Nadia Tull Jannat - নাদিয়া তুল জান্নাত

Nadia Tull Jannat - নাদিয়া তুল জান্নাত - এক‌ অদ্ভুত ছোঁয়া!!�

21/06/2025

#দহনাগ্নি_প্রেম
#নাদিয়া_তুল_জান্নাত
পর্ব:০৫ ( প্রথম অংশ )

শীত যায় যায় অবস্থা,এই সময়টায় ও বাহিরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পরছে, যেনো নতুন করে আবারো শীতকে আমন্ত্রণ জানাবে।
টিনের চালে যেনো বৃষ্টির ছোট ছোট ফোঁটার শব্দ গুলো স্রোত আর রীনার কানে ভেসে আসছে।

কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করার পর রীনা বলে উঠলো -
"কিরে আপু,চুপ করেই থাকবা নাকি তোমার দুঃশ্চিন্তার কারণটাও বলবা"?
তারপর স্রোত বলতে শুরু করলো-জানিস রীনা কিছুদিন ধরে আমার সাথে কেমন জানি অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে।

কথা শেষ হবার আগেই রীনা চট করে বলে ফেলল -"ভৌতিক কিছু নাকি আপু"!!

স্রোত কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললো -এই নাকি তুই বড় হয়েছিস, বড়দের মুখ দেখে মনের কথা বলতে শিখেছিস।
আর কিছুদিন পরেই কলেজে উঠবি আর আমি ভার্সিটিতে আর এখনো কথা শোনার ধৈর্য করে উঠতে পারলিনা।
রীনা স্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গিতে বলে উঠলো -

"আরে আপু রাগ করছো কেনো,মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে গেছে।"-আচ্ছা ঠিক আছে তোমার কথা শেষ হবার আগ পর্যন্ত আমি আর একটা কথাও বলবো না,এই নাও মুখে আঙ্গুল দিলাম, এবার বলো তো তোমার সাথে কি অদ্ভুত ঘটনা গুলো ঘটছে।

তারপর স্রোত কিছুটা শান্ত হয়ে সম্পূর্ণ ঘটনা গুলো রীনাকে বলতে লাগলো,আর কথা শেষ করে সবগুলো খাম রীনাকে দেখালো,রীনাও সব খাম গুলো মনযোগ দিয়ে দেখলো আর পড়লো।

খাম গুলো পড়ার পর রীনারও সবকিছু গুলিয়ে গেলো তারপর যখন শেষ পর্যায়ে রীনা শেষের খামটির ভিতর থেকে ছবিটি বের করলো...ঠিক‌ তখনি সাথে সাথে ছবিতে থাকা প্রথম বাচ্চাটির দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে কিছুটা চিৎকার করে বলে উঠলো --

"আরে আপু এটাতো তুমি"!!

ততক্ষণাৎ স্রোত রীনার মুখটি হাত দিয়ে চেপে ধরে বলতে লাগলো -কি করছিস কি তুই রীনা, আস্তে কথা বল সবাই তো ঘুমাচ্ছে নাকি? স্রোত কিছুটা রাগ দেখিয়েই কথাটা বলেছিলো।

২-৪ সেকেন্ড যাওয়ার পর স্রোত রীনার মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে হতভম্বের মতো বলে উঠলো -"এই রীনা তুই কি বললি এখন 'এটা আমি"!!

স্বাভাবিক কন্ঠে রীনা উওর দেয়-
"আরে হ্যাঁ আপু আমি ১০০ তে আরো ৯০০ যোগ করে পুরোপুরি ১০০০% বানিয়ে তোমাকে শিওর করে বলতে পারি যে এই ছবিতে থাকা প্রথম বাচ্চাটি হলে তুমি "।

তাহলে কেনো আমি আমার নিজেকে নিজে চিন্তে পারছি না,আর কেনোই বা এই জায়গাটির কথা আমি মনে করতে পারছি না?
রীনা ঠাট্টা করে বলতে লাগলো -
"ছোট বেলার সবকিছু যদি মানুষের মনে থাকতো তাহলে মানুষ আজ নিজেকে আইনস্টাইন এর নানি দাবি করতো "।

স্রোত কিছুটা বিরক্তি নিয়ে গম্ভের কণ্ঠে বলে উঠলো-
রাখ তো তোর আজেবাজে কথা।
এবার তুই বল তো,তুই কিভাবে এত শিওরিটি দিয়ে আমাকে বলছিস যে এই ছবিতে প্রথম যে মেয়েটি আছে সেটা আমি?

