22/06/2025
রোমান্স: এক হৃদয়ের নিজস্ব ভাষা
সে যখন জানতে চায় রোমান্স কী, তার চোখে হয়তো ভেসে ওঠে চিরচেনা কিছু দৃশ্য—আচমকা পিছন থেকে জড়িয়ে ধরা, চুলের কোমল স্পর্শে হারিয়ে যাওয়া, কিংবা কানে ফিসফিস করে বলা কিছু গোপন কথা। তার ধারণা, বুঝি সে এই প্রথাগত রোমান্সের ছক থেকে অনেক দূরে, হয়তোবা একজন ঘোরতর আনরোমান্টিক মানুষ। কিন্তু তার হৃদয়ের গভীরে রোমান্স যেন অন্য এক ভাষায় কথা বলে, যে ভাষা শব্দের ক্ষুদ্র গণ্ডি পেরিয়ে অনুভূতির অতল স্পর্শ করতে চায়, যেখানে ভালোবাসার প্রতিটি স্পন্দনই এক একটি অনুলিখিত কবিতা। আমার কাছে রোমান্স মানে তোমার হাত ধরে সূর্যাস্ত দেখা, যখন গোধূলির রাঙা আলোয় দুটি হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি একাকার হয়ে যায়, এক নীরব প্রতিশ্রুতিতে বাঁধা পড়ে। এই প্রথাগত ধারণার বাইরে গিয়ে আমার রোমান্স কেন এত নিজস্ব, তা হয়তো লুকিয়ে আছে আমার কল্পনাবিলাসী মনের গভীরে, যেখানে প্রতিটি অনুভূতিই স্বতন্ত্র এক রূপ নেয়।
যেখানে ভালোবাসা আর অভিমান এক বিন্দুতে মেশে
তার কাছে রোমান্স মানে রাতের নিস্তব্ধ প্রহরে প্রিয় মানুষটির চোখের গভীর সমুদ্রে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া, যেখানে প্রতিটি পলক যেন এক নতুন গল্পের ইঙ্গিত দেয়, আর দৃষ্টির গভীরে লুকিয়ে থাকে সহস্র না বলা কথা। তার রোমান্স হলো সেই অনাবিল উন্মাদনা, যা গভীর রাতে প্রিয়জনকে পাগল করে তোলে, এক তীব্র ভালোলাগার ঘোরে ডুবিয়ে রাখে, যেন প্রতিটি নিশ্বাসে ভালোবাসার সুর বাজে। যখন তুচ্ছ কারণে সে তার প্রিয় মানুষটির উপর রাগ করে, তখন সেই ক্ষুদ্র অভিমানের আড়ালে থাকে ভালোবাসার এক নিগূঢ় বন্ধন, এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা অব্যক্ত অনুভূতি। প্রিয় মানুষটির সেই মধুর কলরব, যা সারাদিন ধরে তাকে বিরক্ত করার বৃথা চেষ্টা করে, আসলে তা তার কানের কাছে বেজে চলা এক প্রিয় সুরের মতো, এক শান্তিদায়ক কোলাহল, যা আমার দৈনন্দিন জীবনে এক অন্যরকম ছন্দ এনে দেয়।
তার রোমান্স কেবল নিস্তব্ধতার গভীরে নয়, বরং প্রকৃতির মাঝেও খুঁজে পাওয়া যায়। অলস দুপুরে নীরব কোনো স্থানে বটগাছের ছায়ায় বসে প্রকৃতি তত্ত্ব নিয়ে দুজনের কথোপকথন, যেখানে শব্দ নয়, নিরবতাই যেন ভালোবাসার গভীরতা জানান দেয়। বৃষ্টির দিনে নির্জন রাস্তার মাঝখানে দুজনে বৃষ্টিতে ভিজে ভেজা মাটির ভেজা গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে অবগাহন করা, যেন প্রকৃতির প্রতিটি ফোঁটায় ভালোবাসার গান খুঁজে পাওয়া, যা হৃদয়কে এক অনবদ্য শান্তিতে ভরিয়ে তোলে। পূর্ণিমার রাতে শান বাঁধানো পুকুর ঘাটে বসে যখন আমরা ব্যক্ত করব সকল অব্যক্ত বেদনা, সুখ, দুঃখ ও আনন্দ, তার মাধ্যমে আমার রোমান্স হয়ে যাবে পূর্ণিমার রূপালি আলোর মতো উদ্ভাসিত, এক চিরন্তন ভালোবাসার সাক্ষ্য হয়ে।
