16/08/2025
রকি আর আবিরের মাথা এখনো চড়কগাছের মত ঘুরছে! যেন ওরা বিশ্বাসই করতে পারছে না। এতদিন তাহলে কোন গোলকধাঁধায় আটকে ছিল? শেষে ওরা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে, দুজনেই সমুচ্চ স্বরে বলেঃ
--- ব্যারিস্টার মিলি!?
খবরের শিরোনাম--
" ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে ৪ আসামীর ফাঁসি কার্যকর"
পত্র পত্রিকা থেকে শুরু করে সকল মিডিয়াতে (রেডিও, টেলিভিশন, অনলাইন সাইট ও অন্যান্য) ঘুরেফিরে একই খবর! কাল্পনিক ও অবাস্তব কেইসকে, বস্তবে সফলতার দুয়ারে এনে দিলেন উদীয়মানা ব্যারিস্টার মিলি। এটাই প্রথম কেইস, কিন্তু অবিশ্বাস্য সফলতা! অনেক নামীদামী, জ্ঞানী উকিল-ব্যরিস্টারদের আইডিয়াল! আরও কত শত নানান উপমা-বিশেষণ দিয়ে ভরপুর খবরগুলো!
সুপ্রিমকোর্ট থেকে মাত্র তিনদিনে, রকি, রাফসান, আবিদ ও জনির ফাঁসির আদেশ কার্যকর করিয়েই ছাড়লেন ব্যারিস্টার মিলি! সকল সাক্ষ্য প্রমাণ এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে, অন্ধও বলে দিতে পারতো এরা ৪ জনই তুলিকে ধর্ষণ ও হত্যা করেছে!
#ফ্ল্যাশ__ব্যাকঃ
মিলি, লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারই পাশ করে বাংলাদেশ এয়ার পোর্টে ল্যান্ড করলে, মিলি যেন তুলি হয়ে যায়! ওর ভিতরে অন্য ওকজন বাস করতেছে এমন অনুভূত হয়! কি একটা প্রতিশোধের নেশা যেন চোখেমুখে আভাস পাচ্ছে।
মিলি, বাবা-মায়ের সাথে সাক্ষাৎ না করেই তুলির কেইস হাতে নেয়। যদিও আগেই প্রমিজ করেছিলো, তুলির কেইস সমাধান না করে অন্য কোন কেইস হাতে নিবে না। কিন্তু সেটা এভাবে এত দ্রুত ব্রেণের ভিতর চলে যাবে কল্পনা করেনি। এমনকি মা বাবার সাথে সাক্ষাতের চেয়েও মাত্রা অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে!
মিলি নিজেই নিজের সাথে কথা বলতে লাগলো, একটা মেয়ে এভাবে হারিয়ে যেতে পারে না! এভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে না। এর কোনো না কোনো উত্তর অবশ্যই আছে।
এ যেন তুলির রক্ত, আত্মা সব মিলির শিরা উপশিরাতে মিশে গেছে। অবশ্য আইনি পড়া অবস্থায়, তুলির কেইসটা অনেকবার স্টাডি করেছে। তখনই কিছু প্ল্যানিং করে রেখেছিল, "কি ভাবে, কি করবে?"
তুলির কলেজ লাইফ, ভার্সিটি লাইফ, লাভ লাইফ, এমনকি কোচিং করানোর (তুলি একটা কোচিং পরিচালনা করতো) সময়কার সকল বিষয়ে রিসার্চ করে উপলব্ধ হয় যে, "সামথিং মিসিং"
আর মিসিংটা হলো রকি, কারণ তুলির ডায়েরি থেকে রকির নাম শুধু একবার পাওয়া গেছে, তাই কেউ কখনো সন্দেহ করেনি! আর এটাও দুই বছর পূর্বে যখন পুলিশ ইনভেস্টিগেশন করে, "তুলি মিসিং কেইস" টা, সেই সময়কার কথা!
