13/09/2025
গত ১৬ বছরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কোনো ক্যাম্পাসে টিকে থাকার সুযোগ পায়নি। ফলে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল সীমিত। ইসলামী ছাত্রশিবিরও প্রকাশ্যে দাঁড়ানোর সুযোগ পায়নি, তবে তাদের কৌশল ছিল ভিন্ন তারা গোপনে, এমনকি ছাত্রলীগের সাথে মিশে থেকেও কার্যক্রম চালিয়েছে। এ কারণে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের একটি সম্পর্ক বজায় ছিল।
শিবির সচেতনভাবে গোপন সংগঠনের কৌশল নেয়, আবার অনেক সময় ছাত্রলীগের পদেও থেকেছে কেবল সংকটময় সময় পার করার জন্য। তবে তারা অন্তরে ছাত্রলীগ করেছে এমনটা বলা যায় না, বলাটাও যুক্তিযুক্ত নয়। একটি ছাত্র সংগঠন হিসেবে শিবির অনেক বেশি দূরদর্শী; তাদের কার্যক্রম পরিকল্পিত এবং অগ্রসরমান। প্রয়োজনে তারা নিজেদের মানুষকে অন্য সংগঠনের ভেতরেও ঢুকিয়েছে। ভাবুন, একটি সংগঠন প্রতিপক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে এটা সংগঠনিক দক্ষতারই প্রমাণ। এর বিপরীতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের স্ট্র্যাটেজিক অবস্থান তুলনামূলকভাবে দুর্বল ছিলো।
শিবির গোপনে রাজনৈতিক চর্চা করলেও প্রকাশ্যে তারা অনেকটা বন্ধুভাবাপন্ন, ভদ্র ও সদালাপী। অন্যদিকে, ঐতিহ্যগতভাবে ছাত্রদল-ছাত্রলীগের রাজনীতি ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তারের চাপ তৈরি করে, যা সাধারণ শিক্ষার্থীরা খুব একটা ইতিবাচকভাবে নেয় না। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ বিরূপ মনোভাব আরও বেড়েছে। অবশ্য শিবির প্রভাব বিস্তার করতে চায় না, তা নয়—তারা সময় ও পরিস্থিতি বুঝে পদক্ষেপ নেয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্যাম্পাসে তারাও দ্রুত সক্রিয় হয়ে ওঠে।
ডাকসুর অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিয়েছে দিনশেষে যত বড় দলই হোক না কেন, জনসম্পৃক্ততা ও জনকল্যাণমুখী কার্যক্রম ছাড়া কোনো নির্বাচনে সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। তাই শুধু বড় দল বলে আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ এখন আর বাংলাদেশে নেই। আওয়ামী লীগ যতদিন মাঠের বাইরে আছে পূর্বের গতানুগতিক সমীকরণ খুব একটা সঠিক হবে না।
ভোটের মাঠ ও চিত্র বদলে গেছে। ২০০৮ সালের ভোটের অনুপাতের হিসাব আঁকড়ে ধরে থাকলে বড় দলগুলো জাতীয় নির্বাচনে কঠিন অবস্থায় পড়বে। সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক আত্মবিশ্বাস ভালো, তবে ডাকসুর মতো জাতীয় নির্বাচনে সাফল্যের জন্য প্রচলিত সমীকরণের বাইরে গিয়ে নতুন চিন্তা ও কৌশল গ্রহণ করতেই হবে।
কথার জুড়ে আর গাঁয়ের জুড়ে রাজনীতির দিন মনে হয় শেষ হয়ে যাচ্ছে।