আরে আপু দুই থেকে তিন দিন আগে আম্মা যখন আমাদের পুরনো স্টিলের আলমারি খুলে পরিষ্কার করছিল তখন সেটাতে দুইটা পুরনো অ্যালবাম ছিল_
একটা আ্যলবামে আম্মা আর আব্বার বিয়ের পুরনো কিছু ছবি ছিল, আরেকটা মধ্যে, আমাদের চার বোনের ছোটবেলার ছবি ছিল, সেখানে তোমার ছোটবেলার ছবিও ছিল,তাই এই ছবিটা দেখে আমার তোমাকে চিনতে একটুও ভুল হয়নি ।
স্রোত বলে উঠলো-
"তুই কি আবারো মজা করছিস", নাকি সত্যি সত্যি কথাগুলো বলছিস?

রিনা মন ছোট করে বলল:
আপু তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছো?তাহলে চলো সেই পুরনো ঘর টায়। তোমাকে প্রমাণ দেখিয়ে কথা বলবো আমি..।

স্রোত বললো:
এত রাতে পুরনো ঘরটায় যাব!!
পাগল হয়েছিস নাকি তুই?
আরে কে বলেছে যে আমি আমার বোনকে অবিশ্বাস করেছি!! আসলে তুই তো সবসময় হাসি মজার মধ্যে থাকিস তাই তোর কথাগুলো সিরিয়াসলি নিতে পারছিলাম না,, এখন মনে হচ্ছে তুই কথাগুলো সিরিয়াসলি বলছিস।

স্রোত আবারো বলতে শুরু করলো:
আচ্ছা এই ছবিতে থাকা প্রথম মেয়েটা যদি আমি হই তাহলে আমার পাশে থাকা ঐ মেয়েটি কে আর এই ছেলেটাই বা কে..!!!

রিনা একটু চিন্তিত কন্ঠে শুধালো-
ঠিক কথা বলেছো আপু তোমার সাথে এরা দুজন কারা হতে পারে!
কারণ ছেলেটিকে তো আমরা চিনতে পারছি না আর এই মেয়েটি আমি, সুমনা আর মিন্টু কেউই নই ।
তাহলে এরা দুজন কারা?

স্রোত কিছুটা ভেবেচিন্তে বললো,
এর উত্তর শুধু একজনের কাছেই থাকবে।

কে আপু?

আব্বা।

হ্যাঁ আপু ঠিক বলেছ। কারণ আমাদের শৈশবের বন্ধু বান্ধবদেরকে আমাদের আম্মা আব্বাই ভালো করে চিনবেন।

চলমান....

মাহিম ভাইয়া ও একদিন আমাকে কল দিবে🙂MaHim Bro
18/06/2025

মাহিম ভাইয়া ও একদিন আমাকে কল দিবে🙂
MaHim Bro

18/06/2025

#দহনাগ্নি_প্রেম
#নাদিয়া_তুল_জান্নাত

পর্ব:৪

স্রোতের জীবন যেন পাথরের উপরে টেনে নিয়ে যাওয়া এক প্রদীপ—শিখা জ্বলছে, কিন্তু চারপাশে বাতাস প্রচণ্ড। কলেজ, সংসার, ছোট বোনদের দায়িত্ব... তার চোখে ঘুম জমে থাকে, কিন্তু মন জেগে থাকে অজানা এক অস্থিরতায়।

এই কয়েকদিনে আবিয়াজ খান আয়াজ যেন তার চারপাশের বাতাসে মিশে গেছে। মুখোমুখি হয় না, কথা বলে না, তবু সেই চাহনি... সেই উপস্থিতি…

একদিন কলেজে ল্যাব ক্লাসের ফাঁকে স্রোত ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে ছিল। নিচে তাকিয়ে দেখল, ধূসর গাড়িটা সেই আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। চালকের আসনে কেউ নেই, কিন্তু সামনের সিটে একটা হাত—সিগারেটের ধোঁয়া তৈরি করছে আবছা রেখা।

হঠাৎ তার মনে হলো... এই দৃশ্যটা আগে কোথাও দেখেছে সে। কিন্তু কোথায়? ঠিক মনে পড়ে না।

ক্লাস শেষে তার টেবিলের ওপর একটা কাগজের খাম। আর তাতে লেখা—

> “তোমাকে একদিন আগুনের পথে হাঁটতে হবে। প্রস্তুত হও।”

স্রোতের ঠোঁট শুকিয়ে গেল। চোখের সামনে যেন কিছু অস্পষ্ট সাদা কুয়াশা নামে। কারা এসব করছে? কেন বারবার তাকেই টার্গেট করা হচ্ছে?

