14/09/2023
আমাদের উপর কোরআনুল কারিমের অনেকগুলো হক রয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হক হচ্ছে,
||১. পূর্ণ উপলব্ধির সাথে কোরআনের প্রতি ঈমান রাখা:
(ক) অন্তরের ভেতর এটি বদ্ধমূল করে রাখা যে, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বর্ণনা করে মানুষকে হেদায়াত ও কল্যাণের পথ দেখানোর জন্যই আল্লাহ এ কোরআন নাযিল করেছেন। যা রমজানের মাসের লাইলাতুলকদরে লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আসমানে, এরপর বিভিন্ন প্রয়োজন ও প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে আল্লাহর রাসুলের উপর নাযিল হয়। এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, নাযিলের পর থেকে অদ্যবধি এ কোরআন যথাযথ সংরক্ষিত আছে এবং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে৷ আর আমরা এ ব্যাপারেও সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে, বর্তমানে গ্রন্থাকারে যে কোরআন আমাদের হাতে আছে, যা সুরা ফাতিহা থেকে শুরু করে সুরা নাস পর্যন্ত, এটা আল্লাহ তায়ালার সেই কিতাব, যা তিনি নবি মুহাম্মাদ সা.এর উপর নাযিল করেছেন।
(খ) এ কোরআন হচ্ছে পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাব ও শরিয়তকে সত্যায়নকারী। তাছাড়া এ কোরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানি কিতাবের সার ও নির্যাস। আল্লাহ তায়ালা এ কোরআন অবতীর্ণ করার সাথে সাথে পূর্ববর্তী সকল আসামনি কিতাবের হুকুম ও শরিয়ত বাতিল হয়ে করে দিয়েছেন। সুতরাং কেউ যদি এখন পূর্ববর্তী কোনও আসমানি কিতাবের অনুসরণ করে, তাহলে তা আর গ্রহণযোগ্য হবে না। তাছাড়া বাইবেল, কিতাবুল মুকাদ্দাস, মঙ্গলবার্তা অথবা ইঞ্জিল শরিফ নামে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা যে গ্রন্থগুলো প্রকাশ করে, সেগুলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নাযিল কৃত তাওরাত, যাবুর বা ইঞ্জিল নয়। বরং এগুলো পরবর্তী কারো রচনা৷ কিন্তু এ রচনাগুলোর মূল কপিও বর্তমান কারো কাছে সংরক্ষিত নেই। এ গ্রন্থগুলো যাদের রচনা বলে দাবি করা হয়, তাদের পর্যন্ত কোনো মুত্তাসিল সনদ বা অবিচ্ছিন্ন সূত্রও বিদ্যমান নেই। এ বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার জন্য বাইবেল ও বর্তমান খ্রিস্টবাদ সম্পর্কে লিখিত গ্রন্থসমূহ পাঠ করা যেতে পারে। যেমন আল্লামা তাকি উসমানি (হাফিযাহুল্লাহ) কর্তৃক রচিত 'ইসাইয়্যাত কিয়া হ্যায়'। (বাংলায় এর চমৎকার অনুবাদ হচ্ছে, 'খ্রিস্টধর্মের স্বরূপ' নামক বইটি) এবং মাওলানা আব্দুল মতিন সাহেব হাফি. কর্তৃক রচিত, 'বাইবেল বিকৃতি: তথ্য ও প্রমাণ' ও 'খ্রিস্টবাদ বিকৃতি: তথ্য ও প্রমাণ'।
(গ) কোরআনই একমাত্র হেদায়াত ও মুক্তির পথ। এ ছাড়া মানুষের জন্য কল্যাণকর ২য় কোনও পথ নেই৷ সমাজ-বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী বা দার্শনিকের যত দর্শন আছে, যদি কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে অবশ্যই তা মানুষের জন্য অকল্যাণকর। কারণ মানুষের গবেষণা ও সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে, কিন্তু সৃষ্টি সম্পর্কে সৃষ্টিকর্তার কোনো সিদ্ধান্ত ভুল হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই৷
(ঘ) সম্পূর্ণ কোরআনের উপর ঈমান আনা৷ কোরআনের ছোট্টতম কোনো আয়াতকে অবিশ্বাস করার নামও কোরআনকে অস্বীকার করা। পুরো কোরআনকে অস্বীকার করা যেমন কুফুরি, তেমনি কোরআনের ক্ষুদ্রতম কোনো আয়াত বা বিধানকে অস্বীকার করাও কুফুরি। কোথাও কোরআন এবং বিজ্ঞানের থিউরি সাংঘর্ষিক হলে, কোরআনকেই সত্য ও সঠিক বলে বিশ্বাস করা। কারণ বিজ্ঞানের গবেষণায় হয়ত কোনো ভুল হচ্ছে। অপর দিকে কোরআন সৃষ্টিকর্তার বাণী, এতে ভুল থাকার বিন্দুমাত্রও সম্ভাবনা নেই। বিজ্ঞানের এমন অনেক থিউরি, যা যুগ বা শতাব্দীর পরিবর্তনে পাল্টে গেছে। কিন্তু কোরআন চিরন্তন সত্য৷ কখনো পরিবর্তন হবার নয়।
(ঙ) কোরআনের প্রতি ঈমান গ্রহণযোগ্য হওয়ার আরেকটি শর্ত হচ্ছে, রাসুল সা.এর শিক্ষা মোতাবেক হওয়া। তথা রাসুল সা. যেভাবে সাহাবায়ে কেরামকে কোরআন শিখিয়েছেন। এরপর তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী, আইম্মায়ে কেরাম ও উলামায়ে উম্মতের মাধ্যমে প্রজন্ম পরম্পরায় আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে৷ এখন যদি কেউ ইলমে কোরআনের এ ধারার বিপরীতে গিয়ে নিজস্ব বিবেক ও বুদ্ধি দ্বারা কোরআনকে ব্যাখ্যা করতে যায়, তাহলে অবশ্যই তা হবে স্পষ্ট গোমরাহি ও চরমভ্রষ্টতা।
(চ) কোরআনের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আকিদা হচ্ছে, এটি সর্বশেষ আসমানি কিতাব। এরপর আর কোনও কিতাব ও শরিয়ত আসবে না। সর্বশেষ নবি মুহাম্মাদ সা. এর উপর অবতীর্ণ হওয়া সর্বশেষ কিতাব এ কোরআন এবং এর মধ্যে থাকা ইসলামি শরিয়ত কেয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। নতুন কোনও নবিও যেমন আর আসবে না, তেমনি নতুন কোনও আসমানি কিতাব বা শরিয়তও আর আসবে না। হ্যাঁ, কেয়ামতের আগে দাজ্জালকে ধ্বংস করার জন্য ঈসা আ. পৃথিবীতে আগমন করবেন, তবে নবি হয়ে নয়, বরং আমাদের নবির উম্মত হয়ে।
———————
অধ্যায়: কিতাবুল্লাহ
পাঠ: আমাদের উপর কোরআনের হক।
(কোরআন সম্পর্কে ধারাবাহিক আলোচনা আসবে, ইনশাআল্লাহ)