01/08/2025
রাত প্রায় ১১টা। ঘুমানোর আগে আনিস সাহেব অফিসের কিছু মেইল চেক করছিলেন। তার চোখে ক্লান্তি, মুখে চিন্তার ছাপ।কোনরকম বিছানায় গিয়ে চোখ দুটে বন্ধ করতে পারলেই যেন স্বস্তি। এমন সময় হঠাৎ তার ৭ বছরের ছেলে তার কাছে এসে বললো,
“বাবা, আজ একটু কথা বলবে আমার সঙ্গে?”
সারাদিনের হাজারো ব্যস্ততায় আনিস সাহেব এমনিতেই বিরক্ত।এর মধ্যে এত রাতে তিনি যে ছেলের সাথে গল্প করার মুডে নেই তা স্পষ্ট। তিনি বললেন,
“এত রাতে? স্কুলে তো অনেক গল্প করো, আবার কিসের খেজুরে আলাপ?”
ছেলেটা গম্ভীর মুখে বলল,
“না বাবা খেজুরে আলাপ না, এটা একটু জরুরি…”
বাবা এবার মনোযোগ দিলেন। ছেলেটা জিজ্ঞেস করলো, "আচ্ছা বাবা তুমি ১ ঘন্টায় কত টাকা ইনকাম করো, না মানে এমনিতেই জানতে চাচ্ছিলাম আর কি"..
ছোট্ট একটা বাচ্চার মুখে এমন উদ্ভট প্রশ্ন শুনে নিমিষেই আনিস সাহেবের বিরক্তি যেন ক্রোধে রূপ নিলো -- "এই তোমার জরুরি কথা, পড়াশুনা বাদ দিয়ে সারাদিন বাবার জগত নিয়ে গবেষণা চলে তাইনা ".....
উনি একটানা বলেই যাচ্ছেন আর বাচ্চাটা মাথা নিচু করে আছে।
".....আচ্ছা যাইহোক প্রশ্ন যখন করেই ফেলেছো শোন, আমি মাসিক স্যালারিতে চাকরি করি। তবুও যদি হিসেব করি তবে আমার প্রতিঘন্টার ইনকাম হবে ৪০০ টাকা। ঠিক আছে, যাও এখন ঘুমাও। "
আনিস সাহেবের কথা পুরোপুরি শেষ হওয়ার আগে ছেলে বললো, "বাবা তুমি আমাকে ২০০ টাকা ধার দিতে পারবে?"
আনিস সাহেব এবার ছেলেকে ধমক দিলেন --"তোমার যখন যা লাগে আমি কিনে দেই, প্রতিদিন স্কুলে টিফিন খাওয়ার জন্য টাকা দেই, তবুও তোমার হয়না? শোনো আমি না অনেক কস্ট করে টাকা ইনকাম করি, তোমার আজাইরা কাজে ব্যয় করার মত ফালতু টাকা আমার নেই। যাও ঘুমাও গিয়ে "
ছেলে আর কথা বাড়ালো না।সে মাথা নিচু করে নিজের ঘরে চলে গেল। এদিকে আনিস সাহেবেও সবকিছু গুছিয়ে বিছানায় গেলেন।
কিন্তু বিছানায় যাওয়ার পর তার মোটেও ঘুম আসছিল না। তিনি ভাবতে লাগলেন, "ছেলেটা তো জীবনে কখনো টাকা চায়নি, এমনও তো হতে পারে স্কুলে সব বন্ধুরা মিলে পিকনিক করবে! যাই টাকাটা দিয়ে আসি"
ছেলের ঘরে গিয়ে সুইচ জ্বালাতেই দেখলেন, ছেলে বিছানার ওপর বসে কাঁদছে। ছেলের কান্না দেখে এবার আনিস সাহেবের আরো বেশি খারাপ লাগলো। বালিশটা সরিয়ে ছেলের পাশে বসলেন। এদিকে বালিশ সরাতেই দেখলেন বিছানার ওপর অনেকগুলো খুচরা টাকা ছড়িয়ে আছে।
"কি ব্যপার বাবু, তোমার কাছে তো অলরেডি এতগুলো টাকা আছে! তাহলে আমার কাছে আবার চাইলে কেন? আর এতগুলো টাকাই বা পেলে কোথায়?"
"বাবা, ওগুলো আমি টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে জমিয়েছি। ওখানে ২০০ টাকা আছে। তুমিতো অনেক ব্যস্ত, আমাকে সময় দেয়ার মত কোন সময়ই তোমার নেই।এদিকে প্রতি উইকেন্ডে আমার সমস্ত বন্ধুকে তাদের বাবা বেড়াতে নিয়ে যায়। আমারও ভীষণ ইচ্ছে করে বাবা তোমার সাথে সময় কাটাতে।কিন্তু তুমিতো অনেক ব্যস্ত। তাই আমি তোমার কাছ থেকে ১ ঘন্টা সময় কিনতে চেয়েছিলাম।এজন্যই আরো ২০০ টাকা তোমার কাছে ধার চেয়েছিলাম, যাতে ৪০০ মিলিয়ে তোমাকে দিতে পারি।"
ছেলে কথা বলে যাচ্ছে আর এদিকে আনিস সাহেবের চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরেই যাচ্ছে। তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন।বাচ্চাটাকে বুকে জাপটে ধরে তিনি বললেন, "সোনা বাবা আমার, এখন থেকে যত যাই হয়ে যাক -- প্রতি উইকেন্ডে আমি তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো।"
গল্পটি থেকে কি শিখলেন?আপনার অতিরিক্ত ব্যস্ততার জন্য আপনার আদরের সন্তানটিও নিরবে কস্ট পাচ্ছে না তো??