13/04/2025
আমরা সবাই বলি ভগবান আমাদের হৃদয়ে অবস্থান করেন। যোগীগন বলেন ব্রহ্মরুপে তিনি আছেন, জ্ঞানীগন বলেন পরমাত্মা রুপে আছেন বা ভক্তগন বলেন চৈত গুরু রুপে ভগবান আছেন।
শ্রীশ্রীমদ্ভাগবতেও আছে,
''শৃন্বতাং স্বকথাঃ কৃষ্ণঃ পুন্যশ্রবনকীর্তন,
হৃদ্যন্তঃস্থো হ্যভদ্রানি বিধুনোতি সুহৃৎসতাম্''। ১/২/১৭
অনুবাদঃ পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যিনি পরমাত্মা রুপে সকলের হৃদয়ে বিরাজ করেন এবং যিনি হচ্ছেন সাধুবর্গের সুহৃদ, তিনি তার পবিত্র কথা শ্রবন এবং কীর্তনে রতিযুক্ত ভক্তদের হৃদয়ের সমস্ত ভোগবাসনা বিনাশ করেন।
পরমেশ্বর ভগবান ময়লাযুক্ত হৃদয়ে অবস্থান করতে পারেন না যেমন কোন সম্মানিত ব্যাক্তিকে আমরা ময়লা আবর্জনার উপরে বসতে দিতে পারি না। ভগবানকে যদি কোন সৌভাগ্যবান জীব তার হৃদয় সিংহাসনে বসাতে ইচ্ছা করেন, তবে প্রথমে তাকে তার হৃদয়ের পুঞ্জীভূত ময়লা দুর করতে হবে।
আসুন আমরা জানি আনাদের হৃদয়ে কি কি ময়লা আছে।
যেমন, আসুরিক জীবন-যাপন, নির্বিশেষ বাদ, অদ্বৈতবাদ,
মনোধর্মী-জ্ঞান, অষ্টাঙ্গযোগ, জ্ঞান-কর্মাদি অন্য অভিলাষ।
এইগুলি হৃদয়ে তৃন-আগাছা, ধুলাবালি ও কাকড়ের মত লেগে আছে যা দ্বারা ভগবানের সন্তুষ্টি বিধান ত দুরের কথা বরং ভগবানকে তা দ্বারা আঘাত করা হয়।
আবার অনেক কষ্ট করে পারমার্থিক উন্নতি করে এই ময়লা দুরিভুত করলেও হৃদয়ে আরও সুক্ষ্ণ সুক্ষ্ণ ময়লা থেকে যায়।
সেগুলি হল,
১। অন্যের দোষ দর্শন কিন্তু আমি ওদের চেয়ে ভাল বা উচ্চভক্ত।
২। পারমার্থিক কর্ম করে যশ খ্যাতির লাভের আশা।
৩। অন্যান্য জীব, জাতি ও ধর্মকে হিংসা করা।
৪। শাস্ত্র নিষিদ্ধ আচরন করা, নেশা, জুয়া, ও অবৈধ সঙ্গ করা।
৫। জড়বিষয় লাভের লালসা করা
৬। অন্যের কাছ থেকে প্রশংসা, পূজা, জনপ্রিয়তা ও সম্মান কামনা।
৭। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য।
৮। শোক, ক্ষুধা, পিপাসা, জরা, মৃত্যু ও কামিনী-কাঞ্চনের আসক্ত।
এইগুলি দ্বারা যাদের হৃদয় অত্যন্ত কলুষিত তাদের হৃদয়ে ভগবান অবস্থান করার উপযুক্ত নয়।
কলিযুগে আমরা সবাই একেকজন অসুর। আর এইসব ময়লা দ্বারা সবাই কলুষিত। প্রতি ঘরে ঘরে এইসব অসুরদের হত্যা করা মনে হয় ভগবানও অপারগ। তাই স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণই কলিযুগে চৈতন্য মহাপ্রভু রুপে আবির্ভূত হয়ে বললেন,
''এবে না অস্ত্র ধরিব,
প্রানে না মারিব,
চিত্তশুদ্ধি ঘটাইব সবার''। চৈ চ।
আমাদের হৃদয়ের পুঞ্জিভুত ময়লা যা অসুরতুল্য তা দূরীভুত করার জন্য চৈতন্য মহাপ্রভু সকলকে উপদেশ দিয়েছেন ''হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র'' জপ ও কীর্তন করতে।
''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে,
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে''।
এই মহামন্ত্র জপ-কীর্ত্তন দ্বারা সর্বপ্রথম হৃদয় পরিষ্কার হবে এবং তারপর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহিমা শ্রবন ও কীর্তন করলে হৃদয়ের সমস্ত ময়লা অচিরেই দুর হয়ে যাবে।
তবেই সেই ময়লামুক্ত হৃদয়ে স্বয়ং কৃষ্ণ অধিষ্ঠান হবেন।।হরেকৃষ্ণ।।