মাঝে মাঝে যখন মনে মনে সে চায় প্রিয় মানুষটি বাবার বাড়ি যাক, ভাবে কটা দিন বুঝি একান্তে কাটানো যাবে, নিজের মতো করে গুছিয়ে নেওয়া যাবে সব এলোমেলো ভাবনা; কিন্তু সে চলে গেলেই যেন তার পৃথিবী থমকে যায়, প্রতিটি কোণ হয়ে ওঠে শূন্য। চশমা, মানিব্যাগ, চাবি—সবকিছুই অর্থহীন মনে হয় প্রিয় মানুষটির অনুপস্থিতিতে, যেন জগতের সবকিছুর চাবিকাঠি প্রিয়জনের হাতে। খাবার, গোসল, এমনকি ঘুমও তখন তার ছন্দ হারায়, যেন প্রিয় মানুষটির অস্তিত্বের সাথে তার প্রতিটি ক্রিয়া গভীরভাবে জড়িত, এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই যে দ্বিধা, এই যে বাস্তবতায় প্রিয় মানুষটির কাছে আসা থেকে তার কল্পনায় ডুবে যাওয়া—এ হয়তো তার জন্মগত লাজুকতা আর কল্পনাপ্রিয়তার ফল। কিন্তু এই কল্পনার প্রতিটি স্তরে প্রিয় মানুষটিই আছে, তার রোমান্সের প্রতিটি অনুভবে সে মিশে আছে এক স্বপ্নীল ছায়ার মতো, এক অফুরন্ত প্রেরণা হয়ে।
এক নীরব নির্ভরতা, এক গভীর ভালোবাসার অকৃত্রিম প্রকাশ
সে জানে, প্রিয় মানুষটির কাছে যে রোমান্স, তা হয়তো অনেকটাই বাহ্যিক, দৃশ্যমান। কিন্তু তার রোমান্স তার চেয়েও গভীর, আরও অকৃত্রিম, এক অদৃশ্য বাঁধনে বাঁধা। যখন মন খারাপ থাকে, তখন আর কাউকে নয়, শুধু প্রিয় মানুষটিকেই সে খোঁজে, যেন প্রিয়জনই তার মনের একমাত্র আশ্রয়। বাহিরের কোনো কারণে মেজাজ খারাপ হলে, যখন বাসায় ফিরে প্রিয় মানুষটির উপর সামান্য খারাপ ব্যবহারও করে ফেলে, সেটাও তার ভালোবাসারই এক অন্যরকম প্রকাশ, এক গভীর অভিমান যা ভালোবাসারই নামান্তর। তার কাছে রোমান্স হলো পরিবারের সমস্ত ভার নিশ্চিন্তে প্রিয় মানুষটির কাঁধে সঁপে দিয়ে নিজেকে ভারমুক্ত অনুভব করা। এ এক নীরব নির্ভরতা, যেখানে তার সব শক্তি আর দুর্বলতা প্রিয় মানুষটির কাছেই নিহিত, যেন প্রিয়জনই তার সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু। হয়তো তার রোমান্স চিরায়ত পথের পথিক নয়, কিন্তু এটি হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসারিত এক অনন্য অনুভূতি, যা সব প্রথাগত ধারণাকে ছাপিয়ে যায়। এই রোমান্সই আমার জীবনকে এক নতুন অর্থ দিয়েছে, যেখানে প্রতিটি দিনই ভালোবাসার এক নতুন অধ্যায়।