রাতে বাড়ি ফিরে নিজের খাটে শুয়ে থাকলেও ঘুম আসে না। জানালার বাইরে কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা এক ছায়াময় অবয়ব যেন চোখে ভেসে ওঠে বারবার। তার হাতে কিছু নেই, মুখে কিছু নেই, কিন্তু তার দৃষ্টি—তাকে গিলে খেতে চায়।

স্রোত জানে না—কেন যেন মনে হচ্ছে, আবিয়াজ তাকে দীর্ঘদিন ধরে চেনে। কোনো এক রহস্যময় অতীত থেকে যেন তাকে টেনে নিয়ে এসেছে বর্তমানে।

পরদিন সকালে কলেজে ঢুকতেই গেটের পাশে সেই চিরচেনা কালো গাড়িটা দাঁড়ানো। পাশেই আবিয়াজ। চুপচাপ। আজ তার চোখে সানগ্লাস নেই। কাঁচের মতো স্বচ্ছ চোখদুটি স্রোতের দিকে তাকিয়ে থাকে।

কোনো কথা নেই, তবু একরকম তীব্র টান অনুভব করে স্রোত—যেটা সে নিজেও ব্যাখ্যা করতে পারে না।

সে কিছু বলতে যায়নি, তবু আবিয়াজ হঠাৎ বলল—

“এই শহরের আলো নিভে গেলে, তুমি কি নিজের ছায়াটাকেও বিশ্বাস করবে?”

স্রোত কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করল,
-কে আপনি?
-আর এসব কথা বলছেন কেনো?
আপনি তো এই কলেজের কোনো ছাত্র নন,তাহলে আপনি রোজ রোজ এখানে আসেন কেনো?

আবিয়াজ হেসে ফেলে। ঠোঁটের কোণে সেই ব্যঙ্গাত্মক হালকা হাসি। তারপর গাড়িতে উঠে যায়, শব্দহীনভাবে।

সেদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেই স্রোত দেখে মায়ের হাতে একটা প্যাকেট।
মা বললেন, “এই চিঠি আর উপহার তোমার নামে এসেছে।”

চিঠির খামে লেখা নেই প্রেরকের নাম। খুলতেই বেরিয়ে এল একটা পুরনো ছবি। তিনটা শিশু—দুই মেয়ে, এক ছেলে। ছবির পেছনে শুধু লেখা—

> “সব শুরু হয়েছিল সেদিন, যখন প্রথম আগুন ধরেছিল।”

স্রোতের সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। ছবির এক কোণে দাঁড়ানো ছেলেটা যেন খুব পরিচিত। কিন্তু কোথা থেকে?

_______

স্রোতের জীবনে দিনগুলো একরকম নিঃশব্দ স্রোতের মতোই কাটছিল, কিন্তু সেই নিঃশব্দে এখন এক অজানা ছায়ার আনাগোনা।

কলেজে প্রতিদিন সেই একই গাড়ি, একই ছায়াময় চোখের জোড়া।
আবিয়াজ খান আয়াজ এখন কলেজে আসেন না, তিনি উপস্থিত থাকেন।
যেন কোথাও থেকে তাঁকে দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়।

একদিন সন্ধ্যায়, স্রোত কলেজ থেকে ফিরছিল। রাস্তাটা একটু ফাঁকা ছিল আজ। হঠাৎ পেছন থেকে এক গাড়ির হর্ণ শুনে চমকে ফিরে তাকায়।
কালো গাড়িটা ধীরে তার পাশে এসে দাঁড়াল। কাঁচ নামল ধীরে, আর সেই চোখদুটো আবার সামনে এল।

— “তোমার নামটা একবার শুনতে পারি?”
স্বরে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, বরং এক ধরণের স্থির অনুরোধ ছিল।

স্রোতের মুখে বিস্ময়ের ছায়া। সে কিছু বলতে যাচ্ছিল না, মুখে কোনো বিদ্বেষ বা অস্বস্তি ছিল না।

