11/06/2025
|| সিলেটের শ্রীধাম ''ঢাকা-দক্ষিন'' কথামৃত ||
▪️শ্ৰীচৈতন্য মহাপ্ৰভু যখন স্বয়ং ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণ হয়েও তার নিজেরই ভক্তরুপে ২৪ বছর আগে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন , তখন প্রায়ই তিনি পুণ্যস্থান গুলিতে , অৰ্থাৎ তীৰ্থভ্ৰমণে যেতেন । তিনি কেবল দক্ষিণ ভারতেই পরিভ্ৰমণ করেছিলেন তা নয় , ভগবান শ্ৰীকৃষ্ণের নিত্যধাম বৃন্দাবনেও তীৰ্থ পরিক্ৰমা করেন । যখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভু বৃন্দাবনধাম থেকে তীৰ্থভ্ৰমণ যাত্রা শুরু করেন , তখন মহাপ্রভুর যাত্ৰাপথ সুগম করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে উড়িষ্যার রাজা প্ৰতাপরুদ্ৰ তার ভৃত্যবৰ্গ এবং সৈন্যদলকে আদেশ দিয়ে পাঠিয়ে ছিলেন , যাতে পথিমধ্যে মহাপ্রভুর বিশ্ৰাম লাভের স্থানগুলিতে প্ৰত্যেক জায়গায় যেন বিশেষভাবে স্মৃতিচিহ্ন তথা স্মারক-মন্দির স্থাপন করা হয়ে থাকে । তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভু যেসব জায়গায় ক্ষণকালের জন্যও অবস্থান করছিলেন , সেই সমস্ত মাহাত্ম্যপূৰ্ণ তীৰ্থস্থানগুলি কেউ দৰ্শন করলে প্ৰভূত কল্যাণ লাভ হয়ে থাকে।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভুর জন্ম শ্ৰীমায়াপুর ধামে হলেও , তার পিতৃপুরুষের ভিটে বা আদিনিবাস ছিল শ্ৰীহট্ট, বর্তমানে সিলেট । শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মাতা শচীদেবীর পৈতৃক বাড়িও অৰ্থাৎ মহাপ্ৰভুর পিতামহ শ্ৰীনীলাম্বর চক্ৰবৰ্তীর বাড়িও ছিল হবিগঞ্জ জেলার জয়পুর গ্রামে।
যা ''শচীঅঙ্গন'' নামে খ্যাত।
রাজনৈতিক কারণে দেশভাগের মধ্য দিয়ে ভারতবৰ্ষ স্বাধীন হলে উক্ত স্থান দুটিই এখন ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশে অবস্থিত ।
শ্ৰীহট্টের সিলেট শহর থেকে প্ৰায় ৩৫ কিমি দূরে গোলাপগঞ্জ থানার অধীন ''ঢাকা-দক্ষিণ '’ নামক স্থান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পূর্ব পুরুষগণের আদি বাড়ি এবং তাঁর পিতা শ্ৰীজগন্নাথ মিশ্রর আবিৰ্ভাব স্থান বলে খ্যাত।
✔️শ্ৰীজগন্নাথ মিশ্রের পিতৃদেব শ্রীউপেন্দ্ৰ মিশ্র ও মাতা শোভাদেবীর কোন সন্তানাদি না থাকায় চৈতন্য মহাপ্ৰভুর পিতামহ শ্রীউপেন্দ্ৰ মিশ্রর সংসারের প্রতি বৈরাগ্য জন্মে এবং সংসার ত্যাগের পরিকল্পনা করলে পর , তার স্ত্ৰী অৰ্থাৎ শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভুর ঠাকুমা শোভাদেবী তার স্বামীর সঙ্গ ত্যাগ করতে অসম্মতি করলেন , অবশেষে তারা দুজনেই একত্ৰে গৃহ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন ।
তারা দুজনে বহুদিন বিভিন্ন স্থান পৰ্যটন করে অবশেষে সিলেটের,
‘'ঢাকা-দক্ষিণ'' নামক এক মনোরম পরিবেশযুক্ত স্থানে এসে বসতি স্থাপন করেন । সেই সময় এই স্থানটি ছিল একটি টিলার উপরে নির্জন, জন-বসতিহীন একটি জায়গা। সেইস্থানে তারা ভগবান নারায়নের শালগ্রাম শিলা স্থাপন করে দুজনেই ভগবান নারায়নের সেবায় যুক্ত হন। ভক্তের সেবায় সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান তাদের সন্তান লাভের বরদান করেন এবং পরবর্ত্তিতে তাদের সাতটি পুত্র সন্তান লাভ করেছিল।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতা জগন্নাথ মিশ্র ছিলেন শ্রীউপেন্দ্র মিশ্রের পঞ্চম পুত্র।
