যে খেলায় নেমেছে, তাতে শঙ্কায় দেহ মূর্ছা যাচ্ছে। ডাক-শোনা কম্পিত জবাব তার, “হুঁ?”

শ্রেয়ান বড়ো সাবলীলভাবে জিজ্ঞেস করল, “পুরো নাম?”

“অন্তরা অবন্তিকা তুশি।”

“আমি তোমায় চিনি?”

তুশি অবাক হলো, “আমাকে চিনতে পারেননি, আশফিক ভাই?”

“উঁহু!”

“আমি আপনার বন্ধুর মামাতো বোনের খালাতো বোন। চিনেছেন?”

“চিনিনি।”

সে চেনানোর তাগিদে কিছু আজগুবি কুণ্ডলী পাকানো কথার পসরা সাজাল, “সে বার আপুর সাথে আপনার বন্ধুর বিয়েতেই না আমাদের কথা হলো?”

শ্রেয়ানের তৎক্ষনাৎ কিছু মনে পড়ল না। কমবেশি অনেক মেয়ের সাথেই টুকিটাকি তার কথা হয়েছে, এড়িয়ে গেছে এরও অধিক সংখ্যককে। হ্যাঁ, কিছু বছর আগেই যখন তার বন্ধুর বিয়ে হলো, তখন সেখানে শ্রেয়ান গেছিল। সাথে ছিল এক দীর্ঘশ্বাসও। সেই দীর্ঘশ্বাসে এতটাই মগ্ন ছিল শ্রেয়ান যে অন্য কোনো মেয়েকে পাত্তা দেয়নি। তুশিও হয়তো সেই সময় থেকেই এখানে উঠে এসেছে।

তবে এ বিষয় নিয়ে আর ঘাটতে ইচ্ছে করল না তার। তাই বলল, “আচ্ছা! বুঝতে পেরেছি। মনে পড়েছে।”

জান ফিরে পেল তুশি, আহাম্মকের মতো হেসে বলল, “আই লাভ ইউ।”

“বয়স কত তোমার?”

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল তুশি, “বয়স?”

“হুঁ।”

“সতেরো।”

“আঠারো হবে কবে?”

“গুণে গুণে ছয় মাস পর।”

“ঠিক আছে।”

শ্রেয়ান বাঁকানো এক হাসির সাথে হাতের কিউবটার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সম্মুখের চাঁদের দিকে স্থিরভাবে তাকাল। কিছু হিসেব মেলালো। আর তারপর বলল, “এই ছ’মাস সম্পূর্ণভাবে পড়াশোনায় ফোকাস করবে। মাঝে সময় যা পাবে, তাতে আমার ব্যাপারে খোঁজ নিতে থাকবে। ছ’মাস পর তোমার ভালো লাগা কদ্দূর থাকে, তা দেখতে চাই। আ’ম এগারলি ওয়েটিং, তুশি।”

তুশি জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল, “লিসেন, আশফিক ভাই! আমার ভালোবাসাকে কিশোরীর ভালোলাগা ভেবে থাকলে, ভুল করবেন। একজন দৃঢ় প্রত্যয়ী কিশোরীর লক্ষ আপনি, আমি আপনাকে ছাড়ছি না। এখনও না, ছ’মাস পরও না।”

শ্রেয়ানের হাসি প্রশস্ত হলো, “অবশ্য তোমার ভালোবাসাতে আমার সন্দেহ—এমনটা আমি বলছি না। কেননা..”

“কেননা?”

“খোঁজ নিতে থাকো, বুঝে যাবে..”

চলবে...

#চান্দ্রমাসের_গান
- নবনীতা শেখ
[পর্ব ১]

প্রথম পর্বে সবাইকে কমেন্ট করার অনুরোধ।

02/12/2025

-“বউ! আমার বউ কোথায়?”
তুর্যের আকস্মিক তর্জন গর্জনে কম্পিত হলো সুবিশাল চৌধুরী বাড়ি। ছেলের প্রায় সাত বছর পরে দেশে ফেরার আনন্দে এতক্ষন যে জলসা বসেছিল মুহুর্তেই ভাটা পড়লো তাতে। তুর্য চেঁচিয়ে উঠলো আবারও। অত্যন্ত ক্রোধের সাথে বলল,
-“আমার বউ চলে গেছে মানে কি? কোথায় গেছে সে?”
তুর্যের হঠাৎ এহেন আচরণে বাকরুদ্ধ চৌধুরী পরিবার। যে বউকে মানে না আর না কখনও মানবে বলে দেশ ছেড়েছিল তুর্য। আজ এত বছর পরে দেশে ফিরে ঘরে প্রবেশের পরবর্তী মুহুর্তেই বউয়ের খোঁজ করছে? উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে পড়েছে যেন এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। তুর্যকে ঠিক কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছিলো না কেউই। তবে ছেলেটার এই তর্জন গর্জন খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারলো না তার মা তাহমিনা বেগমের উপরে। তিনি এগিয়ে এলেন ছেলের পানে। কপাল কুঁচকে শুধালেন,

-“কিসের বউ? কার বউ?”
তুর্য যেন অবাক না হয়ে পারলো না। কার বউ মানে কি? তুর্য কপাল টানটান করে জবাব দিল,
-“অবশ্যই আমার বউ।”
-“সেটাই তো তোমার বউটা এলো কোথা থেকে?”
তুর্য কপাল কুঁচকালো। থমথমে কন্ঠে বলল,
-“মা মজা করো‌ না তো। আমার বউকে বের করে আনো।”
তহমিনা বেগম দাঁতে দাঁত চাপলেন। তীক্ষ্ম কন্ঠে বললেন,
-“কোনো বউ নেই।”

-“মানে কি মা? আমার স্পষ্ট মনে আছে আমার আজ থেকে সাত বছর আগে বিয়ে হয়েছিল। সেই অনুপাতে আমার এখন ছোট খাটো মুরগির বাচ্চার মতো একটা বউ থাকার কথা। সেই বউ কোথায় আমার?”
-“সে বিয়ে তুমি তখন মানোনি। তাইতো কবুল বলার পর মুহুর্তে বউয়ের মুখ না দেখেই বিয়ের আসর ছেড়েছিলে, আর তারপর দেশ।”
তুর্যের মুখ খানায় কিছুটা অস্থিরতা প্রকাশ পেল। তবে কন্ঠে স্বাভাবিকতা বজায় রেখেই বলল,
-“তাই বলে তো আর বিয়েটা মিথ্যা হয়ে যাবে না। বিয়ে যখন করেছিলাম তখন সে আমার বউ। তাছাড়া তখন বিয়ে মানিনি এখন মানছি। আমার বউকে আমার কাছে ফেরত দাও।”
-“তখন যেহেতু মানোনি এখনও মানার দরকার নেই। ধরে নাও তোমার বিয়েই হয়নি।”
বিস্ময়ে তুর্যের চোয়াল ঝুলে পড়লো। একজন বিবাহিত পুরুষকে তার মা কি সুন্দর অবলীলায় বলল “ধরে নাও বিয়েই হয়নি।” এ কেমন কথা? তুর্য গম্ভীর কন্ঠে বলল,

