27/08/2024
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। এই দেশে ৪৬.৬১ শতাংশ লোক সরাসরি কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত । আজকে ধান চাষের সেচ ব্যবস্থা সম্পর্কে কথা বলব :
কৃষিকাজে ধান চাষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে সেচ ব্যবস্থা । কৃষকদের লাভের একটা বড় অংশ চলে যায় সেচ খরচে । কিছু অঞ্চলে সেচের পরিবর্তে ধান, আবার কিছু অঞ্চলের পরিবর্তে টাকা নেয়া হয় । তাতে যিনি সেচ দেন , তার খুব একটা খরচ হয় না ।
যে অঞ্চলে সেচের পরিবর্তে ধান নেয়া হয়, তা নেহাত কম নয় । চার ভাগের এক ভাগ । অর্থাৎ কেউ যদি ১০০ মন ধান পায় তাহলে সেখান থেকে ৭৫ মন পাবে জমিওয়ালা এবং ২৫ মন ধান পাবে সেচ পাম্পওয়ালা । এক একটা সেচ পাম্পওয়ালা এইভাবে ২০০ থেকে ২৫০ মণ ধান পেয়ে থাকে । যার বাজার মূল্য ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত ।কিন্তু বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় চার মাসে মাত্র ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ কৃষকদের কৃষকদের যে টাকা লাভ হতো তা মেশিন ওয়ালারা নিয়ে যায় । সরকার প্রতিবছর সেচ কাজের জন্য ভর্তুকি প্রদান করছে কিন্তু এই ভর্তুকি কৃষকরা পাচ্ছে না ।এই ভর্তুকি পাচ্ছেন সেচ পাম্পওয়ালারা । কিন্তু এই ভর্তুকি দেয়া হয়েছে কৃষকদের জন্য । যদি এর সমাধান নিয়ে কথা বলি তবে কৃষকদের উচিত নিজেদের মধ্যে সবাই মিলে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করা । নিচের চিত্র লক্ষ্য করুন :
চিত্র অনুযায়ী ১ থেকে ৮ পর্যন্ত জমির মালিক ৮ জন তারা সবাই মিলে যদি চার নম্বর জমিতে পাম্প বসায় তাহলে সেচ খরচ অনেকটাই বেঁচে যাবে । ডেসিমল অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিল দিলেই হবে । ধরুন ২০,০০০টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে । তাহলে ৫ নম্বর জমির মালিক কে বিল দিতে হবে ২২৮৫টাকা । ৫ নম্বর জমাটি ১০০ ডিসিমলের একটি জমি । এখানে কমপক্ষে ৮০ মন ধান হবে এই ক্ষেত্রে সেচ পাম্পওয়ালা পাবে ২০ মন এবং জমির মালিক পাবে ৬০ মন ধান । ২০ মন ধানের বাজার মূল্য ২৪০০০ টাকা থেকে ২৭০০০ টাকা পর্যন্ত । চিন্তা করেন, কোথায় ২০০০ কোথায় ২৭০০০ তারা তারা শুধু সেচ টাই দেবে, তাই বলে ধান চাষ করতে অন্যান্য খরচ কিছুই দিবে না। এর জন্য গ্রাম অঞ্চলে একটা কথা বলা হয় ,যার মাঠে দুইটা সেচ পাম্প আছে সে এক প্রকার জমিদার । কারণ দুইটা সেচ পাম্প থেকে তিন মাসে বিদ্যুৎ বিল আসলে সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বিল আসবে । কিন্তু এর বিনিময়ে তারা প্রায় দুই সেচ পাম্প থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ ধান পাবে । যার বাজার মূল্য ৪০০০০০ টাকা থেকে ৫৫০০০০ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ কৃষকের যে টাকা লাভ হওয়ার কথা ছিল সেটা সেচ পাম্পওয়ালারা নিয়ে চলে গেছে । আজ কৃষকরা একসাথে সমবায় নেই বলে, সেচ পাম্পওয়ালা যা খুশি তাই করছে ।এমনকি তারা ঠিক মতন পানিও দেয় না ।বেশিরভাগ সময় কৃষকদের নিজেদেরই জমিতে নিজেদেরই পানি দিতে হয় । আর সেচ পাম্পওয়ালারা ৪০০০০ টাকা ৩০০০০ টাকা বিল দিবে, আর ৩০০ মন কি ৪০০ মন ধান নিয়ে চলে যাবে । বলার কেউ নেই । আর এভাবেই চলে আসছে । আর যিনি কষ্ট করে ধান লাগালো ,কাটলো ,লোকজনের খরচ দিলেন, তার কিছুই থাকেনা । থাকবেই বা কিভাবে সে জায়গায় সারের খরচ আছে ,লোকজন এর খরচ আছে, আরো অনেক কিছুর খরচ, যেগুলো নিয়ে আমরা পরবর্তিতে কথা বলব ।এখন আমার কথা হচ্ছে প্রত্যেক জায়গায় কৃষকদের উচিত একটা সমবায় তৈরি করা যাতে সেচের নামে কাউকে ধান না দিতে হয় । কোন লোক যদি ১৫০ ধান পায় তাহলে উনি ৫০ মণ ধান সেচ পাম্পওয়ালাকে দিয়ে আসছে । অর্থাৎ লাভের টাকা সম্পূর্ণ সেচ পাম্পওয়ালার কাছে চলে গেছে। যার কারণে কৃষকদের দিন শেষে কিছুই থাকেনা । আরো অনেক ভুল আছে, যা কৃষকদের সমাধান করা উচিত ।সেচ পাম্পওয়ালাদের যতদিন পর্যন্ত চার ভাগের এক ভাগ ধান দিয়ে আসতে হবে ততদিন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখতে পারবেনা । তাই কৃষকদের বলবো আপনারা নিজ নিজ এলাকায় সমবায়ের মাধ্যমে সেচ পাম্প স্থাপন করুন এবং চাষাবাদ করুন । ইনশাআল্লাহ্ কিছুটা লাভবান হবে পরবর্তীতে এই ধান চাষ সম্পর্কে আরো কিছু আলোচনা করব । আল্লাহ হাফেজ ।