01/11/2024
গঠনতন্ত্র হোক কিংবা #সংবিধান হোক, সংস্কার হোক বা পূনর্লিখন হোক, এ বিষয়ে আমার #৬দফা দাবী তুলে ধরলাম। একমত হলে শেয়ার করে পৌছে দিন নীতিনির্ধারকদের কাছে।
১। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি
জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা – এই চারটি আদর্শকে ৭২ এর সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে স্থির করা হয়েছিল গণপরিষদে তেমন কোন আলোচনা ছাড়াই। একদিকে যেমন এগুলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির মত মৌলিক গুরুতপুর্ণ বিষয় করা হয়েছে, অন্যদিকে আবার এগুলোর একটিকেও আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য না করে অন্তঃসারশূন্য চটকদার বক্তব্য করে ফেলা হয়েছে। তাই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে চাই – আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা, সাম্য ও মানবিক মর্যাদা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা।
২। ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম অসাম্প্রদায়িকতা
৭১ সালের মার্চ মাসে ইহাইয়া খানের আহবানে অখণ্ড পাকিস্তান কাঠামোতে ছয় দফাকে প্রতিফলিত করে যে দুটি সাংবিধানিক প্রস্তাব তৈরী করা হয়েছিল তাতেও কিন্তু ধর্মিনিরপেক্ষতার কোন উল্লেখ ছিল না। এমনকি ৭০ সালের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতেও ধর্মিনিরপেক্ষতার কথা উল্লেখ কর হয়নি। অথচ বর্তমান সংবিধানের ২(ক) অনুচ্ছেদে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম রেখে আবার ১২ অনুচ্ছেদে ধর্মিনিরপক্ষতার কথা বলে একটা বিভ্রান্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। আসলে আমি বলব, এখানে অসাম্রদায়িকতাকে ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই এই সংবিধানের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কথাটা প্রতিস্থাপিত হতে হবে ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ শব্দটা দিয়ে।
৩। দলীয় অন্ধ আনুগত্য
গণপরিষদ বিতর্কে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদকে গণতন্ত্র চর্চার পথে অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। দলের সাধারণ সদস্যরা সর্বোচ্চ নেতাদের তল্পিবাহক হয়ে উঠতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখেছি দেশের সর্বোচ্চ মহল থেকে এই ৭০ অনুচ্ছেদের পক্ষে বলতে গিয়ে সরকারের স্থিতিশীলতা রক্ষার কথা বলা হয়। কিন্তু এর প্রতিকার হিসেবে কেবলমাত্র অনাস্থা ভোটের সময় দলের বিরুদ্ধে ভোট না দিতে পারার বিধান রাখা যেত, যেমনটা করা হয়েছে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের সংবিধানে। কাজেই এটি পরিষ্কারভাবেই আমাদের সংবিধানের একটি কালো অনুচ্ছেদ। কেবল স্বৈরতন্ত্র ও একদলীয় সরকার থাকলেই এ ধরনের বিধান থাকা সম্ভব।
৪। বৈদেশিক চুক্তির গোপনীয়তা
এই সংবিধান অনুযায়ী বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত কোন আন্তর্জাতিক চুক্তি সংসদে উপস্থাপন করার বিষয়ে সরকারের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। শুধুমাত্র ১৪৫(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এধরণের চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হবে। বিদেশের সাথে সম্পাদিত যেকোন চুক্তি সংসদে আলোচনা করার বাধ্যবাধকতা থাকলে আজ আমাদেরকে পাস্ববর্তী দেশের সাথে এরকম জনস্বার্থ বিরোধী চুক্তি হজম করতে হত না।
৫। দায়মুক্তি বা ইনডেমনিটি
আমাদের সংবিধান প্রণয়নের সময়ই ৪৬ অনুচ্ছেদে দায়মুক্তি দিয়ে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে - কোন ব্যক্তি জাতীয় শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে কোন কাজ করে থাকলে সংসদ আইনের দ্বারা সেই ব্যক্তিকে দায়মুক্ত করতে পারবে। এটা কেমন কথা হল? জাতীয় শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনেই যদি কেউ কিছু করে, তাহলে তাকে আইন করে দায়মুক্তি দিতে হবে কেন? আমরা সকল রকম দায়মুক্তির বিপক্ষে – সেটা কাউকে হত্যার দায়মুক্তি হোক, কিংবা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনে দেয়া কোন দায়মুক্তি হোক।
৬। তত্ত্বাবধায়ক সরকার
প্রধান বিচারপতির অবসরের পরে লেখা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা সেই আলোচিত রায়ে যখন তত্ত্ব্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আরও দুটি সংসদ নির্বাচন করার কথা বলা হয়, আমরা তখন সেটিকে রায়ের রেশিও ডিসাইডেন্ডী নয়, বরং অবিটার ডিক্টা ধরে বসে আছি। অথচ Constituent Assembly of Bangladesh রিপোর্ট বলছে জাতীয় চার নেতার একজন সহ ৭২ এর সংবিধান প্রণেতারাও পর্যন্ত গণপরিষদ বিতর্কে বারবার বলেছেন – নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার স্বার্থে নির্বাচনকালীন সরকার একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে কাজ করবে এবং নির্বাচনের আগে ৯০ দিন কোন মৌলিক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তারমানে ব্যাপারটা আসলে এমন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাস্তবতা আসলে নব্বইয়ের দশকের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে নয়, বরং আমাদের দেশের ও সংবিধানের জন্ম লগ্ন থেকেই ছিল।
Faatiha Aayat