-“পারবো না। বউ লাগবে আমার।”
-“এত বছর তো লাগেনি। এখন কি কারনে বউ লাগবে?”
তুর্য চোখ ছোট ছোট করে তাকালো মায়ের পানে। নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল,
-“তোমাকে আব্বুর যে কাজে লাগে আমারও আমার বউকে এখন সেই কাজেই লাগবে।”
ছেলের এহেন লাগামহীন কথার দাপটে পাশেই সোফায় বসে থাকা মোজাম্মেল চৌধুরী কেশে উঠলেন খুক খুক করে। ছেলেটা তার ছোট বেলা থেকেই নির্লজ্জ, লাগামহীন, জেদি এবং রাগচটা ধাঁচের। তাই তো ছেলেটাকে বেঁধে ফেলতে ঐ বয়সে বিয়ে করিয়েছিলেন কিন্তু হলো কি? হিতে বিপরীত। এখন তো আবার এই ছেলে এত বছর বিদেশে কাটিয়েছে। নিশ্চই নির্লজ্জতায় উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এসেছে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললেন তাহমিনা বেগম। শক্ত কন্ঠে বললেন,

-“আমরা তোমাকে পৃথার সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম ওদের পরিবারের সাথে আমাদের সম্পর্কটা মজবুত করার উদ্দেশ্যে। তুমি ভালোভাবেই জানো ওর মা আর আমি সেই ছোট বেলা থেকে খুবই ভালো বান্ধবী ছিলাম। খুব ইচ্ছে ছিল ওর সাথে সম্পর্কটা দৃঢ় করার। নয়তো একজন বিশ বছরের তরতাজা যুবকের সাথে মাত্র ১০ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছে আমার ছিল না। কিন্তু তুমি বিয়েটা মানতে পারলে না। ভয় দেখিয়ে কবুল বলানোর পর মুহুর্তে বিয়ের আসর ত্যাগ করলে। বাচ্চা মেয়েটার মুখটা পর্যন্ত দেখলে না।”
এইটুকু বলে থামলেন তাহমিনা বেগম। আবার বললেন,

-“বিয়ের আসর ছাড়ার আগে একটা মুহুর্তের জন্যও ভাবলে না তোমার এমন পদক্ষেপে ঐ বাচ্চা মেয়ের উপরে কি নেমে আসবে। আমাদের সমাজ মোটেই ভালো নয়। তারা বিবাহের পর স্বামীর ছেড়ে যাওয়া স্ত্রীকে মোটেই ভালোভাবে দেখে না। হয়তো পৃথা ছোট ছিল তবে ওর উপরেও তোমার পদক্ষেপের আঁচ আসতে শুরু করেছিল। মেয়েটা বাইরে বের হতে পারতো না, কেউ খেলতে নিতো না, মানুষ তিরস্কার করতো। ধীরে ধীরে শুধুমাত্র তোমার কারনে ওদের সাথে আমাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। আর ওর পরিবার চায়নি ওর উপর এই ঘটনার বিশাল কোনো আঁচ আসুক। ভুল বলো আর অন্যায় বলো আমাদের বড়দের ছিল ঐ ছোট্ট মেয়েটার তো ছিল না। এমনকি তখন ও বিয়ের মানেটাও ততটা বুঝে উঠতে পারেনি। মেয়েটা ছোট ছিল তাই ওর সাথে ঘটা কঠিন বিষয়গুলো বোঝার আগেই ওরা এলাকা ছাড়লো। তোমার বিদেশে পাড়ি দেওয়ার ছয় মাসের মাথায়ই ওরাও অন্যত্র চলে গেল।”
মায়ের সব কথা শুনে একটু নরম হলো তুর্য। শান্ত কন্ঠে বলল,

-“কোথায় গেছে ওরা?”
-“আমাদের জন্য এলাকা ছেড়েছে নিশ্চই আমাদের বলে যাবে না কোথায় গেছে।”
থামলেন তাহমিনা বেগম আবার বললেন,
-“দেখো ভুল যা করেছি আমরা বড়রা। এখানে তোমারও কোনো দোষ নেই কোনো। তুমি তখন বলেছিলে বিয়েটা তুমি করতে চাও না কিন্তু আমরা শুনিনি, জোর করেছি। আমরা আমাদের ভুলের জন্য অনুতপ্ত এবং তোমার কথাই মেনে নিয়েছি। গোপনে বিয়ে হয়েছিল আবার গোপনেই এই বিয়েটা দুই পরিবারই ভেঙে দিয়েছি এক প্রকার। শুধু বাকি রয়েছে তালাকটা। তা পৃথার বাবা বলেছেন মেয়ে প্রাপ্তবয়স্কা হলে নিজ দায়িত্বে তালাক নিয়ে নিবেন। সুতরাং এই বিষয়ে আর ঝামেলা করো না। যে বিয়ে তুমি কখনও মানোনি সেই বিয়ে নিয়ে চোটপাট দেখিও না।”

যারা এখান থেকে গল্প পড়ছেন সবাই এই লেখায় ক্লিক করে অ্যাপস একবার ইনস্টল করে দেখেন

“তালাক!” শব্দটা কর্ণে পৌঁছাতেই বুকটা ছ্যাত করে উঠলো তুর্যর। যে বউয়ের জন্য এতকাল অপেক্ষা করেছে, এতকাল ছটফটিয়ে ম’রে’ছে সেই বউকে কিনা তালাক দিবে? অসম্ভব। তবে নিজের চিন্তার মধ্যভাগেই ছেলেটার মাথায় হুট করে আরেকটা চিন্তা হানা দিল। পিটপিট করে সে তাকালো মায়ের পানে। সন্দিহান সুরে বলল,
-“আচ্ছা তুমি আবার কোনোভাবে আমার থেকে পৃথাকে লুকিয়ে রাখোনি তো মা?”
তুর্যের এহেন কথায় বেজায় বিরক্ত হলেন তাহমিনা বেগম। এতকিছু বুঝিয়ে বলার পরও ছেলে কেমন উদ্ভট প্রশ্ন করছে? তিনি তো এতকাল জানতেন ছেলে কোনোদিন এই বিয়ে মানবে না তাই তো বিদেশ গিয়ে ঘাপটি মে’রে রয়েছিল। তাহলে পৃথাকে লুকিয়ে রেখে তার কি লাভ? ছেলের কথার উত্তর দিলেন না তাহমিনা বেগম। কপাল কুঁচকে বিরক্তিকর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইলেন। তুর্য মায়ের থেকে চোখ ঘুরালো। গম্ভীর কন্ঠে বলল,

-“আরুশ!”
তুর্যের এমন ভ’য়ং’ক’র গম্ভীর কন্ঠে কেঁপে উঠলো আরুশ। ছেলেটা তুর্যের এসিস্ট্যান্ট। আজ প্রায় দুই বছর ধরে আরুশ রয়েছে তুর্যের সাথে। এর মধ্যে সহস্রবার তুর্যকে রেগে যেতে দেখেছে সে কিন্তু এতটা চোটপাট করতে দেখেনি। আরুশ কম্পিত কন্ঠে বলল,
-“জজ্বী স্যার।”
-“আমার বউকে খুঁজে বের কর।”
আরুশ মাথা চুলকালো। আমতা আমতা করে বলল,
-“আমি তো ম্যামকে চিনি না স্যার। যদি একটু বিস্তারিত বলতেন।”
আরুশের কথায় বিরক্ত হলো তুর্য। কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
-“আমার বউয়ের নাম পৃথা, পৃথা ইসলাম আর তার…”
থামলো তুর্য। মায়ের তাকিয়ে বলল,
-“আমার বউয়ের রাজাকার বাপটার নাম যেন কি মা?”
-“জানি না।”