বাল্যকালে উপেন্দ্র মিশ্র তার প্রিয় পুত্র জগন্নাথ মিশ্রকে নবদ্বীপ প্রেরন করান উচ্চশিক্ষিত করার জন্য। উচ্চশিক্ষিতা লাভ করার পর জগন্নাথ মিশ্রের সাথে আরেক ব্রাহ্মণ পন্ডিত নীলাম্বর চক্রবর্তীর কন্যা শচীদেবীর সাথে বিবাহ হয়।
▪️একদিন শ্ৰীজগন্নাথ মিশ্রের মাতা শোভাদেবী রাত্ৰিতে স্বপ্ন দেখেন ব্রজেন্দ্ৰনন্দন শ্ৰীকৃষ্ণ স্বয়ং তার নাতিরুপে আসছেন । কিন্তু স্বপ্লাদেশে বলা হয় যে শচীদেবীকে যত শীঘ্ৰ সম্ভব যেন নবদ্বীপে প্রেরণ করা হয় । তা না হলে অমঙ্গল হবে । এই স্বপ্ন দৰ্শনে শোভাদেবীর আনন্দ বৰ্ধন হলেও পাশাপাশিভাবে বৌমার বিচ্ছেদে খুবই দুঃখিত হলেন ।
ছেলে ও বৌমাকে নবদ্বীপ প্রেরণ করার পূর্বে শোভাদেবী বৌমা শচীদেবীকে দিয়ে প্ৰতিজ্ঞা করালেন যে, তিনি যেন অবশ্যই তার নাতিকে তার কাছে একবার প্রেরন করিবেন।
যথাসময়ে শ্ৰীজগন্নাথ মিশ্র ও শচীদেবীর সংসারে শ্ৰীগৌরাঙ্গ মহাপ্ৰভু শ্ৰীমায়াপুর ধামে আবির্ভুত হলেন । এরপর নবদ্বীপে বাল্য লীলা ও যৌবনে শ্রীলক্ষ্মীপ্ৰিয়া দেবীর পানিগ্ৰহণের পর শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভু একবার শ্ৰীহট্টতে আসেন। উদ্দেশ্য হরিনাম প্রচার ও পিতৃভিটায় অপেক্ষারত ঠাকুমাকে দর্শন।
✔️কিন্তু ততদিনে শোভাদেবী বয়সের ভারে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভুর জেঠিমা শোভাদেবী সুন্দর সুঠাম গৌরবণ এক অপূর্ব যুবা পুরুষের আগমন সংবাদ মহাপ্ৰভুর ঠাকুমাকে প্রদানের পর দৃষ্টিশক্তিহীন শোভাদেবী সেই সুন্দর সুঠাম পুরুষকে স্পৰ্শ করামাত্ৰ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্ৰভুকে দেখতে পেলেন । ঠাকুমা সম্বোধন করে মহাপ্রভু যে স্বয়ং তার নাতি , সেই পরিচয় প্ৰদান করলেন ও প্রনাম করলেন।
কিন্তু ঠাকুমা শোভাদেবী গদগদ চিত্তে বলেন ‘ আমি যাকে স্বপ্নে দৰ্শন করেছি সে তুমি নও'। মহাপ্ৰভুকে তার ঠাকুমা প্রশ্ন করেছিল সেইরুপ কোথায় ?
✔️তখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শোভাদেবীকে নিয়ে একটি ঘরে গিয়ে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন এবং মহাপ্রভু তার ঠাকুমাকে ভগবত্তারুপ দর্শন দান করেন। বন্ধ ঘরের ভিতর থেকে বহু ব্যক্তির উচ্চ-স্বরের সংকীৰ্তন শুনে বাইরে দাঁড়ানো সবাই খুব অবাক হল । কিছুক্ষণ পরে দরজা খুলতেই দেখা গেল সেখানে কেবল দুটি বিগ্ৰহ পড়ে আছে । একটি বিগ্ৰহ হল ব্ৰজেন্দ্ৰনন্দন ত্ৰিভঙ্গ মুরারী শ্ৰীকৃষ্ণ ও অন্যটি আজানুলম্বিত বাহু শ্ৰীগৌরাঙ্গ। ঠাকুমা শোভাদেবী স্বপ্নের সেই মনোহারী রুপ দৰ্শন করে মূৰ্ছা গেলেন। দৈববাণী হলো তুমি এই বিগ্রহদ্বয়ের সেবায় মনোনিবেশ করো । সেই থেকে এখনও এখানে এই যুগল বিগ্রহের সেবা পূজার ধারাটি চলে আসছে।
যিনি কলিযুগে এই যুগলমূর্তি দর্শন করবে তার মৃত্যুর পর সে নরক দর্শন হবে না অর্থাৎ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে মৃত্যুর পর দক্ষিনায়ন হলে নরকে যায় কিন্তু যারা এই যুগলমূর্তি শ্রীবিগ্রহকে দর্শন করবে তাদের দক্ষিন গমনের রাস্তা ঢাকা হয়ে যায়।
▪️সেই থেকে এই ধামের নাম হয় ''ঢাকা দক্ষিন''।
ॐ━❀꧁꧂হরে কৃষ্ণ꧁꧂❀━ ॐ