— “তুমি আমাকে চেনো?”
আবারও প্রশ্ন করল আয়াজ ।

স্রোত কিছু না বলে এগিয়ে গেল। কিন্তু আবিয়াজ আর ডাকে না,
শুধু বলে—
— “একদিন আমার কাছে আসতেই হবে তোমাকে। তোমার চোখে সেই ছায়া আছে, যেটা আমি বহু বছর ধরে খুঁজছি।”

সেই রাতে স্রোত চোখে ঘুম আনতে পারে না। জানালার পাশে বসে বারবার আবিয়াজের চোখদুটো মনে পড়ে। সেখানে যেন কোনো এক গভীর শোক, অথবা গভীর অপরাধবোধ লুকিয়ে আছে।

সে জানে না, কে এই মানুষটা।
কেন তার চোখে এমন আকুলতা।
কেন প্রতিদিন তার চারপাশে আবর্তিত হচ্ছে এক অজানা মহাকর্ষ।

---

এর পরদিন, কলেজে নতুন আরেকটা চিঠি:

> "যাকে তুমি এড়িয়ে যেতে চাও, সে-ই একদিন তোমার নিঃশ্বাসে বাস করবে।
আগুনকে এড়ানো যায় না, বোতলে পুরে রাখা যায় না—
আমি আগুন, তুমি কি জ্বলতে রাজি আছো?"

তারপর,
হঠাৎ স্রোতের বান্ধবী রিয়া এসে মজা করে বলতে লাগলো -কিরে স্রোত দিন কাল কেমন যাচ্ছে?

স্রোত কিছুটা মন খারাপ করে উওর দিলো,
আর বলিসনা কেনো জানি আমার মনে হচ্ছে আমি এক গোলোক ধাঁধার মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।

কেনো গো সখি তোমার হঠাৎ এমনটা মনে হওয়ার কারণটা কি আমি জানতে পারি?

আরে,আমি একদমই মজা করছি না রিয়া,, প্রায়ই আমার কাছে এমন এমন কিছু খাম আসে যা আমাকে রাতে ঘুমাতে দেয় না।

"অচেনা শর্তেও মনে হয় , কেউ আমার চিরচেনা।যে আমাকে এই খাম গুলো দিয়ে যায়।

রিয়া হাসতে হাসতে মজা করে বলে -
__"তোর জন্য পাগল হয়ে গেছে কেউ।
সে যেই হোক না কেনো, ছেলেটার সাহসের তারিফ করতে হবে কিন্তু।

তাই না বল!!?

স্রোত এর উত্তর না দিয়ে রিয়ার সাথে আর কিছুক্ষণ গল্প করেই বাড়ি চলে গেল।

_____

তিনদিন পর, কলেজের পাশের ছোট্ট দোকানে দাঁড়িয়ে স্রোত জুস খাচ্ছিল। ঠিক তখনই এক বাচ্চা ছেলেকে দিয়ে একটা ছোট্ট খাম পাঠানো হয় তার হাতে।

ভেতরে আবারও সেই চিঠি, কিন্তু এবার ভিন্ন কিছু ছিল:

> “তোমার বাবার নাম রফিক উদ্দিন, তাই তো?
তুমি কি ভুলে গেছো ২০০৯ সালের সেই আগুনের রাত?

স্রোতের মুখ শুকিয়ে গেল। চিঠিটা কাঁপা হাতে ভাঁজ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলে সে।

সেদিন রাতে স্রোত পড়ার টেবিলে বসে কিছু একটা ভাব ছিলো, হয়তো সেই বাচ্চা ছেলের হাত থেকে পাওয়া খামটির ব্যপারে।
সেই সময় স্রোত এর ঘরে রীনা এলো -

পিছন থেকে স্রোতের কাঁধে হাত রেখে কিছুটা ঝাকুনি দিয়ে রীনা বলল __
"কিরে আপু,খেতে যাবে না?
আম্মা সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকছে... তুমি তো কোনো জবাব ই দিচ্ছিলা না।
তাই বাধ্য হয়ে আম্মা আমাকে পাঠালেন।

স্রোত বলল...ও আচ্ছা, শুনতে পাই নি রে।

আচ্ছা আপু তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?