তুর্যর মুখশ্রী গম্ভীর রূপ ধারন করলো। মায়ের দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে সে তাকালো বাবার পানে। ছেলের দৃষ্টি নিজের উপর পড়ার সাথে সাথে অন্যদিকে ফিরলেন মোজাম্মেল চৌধুরী। তুর্য ভ্রু কুঁচকানো। বাবার দিকে থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকালো মেঝ চাচা আব্বাস চৌধুরী আর ছোট চাচা আনিক চৌধুরীর পানে। তারাও দ্রুত চোখ ঘুরিয়ে তাকালো অন্য দিকে। এরপর আবারও দৃষ্টি ঘুরালো সে, চাচি আর ঘরের ভাইবোনদের উপরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার আগেই দেখলো সব হাওয়া। দাঁতে দাঁত চালো তুর্য। কটমট করে বলল,
-“এই এরা! এরা আমার পরিবার? মোটেই না। এরা এক একটা বিশ্বাসঘাতকের গোডাউন। ঘষেটি বেগমের শিষ্য। এরা সবাই মিলে ষড়যন্ত্র করে আমার বউকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। আমার মুরগির বাচ্চার মতো বউটাকে তার রাজাকার বাপের হাতে তুলে দিয়ে আমাকে বউ ছাড়া করেছে। সব কটাকে আমি দেখে নিব, সব বিশ্বাসঘাতকের দল।”

এই টুকু বলে থামলো তুর্য। আদেশের সুরে বলল,
-“যত দ্রুত সম্ভব আমার বউকে খুঁজে বের কর আরুশ। নয়তো তোকে আমি পঁচা নর্দমায় গোসল করাবো।”
কথাটা বলেই ধুপধাপ পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে নিজ কক্ষের দিকে এগিয়ে গেল তুর্য। আরুশ বেচারা পড়লো মহা বিপদে। এখন সে কিভাবে তুর্যের বউকে খুঁজে বের করবে? এত বড় বাংলাদেশে শুধু নাম দিয়ে কাউকে খুঁজে বের করা যায়? কি এক যন্ত্রনা!

তুর্য ধুপ ধাপ পা ফেলে নিজের কক্ষে এলো। ক্রোধে শরীর জ্বলছে ভীষন সাথে অন্তরও পুরছে। ঠিক কতটা আশা নিয়ে সে ফিরে এসেছিল দেশে। ভেবেছিল ছোট্ট বউটাকে আপন করে নিবে এবার। কিন্তু নাহ, সে বউটাই তো নেই তার। পরিবারের লোকেরা খুব তো তাকে জোর করে বিয়ে দিতে পেরেছিল তখন। তেমনি জোর করে বউটাকে রেখে দিতে পারেনি? চারদিকে শুধু বিশ্বাসঘাতকতা আর বিশ্বাসঘাতক। তুর্য ক্রোধে জর্জরিত হয়ে এদিক ওদিক তাকালো। হঠাৎ একটা লাগেজের পানে চোখ আটকে গেল তার। গোলাপি রঙের ছোট খাটো একটা লাগেজ। লাগেজটার পানে তাকিয়ে তুর্যর দৃষ্টি কিছুটা নরম হলো। ধীর পায়ে সে এগিয়ে গেল সেদিকে।

অবাধ্য পিছুটান
পর্ব ১
সাদিয়া শওকত বাবলি

02/12/2025

মায়ের দ্বিতীয় স্বামী আমাকে গ্রহণ করতে চাইলেও আমার মা তার সুখের সংসারে বোঝা করে আমাকে নিয়ে যেতে চাননি। আমার বাবা, মায়ের যখন বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তখন আমার বয়স মাত্র পাঁচ বছর। তার দুই বছর পর আমার মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। বাবা অবশ্য আগেই বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। তবে মা কিছুটা সময় নিলো। বিবাহ বিচ্ছেদ, দ্বিতীয় বিয়ে এসব কিছু আমি তখন বুঝতাম না। তবে মা যখন লাল টুকটুকে এক শাড়ীতে বধুরূপে সেজেছিলো সেই মূহুর্তে আমার মনের ভেতর কেমন ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো। অজানা ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠছিলো। তাই তো অবুঝ আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলাম,“মা তুমি এত সুন্দর করে সেজেছো কেন? বাড়িতে এত লোক কেন? সবাই বলছে তোমাকে নিয়ে যাবে? ও মা আমরা কোথায় যাবো?”

আমার শেষ কথাটি হয়তো মা পছন্দ করেনি। তাই বিরক্ত হলো। তার বিরক্তি না বুঝেই আমি আবারও তাকে প্রশ্ন করে যাচ্ছিলাম। আমার মা নিজেকে সামলে খুব সুন্দরভাবে আমাকে বুঝিয়ে বললেন,“সোনা মা। আমার কথা মন দিয়ে শোনো। আমি একটি কাজে যাচ্ছি। কিছুদিনের মধ্যে চলে আসবো। তুমি এই ক’দিন নানুর সঙ্গে থাকবে। কোন দুষ্টুমি করবে না। যদি করো তবে আমি কিন্তু আর আসবো না।”

“তুমি একা যাবে? আমি যাবো না?”
আমার এই কথায় মা আমাকে মন ভোলানো অনেক গল্প শোনালো। এটা তার কাজের জায়গা। এখানে আমাকে নিয়ে যাওয়া যাবে না। আমি যখন মানতে চাচ্ছিলাম না। তখন আমার মায়ের দ্বিতীয় স্বামী সবটা শুনে আমার মাকে বলে,“আমার আদুরীকে গ্রহণ করতে কোন সমস্যা নাই। আমাদের সঙ্গে আপনি আদুরীকে নিয়ে চলুন।”
অন্য সব মা হলে হয়তো এই কথায় খুশি হতো। কিন্তু আমার মা হলো না। সে আমাকে তার দ্বিতীয় সংসারে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি। তার স্বামীকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, সে তার অতীতের কোন স্মৃতি আর বয়ে বেড়াতে চায় না। আমার মা যেখানে আমাকে সঙ্গে নিতে চায়নি সেখানে অন্যদের আর কি করার। সেদিন আমার চোখের পানি আমার মায়ের মন গলাতে পারেনি। সে আমাকে উপেক্ষা করে চলে যায়। তবে আমাকে মিষ্টি করে বলেছিলো,“আমি গিয়েই তোমার নানুর ফোনে ফোন করে তোমার সাথে কথা বলবো। দু’দিনের মাথায় চলে আসবো।”
তবে সেসব শুধুমাত্র সান্ত্বনার বানী ছিলো। আমার মা মিছে মিছে গল্প শুনিয়ে চলে গিয়েছিলো। সে আর ফিরে আসেনি। জীবনে কখনো আমাকে দেখতে আসেনি। শুধু তাই নয়, নানুকে ফোন দিয়ে কখনো আমার সঙ্গে কথা বলতেও চায়নি। সেই সময়গুলো কিভাবে পার করেছি আমি জানি। অবুঝ আমি সারাদিন ‘মা’ বলে কেঁদেও আমি মায়ের দেখা পাইনি। উল্টো আমার কান্নায় ঘরের সবাই বিরক্ত হতো। যে বিরক্ত হতো না সে হলো আমার নানি। যাকে আমি ‘নানু’ বলে ডাকতাম। নিষ্ঠুর এই দুনিয়ায় আমাকে ভালোবাসার মতো একটিমাত্র মানুষ ছিলো। সে হলো আমার নানি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যখন আমি বুঝতে পারলাম, আমার মা আমার বাবার প্রতি ঘৃণা থেকেই আমার খোঁজখবর কখনো নেয়নি। তার দ্বিতীয় সংসারে আমাকে নিয়ে যেতে পারেনি। তখন আমার বারবার তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করতো,“যদি একসঙ্গে সারাজীবন থাকতে নাই পারো তাহলে সন্তানের জন্ম কেন দিলে? ডিভোর্স সন্তানের জন্মের আগে নিতে পারতে না? তাহলে তো এই নিষ্ঠুর দুনিয়ায় এত কষ্ট করে আমাকে বড় হ’তে হতো না। মামা, মামীর বোঝা হয়ে থাকতে হতো না।”