তবে মিলি শূন্য থেকে শুরু করতে চাচ্ছে! একটা বড় ধামাকা দিতে যাচ্ছে জাতিকে। একটা নতুন লেসন।
রকিকে খুঁজে বের করতে বেশিদিন লাগেনি মিলির! শহরের বিভিন্ন বার ও ডান্স ক্লাবে খোঁজ নিয়েই পেয়ে যায়। দু'দিন অবজারভেশন করে, রকির Daily routine জেনে নেয় মিলি।
রকি কোথায় যায়, কি করে, ওর ক্লোজ ফ্রেন্ড কে কে? রকি সারাদিন যায়ই করুক না কেন, দিনশেষে চার বন্ধু "ফোনে নয়তো মদের বারে" মিলিত হবেই। বাকিরাও সেইম, বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল।
তুলির সথে মিলির চেহারা ৯৯% মিল থাকাতে খুব সহজেই জালে আটকা পড়ে রকি। ওদের বন্ধুদের মধ্যে একমাত্র রকিই মাথা মোটা ও কথায় কথায় রেগে যায় আর রাগীরা বরাবরই একটু বোকাসোকা টাইপের হয়! তাই ওকেই টার্গেট করে মিলি, নয়তো ওদের বন্ধুদের মধ্যে অন্য কেউ হতো টার্গেট!
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে, দূর থেকে রকির নজরে আসার চেষ্টা করছে মিলি, কিন্তু হাবলুটা ঠিক বুঝতে/ধরতে পারছে না। সেদিন বাস স্টান্ডে ঠিক ধরা দেয় চান্দু আর মিলিকেই তুলি ভেবে গলদঘর্ম হয়ে জনি ও অন্যান্য বন্ধুদের ফোন করে।
ওদের চার বন্ধুর ফোনই আগে থেকে ট্র্যাকিং করে রেখেছিলো মিলি। তাই ওদের সমস্ত কথাবার্তা রেকর্ড হয়ে যায়। সব শুনার পর, মিলির শরীরে যেন তুলির অশরীরী আত্মা ভর করে। আর সেই সময়ে রকি, রাফসান ও আবিদ সেইফ প্লেসে থাকাতে, টার্গেট হয় জনি!
জনির এক্সিডেন্ট ঘটানোর পরে শিকার হয় আবিদ ও রাফসান। মিলিকে এ সমস্ত কাজে ১ জন ড্রাইভার ও টেকনিশিয়ান যথেষ্ট হেল্প করছে, যদিও টাকার বিনিময়ে। লালচোখ ওয়ালা ড্রাইভার আর ফর্সাটা টেকনিশিয়ান।
ওদের শাস্তি ও তুলি সম্পর্কে সমস্ত তথ্যাদি সংগ্রহ করার পরে, কেইস কোর্টে তোলা হয়। তারপরই ফাঁসি কর্যকর!
#ফ্ল্যাশব্যাক__এন্ডিং
জজের কাছে মিলির শেষ বক্তব্য টা এমন ছিল--
মী লর্ড, কোন ক্রাইম ই পার্ফেক্ট না। কোন ক্রিমিনালও পার্ফেক্ট না। আমরা (আইনের লোক) যদি কোন রকম সুতা ধরে টান দিতে পারি, পুরা লাটাই চলে আসবে। শুধু দরকার সদিচ্ছা। যদি বসে থাকলেও সরকার টাকা(বেতন) দেয়, তবে কি দরকার পরিশ্রমের! বরং বসে বসে facebook, messenger, whatsapp, viber, imo, tiktok সহ সকল Social media তে মাস্তি করি।। মাস শেষে বেতনতো পাবই ই....
আমাদের সিস্টেম টাকে চেঞ্জ করতে হবে মী লর্ড। যোখানে সিনিয়র অফিসার ঘুষ খাবে, সেখানে জুনিয়রা তো লুট করবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা ছোটরা বড়দের দেখে শিখি।
সেজন্য প্রত্যেক সিনিয়রের নৈতিক দায়িত্ব হবে, নিজে ভুল কিছু করব না এবং আমার অধীনস্থদেরও clean & holy রাখবো।
পেশাকে টাকা তে নয় বরং জীবনের অংশ হিসাবে ভালোবসতে হবে! তবেই জয়, সফলতা, সম্মান, গৌরব ও অন্যান্য!
এখন শুধু একটাই প্রশ্ন সবার মুখে মুখে--
"কে এই উদীয়মান সফল ব্যারিস্টার মিলি? কে সে?"
চলবে.......
গল্পঃ "অশরীরীর মায়া"
পর্বঃ ০৭
✅ ফলো করে পাশে থাকুন পরবর্তী পর্বগুলো পাবার জন্য।