না রে রীনা,চল খেতে যাই অনেক খিদে পেয়েছে।

ততক্ষণাৎ,রীনা স্রোত এর হাত ধরে বলল,
আপু তুমি যদি কোনো কিছু নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকো তাহলে আমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারো,আমি কাউকে কিছু বলব না।
তাছাড়া বেশ কিছু দিন ধরে আমি তোমাকে অনেক বেশি চুপচাপ আর বে-খেয়ারি দেখছি।আর আমি কিন্তু এখনো এতো ছোট না যে তোমার চেহারা দেখে মনের কথা বলতে পারবো না।

স্রোত বলে উঠলো, আমার মনে হয় আসলেই তোকে আমার কিছু কথা বলে হালকা হওয়া উচিত __চল আগে খেয়ে আসি তারপর না হয় বলছি।

কিছুক্ষণ পর
সবাই খেয়ে দেয়ে জার জারি কক্ষে চলে গেলো।
প্রতিদিন স্রোতের আম্মা-আব্বা ও মিন্টু এক সাথে ঘুমায়।
আর রীনা-সুমনা একসাথে ঘুমায়। স্রোত সবসময়ি একা থাকতে বেশি পছন্দ করে তাই সে একা বা দিকের ছোট ঘরটায় থাকে।

কিন্তু আজ রীনা স্রোত এর সাথে ঘুমাবে।তাই খেয়ে দেয়ে স্রোত এর সাথে স্রোতের ঘরে চলে এসেছে।

চলমান.....

17/06/2025

#দহনাগ্নি_প্রেম
#নাদিয়া_তুল_জান্নাত

পর্ব:৩

স্রোতের কলেজে অদ্ভুত কিছু ঘটতে শুরু করেছে।
প্রতিদিন সকালে কলেজের নোটিশ বোর্ডে কেউ একজন একটা ছোট কাগজ সেঁটে দিয়ে যায়_কখনো একটা লাইন, কখনো একটা অচেনা নাম , কখনো শুধু একটা ছায়াময় চিহ্ন।

প্রথম দিন লেখা ছিল:
"ছায়া কখনো দূর হয় না, শুধু রূপ বদলায়।"

দ্বিতীয় দিন:
"একটা চাহনি, যদি ঠিক পড়ে... জীবন বদলে দিতে পারে।"

তৃতীয় দিন ছিল এক ছবি__ একটা পুড়ে যাওয়া ফুল ।

ছাত্রীদের মধ্যে গুঞ্জন ছড়ায়।
কেউ বলে, ওটা এক ডার্ক লাভার। কেউ বলে, বিজনেস মাফিয়া। কেউ বলে, সে কেবল একজন পর্যবেক্ষক__সবকিছু দেখে, কিন্তু ধরা পড়ে না।

স্রোত কিছু বলে না।
কিন্তু সে জানে, তার জন্য কিছু একটা ঘটছে।
এক রাতে তার রুমের জানালায় একটা পাথর ছুড়ে পরল।
চমকে উঠে স্রোত ছুটে গিয়ে জানালার পর্দা সরালো__
বাইরে কেউ নেই।
শুধু একটা ছোট্ট কাগজ পড়ে আছে__

>"তুমি আমাকে চিনবে, যখন আকাশে আগুন দেখবে।

আমি আসছি, কিন্তু ছায়া হয়ে...

স্রোতের শরীরের লোম খাড়া হয়ে গেল। বুকের ভিতরে কেমন একটা জমাট চাপা কিছু পাথরের মত পড়ে রইল।
সে জানে না কে... কিন্তু এখন সে শুধু ছায়া নয়।
সে আসলেই আসছে।

_____

সেদিন রাতে, সবাই ঘুমিয়ে পরেছিল।
স্রোত বারান্দায় বসে একা কাঁথা গায়ে চুপচাপ চাঁদের আলো দেখছিল।‌ হঠাৎ হাওয়ার দমকা একটা ঝাপটা এসে বারান্দার‌ কোণ থেকে কাগজের একটা প্যাকেট উড়িয়ে তার পায়ের কাছে এনে ফেলল।
কুড়িয়ে নিতেই দেখতে পেলো পুরনো হলুদ রঙের কাগজে গতরাতের হাতের লেখাটির মতো কিছু লাইন:

>"আমি তোমাকে দেখেছিলাম আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে, আর সেই তোমাকে দেখার পর আজ ১২ টা বছর ধরে তোমাকে খুঁজেছি আর শেষ দিগন্তে এসে পেয়েও গিয়েছি।

চিঠিটা পড়া মাএই স্রোত এর চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে গেলো চারপাশ ।
পায়ের নিচে মাটি যেনো নেই।
সে কিছু জানে না, শুধু জানে এ আগুন্তক শুধু ছায়া নয়...সে স্রোতের অতীতও জানে।

আর সেই অতীতেই লুকিয়ে আছে আগুন।
স্রোতের মনে প্রশ্ন জাগে __

- কে সে?
-কি তার পরিচয়?

