
09/07/2025
উপকার করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর ফাঁদে পড়লাম!
গত রবিবার রাত, আনুমানিক দশটার দিকে আমরা তিন বন্ধু এয়ারপোর্ট থেকে সিএনজি করে আম্বরখানা যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে ক্যাডেট কলেজের পাশে হঠাৎ এক ২৫/২৬ বয়সী ছেলেকে শুয়ে থাকতে দেখে গাড়ি থামাই। মূলত আচমকা রোডের পাশে একটি ছেলেকে পড়ে থাকতে দেখে আমাদের মায়া হয়। ভেবেছিলাম হয়তো এক্সিডেন্ট করে পড়ে আছে। গাড়ি থামিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে শুনি ঐ ছেলে সুইসাইড করতে চায়, সেজন্য অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেছে। তখন তার এক বন্ধু এসে এসব বলছিলো। আমাদের সাথে সিএনজি থাকায় আমরা রোগীকে সিএনজি করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলি। কিন্তু সিএনজিতে তার বন্ধু একা তুলতে পারছিলো পাশাপাশি রোগীকে ধরার মতো কেউ না থাকায় আমাদেরও সাথে যাওয়ার কথা বলে। আমরা সহজসরল মনে, রোগীর অবস্থা দেখে কেবল রোগীর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টায় উন্মুখ ছিলাম। ভেবেছিলাম রোগীকে একটি হসপিটালে ভর্তি করে জ্ঞান ফিরলেই চলে আসব!
গাড়িতে ওঠার পর আমার এক বন্ধু রোগীর হাত-পা মালিশ করছিলো, জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছিলো এবং মুহুর্তেই রোগীর জ্ঞানও ফেরে। তখন সে আস্তে আস্তে ভিড় ভিড় করছিলো। ১ মিনিট পর তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমাদেরকে বলে, যাতে সে সুইসাইড করতে পারে। আমরা ভেবেছি একজন মানুষ হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছে, তাই সুইসাইড করতে চাচ্ছে, এরকম প্রতিনিয়ত হয় সচরাচর। তার বন্ধুও এমন বলছিলো। তাই আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ বোঝানের চেষ্টা করেছিলাম।
এর মধ্যে গাড়িতে উঠেই আমরা বন্ধুরা বলছি রোগীর সেন্স ফেরাতে হলে আগে প্রাইভেট একটা হসপিটালে নিয়ে সেন্স ফেরাতে হবে। কারণ আমাদের ভয় হচ্ছিলো ঔষধের বিষক্রিয়ায় যেকোনো সময় যেকোনো ধরণের বড় দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই ভালোরকম চিকিৎসা করার জন্য প্রাইভেট হসপিটালের জন্য জোর দিচ্ছিলাম। কিন্তু রোগীর বন্ধু বারবার বলছে যে ওসমানী মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শেষপর্যন্ত আমাদের জবরদস্তিতে প্রাইভেট মেডিকেলে নেওয়ার জন্য রাজি হয়। পরবর্তীতে গাড়ি চলমান অবস্থায় রোগী একসময় আমাদের গাড়ি থামাতে জোর করে। তখন আমরা মাউন্ট এডোরা যাওয়ার জন্য পাঠানটুলা এলাকায় ছিলাম। আমরা ভাবি এখন ছেড়ে দিলে আবার সুইসাইডের প্ল্যান খুঁজবে, তাই আমরাও জোর করি। আমাদের সাথে ওর বন্ধুও ছিলো, সেও আমাদের মতো বন্ধুকে বোঝাচ্ছিলো। ঘটনার এক পর্যায়ে রোগী চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দেয়! গাড়ি থামানোর আগ মুহুর্তে রোগীর বন্ধু রোগীকে নিয়ে হসপিটাল না গিয়ে মুন্সিপাড়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। ড্রাইভারও মুন্সিপাড়া যাওয়ার জন্য গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলে! কিন্তু শেষ পর্যন্ত গাড়ি থামাতে বাধ্য করে রোগী।
তখন শুরু হয় অপ্রত্যাশিত, অনাকাঙ্ক্ষিত সেই ঘটনা! মদিনা মার্কেট এলাকায় রোগী দস্তুর মতো সুস্থ মানুষের মতো আমাদের দিকে তেড়ে আসে এবং চারপাশের মানুষকে বলে আমরা নাকি তাকে ছিনতাই করতে চাচ্ছি! আমরা ছিনতাইকারী চক্র বলে অভিযোগ করা শুরু করে এবং হঠাৎ একটি স্টিলের স্টিক পকেট থেকে বের করে আমাদের মারার জন্য তেড়ে আসে। তখন আমি তার বন্ধুকে বলি রোগীকে সামলানোর জন্য। বন্ধু আমাদের বলে সে সামনে গেলে নিজেও নাকি মার খাবে! তখন আমরা ৩ বন্ধু ৩ দিকে প্রাণ প্লাস আত্মসম্মান বাঁচাতে ছুটে যাই। সাধারণ মানুষের একাংশ তার কথায় বিশ্বাস করা শুরু করে। তবে আমরাও ছুটছি আর মানুষকে বলছি ও সুইসাইড করতে চায়, আমরা বাঁচাতে চেয়েছি বলে আমাদের মারতে চায়। ওর হাতের অস্ত্র প্লাস আমাদের কথা কিছু মানুষকে ওর কথা বিশ্বাস করতে দেয়নি!
