18/08/2025
চোখে দেখা সত্য...
..২০২৩ সালের শেষের দিকে একরকম হঠাৎ করেই ঘুরতে গিয়েছিলাম মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ সুনামগঞ্জে I স্থানীয় সাংবাদিক বন্ধুদের বদান্যতায় সীমান্তবর্তী কয়েকটি উপজেলার দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে। পাহাড়, নদী, হাওর এবং সমতলের সৌন্দর্য আমাকে বার বার রোমাঞ্চিত করেছে। সুযোগ পেলে আবার যেতে চাই প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে I
..সম্ভবত সুরমা ও কুশিয়ারা নদী এই অঞ্চলের প্রধানতম নদী। এই দুটি নদীসহ অনেকগুলো নদী, খাল, ছরা মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে এসেছে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে I এসব নদী ও খালের মাধ্যমে প্রতিবছর বিপুল পাথর, বালি ভেসে আসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে I আমি যখন গিয়েছিলাম তখন ছিল শুষ্ক মৌসুম । দেখতে পেলাম তাহিরপুর উপজেলার বারেকের টিলা এলাকায় অসংখ্য মানুষ নদী থেকে বালু, পাথর আহরণ করছে।অথচ তখনো পরিবেশ রক্ষার অযুহাতে এসব প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন নিষিদ্ধ ছিল।
..আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, এই স্থানের কয়েক কিলোমিটার দূরে নীলাদ্রি লেক এলাকায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত রেখা থেকে আনুমানিক ২০০ মিটার ভেতরে ভারতীয় অংশে ভারী স্কাভেটর দিয়ে পাহাড়ের বুক চিরে পাথর ভেঙে ট্রাকে তোলা হচ্ছে | সেই পাথর মাত্র দু' তিন কিলোমিটার দূরের একটি স্থলবন্দর দিয়ে (এই মুহূর্তে বন্দরের নামটি মনে করতে পারছি না) বৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ভারত পাথর রপ্তানি করছে আমরা কিনে এনে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছি । ভারতের ক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষার কোন বাধ্য বাধকতা না থাকলেও আমাদের ক্ষেত্রে অসভ্য সুশীল, জ্ঞানপাপীরা উঠেপড়ে লেগে যায় I
..এবার আসল কথায় আসা যাক, বাংলাদেশে যে কয়টি নদী থেকে বালি ও পাথর আহরণ করা হয় তা প্রকৃতির দান I প্রকৃতির এ বিশেষ দান সহজে শেষ হবার নয় । আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী ভারত এসব নদীতে বাঁধ দিয়ে বালি ও পাথরের প্রবাহ বন্ধ করতে পারে না I তাই কথিত পরিবেশ রক্ষার অযুহাতে ভারতের স্বার্থ বাস্তবায়নে কতিপয় সুবিধাবাদী দালাল ও কিছু সংখ্যক নির্বোধ জ্ঞানপাপী, বুদ্ধিজীবী বালি ও পাথর আহরণ বন্ধে সোচ্চার হয়েছে I
..শতাব্দীর পর শতাব্দী এই প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে আমাদের এ অঞ্চলের উন্নয়ন হয়েছে I কখনোই এসব বালু, পাথর শেষ হয়নি। বরং প্রতিবছর বর্ষায় আবার তা পূর্ণ হয়ে গেছে । প্রকারান্তরে কয়েক বছর আগেও এসব বালি ও পাথর দিয়ে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়েছে I অসংখ্য মানুষের জীবন জীবিকা ছিল এই পাথর, বালি কোয়ারিকে ঘিরে | অথচ কি নির্মম পরিহাস ভারত এখন আমাদের কাছে পাথর রপ্তানি করছে। আর আমরা পরিবেশ রক্ষার নামে কামড়া-কামড়ি করছি । প্রশ্ন হল এতে লাভ এবং ক্ষতি হচ্ছে কার...?!
..একটু ভেবে দেখি, ভারত পাহাড় কেটে বালি, পাথর বিক্রি করছে I তাদের কি পরিবেশ বিপর্যয় হয় না...?! পৃথিবীর এমন কোন দেশ আছে যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহার না করে এভাবে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়...?! বাংলাদেশের আরো কয়েকটি জেলায় গ্যাস, পাথর, কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে | সেখানে কি পরিবেশ বিপর্যয় হয় না...?! বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নদী, সাগর এমনকি মাটির নিচ থেকে খনিজ তেলসহ নানা রকম প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন ও আহরণ করা হচ্ছে I সেখানে কি পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে না...?!
অথচ আমাদের দেশের কতিপয় মালখোর সুশীল, বুদ্ধিজীবী ভারতীয় দালালরা হীন স্বার্থ রক্ষায় দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে ।
মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কবে দেশের স্বার্থে দেশ প্রেমিক হবো...!!!???