______

হঠাৎ করেই কলেজে ছেলে মেয়েদের মাঝে আরো বেশি করে চর্চা হতে করলো সেই ৬ ফুট লম্বা শ্যামলা ছেলেটির বিষয়ে,যে কিনা শত শত মেয়েদের ক্রাশ।
যে প্রতিদিনই কলেজে আসে, কিন্তু সে কোনো ছাত্র নয়।

দামী গাড়ি, নির্লিপ্ত মুখ, চোখে দুংখ আর অহংকার মেশানো এক অদ্ভুত আকর্ষণ।
তার নাম আবিয়াজ খান আয়াজ।

____

খান বাড়ির বড় ছেলে আবিয়াজ খান আয়াজ, যাকে ঘিরে আছে নানা ধরনের রহস্য।
বয়স ২৬,
নামে যেমন রাজকীয়, রক্তে তেমনি শতবর্ষের জমিদারি গর্ব।

তার বাবা, ফখরুদ্দিন খান, একজন বিখ্যাত ব্যবসায়ী।
আফিয়াজের মা মেহেরুন্নেসা বেগম, একজন প্রাক্তন উর্দু কবি __যিনি এখন হয়ে উঠেছেন একজন গৃহ কর্মে নিপুনা গৃহিণী।

আবিয়াজের বাবার ছোট ভাই অর্থাৎ আবিয়াজের চাচা হলেন নিজাম খান।
একাধারে পারিবারিক ব্যবসার পার্টনার ও রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী মানুষ।

চাচি রুখসানা বেগম, সংসার সামলানো একজন রক্ষণশীল ব্যক্তি কিন্তু প্রবল আত্নসম্মানী নারী।

আবিয়াজের চাচতো ভাই সাহির খান (বয়স ২৪) ৬ মাস হলো বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে দেশে ফিরে এখন পুরো পরিবারের শপিং মল চেইনের ম্যানেজমেন্ট সামলাচ্ছেন।

সাহিরের থেকে ১ বছরের ছোট বোন আলিয়া।
৩ বছর হলো বিয়ে হয়ে গিয়েছে।এক ব্যবসায়ী ঘরের পুএবধূ সে।
বিয়েটা হয়েছে মূলত নিজাম খানের বন্ধুর ছেলে আরিফ এর সাথে,সে খুবি ভালো এবং ভদ্র একটি ছেলে।
কাজের জন্য বেশির ভাগ সময় দেশের বাহিরে থাকতে হয়।

তাই আলিয়া প্রায় ৩-৪ মাস পর পর বাপের বাড়িতে এসে ১ মাসের মতো থেকে যায়। এতে তার শশুর বাড়ির মানুষেরো তেমন কোনো আপত্তি নেই।
৩ ভাই-বোন মিলে প্রায়ই ভালো সময় কাটায়।

তবে...
এই ধনী পরিবারেও ছায়া আছে।
আবিয়াজের একমাত্র ছোট বোন আরওয়া মারা যায় মাএ ৪ বছর বয়সে।
তখন আবিয়াজের বয়স ছিলো ১৫ কিংবা ১৬।

কিন্তু সে মৃত্যু এখনো এক রহস্য ।কারো মুখে উচ্চারণ নেই, শুধু পরিবারের ছবিতে তার ফ্রেম ঘেরা হাসি টিকে আছে।

চলমান.....