এই কথাগুলো বলতে বলতে আদুরী কান্না করে দেয়। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। টগর সিগারেটে একটি টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে আদুরীর কান্নারত মিষ্টি মুখের দিকে তাকায়। লাল একটি বেনারসি গায়ে জড়ানো মিষ্টি একটি মেয়ে তার সামনে বসে আছে। যার গায়ে কোন অলংকার নেই। মুখে কোন প্রসাধনী নেই। একেবারে নেই বললে ভুল হবে, চোখে কাজল ছিলো। যা চোখের পানিতে লেপ্টে গিয়েছে। কাজল ল্যাপ্টানো অদ্ভুত এই মুখশ্রীও টগরের চোখে মিষ্টি লাগছে। আদুরীর গায়ের গড়ন শ্যামলা। শ্যাম গড়নের এই কাজল ভরা মুখশ্রী টগরের কাছে ভারী মিষ্টি মনে হচ্ছে। তার মনে হচ্ছে, এত সুন্দর মেয়ে সে কখনো দেখেনি। তাই আনমনে অস্পষ্ট সুরে বলে উঠে,“শ্যামবতী।”

“হ্যাঁ?”
আদুরী কথাটি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করে। টগর নাসূচক মাথা নাড়িয়ে বলে,“ছোটবেলার গল্পের সঙ্গে এই মধ্যরাতে আপনার বধুর বেশে পালিয়ে আসার মিল কোথায়?”

“পুরো গল্পটা শুনুন। তাহলে তো বুঝতে পারবেন।”
আদুরীর এই কথায় টগর অবশিষ্ট সিগারেটে আবার একটি টান দিয়ে বলে,“আচ্ছা বলেন।”

“আমার নানু আমাকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু ঘরের অন্যরা আমাকে পছন্দ করতো না। জানেন আমার নানু যতদিন ছিলো ততদিন আমার কাছে এই কষ্টের জীবন এত কষ্টকর মনে হয়নি। কিন্তু আমার নানু আমাকে ছেড়ে চলে গেল। সে চলে গিয়ে আমাকে দমবন্ধকর এক কষ্টের পৃথিবীর সম্মুখীন করলো। আমার নানু। আমার নানু।”
কথাগুলো বলতে বলতে আদুরী কান্না করে দিলো। আদুরীর কান্না এক দৃষ্টিতে টগর দেখতে থাকে। সে কোন কথা বলে না। নিশ্চুপ হয়ে শান্ত চোখে আদুরীকে পর্যবেক্ষণ করে। আদুরী কান্নারত অবস্থায় বলে,“অনাদার অবহেলায় বড় হওয়া মেয়েটার নাম আদুরী। জানেন এই কথাটা আমার নানু থাকা অব্দি আমার একবারও মনে হয়নি। নানু যতদিন ছিলো ততদিন মনে হয়েছিলো, এই নামটা সম্পূর্ণভাবে যথার্থ নাহলেও কিছুটা সঠিক। নানুর তো আমি আদুরীই। যাকে নানু অনেক বেশি আদর করে।”
আদুরী এই পর্যায়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও ফুঁপিয়ে কান্না করতে শুরু করে। টগর ম্লান হেসে বলে,“আপনার কান্না এবং গল্প শুনতে শুনতে আমার মনে হয় দুই চারদিন এই ট্রাকের উপরই কেটে যাবে।”
টগরের মুখে এই কথা শুনে আদুরী অনেকক্ষণ পর উপলব্ধি হয় সে ট্রাকের উপর আছে। তাও একজন অচেনা অজানা ছেলের সঙ্গে। সেই সাথে ট্রাকটি তার চেনা জায়গা ছাড়িয়ে অচেনা, অজানা গন্তব্যে হারিয়ে যাচ্ছে। এসব উপলব্ধি করে আদুরী কিছুটা ভয়মিশ্রিত চোখে টগরের দিকে তাকায়। টগর বিষয়টি বুঝতে পেরে বলে,“এখন ভয় পাচ্ছেন? যখন অচেনা অজানা দুটো ছেলের কাছে সাহায্য চাচ্ছিলেন তখন তো ভয় পাননি?”
টগরের এই প্রশ্নের জবাবে আদুরী কিছুটা নিশ্চুপ থাকে। অতঃপর শান্ত গলায় বলে,“যখন মানুষের হারানোর মতো কিছু থাকে না তখন ভয় এমনি দূর হয়ে যায়।”

“তবে এখন ভয় পাচ্ছেন কেন?”

“মানুষ তো। কিছু হারানোর নেই জেনেই তো অজানার উদ্দেশ্য পাড়ি দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমার ভেতরের নারীসত্তা জেগে উঠেছে। তার মনে হচ্ছে, এখনো তার হারানোর মতো অনেককিছু রয়েছে।”
আদুরীর এই কথা শুনে টগর তার দিকে অদ্ভুত চোখে তাকায়। তারপর বলে,“আমার দৃষ্টি দেখে মনে হয় আমি আপনার থেকে কিছু কেড়ে নিতে পারি?”

”দুনিয়াটা আমার ভাবনার চেয়েও নিষ্ঠুর। আমি ততটুকুই দেখি যতটুকু আমি দেখতে চাই। দেখা গেল, আমার দেখার বাহিরে যা আছে তা আরও ভয়াবহ।”
আদুরীর এই কথাটি টগরের খুব ভালো লাগে। সে মাথা নাড়িয়ে বলে,“যথার্থ বলেছেন। তবে ভয়কে জয় করে সাহসের সাথে লড়াই করে যাওয়ার নামই জীবন।”
আদুরী মাথা নাড়ায়। টগর তাকে পুনরায় নিজের গল্প বলার জন্য বলে। আদুরী বলতে নিলে টগর থামিয়ে দিয়ে বলে,“এক মিনিট পর প্লীজ।”

”কেন?”
আদুরীর প্রশ্নের মাঝেই টগর আর একটি সিগারেট বের করে ধরায়। আদুরী শান্ত গলায় বলে,“মাত্র না একটি খেলেন?”

