SIPRS

SIPRS Sonicium Institute of Political research and Strategy

🎯 আপনি কি পানির বাজারে প্রবেশ করতে চান?তাহলে এই রিপোর্ট আপনার জন্যই!📘 বাংলাদেশের বোতলজাত পানির বাজার — বিশ্লেষণ ও ভবিষ্য...
12/07/2025

🎯 আপনি কি পানির বাজারে প্রবেশ করতে চান?
তাহলে এই রিপোর্ট আপনার জন্যই!

📘 বাংলাদেশের বোতলজাত পানির বাজার — বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা
ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের জন্য নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণ
৩০+ পৃষ্ঠার বিশ্লেষণধর্মী পূর্বাভাস

এখনই সংগ্রহ করুন এই গবেষণা-ভিত্তিক মূল্যবান ওভারভিউ রিপোর্ট, যেখানে রয়েছে—

✅ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাজারের আকার ও প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস
✅ মাম, ফ্রেশ, অ্যাকুয়াফিনা-সহ প্রধান ব্র্যান্ডগুলোর বাজার শেয়ার
✅ শহর ও গ্রামাঞ্চলে পানির সংকটের প্রভাব
✅ ক্রেতাদের আচরণ ও পছন্দ বিশ্লেষণ
✅ প্লাস্টিক দূষণ ও রেগুলেটরি চ্যালেঞ্জ
✅ ব্যবসায়িক কৌশল ও সুপারিশ

📈 ব্যবসা করবেন? আগে জানুন বাজার!

📲 এখনই মেসেজ করুন / WhatsApp করুন: +8801919391942
📩 ইমেইল: [email protected]
📂 পিডিএফ অথবা প্রিন্টেড কপি – দুটোই পাওয়া যাবে!

🔥 এই রিপোর্ট থেকে লাভ কী?
- নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় সহায়তা
- ব্র্যান্ড পজিশনিং ও বাজার প্রবেশের গাইডলাইন
- পণ্য উন্নয়ন ও নীতিমালার প্রস্তুতি

💬 এখনই ইনবক্স করুন “Report” লিখে – বিস্তারিত পাঠিয়ে দেব!

https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/hussainbillah/30378250
11/07/2025

https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/hussainbillah/30378250

somewhere in... blog, also called বাঁধ ভাঙার আওয়াজ, is the first and largest bangla blog community in the world. the main attraction is the phonetic keyboard that makes it too-easy to write bangla on web, even if you don't know how to type bangla. other attractions are...

আসছে আমাদের নতুন গবেষণা প্রতিবেদন!
11/07/2025

আসছে আমাদের নতুন গবেষণা প্রতিবেদন!

বিডিআর বিদ্রোহ: কারণ, পরিণতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব – একটি সমন্বিত বিশ্লেষণ                 √√√দ্বিতীয় পর্ব √√...
09/07/2025

বিডিআর বিদ্রোহ: কারণ, পরিণতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব – একটি সমন্বিত বিশ্লেষণ
√√√দ্বিতীয় পর্ব √√√
||প্রথম পর্ব পাওয়া যাবে আমাদের পেজে SIPRS

৩. ঘটনার বিবরণ (টাইমলাইন ভিত্তিক)

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাটি ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সকালে শুরু হয়ে ২ মার্চ ২০০৯ পর্যন্ত চলে।
এর একটি বিস্তারিত টাইমলাইন নিম্নরূপ:

৩.১ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯: পিলখানায় বিদ্রোহের সূত্রপাত, দরবার হলে হত্যাকাণ্ড, জিম্মি দশা
"বিডিআর সপ্তাহ" এর দ্বিতীয় দিনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক উদ্বোধনের পর, ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে পিলখানার দরবার হলে বিদ্রোহ শুরু হয়।
বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন বেশ কয়েকজন জওয়ান উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করে এবং তাদের অপসারণের দাবি জানায়।
এই প্রতিবাদ দ্রুত সহিংসতায় রূপ নেয়। বিদ্রোহীরা মহাপরিচালক এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জিম্মি করে এবং পরে তাদের উপর গুলি চালায়।
মহাপরিচালক শাকিল আহমেদ বিদ্রোহের প্রথম দিকেই নিহত হন।
বিদ্রোহীরা সদর দফতরের প্রধান প্রবেশদ্বারগুলিতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র প্রস্তুত করে এবং কর্মকর্তাদের বাসভবনে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালায়।এর প্রতিক্রিয়ায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিডিআর সদর দফতর ঘিরে শক্তিশালী অবস্থান নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন, তবে হত্যাকারী, লুটেরা এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অন্যান্য অপরাধে জড়িতদের বাদ দিয়ে।
বিদ্রোহীরা সাধারণ ক্ষমার প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের দাবি করে এবং সন্ধ্যায় পিলখানার বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলে।

২৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনাপ্রবাহ, বিশেষত মৌখিক প্রতিবাদ থেকে গণহত্যাকারীতে দ্রুত রূপান্তর এবং কর্মকর্তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তু করে তাদের লাশ দাফন করা, নিছক অসন্তোষের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশের পরিবর্তে বিদ্রোহের মধ্যে একটি পূর্বপরিকল্পিত ও অত্যন্ত সুসংগঠিত উপাদান নির্দেশ করে।
বিদ্রোহীদের তাৎক্ষণিক কৌশলগত পদক্ষেপ (অস্ত্রাগার দখল, জিম্মি করা, সাধারণ ক্ষমার জন্য গেজেট দাবি, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা, লাশ দাফন করা) একটি নির্দিষ্ট স্তরের পরিকল্পনা ও সমন্বয় প্রদর্শন করে, যা নিছক অসন্তুষ্ট সৈনিকদের বর্ণনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে। এই ঘটনাটি "প্রলেতারীয় বিপ্লব" এর প্রাথমিক গণমাধ্যম বর্ণনাকে অস্বীকার করে এবং "পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড" তত্ত্বকে সমর্থন করে।

৩.২ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯: বিদ্রোহের বিস্তার, সরকারের সাথে আলোচনা, অস্ত্র সমর্পণ

বিদ্রোহের দ্বিতীয় দিনে, অস্থিরতা ঢাকার বাইরে অন্তত ১২টি বিডিআর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে চট্টগ্রাম, ফেনী, রাজশাহী, সিলেট, যশোর, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, নওগাঁ এবং নেত্রকোনা উল্লেখযোগ্য, এই বিস্তার ইঙ্গিত দেয় যে অসন্তোষ কেবল পিলখানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, অথবা বিডিআর ইউনিটগুলির মধ্যে একটি পূর্ব-বিদ্যমান অসন্তোষ বা সমন্বয়ের নেটওয়ার্ক ছিল।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বিদ্রোহীদের সাথে সরাসরি আলোচনার জন্য পিলখানায় যান এবং তাদের অস্ত্র সমর্পণ ও জিম্মিদের মুক্তির আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং বিদ্রোহীদের অবিলম্বে অস্ত্র সমর্পণ না করলে "কঠোর ব্যবস্থা" নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পর সেনাবাহিনী পিলখানা সদর দফতরের সামনে ট্যাঙ্ক মোতায়েন করে, যা বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণে উৎসাহিত করে। বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ করে এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বিডিআর সদর দফতরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
সরকারের আলোচনা (সাধারণ ক্ষমা) এবং শক্তি প্রদর্শনের (ট্যাঙ্ক) কৌশলগত ব্যবহার সংকট নিয়ন্ত্রণে এবং পূর্ণাঙ্গ সামরিক হস্তক্ষেপ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যা আরও ব্যাপক রক্তপাত ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারত।

এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য একটি অত্যন্ত অস্থির পরিস্থিতিতে সরকারের রাজনৈতিক বিচক্ষণতাকে তুলে ধরে। এই ঘটনাটি বেসামরিক সরকারের সামরিক বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণকে স্পষ্ট করে, কারণ সেনাবাহিনী তাদের আরও জোরালো প্রতিক্রিয়া জানানোর আকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও সংযত ছিল।

৩.৩ ২৭ ফেব্রুয়ারি - ২ মার্চ ২০০৯: উদ্ধার অভিযান, গণকবর আবিষ্কার, আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি

২৭ ফেব্রুয়ারি প্রায় ২০০ জন বিদ্রোহী বেসামরিক পোশাকে পিলখানা সদর দফতর থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় গ্রেপ্তার হয়। একই দিনে সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক ও সৈন্যরা বিডিআর সদর দফতরে প্রবেশ করে। সদর দফতরের ভিতরে নিখোঁজ কর্মীদের অনুসন্ধান অব্যাহত থাকায়, আরও ৪২টি মৃতদেহ পাওয়া যায়। মোট ৭৪ জন নিহত হন, যার মধ্যে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন।
বিডিআর হাসপাতালের কাছে একটি গণকবর পাওয়া যায়, যেখানে ৪২ জন কর্মকর্তাকে সাত ফুট গভীর গর্তে দাফন করা হয়েছিল। কিছু মৃতদেহ ড্রেনের সুড়ঙ্গে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।
এই গণকবর এবং সুড়ঙ্গে লাশ আবিষ্কারের ভয়াবহতা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের অকাট্য প্রমাণ দেয়, যা নিছক অসন্তোষ দ্বারা চালিত স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহের ধারণাকে বাতিল করে। এই প্রকাশ জনমত এবং সরকারি বর্ণনাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, যার ফলে কঠোর শাস্তির দাবি ওঠে এবং প্রাথমিক সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাব সত্ত্বেও পরবর্তী বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকার তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করে।
১ মার্চ ২০০৯ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসে সেনা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন, যেখানে সেনা কর্মকর্তারা খুনের দায়ে দোষীদের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। ২ মার্চ ২০০৯ তারিখে নিহত কর্মকর্তাদের রাষ্ট্রীয় দাফন সম্পন্ন হয় এবং বিদ্রোহের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে।

৩.৪ নিহত সেনা ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের তালিকা ও তাদের পদমর্যাদা

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, উপ-মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জে. মো. জাকির হোসেন, এবং অন্যান্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, কর্নেল, লেফটেন্যান্ট কর্নেল, মেজর ও ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার মোট ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন।এছাড়াও, বিডিআর-এর নন-কমিশন অফিসার ও সৈনিক এবং বেসামরিক ব্যক্তিরাও নিহত হন, যার মধ্যে ডিজি শাকিল আহমেদের স্ত্রী বেগম নাজনীন শাকিল এবং কর্নেল মুজিবুল হকের বাসার কাজের মেয়ে কল্পনা (১২) অন্যতম। বিডিআর-এর প্রধান, উপ-প্রধান এবং সকল ১৬ জন সেক্টর কমান্ডার বিদ্রোহের সময় নিহত হন।
এই হত্যাকাণ্ডে বিডিআর-এর সম্পূর্ণ কমান্ড কাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা নির্দেশ করে। পরিবার এবং বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা সহিংসতার চরম নৃশংসতা এবং নির্বিচার প্রকৃতিকে তুলে ধরে, যা কেবল সৈনিকদের দাবি পূরণের বাইরে একটি উদ্দেশ্যকে ইঙ্গিত করে।
চলবে...

Daily Naya Diganta Daily Ittefaq Prothom Alo The Daily Star Rtv News । সংবাদ NEWS24 bdnews24.com Daily News somoynews.tv Arab News Organisation of Islamic Cooperation (OIC) Daily Jugantor Channel 24 News Bangladesh Army Border Guard Bangladesh Pinaki Bhattacharya - পিনাকী ভট্টাচার্য MD Hussain Billah

বিডিআর বিদ্রোহ: কারণ, পরিণতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব – একটি সমন্বিত বিশ্লেষণ‌‌SIPRS™ এর গবেষণা প্রতিবেদন আজ প্র...
07/07/2025

বিডিআর বিদ্রোহ: কারণ, পরিণতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর প্রভাব – একটি সমন্বিত বিশ্লেষণ