[পরবর্তী পর্ব শুক্রবার রাত ১২ টার আগে দেওয়া হবে]

15/06/2025

#দহনাগ্নি_প্রেম
#নাদিয়া_তুল_জান্নাত

পর্ব ২

সেদিন সকালটাও বাকি দিনের মতোই শুরু হয়েছিল । স্রোতস্বিনী তার ছোট বোন মিন্টু কে স্কুলে দিয়ে নিজে কলেজে পৌঁছায়। কাঁধে ব্যাগ, চোখে ক্লান্তির ছাপ। জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে থাকে__পোড়া রোদ , ভাঙ্গা রাস্তায় হেঁটে চলা মানুষ, সবকিছুই যেন তার জীবনের প্রতিচ্ছবি।

তবে আজ কলেজের গেটের সামনে কিছু অচেনা চোখ ছিল। একটা কালো গাড়ি কালো সানগ্লাস আর এক ছেলেকে দেখে একদল মেয়ে ফিসফিস করছিল ।

"ওই যে... আবিয়াজ খান। আবার এসেছে।"
"কে ও?"
"বড়লোক, শুনেছি নিজের বিজনেস আছে।"

স্রোত এসব কথা শুনেও পাত্তা দেয় না। তবে আজ তার মনটা অস্থির মনে হচ্ছে কেউ যেন তাকে নিরবে লক্ষ করছে। চোখে অদ্ভুত এক চাপা শীতলতা।

ক্লাসে বসেও সে নিজের মনটা এক করতে পারেনা। কখনো কখনো জানালার ফাঁক দিয়ে তাকায় বাইরে। ছেলেটা নেই তবুও তার উপস্থিতি যেন বাতাসে ছড়িয়ে আছে ।

লাঞ্চ ব্রেকের সময় হঠাৎ ছেলেটার মুখোমুখি হয়ে যায় স্রোত। গেটের পাশে সে দাঁড়িয়েছিল, এক উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের চেহারা তার, চোখে সানগ্লাস পরা, মুখ দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে, ঠোঁটে একরকম হালকা ব্যঙ্গ হাসি।
স্রোতের দিকে তাকিয়ে একটা কথাও বলে না।

কিন্তু চোখের সে চাহনি যেন অনেক আগেই চিনে ফেলেছে মেয়েটাকে।
স্রোতের বুকটা ধক করে কেঁপে ওঠে, যদিও সে নিজেই জানে না কেন।

সে দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। তবু তার মনে প্রশ্ন জেগে থাকে এই লোকটা কে? কেন আসছে বারবার এই কলেজে ?
আর.. কেন তার চোখে দিকে তাকিয়ে থাকলে তার ভিতরটা কেঁপে ওঠে?

সে জানেনা এই অচেনা চোখ একদিন তার জীবন ফুরিয়ে দেবে।

______

স্রোতের গায়ে একটা জ্যোতি আছে __উজ্জ্বল ফর্সা রং, যার মাঝে সূর্যোদয়ের কমল আলো খেলে যায়।
চোখ দুটি গভীর, যেন অনেক কিছু দেখে ফেলেছে, অথচ কিছুই বলেনি কাউকে।
ঠোঁট দুটো গোলাপের পাপড়ির মত ।

কলেজের গেট পেরিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ যেন বুক কেঁপে উঠে।
একটা অদৃশ্য ছায়া থাকে অনুসরণ করছে, সে বুঝতে পারে কিন্তু প্রমাণ নেই।

বছরের এই সময়টাতে বাতাসে একটা হালকা কুয়াশা থাকে।
আর সেই কুয়াশার ভেতরে মাঝে মাঝে একটানা দাঁড়িয়ে থাকে একটা লোক।
চুপচাপ।
সানগ্লাস চোখে, গাড়ির পাশে, সিগারেট হাতে।

আবিয়াজ।

সে কখনো কিছু বলে না, কখনো সরাসরি তাকায় না, তবুও তার দৃষ্টি যেন স্রোতের ত্বকে গেথে থাকে ‌। এক ধরনের চুম্বকীয় শক্তি... যেটা ভালো না খারাপ__তা বলা যায় না।

একদিন ক্লাস শেষে স্রোত সিঁড়ি দিয়ে নামছিল। দূর থেকে কেউ একটা ছোট্ট খাম এগিয়ে দিল কাচের জানালার নিচে।
তাতে কিছু লেখা নেই, শুধু ভিতরে একটা পুরনো কবিতার টুকরো__

>"তুমি জানো না, কিন্তু আমি জানি_তোমার নিঃশ্বাসে আগুন আছে, আর আমি ধীরে ধীরে পুড়ছি..."

স্রোতের গলা শুকিয়ে গেল।
কে পাঠালো?
কিসের ইঙ্গিত?
চারপাশে তাকালো__কারো মুখে কিছু নেই।
কিন্তু স্রোত জানে না, সে কাছে আসছে।
আগুনের মতো ধীরে ধীরে ছুঁয়ে যাবে জীবনটা।

আর স্রোতের ভেতর থেকে একটা প্রশ্ন জেগে উঠলো__
ভয় পাচ্ছি, নাকি টান অনুভব করছি?