”তো?”

”এত খাওয়া ভালো না। এটা তো খারাপ জিনিস।”
আদুরীর এই কথা শুনে টগর মুচকি হেসে বলে,“মানুষের চেয়ে খারাপ এই দুনিয়ায় কিছু আছে? যেখানে খারাপ মানুষদের মধ্যে দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিচ্ছি সেখানে এইটুকু খারাপ জিনিস তেমন বিশেষ ক্ষতি করতে পারবে না। করলেও সমস্যা নেই। আমাদের মতো অনাথের জীবনের কি দাম বলুন?”

“আপনি অনাথ?”
টগর মাথা নাড়ালে আদুরী আবারও জিজ্ঞেস করে,“তারমানে আপনার জীবনেও তো অনেক গল্প রয়েছে।”

“হ্যাঁ রয়েছে। তবে আগে আপনি আপনারটা বলুন। তারপর আপনি শুনতে চাইলে আমি বলবো।”
টগরের কথায় আদুরী মাথা নাড়ায়। সে আবার তার জীবনের গল্প বলতে শুরু করে। অর্থাৎ আজকের এই অবস্থানে সে কিভাবে আসলো সেটা বলতে শুরু করে।


চলবে,
পথে_হলো_দেখা (১)
নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

(ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন। সুন্দরভাবে রোমান্টিক গল্প তুলে ধরতে পারি না। আমি মনে হয় এসব লিখতে ব্যর্থ। তবুও চেষ্টা করছি অল্পের মাঝে সুন্দর করার। সবাই দোয়া করবেন এবং পাশে থাকবেন।)

বিয়ের আগে আমি রিনিকে আর কোনোদিন সামনে থেকে দেখি নি।আমাদের বিয়ের সূত্র ধরেই তার সাথে আমার পরিচয়।যেদিন আমাদের বিয়ে হলো,সেদ...
02/12/2025

বিয়ের আগে আমি রিনিকে আর কোনোদিন সামনে থেকে দেখি নি।আমাদের বিয়ের সূত্র ধরেই তার সাথে আমার পরিচয়।যেদিন আমাদের বিয়ে হলো,সেদিনই আমি প্রথম দেখেছি তাকে।রিনির সাথে আমার সম্পর্কটা অদ্ভুত।রিনি আমার খালাতো বোন।কিন্তু রিনির খালা আবার আমার মা না।আমার মা আরো অনেক আগেই মা*রা গেছেন।মা মা*রা যাওয়ার পর বাবা অন্য একজন কে বিয়ে করলেন।রিনি হলো তার বোনের মেয়ে।

মায়ের মৃ*ত্যু সন্তানদের ভেঙে দেয়।সেই ধ্বং*সাবশেষটাও বাতাসে মিশে যায়,যখন সন্তানরা দেখে যে তাদের বাবা অন্য একটি মহিলাকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে এসেছে।যখন তারা দেখে,যে সমস্ত আচরণ এক সময় বাবা তাদের মায়ের সাথে করতো,সেই একই আচরণ এখন অন্য একটি নারীর সাথে করছে,তখন তারা আপনা আপনি বুঝতে শিখে,এই বাড়িতে তাদের মায়ের অভাব পূরণ হয়ে গেছে।

বাবার জীবনে মায়ের অভাব পূরণ হলেও আমার জীবনে হয়নি।আমি ততদিনে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।বয়স কম হলে বোধহয় আমি নতুন করে ঐ মহিলাকেই মা হিসেবে মেনে নিতে পারতাম।কিন্তু আমার বয়স যেই জায়গায় ছিলো,সেখান থেকে আর নতুন করে কাউকে মা ভাবা সম্ভব না।আমি অন্তত পারছিলাম না।দিনের বেশিরভাগ সময় দরজা বন্ধ করে কাঁদতাম আমি।ছেলে মানুষের কান্না লোকজনের কাছে খুব উপহাসের বস্তু হলেও আমি যখন দেখতাম আমার মায়ের শখ করে কেনা পর্দা পাল্টে বাবার নতুন স্ত্রী তার পছন্দ মতো পর্দা দিয়ে ঘর সাজিয়েছেন,তখন আমার কান্নাই পেত।

আমি গভীর,শূন্য চোখে দেখতাম কিভাবে ধীরে ধীরে এই বাড়িতে আমার মায়ের অভাব পূরণ হতে শুরু করেছে।কিভাবে সবকিছুতে মাকে প্রতিস্থাপন করে বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী এসে খুব সুন্দর করে জায়গা দখল করে নিচ্ছে।

আমার মা পছন্দ করে যেই কাপ সেট কিনে শো কেস গুছিয়েছিল,সেই সেটের একটা কাপ একদিন ভুলবশত বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী ভেঙে ফেললেন।বাবা দায়সারা ভাবে বলল,"সমস্যা নাই।আরেক সেট কেনা যাবে।"

বাবার সমস্যা নাই থাকতে পারে।কিন্তু আমার সমস্যা ছিলো।আমি উঠে গিয়ে ছোঁ মেরে তার হাত থেকে অন্য একটি কাপ কেড়ে নিলাম।চেঁচিয়ে উঠে বললাম,"খবরদার! তুমি আমার মায়ের জিনিসে হাত দিবে না।"

বাবা সেদিন উল্টো আমার উপর রাগ হলো।আমাকে আঙুল তুলে শাসালো।শাসাবে নাই বা কেন?ঐ মহিলা যেমন করে কাঁদছিলো আর গুনগুনিয়ে নালিশ দিচ্ছিল বাবার কাছে।বাবা যে হাত তুলে নাই আমার উপর,সেটাতেই উল্টো অবাক হয়েছি আমি।

বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম নাজমা।নাজমার সাথে আমার সম্পর্ক শুরু থেকেই খারাপ।কোনো একদিনও আমরা হাসি মুখে কথা বলেছি বলে মনে পড়ে না।প্রথম দেখায় না সে আমাকে দেখে খুশি হলো,আর না আমি তাকে দেখে।
আমরা দু'জনই দু'জনকে দেখা মাত্র চোখ সরিয়ে নিয়েছি।নয়তো মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছি।

নাজমার কাছে আমি হলাম বড় বাপের উচ্ছন্নে যাওয়া বেপরোয়া,উদাসীন,পথভ্রষ্ট ছেলে।যার আচরণে বিনয় নেই,কথার মাঝে কোনো নম্রতা নেই।যে বাপের কোটি কোটি টাকায় বড় হয়েছে।যে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত না।

নাজমা সারাজীবন বাবার চোখে আমাকে ঐরকম অপদার্থ আর মাকাল ফল হিসেবেই উপস্থাপন করে গেছে।আমি বড় হয়েছি নিজের মতো করে,একা একা।

আমি আমার বাবার এক মাত্র পুত্র সন্তান।এই কোটি কোটি টাকার পুরোটার অংশীদার আমি একা।এই ব্যাপারটা এক সময় নাজমার মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ালো।তিনি সন্তানের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন।
প্রথমবারে তার কন্যা সন্তান হলো।তার নাম রাখা হলো নাজাহ।তিনি চাইছিলেন ছেলে হোক।ছেলের আশায় তিনি আবার সন্তান নিলেন।কিন্তু সেবারও মেয়েই হলো।তার নামটা আমিই রাখলাম।আমি তার নাম রাখলাম সুকন্যা।নাজমা কে দেখতে না পারলেও তার সন্তানদের খুব দেখতে পারতাম আমি।সুকন্যা আর নাজাহ ছিলো এই বাড়িতে আমার সবচেয়ে কাছের দু'জন মানুষ।