‌‌SIPRS™ এর গবেষণা প্রতিবেদন আজ প্রথম পর্ব

১. ভূমিকা ও প্রেক্ষাপট

১.১ বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-এর সদর দফতর পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। এই ঘটনা পিলখানা হত্যাকাণ্ড বা পিলখানা ট্র্যাজেডি নামেও পরিচিত। এটি কেবল একটি বিদ্রোহ ছিল না, বরং একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড, যেখানে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং ১৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এই নজিরবিহীন ঘটনাটি দেশের সামরিক কমান্ড কাঠামোকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে দেয় এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গভীর দুর্বলতা উন্মোচন করে।
এই হত্যাকাণ্ডে উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের ব্যাপক প্রাণহানি ইঙ্গিত দেয় যে, এটি নিছক একটি অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা ছিল না, বরং রাষ্ট্রের বলপ্রয়োগকারী কাঠামোর উপর একটি সুদূরপ্রসারী আঘাত ছিল। বিডিআর-এর কমান্ড কাঠামো সেনাবাহিনীর প্রেষণাধীন কর্মকর্তাদের উপর নির্ভরশীল ছিল, এবং ৫৭ জন কর্মকর্তার মৃত্যু কার্যত এই কমান্ড কাঠামোকে পঙ্গু করে দেয়। সীমান্ত সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত একটি আধা-সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের এমন আকস্মিক বিলুপ্তি তাৎক্ষণিকভাবে তাদের অপারেশনাল সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই ঘটনা কেবল একটি স্থানীয় বিদ্রোহের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি দেশের বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতার উপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে একটি জাতীয় নিরাপত্তা সংকটে রূপান্তরিত হয়।

১.২ ২০০৯ সালের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রেক্ষাপট

২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহ একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ভূমিধস বিজয় অর্জন করে। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। বিদ্রোহটি নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৫১ দিনের মাথায় ঘটেছিল, যা নবনির্বাচিত সরকারের জন্য একটি প্রাথমিক ও গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
এই বিদ্রোহের পূর্বে, ২০০৭-২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে একটি সামরিক-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। এই সময়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং "মাইনাস-টু ফর্মুলা" (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংস্কারের চেষ্টা করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চালানো হয়, যেখানে অনেক ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। ২০০৯ সালের শুরুতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল ছিল এবং পুলিশ বাহিনীতে হামলার ঘটনাও ঘটেছিল।
বিদ্রোহের সময়কাল, অর্থাৎ নবনির্বাচিত বেসামরিক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের এত অল্প সময়ের মধ্যে এটি সংঘটিত হওয়া, ইঙ্গিত দেয় যে এটি সম্ভবত পুনঃপ্রতিষ্ঠিত বেসামরিক আধিপত্যের প্রতি একটি প্রত্যক্ষ চ্যালেঞ্জ ছিল, অথবা তত্ত্বাবধায়ক শাসনকাল থেকে উদ্ভূত সুপ্ত উত্তেজনাকে কাজে লাগানো হয়েছিল। সামরিক বাহিনীর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং "রাজনৈতিক প্রকৌশল" (মাইনাস-টু ফর্মুলা) এর মতো প্রচেষ্টা এমন একটি অস্থির পরিবেশ তৈরি করতে পারে যেখানে অসন্তুষ্ট উপাদান বা বাহ্যিক শক্তি দ্বারা এই ধরনের ঘটনা উস্কে দেওয়া বা ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের ভঙ্গুর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বেসামরিক-সামরিক সম্পর্কের জটিলতাকে তুলে ধরে।

১.৩ বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এর সাংগঠনিক কাঠামো, দায়িত্ব ও ভূমিকা

বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি আধা-সামরিক বাহিনী ছিল। এর দীর্ঘ এবং বৈচিত্র্যময় ইতিহাস ১৭৯৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক গঠিত 'ফ্রন্টিয়ার প্রোটেকশন ফোর্স' পর্যন্ত বিস্তৃত। বিডিআর-এর মূল দায়িত্ব ছিল দেশের সীমান্ত রক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, মাদক পাচার দমন, সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করা। ২০০৯ সালে বিডিআর-এর প্রায় ৬৭,০০০ সদস্য ছিল, যার মধ্যে ৪০,০০০ সীমান্তে নিয়োজিত ছিল।
বিডিআর-এর একটি অনন্য কমান্ড কাঠামো ছিল: এর সৈনিকরা (জওয়ান) সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ছিল, কিন্তু তাদের কমান্ডিং অফিসাররা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে আসতেন। এই হাইব্রিড কমান্ড কাঠামো, যেখানে পদস্থ সৈনিকরা তাদের প্রেষণাধীন সেনা কর্মকর্তাদের থেকে ভিন্ন ছিল, একটি অন্তর্নিহিত "আমরা বনাম তারা" গতিশীলতা তৈরি করেছিল। এই কাঠামোগত দুর্বলতা, বিডিআর-এর দ্বৈত ম্যান্ডেট (সীমান্ত নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি) এর সাথে মিলিত হয়ে, এটিকে অভ্যন্তরীণ অসঙ্গতি এবং বাহ্যিক কারসাজির জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছিল। নেতৃত্বের জন্য সেনা কর্মকর্তাদের উপর নির্ভরতা, যদিও এটি শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে ছিল, তবে এটি বাহিনীর মধ্যে একটি শ্রেণীগত বিভেদ তৈরি করে, যা জওয়ানদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়িয়ে তোলে কারণ তারা তাদের পদোন্নতির সম্ভাবনা সীমিত দেখতে পায়। এই কাঠামোগত ত্রুটি ছিল অভ্যন্তরীণ সংঘাতের একটি সম্ভাব্য উৎস।

