05/04/2025
এক গ্রামের ছেলের গল্প:-
আমি বড় হয়েছি বাংলাদেশের এক শান্তিপূর্ণ গ্রামে যেখানে সকালে ঘুম ভাঙত পাখির ডাক আর কুয়াশার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া রোদ্দুরে। আমার বাবা একজন কৃষক, আর মা একজন গৃহিণী। স্বাস্থ্যসেবার দিক থেকে আমাদের গ্রাম ছিল বেশ পিছিয়ে, ভালো হাসপাতাল তো দূরের কথা, একটা সঠিক ডায়াগনস্টিক ল্যাবও ছিল না।
আমার জীবনের মোড় ঘুরে যায় একদিন, যখন আমার বড় বোন হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় ডাক্তাররা কিছুই বুঝতে পারেননি। শেষমেশ শহরের একটি ল্যাবে নিয়ে যাওয়া হয় ওকে। আমি সেদিন প্রথম দেখি ল্যাবরেটরির জগৎ রঙিন রিএজেন্ট, ছোট ছোট টিউব, আর রহস্যময় সব যন্ত্রপাতি যেগুলো রক্তের ভিতরে লুকিয়ে থাকা তথ্য বের করে আনে।
সেদিনই মনে মনে ঠিক করেছিলাম এই বিজ্ঞানটা আমি শিখব।
মেডিকেল টেকনোলজির জগতে প্রবেশ-
অনেক পরিশ্রম আর ত্যাগের মাধ্যমে ভর্তি হই ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি-তে। শেখা শুরু করি বায়োকেমিস্ট্রি, হেমাটোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, প্যাথোলজি এবং ব্লাড ব্যাংকিং-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে।
ডিপ্লোমা শেষে একটি প্রাইভেট ল্যাবে কাজ শুরু করি। প্রথম দিন একটিম্যানুয়াল অ্যানালাইজার চালু করেছিলাম কাঁপা হাতে, কিন্তু আত্মবিশ্বাসে ভরপুর মনে হয়েছিল, এটাই আমার জায়গা।
মান নিয়ন্ত্রণ ও পেশাগত উন্নয়ন-
কাজ করতে করতে টের পেলাম সব কিছু ঠিকঠাক চলছে না। কোয়ালিটি কন্ট্রোল ঠিকভাবে হচ্ছে না, রিপোর্টে অসঙ্গতি থাকছে, আর বায়োসেফটি নিয়মগুলো মানা হচ্ছে না যথাযথভাবে। এই অবস্থায় আমি পরিচিত হই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন স্ট্যান্ডার্ড ISO 15189 ও ISO 15190 এর সঙ্গে। শুরু করি নিজের দক্ষতা বাড়ানো, শিখি কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ল্যাব অডিট, ইকুইপমেন্ট ক্যালিব্রেশন, আরেকজন হয়ে উঠি যিনি শুধু টেস্ট করেন না, বরং গুণগত মান নিশ্চিত করেন।
লক্ষ্য- মানসম্মত ল্যাব, সঠিক রিপোর্ট-
আজ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি ল্যাবে থাকা উচিত আন্তর্জাতিক মান, প্রতিটি রিপোর্ট হওয়া উচিত নির্ভুল। কারণ একটা সঠিক রিপোর্ট মানে একজন রোগীর সঠিক চিকিৎসা, একটা পরিবারের স্বস্তি।
এটা আমার গল্পের শেষ নয় এটা তো শুধুই শুরু। আমার স্বপ্ন, আমার কাজ, আর আমার পথচলা চলবে মানুষের জন্য, দেশের জন্য।