05/10/2025
~~~~~~~~~~~~।।ভয়।।~~~~~~~~~~~~~~~~
প্রচন্ড ভীড় চাঁদনি ঘাটের ব্রীজের উপর। এলোপাতাড়ি গাড়ি প্রবেশ করে সব গাড়ি স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সন্ধেবেলা হরিজন সম্প্রদায়ের পুজার ঝিকিমিকি লাইটিং এর আলো মনু নদীর শান্ত পানির ঢেউয়ের উপর পড়ে এমন একটি জলতরঙ্গ আবহ তৈরি করেছে যেনো পানির উপর বিভিন্ন রংয়ের সাপ খেলা করছে।
গাড়িতে বসে বসে জ্যাম ছুটার আকাঙ্খায় আনমনে ভাবলেশহীন ভাবে প্রত্যক্ষ করছি।
গাড়ির হর্ন,পাশে দিয়ে ছুটে চলা ব্যস্ত মানুষের পায়ে হেটে পারাপার, ফেরিওয়ালার আমড়া আমড়া বলে চিৎকার ভ্যাপসা গরম কে যেনো আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
সময় বাঁচানোর জন্য মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম নেমে যাবার,সপ্তমীর রাত,শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে অন্য গাড়ি দিয়ে দ্রুত পৌঁছাতে পারবো এই উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম মৌলভীবাজার চৌমুহনার দিকে।
বসে থাকাই ভালো ছিলো বুঝলাম, যখন দেখলাম কোন সি এন জি পাচ্ছি না অনেক্ষন দাঁড়ানোর পরেও।
সাই সাই করে সি এন জি গুলো চলে যাচ্ছে এমন সময় ইশারা দিতেই একটা গাড়ি সাইড করে দাড়ালো। ঠিক তখনি ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়ায় রাস্তার বাতি গুলো নিভে যাওয়ায় চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে পরিনত হলো শুধু সি এন জির হেডলাইটের আলো ছাড়া।
সি এন জি শাহ মোস্তফা রোড দিয়ে মেইন রোড় ধরে ডান পাশে টার্ন না নিয়ে সোজা চলতে লাগলো কোর্টের রাস্তা দিয়ে।পিছনে দুইজন বসা, সামনে ড্রাইভার। একটু নড়েচড়ে বসে আমার ডান পাশে বসা দুজন কে একটু আড়চোখে দেখলাম।মনে হলো যেনো চেন্নাই এক্সপ্রেস মুভির ভিলেন যার সাথে দীপিকার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিলো।তিন জনই খুব আন্তরিকতার সাথে কথা বলছে, বুঝলাম এনারা প্যাসেঞ্জার নয়।
কারেন্ট না আসায় তখনো রাস্তার সোডিয়াম আলো গুলো নিভে আছে।কিছু দূর যেতেই গাড়ি থামিয়ে একটা পানের দোখানে গেলো ড্রাইভার সহ পিছনের একজন।
আমি আলাপ জমাতে লাগলাম গাড়িতে বসে থাকা লোকটির সাথে।এটা অন্য লাইনের সিএন জি কিনা।উনি বললেন কুলাউড়া যাবেন।
সাথে সাথে শরীরে একটা বিদ্যুৎ এর মতো ঝলকানি দিলো,মনে মনে ভাবলাম আজকে বিপদ বুঝি ঘাড়ে চেপেই বসলো।
আমি ধাতস্থ হয়ে উনাকে বললাম তাহলে আপনারা শ্রীমঙ্গলের দিকে কেনো যাচ্ছেন,রাস্তা উলটো হয়ে গেলো নাহ?
লোকটি বললো, আমি লেবুর কারবারি, বাড়ি কাকিয়ার বাজার।
ইতিমধ্যে পান চিবিয়ে চিবিয়ে দুইজন গাড়িতে উঠলো কিন্তু পিছনের জন আর পিছনে বসলো না বসলো ড্রাইভারের বাম পাশে।
মনে পড়ে গেলো সিলেট শহড়ে যেভাবে দিনের বেলা মোবাইল নিয়ে নেয়।প্যাসেঞ্জার কে মাঝখানে রেখে বিভিন্ন আইল্যান্ডে গাড়ি ঝাকি দেওয়ার সাথে সাথেই কাম সাড়া।
এখন আর গরম লাগছে না,শরীরে ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগছে কিন্তু ঠের পাচ্ছি কান দিয়ে আমার গরম বাতাস বের হচ্ছে। হয়তো বলবে কিছুক্ষণ পরেই, চেপে বসেন।
একজন আরেকজনের মুখের দিকে তাকায় আর হাসে।
মনে মনে কল্পনা করতে থাকলাম তারা আমার সাথে কি কি করতে পারে,মোবাইল,মানি ব্যাগ নিয়ে নিবে?
নিক।
নাকি বলবে কার্ডের পিন নাম্বার বল তাড়াতাড়ি, কোন চালাকি করবি নাহ।
আমাকে আবার রানিং সি এন জি থেকে ফেলে দেবে না তো?
যেভাবে দিনের বেলা কলিগকে ফেলে দিয়েছিলো।দিনের বেলা হওয়াতে জানে বেঁচে গেছিলো বেচার সে যাত্রায়।
দুইদিন হাসপাতাল থেকে তারপর বাড়ি ফিরতে হয়েছিলো।
কিছুক্ষণ চুপচাপ কেউ কথা বলছে না,মাঝখানে ড্রাইভার শুধু একবার পিছনে তাকিয়ে পাশের জনকে বললো কোন জায়গায় থামাতে হবে তা বলার জন্য।
এই কথা শুনে ঘামতে শুরু করেছি।মনে পড়ে গেলো পঁচিশ বছর আগেকার কথা,সবে মাত্র ঢাকায় ভর্তি হয়ে নীলক্ষেত গিয়েছিলাম বই কিনতে।
ঢাকা কলেজের উল্টো দিকে নির্মানাধীন মার্কেটের বালির ডিবির উপর দাঁড়িয়ে কাধে কাধ রেখে কোমরের দিকে চাকু ঠেকিয়ে কানে কানে বলেছিলো যা আছে দিয়ে দে।
আরেকজন দ্রুত শরীরে তল্লাশি চালাচ্ছে।
পাশে দিয়ে অনেক মানুষ গা ঘেষে চলে যাচ্ছে কেউ কিচ্ছুটি টের পেলো না।পাবেই কিভাবে, মানুষ ভাববে বন্ধু বন্ধু গল্প করছে।
সে বার রাস্তার ছুড়ে ফেলা বইগুলো নিয়ে বাসায় এসেছিলাম পায়ে হেটে হেটে।
এবার বুঝি আর রক্ষা নাই।
হঠাৎ দেখি উত্তর ভাড়াউড়া এসে গেছি,স্বস্থি ফিরে এসেছে মনে।যেনো ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো।
থানার সামনে এসে নেমে গেলাম।
চারিদিকে যেভাবে ঘটনা ঘটছে, তার জন্য এমন ভাবা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
হয়তো বা লোক গুলো এরকম ছিলো না,পরিস্থিতি আমাকে উনাদের মন্দ ভাবতে বাধ্য করেছে।
যদি কখনো এই লেখাটি আপনাদের তিন জনের মধ্যে কারো চোখে পড়ে, এ কথাই বলতে চাই, আপনাদের ভুল বুঝেছিলাম হয়তো,মনে কিছু নিবেন না।
পুনশ্চঃ ছবিটি কাল্পনিক (এ আই জেনারেটেড)