১.৪ বিদ্রোহের পূর্ববর্তী সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের গতিশীলতা

২০০৯ সালের বিদ্রোহের পূর্ববর্তী সময়কাল সামরিক-বেসামরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি জটিল চিত্র তুলে ধরে। ২০০৭-২০০৯ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার সামরিক বাহিনীর সমর্থনে গঠিত হয়েছিল এবং এই সময়ে সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ "নতুন ব্র্যান্ডের গণতন্ত্র" এবং "নতুন রাজনৈতিক নেতৃত্ব" গঠনের ধারণা প্রচার করেন, যা নির্বাচিত সরকার ছাড়াই সামরিক আধিপত্যের ইঙ্গিত দেয়।
এই সময়ে, জরুরি ক্ষমতা অধ্যাদেশ ২০০৭ (EPO) এবং জরুরি ক্ষমতা বিধি (EPR) সামরিক বাহিনীকে অসাধারণ ক্ষমতা ও দায়মুক্তি প্রদান করে এবং নাগরিকদের অসংখ্য মৌলিক অধিকার স্থগিত করে। সামরিক বাহিনী সমস্ত নিরাপত্তা বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, যেখানে বিডিআর, র‍্যাব, পুলিশ সহ অন্যান্য সংস্থা যৌথ বাহিনী হিসাবে পরিচালিত হয়েছিল। এই সময়কালে সামরিক বাহিনীর বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় এবং অবসরপ্রাপ্ত ও সক্রিয় সামরিক কর্মকর্তাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিদ্রোহের পূর্ববর্তী এই সময়কাল সামরিক বাহিনীর দ্বারা বেসামরিক নিয়ন্ত্রণের উল্লেখযোগ্য অবক্ষয় দ্বারা চিহ্নিত হয়েছিল, যেখানে সেনাবাহিনী সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করছিল। এটি প্রশাসনে সামরিক প্রভাবের একটি নজির স্থাপন করে, যা নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে নির্দিষ্ট উপাদানগুলিকে উৎসাহিত করতে পারে এবং দায়মুক্তির অনুভূতি তৈরি করতে পারে। তাই, বিদ্রোহকে কেবল একটি অভ্যন্তরীণ বিডিআর সমস্যা হিসেবে দেখা যায় না, বরং এটি তত্ত্বাবধায়ক শাসনের পর বিস্তৃত নিরাপত্তা খাতের মধ্যে অমীমাংসিত উত্তেজনা এবং ক্ষমতার গতিশীলতার একটি সহিংস প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই কাঠামোগত প্রেক্ষাপট নতুন বেসামরিক সরকারের জন্য সামরিক বাহিনীর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জকে আরও জটিল করে তোলে।

২. বিদ্রোহের কারণ ও দাবি

২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান ছিল, যা বিডিআর জওয়ানদের দীর্ঘদিনের অসন্তোষ, কাঠামোগত সমস্যা এবং কিছু নির্দিষ্ট ঘটনার সম্মিলিত ফল।

২.১ বিডিআর জওয়ানদের দীর্ঘদিনের অসন্তোষ ও অভিযোগ (বেতন-বৈষম্য, ভাতা, পদোন্নতি)

