08/10/2025
"এক বিশাল পর্বতের পাদদেশে, ছোট একটি গ্রাম ছিল, যার নাম ছিল শান্তিনিবাস। গ্রামটি প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা হলেও, গ্রামবাসীরা প্রায়শই তাদের সমস্যার ভারে হতাশ হয়ে পড়ত। আকাশ মেঘলা হলেই তারা ধরে নিত, বৃষ্টি তাদের ফসল নষ্ট করবে, আর সামান্য ঝড়েই তারা নিজেদের ভাগ্যকে দোষ দিত।
এই গ্রামে থাকত এক বৃদ্ধা, যার নাম ছিল কমলা দিদিমা। তার কুটিরের জানালায় একটি ছোট্ট, পিতলের প্রদীপ সবসময় জ্বলত। দিদিমার একটি মজার অভ্যাস ছিল: যখনই কেউ কোনো কঠিন সমস্যার কথা বলত, দিদিমা সেই প্রদীপের সলতেটা একটু বাড়িয়ে দিতেন।
একদিন গ্রামের প্রধান এসে হতাশ হয়ে বললেন, "দিদিমা, আমাদের নদীর জল শুকিয়ে আসছে। ফসল বাঁচানো অসম্ভব মনে হচ্ছে। কোনো আশাই দেখতে পাচ্ছি না।"
কমলা দিদিমা শান্তভাবে হাসলেন। তারপর প্রদীপের দিকে ইশারা করে বললেন, "বাবা, প্রদীপে তেল কম থাকলে আলোও কম দেখায়। আমাদের মনটাও ঠিক এই প্রদীপের মতো। যখন জীবনের কষ্টগুলো বেশি মনে হয়, তখন আলোর সলতেটা বাড়িয়ে নিতে হয়।"
প্রধান বললেন, "কিন্তু কিভাবে?"
দিদিমা বললেন, "প্রতিটি সমস্যার মধ্যেই সমাধানের একটি ছোট্ট বীজ লুকিয়ে থাকে। নদীর জল কম? তাহলে চলো সবাই মিলে ছোট ছোট খাল কাটি, বৃষ্টির জল জমাই। হতাশাকে দূরে ঠেলে একসাথে কাজ শুরু করাই হলো সেই সলতে বাড়ানো।"
দিদিমার কথা শুনে গ্রামের মানুষ নতুন করে অনুপ্রাণিত হলো। তারা হতাশায় বসে না থেকে কোদাল হাতে নিল। দিনের পর দিন তারা একসাথে পরিশ্রম করল। নদীর ধারে ছোট ছোট জলাধার তৈরি করল, খাল কেটে জল জমালো।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে, হঠাৎ এক বিশাল বৃষ্টি হলো। কিন্তু এবার গ্রামবাসীরা ভয় পেল না। কারণ তারা জানত, তাদের তৈরি জলাধারগুলোই তাদের ফসলকে রক্ষা করবে।
গ্রামের প্রধান দিদিমার কাছে এসে কৃতজ্ঞতা জানালেন। দিদিমা তখন বললেন, "আমি তোমাদের আশা দিইনি, বাবা। আমি শুধু শিখিয়েছি কিভাবে নিজের ভেতরের আশার প্রদীপটা জ্বালিয়ে রাখতে হয়। বাইরের অন্ধকার যত গভীরই হোক না কেন, তোমার ভেতরের আলো যেন কখনো না কমে।" 🤲🤲