21/06/2025
#দহনাগ্নি_প্রেম
#নাদিয়া_তুল_জান্নাত
পর্ব:০৫ ( প্রথম অংশ )
শীত যায় যায় অবস্থা,এই সময়টায় ও বাহিরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পরছে, যেনো নতুন করে আবারো শীতকে আমন্ত্রণ জানাবে।
টিনের চালে যেনো বৃষ্টির ছোট ছোট ফোঁটার শব্দ গুলো স্রোত আর রীনার কানে ভেসে আসছে।
কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করার পর রীনা বলে উঠলো -
"কিরে আপু,চুপ করেই থাকবা নাকি তোমার দুঃশ্চিন্তার কারণটাও বলবা"?
তারপর স্রোত বলতে শুরু করলো-জানিস রীনা কিছুদিন ধরে আমার সাথে কেমন জানি অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে।
কথা শেষ হবার আগেই রীনা চট করে বলে ফেলল -"ভৌতিক কিছু নাকি আপু"!!
স্রোত কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো -এই নাকি তুই বড় হয়েছিস, বড়দের মুখ দেখে মনের কথা বলতে শিখেছিস।
আর কিছুদিন পরেই কলেজে উঠবি আর আমি ভার্সিটিতে আর এখনো কথা শোনার ধৈর্য করে উঠতে পারলিনা।
রীনা স্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গিতে বলে উঠলো -
"আরে আপু রাগ করছো কেনো,মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে গেছে।"-আচ্ছা ঠিক আছে তোমার কথা শেষ হবার আগ পর্যন্ত আমি আর একটা কথাও বলবো না,এই নাও মুখে আঙ্গুল দিলাম, এবার বলো তো তোমার সাথে কি অদ্ভুত ঘটনা গুলো ঘটছে।
তারপর স্রোত কিছুটা শান্ত হয়ে সম্পূর্ণ ঘটনা গুলো রীনাকে বলতে লাগলো,আর কথা শেষ করে সবগুলো খাম রীনাকে দেখালো,রীনাও সব খাম গুলো মনযোগ দিয়ে দেখলো আর পড়লো।
খাম গুলো পড়ার পর রীনারও সবকিছু গুলিয়ে গেলো তারপর যখন শেষ পর্যায়ে রীনা শেষের খামটির ভিতর থেকে ছবিটি বের করলো...ঠিক তখনি সাথে সাথে ছবিতে থাকা প্রথম বাচ্চাটির দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে কিছুটা চিৎকার করে বলে উঠলো --
"আরে আপু এটাতো তুমি"!!
ততক্ষণাৎ স্রোত রীনার মুখটি হাত দিয়ে চেপে ধরে বলতে লাগলো -কি করছিস কি তুই রীনা, আস্তে কথা বল সবাই তো ঘুমাচ্ছে নাকি? স্রোত কিছুটা রাগ দেখিয়েই কথাটা বলেছিলো।
২-৪ সেকেন্ড যাওয়ার পর স্রোত রীনার মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে হতভম্বের মতো বলে উঠলো -"এই রীনা তুই কি বললি এখন 'এটা আমি"!!
স্বাভাবিক কন্ঠে রীনা উওর দেয়-
"আরে হ্যাঁ আপু আমি ১০০ তে আরো ৯০০ যোগ করে পুরোপুরি ১০০০% বানিয়ে তোমাকে শিওর করে বলতে পারি যে এই ছবিতে থাকা প্রথম বাচ্চাটি হলে তুমি "।
তাহলে কেনো আমি আমার নিজেকে নিজে চিন্তে পারছি না,আর কেনোই বা এই জায়গাটির কথা আমি মনে করতে পারছি না?
রীনা ঠাট্টা করে বলতে লাগলো -
"ছোট বেলার সবকিছু যদি মানুষের মনে থাকতো তাহলে মানুষ আজ নিজেকে আইনস্টাইন এর নানি দাবি করতো "।
স্রোত কিছুটা বিরক্তি নিয়ে গম্ভের কণ্ঠে বলে উঠলো-
রাখ তো তোর আজেবাজে কথা।
এবার তুই বল তো,তুই কিভাবে এত শিওরিটি দিয়ে আমাকে বলছিস যে এই ছবিতে প্রথম যে মেয়েটি আছে সেটা আমি?
আরে আপু দুই থেকে তিন দিন আগে আম্মা যখন আমাদের পুরনো স্টিলের আলমারি খুলে পরিষ্কার করছিল তখন সেটাতে দুইটা পুরনো অ্যালবাম ছিল_
একটা আ্যলবামে আম্মা আর আব্বার বিয়ের পুরনো কিছু ছবি ছিল, আরেকটা মধ্যে, আমাদের চার বোনের ছোটবেলার ছবি ছিল, সেখানে তোমার ছোটবেলার ছবিও ছিল,তাই এই ছবিটা দেখে আমার তোমাকে চিনতে একটুও ভুল হয়নি ।
স্রোত বলে উঠলো-
"তুই কি আবারো মজা করছিস", নাকি সত্যি সত্যি কথাগুলো বলছিস?
রিনা মন ছোট করে বলল:
আপু তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছো?তাহলে চলো সেই পুরনো ঘর টায়। তোমাকে প্রমাণ দেখিয়ে কথা বলবো আমি..।
স্রোত বললো:
এত রাতে পুরনো ঘরটায় যাব!!
পাগল হয়েছিস নাকি তুই?
আরে কে বলেছে যে আমি আমার বোনকে অবিশ্বাস করেছি!! আসলে তুই তো সবসময় হাসি মজার মধ্যে থাকিস তাই তোর কথাগুলো সিরিয়াসলি নিতে পারছিলাম না,, এখন মনে হচ্ছে তুই কথাগুলো সিরিয়াসলি বলছিস।
স্রোত আবারো বলতে শুরু করলো:
আচ্ছা এই ছবিতে থাকা প্রথম মেয়েটা যদি আমি হই তাহলে আমার পাশে থাকা ঐ মেয়েটি কে আর এই ছেলেটাই বা কে..!!!
রিনা একটু চিন্তিত কন্ঠে শুধালো-
ঠিক কথা বলেছো আপু তোমার সাথে এরা দুজন কারা হতে পারে!
কারণ ছেলেটিকে তো আমরা চিনতে পারছি না আর এই মেয়েটি আমি, সুমনা আর মিন্টু কেউই নই ।
তাহলে এরা দুজন কারা?
স্রোত কিছুটা ভেবেচিন্তে বললো,
এর উত্তর শুধু একজনের কাছেই থাকবে।
কে আপু?
আব্বা।
হ্যাঁ আপু ঠিক বলেছ। কারণ আমাদের শৈশবের বন্ধু বান্ধবদেরকে আমাদের আম্মা আব্বাই ভালো করে চিনবেন।
চলমান....