বিডিআর সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন বেতন ও সুযোগ-সুবিধা, পদোন্নতির সীমিত সুযোগ এবং সেনা কর্মকর্তাদের বিডিআর-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে প্রেষণে নিয়োগের কারণে তীব্র অসন্তোষে ভুগছিল। এই প্রেষণ ব্যবস্থা বিডিআর-এর নিজস্ব সদস্যদের পদোন্নতির পথ রুদ্ধ করে দিত, যা তাদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছিল। তারা নিজেদেরকে সেনা পরিবারের সদস্যদের তুলনায় "দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক" মনে করত এবং তাদের সন্তানদেরও সেনা শিশুদের দ্বারা অবজ্ঞার শিকার হওয়ার অভিযোগ ছিল। এই ধরনের সামাজিক বৈষম্য তাদের ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। অন্যান্য দাবির মধ্যে ছিল শতভাগ রেশনিং কার্যক্রম এবং বার্ষিক ছুটির পরিমাণ সেনাবাহিনীর সমান করা।
এই গভীর অসন্তোষ, বিশেষ করে "দ্বিতীয় শ্রেণীর" নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হওয়া এবং সেনা প্রেষণের কারণে সীমিত কর্মজীবনের উন্নতির ধারণা, বিডিআর-এর মধ্যে আস্থা ও সংহতির মৌলিক ভাঙন নির্দেশ করে। বেতন-ভাতার মতো স্পষ্ট বৈষম্য এবং সামাজিক অবজ্ঞার মতো অস্পষ্ট অপমানের কারণে এই অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতা, জওয়ানদের মধ্যে উগ্রপন্থাকে উৎসাহিত করেছিল এবং বিদ্রোহের আহ্বানকে গ্রহণ করার জন্য তাদের সংবেদনশীল করে তুলেছিল, তা স্বতঃস্ফূর্ত হোক বা পরিকল্পিত। এই বিদ্রোহ ছিল বিডিআর-এর মধ্যে দীর্ঘদিনের সুপ্ত পরিচয় সংকটের একটি সহিংস বহিঃপ্রকাশ, যেখানে কাঠামোগত অসমতা এবং অনুভূত সামাজিক অবমাননা (নিজেকে "দ্বিতীয় শ্রেণীর" মনে করা) অভ্যন্তরীণ সংহতি ও আনুগত্যকে ক্ষয় করে দিয়েছিল, যা বাহিনীকে অন্তর্নিহিতভাবে অস্থির এবং চরমপন্থার দিকে ধাবিত করেছিল।

২.২ "অপারেশন ডাল-ভাত" কর্মসূচির প্রভাব ও দুর্নীতির অভিযোগ

২০০৭-২০০৯ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে "অপারেশন ডাল-ভাত" নামে একটি কল্যাণমূলক কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্রদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে চাল ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা। এই কর্মসূচিটি আপাতদৃষ্টিতে জনকল্যাণমূলক হলেও, এটি বিডিআর জওয়ানদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিডিআর সদস্যরা অভিযোগ করে যে, এই প্রকল্প থেকে সেনা কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে মুনাফা অর্জন করেছেন এবং অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, যা বিডিআর-এর সেবায় ফেরত আসেনি।
বিদ্রোহের দিন, মহাপরিচালক শাকিল আহমেদ যখন "ডাল-ভাত" কর্মসূচির অভিযোগ নিয়ে কথা বলছিলেন, তখনই গুলি শুরু হয়, যা ইঙ্গিত করে যে এই বিষয়টি কতটা সংবেদনশীল ছিল। পরবর্তীতে, হাইকোর্টের রায়েও "ডাল-ভাত" কর্মসূচিকে জওয়ানদের ক্ষোভের উৎস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে শৃঙ্খলা বাহিনীকে এমন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত না করার সুপারিশ করা হয়েছে। "অপারেশন ডাল-ভাত", একটি কল্যাণমূলক কর্মসূচি হওয়া সত্ত্বেও, বিডিআর-এর নেতৃত্ব দিতে আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির ধারণাকে উৎসাহিত করে বিদ্রোহের একটি প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল। এটি তুলে ধরে যে কীভাবে অনুভূত আর্থিক শোষণ, বিশেষ করে একটি শ্রেণিবদ্ধ সামরিক কাঠামোর মধ্যে, দ্রুত আস্থা ও বৈধতাকে ক্ষয় করতে পারে, একটি কল্যাণমূলক উদ্যোগকে গভীর অসন্তোষের উৎস এবং সহিংসতার প্রত্যক্ষ ট্রিগারে রূপান্তরিত করতে পারে।