ওদের প্রথমবার হাঁটা থেকে প্রথমবার আমাকে ডাকা পর্যন্ত একেবারে সমস্ত কিছুতে আমি ওদের হাত ধরে ধরে বড় করেছি।নাজমা না পারতেন সইতে,না পারতেন কিছু বলতে।উনার ভয় ছিলো,বাচ্চারা বড় হয়ে তাদের ভাইজান বলতে অজ্ঞান হবে,পরিবারে আমার অবস্থান আরো দৃঢ় হবে।

নাজমার ভয়টাই সত্য হলো।নাজাহ আর সুকন্যা তাদের ভাইজান বলতে অজ্ঞান।দিনের অধিকাংশ সময় তারা আমার ঘরে এসে বসে থাকে,আমার বুকশেলফের বই হাতে নিয়ে ঘাটাঘাটি করে,আমার পিসির কি বোর্ডে অহেতুক আঙুল চালায়।

আমি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করলাম।তবুও নাজমার চোখে আমি অপদার্থ থেকে পদার্থ হতে পারি নি।আর না পেরেছি বাবার চোখে যোগ্য হতে।আমার গ্র্যাজুয়েশনের পর বাবা চাইলেন,আমি ব্যবসার দায়িত্ব হাতে নেই,মূল অফিসে গিয়ে বসি।
নাজমা ইনিয়ে বিনিয়ে তার কান ভারি করলো।এই ছেলে এতো উদাসীন! সে কি করে এতো দায়িত্ব সামলাবে?

আমি উদাসীন ছিলাম নাকি জানি না।কিন্তু আমি আমার মতো ছিলাম।আমি নিজেকে আমার শোয়ার ঘর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ করে রেখেছিলাম।এর বাইরে পারিবারিক কোনো ক্যাচালে আমি নেই।যা কিছু টুকটাক জানতাম,সবই নাজাহ আর সুকন্যার মাধ্যমে কানে আসতো আমার।

নাজমা ফ্যাক্টরি সহ বাবার ব্যবসার অন্যান্য খাতে বাবাকে সাহায্য করার জন্য যাকে নিয়োগ করলেন,সে হলো নাজমার ভাইয়ের ছেলে।তার নাম সুমিত।সুমিতই দেখা যেত আমার চেয়ে ভালো আমাদের টাকা পয়সার হিসাব জানে।

নাজমার ছলাকলা সবই আমি বুঝতাম।সে চাইছিলো সুমিতকে দিয়ে বাবার বিশ্বাস অর্জন করাতে।যেন কৌশলে সম্পত্তির একটা অংশ তাদের ভাগ্যে জোটে।আমি নিরবে তার ছলচাতুরী দেখে যাই।আমার হাসি পায়।সে যতোই চাল চালুক না কেন,আইন অনুযায়ী উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার সম্পদের সিংহভাগ আমিই পাবো।আমার অতো মাথা ব্যথা নেই এসব নিয়ে।

আমি দেখতাম কম সম্পদ থাকার পরেও আমার কাছের বন্ধু প্রান্ত কি সুন্দর বাবা মা কে সাথে নিয়ে চমৎকার দিন কাটাতো!সংসার পরিপূর্ণ হলে, টাকা পয়সা একটু কম হলেও চলে।কিন্তু সংসার একবার ভাগ হলে এরপর যতো অর্থসম্পদই থাকুক না কেন,সবকিছু ঘুরে ফিরে পানসেই লাগে।

বাবার কাড়ি কাড়ি টাকা,এতো বড় বাড়ি,নাম,ডাক,জৌলুশ,আভিজাত্য সবকিছুই একসময় আমার কাছে পানসে লাগতে শুরু করলো।
তখন স্বাদ পেতাম সিগারেটের ধোঁয়ায়।আর সপ্তাহের শেষে এক বোতল মদে।নাইট ক্লাবে যাতায়াত বাড়ছিলো আমার।বাবার উদ্বিগ্ন হতো আমার জন্য।ঐ উদ্বেগও আমার কাছে ন্যাকামো মনে হতো।

হুট করেই বাড়িতে আমার বিয়ের কথা উঠল।বাবা মেয়ে দেখতে শুরু করল আমার জন্য।আমি এসবে বরাবরই নির্বিকার,নিশ্চিন্ত।এসব নিয়ে আমার বিশেষ কোনো ভাবনা নেই।বিয়ে করার জন্য আমার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে না।বিয়ে না হলে আমার কোনো সমস্যা নেই।আবার বিয়ে হলেও আমার কোনো আপত্তি নেই।বিয়ে মানুষের জীবনের সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের একটি।আমার ঘরে একজন মেয়ে স্ত্রী হয়ে আসলেই বা আমার কি?না আসলেও বা আমার কি?চলবে তো সে আমার বাবা টাকাতেই।

বিয়ে নিয়ে তেমন হেলদোল না দেখালেও,আমার বিয়ের ঘটকালি যিনি করলেন,তাকে নিয়ে আমি খুব বেশি আগ্রহ দেখালাম।
আমার বিয়ের ঘটকালি করলেন নাজমা।তাও আবার তার বোনের মেয়ে রিনিলার সাথে।

প্রথমবার সুকন্যার মুখে এই কথা শুনে আমি ভীষণ আশ্চর্য হয়েছিলাম।পরে অবশ্য সেই আশ্চর্য কেটে গেল,যখন আমি টের পেয়ে গিয়েছিলাম,কেন তিনি রিনির সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন আমার।

বাবা যদি পছন্দ করে আমার জন্য কাউকে এই বাড়িতে নিয়ে আসে,তবে সে ভীষণ দূরদর্শি,বিচক্ষণ আর শিক্ষিত কেউ হবে।শিক্ষিত মেয়েরা নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন থাকে।সেক্ষেত্রে আমার স্ত্রী যখন বাড়িতে এসে দেখবে,এই বাড়ির সমস্ত কিছুতে তার স্বামীকে কোণঠাসা করে রাখা হয়,তখন সে এটা নিয়ে কথা তুলবে,নিজের অধিকার বুঝে নিতে চাইবে।
সেক্ষেত্রে আমার স্ত্রী যদি নাজমারই কাছের কেউ হয় তাহলে আর চিন্তা কোথায়?নাজমা যেমন করে বলবে,সে তো তেমন করেই চলবে।উপরন্তু আমার উপরও নিয়ন্ত্রণ খাটানোর একটা চমৎকার মহড়া পেয়ে যাবে সে।

প্রথমে আমি ভাবলাম,মুখের উপর বাবাকে না করে দিবো।ফিরিয়ে দিবো তাকে।
কিন্তু এরপর হুট করেই সিদ্ধান্ত নিলাম,আমি নাজমার পছন্দের পাত্রীকেই বিয়ে করবো।
তার বোনের মেয়ে নিশ্চয়ই তার খুব আদরের।আমি ঐ মেয়েকে বিয়ে করে এতো বেশি যন্ত্রনা দিবো ,যে নাজমা মাথায় হাত দিয়ে ভাববে,এটা সে কি ভুল করলো।
ঐ মেয়ের জীবন হারাম করে দেওয়ার অত্যন্ত ছোটলোকি উদ্দেশ্য নিয়ে আমি তাকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে গেলাম।