এদিকে আমরা একদিকে একেক বন্ধু। আমরা ২ বন্ধু ওর চোখের আড়ালে যেতে পারলেও এক বন্ধু শেষের দিকে প্রায় ওর কাছে আটকে পড়ে। ওকে ধাওয়া করে রোগী সাজা ছেলেটি এগিয়ে যায়। ভাগ্যক্রমে সেখানে দোতলা বিল্ডিংয়ের বাথরুমে লুকিয়ে শেষ পর্যন্ত রক্ষা পায়।
শেষে কলে যোগাযোগ করে, এক এক করে কোনোরকম প্রাণ বাঁচিয়ে আমরা আম্বরখানায় মিলিত হই।
তখনও পুরো বিষয় ক্লিয়ার হয়নি, যে এটি একটি ট্র্যাপ ছিলো। আম্বারখানার উদ্দ্যেশে রওয়ানা হওয়ার সময় ধীরে ধীরে সব ক্লিয়ার হওয়া শুরু হয় এবং বোঝার বাকি থাকেনি যে এটি পুরোপুরি সাজানো একটি নাটক! ড্রাইভার থেকে শুরু করে, রোগী এবং রোগীর বন্ধু,সবটুকুই ছিলো নাটক!
ড্রাইভার প্রথমে শুধু আমাদের ৩ জনকে নিয়ে এয়ারপোর্ট থেকে রওয়ানা দেয়, যেখানে অন্য ড্রাইভার ৫ জন না হলে গাড়ি ছাড়ে না। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে ড্রাইভারের আগ বাড়িয়ে গাড়ি থামানো, ওসমানি মেডিকেল নিতে বন্ধু এবং ড্রাইভারের তোড়জোড় (কারণ ওসমানির ওদিকে ছিনতাই করার সুবিধা বেশি, নির্জন সড়ক আছে), উসমানির প্ল্যানে কাজ হওয়ায় প্রাইভেট হসপিটালের মধ্যে মাউন্ট এডোরায় নিয়ে যেতে রাজি হওয়া (আম্বরখানার আশেপাশে আরো প্রাইভেট থাকা সত্ত্বেও সেগুলো নিতে রাজি না হওয়া, এমনকি রাগীব-রাবেয়াও ক্রস করে যাচ্ছিলো), ড্রাইভারের মুন্সি পাড়া নিয়ে যেতে উদ্যোমী হওয়া (মুন্সিপাড়া এ ধরণের বেশকিছু ক্রাইম হয় শুনেছি, নির্জন জায়গা আছে), রোগীর আচমকা সুস্থ হওয়া (ভাষ্যমতে ২০ টির মতো ঘুমের ট্যাবলেট সেবন করেছে বলেছিলো), সবই নাটক ছিলো!
ওদের ফিক্সড প্ল্যানে আমরা হস্তক্ষেপ করায় ওরা মূলত নড়বড়ে হয়ে পড়েছিলো, তাই নিজেরা কমন ডিসিশনে আসতে পারেনি।
প্রাথমিক অবস্থায় ওরা চেয়েছিলো ওরা রোগী সাজা ছেলেকে গাড়িতে তুলে আমাদের ঘটনাস্থলেই জিম্মি করা কিন্তু আমরা সেটি অজান্তে নষ্ট করে দেই। পরের প্ল্যান গাড়িতে বসে ওসমানিতে নেওয়ার কথা বলে, সেটিও নষ্ট করে দিই, প্রাইভেট হসপিটালের কথা বললে ড্রাইভার মাউন্ট এডোরা নেওয়ার প্ল্যান করে, আখালিয়ার ওদিকে নির্জন জায়গা আছে দেখে কিন্তু নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে না পারায় রোগী সাজা ছেলে বুঝতে পারেনি, তাই মদিনা মার্কেটেই নামার জন্য তোড়জোড় শুরু করে। পরবর্তীতে বন্ধু ও ড্রাইভার মুন্সি পড়া নেওয়ার কথা বললে সেখানেও প্ল্যান ফেইল করে। তাই শেষ পর্যন্ত আমাদের ছিনতাইকারী চক্র সাজাতে চেয়েছিলো!
আমরা শুধু নিজেদের আত্মসম্মান, পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করছিলাম। যদি কোনোভাবে সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে আমাদের গণপিটুনির ব্যবস্থা করতো তখন কি হতো? বা ধরে পুলিশে দিয়ে পত্রিকায় ছবি বের করে দিতো তখন কি হতো? তখন আমাদের সমস্ত ক্যারিয়ার, দেশে ভালো জব, বিদেশে স্যাটেল সব স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে যেতো। সৎ পথে থাকায় আল্লাহ রক্ষা করেছেন।
মূলত আমরা সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত থাকায় একজন মানুষের উপকারের স্বার্থে গাড়ি থামিয়েছিলাম! আর ওরা সেই ইমোশন ব্যবহার করে আমাদের লাইফ ধ্বংস করে দিচ্ছিলো! তাই সবার প্রতি রিকুয়েষ্ট, সচেতন থাকুন। চোখের সামনে যত অসহায় মানুষ দেখেন না কেনো, এগিয়ে আসতে হলে অন্তত দশবার ভাববেন!
জনস্বার্থে পোস্টটি সবার সাথে শেয়ার করা।
-hossain Tanim ভাইয়ের লেখা থেকে সংগৃহিত।