চলমান.....

15/06/2025

#দহনাগ্নি_প্রেম
#নাদিয়া_তুল_জান্নাত

পর্ব:১

স্রোতস্বীনির জীবনটা অনেকটা নদীর স্রোতের মতো—অবিরাম, ধীরে ধীরে বয়ে চলা, কখনো শান্ত, কখনো ঝড়ো। ১৯ বছর বয়স, কিন্তু দায়িত্ব আর কষ্ট তার চোখে পুরোনো জীবনের ছাপ ফেলে দিয়েছে।

তার বাবা, রফিক উদ্দিন, আগে শহরের একজন শ্রদ্ধেয় হোম টিউটর ছিলেন। ছোট্ট ঘরে বইয়ের গন্ধ আর শিক্ষার আলো ছড়িয়ে থাকত। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় বাবা পঙ্গুত্বে পতিত হন, আর সেদিন থেকে জীবন বদলে যায়।

মা, রুশদা খাতুন, সকালে সূর্যের আগে উঠে যাওয়া আর রাতের শেষ আলো ফুরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বাসায় কাজ করে সংসার চালান। কঠোর পরিশ্রমে তার মুখে রেখেছে সময়ের ছাপ, কিন্তু চোখে তার সন্তানের জন্য অটুট ভালোবাসা ঝলমল করে।

স্রোতস্বিনীর ছোট বোন তিনজন—স্রোতস্বিনীর থেকে ছোট বোনের নাম রীনা, ১৭ বছর বয়স মাঝের বোন সুমনা, ১৬ বছর বয়স আর ছোট্ট বোন মিন্টু, ১৩ বছর বয়সী। সবাই মায়ের পাশে থেকে পড়াশোনা করে, জীবনের কঠিন বাঁকে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।

স্রোতস্বিনী সবসময় চেয়েছে তার ছোট বোনদের জীবন একটু সহজ হোক, নিজের কষ্ট যেন তাদের ছোঁয় না। এই ছোট্ট পরিবারের মধ্যে সে যেন এক অবিচল শক্তি, যে নীরবে সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।

তবু মাঝে মাঝে সে চায় কোথাও পালিয়ে যেতে, নিজেকে খুঁজে পেতে—কারণ তার ভিতরে লুকিয়ে আছে একটা অজানা ব্যথা, একটা অনুৎসাহিত স্বপ্ন।

স্রোতস্বিনী জানত, তার জীবন কোনো খেলা নয়। ছোটবেলা থেকে কঠোর পরিশ্রম আর দায়িত্বের ভার তার কাঁধে। বাবার অসুস্থতার পর থেকে সে যেন পরিবারের অভিভাবক। তার মায়ের ক্লান্ত চোখে কখনো নিজেকে পড়ে থাকতে দেখে মনে হত, সে যেন মায়ের হাল ধরেছে।

প্রতিদিন কলেজ থেকে ফিরে সে ছোট বোনদের পড়াতে বসে, মা বাসায় কাজ করতে বেরিয়ে যায়। ছেলেবেলার স্বপ্নগুলো আজ আর বাঁচে না। কেউ কি ভাববে, এই ছোট্ট ঘরের ভিতর কত লুকানো যন্ত্রণা?

স্রোতের মনেও একদিন ছিলো স্বপ্ন—একদিন বড় হওয়া, ভালো জীবনে ওঠা। কিন্তু আজ তার স্বপ্নগুলোর উপর ছায়া পড়েছে দায়িত্ব আর বাস্তবতার।

তার থেকে ছোট বোন রীনা, যে ১৭ বছরের মধ্যে অনেক কিছুই বুঝতে শিখেছে, মাঝে মাঝে স্রোতের দিকে তাকিয়ে বলে, আপু তুমি একটু নিজের জন্যও ভাবো।" কিন্তু স্রোতের উত্তর মৃদু, "আমার দায়িত্ব অনেক, আমি না পারলে তো আর কেউ পারবে না।"

মাঝে মাঝে স্রোতস্বিনী একা একা তার ছোট ছোট স্বপ্নগুলোকে এক কোণায় লুকিয়ে রাখে।

চলবে..

Address

Sylhet

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Nadia Tull Jannat - নাদিয়া তুল জান্নাত posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share