এর মধ্যে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে রিনির সাথে আমার বিয়েটাও হয়ে গেল।বিয়েটা রিনিদের বাড়িতেই হলো।ছিমছাম,কম পরিসরের,রুচিশীল একটা বাড়ির বসার ঘরে।

বিয়ের পর যখন রিনিকে আমার পাশে এনে বসানো হলো,তখন আমি চমকে গেলাম রীতিমতো।রোগা পাতলা গড়নের,টুকটুকে ফর্সা গায়ের রং আর অসম্ভব সুন্দর চোখের একটি ভয়ানক রূপবতী মেয়েকে আমার পাশে এনে বসানো হলো।তাকে দেখে আমার কয়েকটা হার্টবিট ছুটে গেল।কলার খোসায় পা দেওয়ার পর মানুষ যেমন ধাম করে পিছলে পড়ে,রিনির চোখ ধাঁধানো,দম বন্ধ করা রূপ দেখে আমারও অমন অবস্থা হলো।আমি বিস্মিত হলাম এটা ভেবে যে নাজমার মতো মহিলা রিনির মতো ভয়ানক সুন্দরী একটি মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।আমি ভেবেছিলাম,দেখতে খুব সাধারণ হবে রিনি।
আমার গলা শুকিয়ে এলো।অদ্ভুত চিন্তায় মস্তিষ্ক ভোঁ ভোঁ করতে শুরু করলো।
আমি পারবো তো রিনির সাথে দুর্ব্যবহার করে যেতে?
পারবো তো বিচ্ছিরি,কাপুরুষ আচরণে রিনির জীবন নরক বানিয়ে দিতে?পারবো তো?

চলবে-

আমার_স্ত্রী_রিনি
লেখনীতে - মেহরিমা_আফরিন

 #আমি_যে_কে_তোমার  #লেখনীতে_ফারিসতা_রাহা  #পর্বঃ১২_প্রথমাংশ বাসায় ফিরেছি ঘণ্টাখানেক হবে, অথচ ঘরের ভেতরে ঢোকার পর থেকেই ম...
02/12/2025

#আমি_যে_কে_তোমার
#লেখনীতে_ফারিসতা_রাহা
#পর্বঃ১২_প্রথমাংশ

বাসায় ফিরেছি ঘণ্টাখানেক হবে, অথচ ঘরের ভেতরে ঢোকার পর থেকেই মনটা ভীষণ ভার ভার লাগছে। আপুদের বাড়ি আর যাইনি—মনে হয়েছিল একটু দূরে থাকলেই হয়তো মাথাটা পরিষ্কার হবে। কিন্তু হয়েছিল ঠিক উল্টোটা।

ঘরে আসার পর থেকে আম্মু হাজার টা প্রশ্ন করছিলেন।মায়ের প্রশ্নগুলো শব্দ হয়ে কানে ঢুকছিলো ঠিকই কিন্তু সেদিকে তাকানোর শক্তিটুকু ছিল না। কোনো জবাব দেইনি, দরজা খুলে সোজা নিজের রুমে ঢুকে গেলাম।

ঘরে ঢুকে হালকা আলোটা জ্বালতেই ঘরটা যেন আরও নিস্তব্ধ হয়ে গেল। চারদিকের নীরবতা মাথার ভেতরের অস্থিরতাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছিল। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না—এদিক–ওদিক পায়চারি করতে লাগলাম। কপালের মধ্যে ঘন চাপা যন্ত্রণাটা যেন প্রতি সেকেন্ডে বাড়ছে।

হঠাৎ কিছুক্ষণ আগের ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো—একটা তীক্ষ্ণ, বেদনাদায়ক দৃশ্যের মতো।মনের অজান্তেই ঠোঁট ভেঙে এলো আমার।হঠাৎই মনে হলো কেউ বুকের ভেতরটা মুঠো করে ধরে টেনে ধরছে।

মর্ম ভাইয়ের কণ্ঠটা এখনো ঠিক কানে বাজছে—

“তুমি কি সত্যিই আমাকে চিনতে পারছো না?”

ওনার কণ্ঠে কি অসহায়ত্ব লুকানো ছিল জানা নেই… কিন্তু আমি তখন ওসব দেখার মতো অবস্থায় ছিলাম না।

আমি গলা শক্ত করে রেগেই বলেছিলাম—

“আমি আর কি করলে আপনি বিশ্বাস করবেন যে আমি আপনাকে চিনি না?চিনি না আপনাকে!শুনেছেন আপনি?দয়া করে আমার পিছু ছেড়ে দিন।”

বলেই দ্রুত পা চালিয়ে চলে এসেছিলাম। সেই মুহূর্তে শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছিল—দূরে যেতে হবে, খুব দূরে।হাঁটতে হাঁটতে একবারও* পিছন ফিরে তাকাইনি।

তবুও…তার সেই আহত চাহনিটা মন থেকে সরছিল না। আমি চাইছিলাম না ওনার মতো একজন মানুষ কে দ্বিতীয় বার আমার মস্তিকে যায়গা দিতে, কিন্তু নিজের অজান্তেই কেন যেন বার বার তার চোখের ঘাঢ় শুন্য দৃষ্টিটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো।মনে হচ্ছিলো যেন সে চোখ দু’টো ভরাট কষ্ট নিয়ে আমাকে বলছে

—“তুমি মিথ্যে বলছো।”

স্মৃতিটা মনে পড়তেই চোখের নিচে হঠাৎ একটা উষ্ণতা টের পেলাম। অজান্তেই দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। দ্রুত হাতের পাশ দিয়ে মুছে নিলাম।

ওয়াশরুমে ঢুকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলাম। তারপর মাথায় বাম লাগাতে লাগাতে মনে হচ্ছিল—ইশ, যদি মাথার ভেতরের অস্থিরতাগুলোও বাম লাগিয়ে থামানো যেত!

শুয়ে পড়তেই বুঝলাম শরীরটা কতটা ক্লান্ত ছিল। চোখ বন্ধ করব কি করব না—তার আগেই ঘুম আমাকে গ্রাস করে ফেললো।

ঘুম ভাঙলো যখন, তখন ঘরটা অদ্ভুত শান্ত। বাইরে থেকে আসা সন্ধ্যার আলো জানালার পর্দা ভেদ করে ঘরের মেঝেতে লম্বা ছায়া ফেলছে।

দূরে বসার ঘর থেকে কোলাহলের শব্দ—হাসাহাসি, কথাবার্তা, থালা–বাসনের শব্দ… সব মিলিয়ে মনে হলো ঘরটা আবার জীবন্ত হয়েছে।

ওড়নাটা নিয়ে গলায় পেঁচিয়ে দরজার বাইরে পা রাখতেই গলা শুকিয়ে এলো। ড্রয়িংরুমে ঢোকার সাথে সাথে দৃশ্যটা দেখে স্থির হয়ে গেলাম।

সবাই একসাথে বসে গল্প করছে, হাসছে, আর তাদের মাঝখানে বসে অহি আপু। ওর হাসির আওয়াজটাই এতক্ষণ দূর থেকে শুনছিলাম। আপু আমাকে দেখেই চেয়ার থেকে উঠে দৌড়ে এলো, উষ্ণ আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরলো।

—“চলে এলাম, তুই নাকি আমার জন্য কেঁদেছিস!বনু কি উপকার যে করেছিস আমার!বিশ্বাস কর, ও-বাড়িতে একটুও ভালো লাগছিলো না আমার।তোদের খুব মিস করছিলাম।কত শখ করে এসেছিলাম ক'দিন থাকবো বলে,অথচ ঠিক সাথে করে নিয়ে চলে গেলো।

ওর কণ্ঠে কৃতজ্ঞতা। আমি অকারনেই হেসে মাথা নিচু করলাম।আপু আবার বললো—

—“যা, ফ্রেশ হয়ে আয়। নতুন একটা রেসিপি শিখেছি, তোকে বানিয়ে খাওয়াব।”

এমন সময় ভাইয়া পাশ থেকে বলে উঠলো—
—"আর আমি?”

আপু সঙ্গে সঙ্গে হেসে উঠে—
—“হ্যাঁ হ্যাঁ ভাইয়া, তোকে–ও দিব।”

তাদের হাসির মধ্যে হঠাৎই আমার মনটা একটু হালকা লাগলো। যেন পুরো দিনের ভারটা কিছুটা কমে গেল।
আমি রুমে ফিরে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছিলাম—হঠাৎ চোখ আটকে গেল।পড়ার টেবিলের ওপর কিছু একটা…লাল রঙের একটা ছোট চিরকুট।

আমার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে গেল।ভ্রু কুঁচকে হাতে তুলে নিলাম।কাগজটা খোলার সাথে সাথে শরীরটা হঠাৎ ঠাণ্ডা হয়ে এলো।

সেখানে ছোট ছোট গুটি গুটি অক্ষরে লিখা—

“বলেছিলাম তোমার বোনকে নিজে এসে দিয়ে যাবো।দিয়ে গেলাম।যতদিন ইচ্ছা রেখে দিও—কেউ কোনো প্রশ্ন করবে না।তবে একটা কথা মনে রেখো—তুমি যে আমাকে চেনো,আর খুব ভালোভাবেই চেনো…একদিন সেটা তোমার নিজের মুখেই স্বীকার করবে তুমি।
Just wait and watch ”

হাত কাঁপছে আমার,দাতে দাত চেপে কাগজ টা টুকরো টুকরো করে ফেললাম। রাগে বিরক্তিতে মাথা ঝিমঝিম করছে। মানুষ কতটা বেহায়া হলে বার বার নিজ থেজে যে-চে কথা বলতে আসে।

দরজা টেনে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চোখের দিকে তাকাতেই মনে হলো—এই লোক তার সীমা ছাড়াচ্ছে।কার অনুমতি নিয়ে সে তার বেডরুমে এসেছে!তাও সে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায়!
লোকটার মাথায় সমস্যা টমস্যা আছে নাকি?

ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখি আপু যেন এক মুক্ত পাখির ন্যায় উড়ছে ঘড় জুরে।আমি হাসলাম।মনের ভিতর ওকে করার মতো হাজারটা প্রশ্ন সাজানো আছে, কিন্তু আমি চুপ রইলাম।কাটাক না নিজের মতো কিছু সময়! ওকে এখন ডিস্টার্ব করার ইচ্ছে হলো না আমার।

সন্ধ্যার পর আপু রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে একের পর এক রেসিপি ট্রাই করছে। চারপাশে ভেসে বেড়াচ্ছে মসলার গন্ধ, ভাজা পেঁয়াজের মিষ্টি সুবাস—মনে হচ্ছিল পুরো বাড়িটাই যেন ছোটখাটো ফুডল্যাব। আমি আর ভাইয়া মনের অজান্তেই আপুর হেল্পিং হ্যান্ডে পরিণত হলাম।

আমি বকা দিয়েই বলেছিলাম,
— “তুই সর, আমি করছি… তুই এমনিতেও সারাদিন খেটে মরিস। আজ আর না।”

কিন্তু আপু কি শুনবে! মহারানী মাথা নেড়ে হেসে বললো,
— “চুপচাপ পাশে দাঁড়া, না হলে আরও কাজ ধরব!”

তারপর আর উপায় না দেখে নীরব সৈনিকের মতো পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভেতরে ভেতরে বিরক্ত হলেও পরিবেশটা এত হাসিখুশি ছিল—বিরক্তিটাও গলে গিয়ে আনন্দে থিতিয়ে যাচ্ছিল।

----------

রাত প্রায় একটা। পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ। লাইটগুলো নিভে গিয়ে করিডোরে শুধু হালকা নীলাভ আলো। সবাই হাসি–তামাশা করে ঘুমাতে গেছে। আব্বু আপুর মাথায় তেল দিয়ে বিনুনি গেথে আপুকে ঘুমোতে বলেছে।এতোক্ষণে হয়তো সবাই ঘুমিয়েও গেছে।শুধু আমি—নিদ্রাহীন। সন্ধ্যায় ঘুমানোর ফল—এখন আর চোখে ঘুম আসছে না।

ফোন হাতে নিয়ে Instagram scrolling করছিলাম। অন্ধকার ঘর, শুধু স্ক্রিনের আলো মুখে পড়ছে। জানালার বাইরে রাতের হাওয়া গাছের পাতাগুলোকে ছুঁয়ে যাচ্ছে, মাঝে মাঝে হালকা ‘সাঁ সাঁ’ শব্দ হচ্ছে।

ঠিক তখনই ফোনের স্ক্রিন ব্ল্যাক হয়ে উঠে এল—Unknown Number Calling…

আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম।এত রাতে কে?ভ্রু কুঁচকে চুলটা কানে সরিয়ে কলটা রিসিভ করলাম।

— “হ্যালো কে?”

শব্দটা খুব ধীরে বেরোল।তারপর নিরবতা। তার কয়েক সেকেন্ড পরই কল কেটে গেলো। আমি বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছি ফোনের দিকে।এতো রাতে আমার সাথে মশকরা করে কে?আমার ভাবনার মাঝখানেই টুন করে একটা মেসেজ আসার শব্দ হলো। আমি ভ্রু কুচকে মেসেজটা ওপেন করতেই কপাল সোজা হয়ে এলো আমার,কয়েক লাইনের একটা মেসেজ,

“My bleeding heart… ঘুমাওনি এখনো?যদিও না ঘুমানোরই কথা। শুধু আজ নয়—সামনেও তোমার আরও নির্ঘুম রাত অপেক্ষা করছে।”

চলবে..........

(পর্বটা ছোট হয়েছে,তার জন্য দুঃখিত। আজকেও গল্প দেয়ার পরিস্থিতি ছিলো না আমার।যেহেতু আমি কথা দিয়েছি সোমবার এ গল্প দিবো,আর তোমরাও অপেক্ষা করছো,তাই ছোট করে হলেও দিলাম।আর হ্যাঁ, কালকে লাভবার্ড আসবে ইনশাআল্লাহ)

Address

Sylhet

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Choto Dairy 01 posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Choto Dairy 01:

Share