২.৩ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের সুযোগ না পাওয়া

বিডিআর সদস্যদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে (যা আর্থিকভাবে লাভজনক) অংশগ্রহণের অনুমতি না দেওয়া একটি বড় অসন্তোষের কারণ ছিল। যদিও ২০০৬ সালে একটি বিডিআর প্লাটুন বাংলাদেশ পুলিশের সাথে একটি মিশনে কাজ করেছিল, তবে সেনাবাহিনী ভবিষ্যতে বিডিআর-এর জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ অস্বীকার করে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া, যা বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য অতিরিক্ত আয় এবং মর্যাদার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস,, বিডিআর জওয়ানদের আর্থিক এবং মর্যাদা-সম্পর্কিত অভিযোগকে আরও গভীর করেছিল। এই নীতি, সম্ভবত সেনাবাহিনীর এমন লাভজনক মিশনে তাদের একচেটিয়া ভূমিকা বজায় রাখার আকাঙ্ক্ষা দ্বারা চালিত, "দ্বিতীয় শ্রেণীর" ধারণাকে আরও দৃঢ় করে এবং বিদ্রোহের সময় বিস্ফোরিত হওয়া সামগ্রিক অসন্তোষে অবদান রাখে। এই বঞ্চনা শুধু একটি আর্থিক সুযোগের ক্ষতি ছিল না, বরং এটি কাঠামোগত বৈষম্যের প্রতীক ছিল এবং বিডিআর-এর প্রান্তিকতার অনুভূতিতে একটি শক্তিশালী অবদান রেখেছিল, যা অর্থনৈতিক এবং মর্যাদা-ভিত্তিক উভয় অভিযোগকে তীব্র করে বিদ্রোহকে সরাসরি ইন্ধন দিয়েছিল।

২.৪ ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সাথে সংঘাত ও জীবনযাত্রার মান নিয়ে ক্ষোভ

বিডিআর জওয়ানদের অভিযোগ ছিল যে, সেনা কর্মকর্তারা তাদের চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করেন এবং সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছে তা পৌঁছান না। সেনা কর্মকর্তাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন বিডিআর সদস্যদের মধ্যে আরও অসন্তোষ সৃষ্টি করে। কিছু সেনা কর্মকর্তা কর্তৃক বিডিআর সদস্যদের শারীরিক ও মৌখিক নির্যাতনের অভিযোগও ছিল।
প্রেষণাধীন সেনা কর্মকর্তাদের অনুভূত অহংকার এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন, জওয়ানদের অভিযোগের প্রতি অবহেলা এবং তাদের প্রতি দুর্ব্যবহারের অভিযোগের সাথে যুক্ত হয়ে, একটি বিষাক্ত কমান্ড পরিবেশ তৈরি করেছিল। এই প্রত্যক্ষ আন্তঃব্যক্তিক সংঘাত, কাঠামোগত অসমতার উপরে স্তরবদ্ধ হয়ে, বিমূর্ত অভিযোগগুলিকে ব্যক্তিগত ক্ষোভে রূপান্তরিত করে, কর্মকর্তাদের বিদ্রোহের ক্রোধের প্রত্যক্ষ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে এবং পর্যবেক্ষিত চরম সহিংসতায় অবদান রাখে। এটি কেবল বেতন-ভাতার মতো বিমূর্ত বিষয় নয়, বরং সম্মান ও মর্যাদার মতো অস্পষ্ট সামাজিক অবমাননার বিষয়টিকেও নির্দেশ করে। এই মানসিক মাত্রা আর্থিক অভিযোগের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হতে পারে, কারণ এটি কর্মীদের মূল পরিচয় এবং আত্মমর্যাদাকে আক্রমণ করে। এটি তাদের চরমপন্থী আখ্যান বা বাহ্যিক উস্কানির প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল করে তোলে।

২.৫ ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব ও সম্ভাব্য দেশি-বিদেশি শক্তির জড়িত থাকার অভিযোগ

বিডিআর বিদ্রোহকে কেবল একটি বিদ্রোহ হিসেবে নয়, বরং একটি "পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড" হিসেবে দাবি করা হয়েছে। বিভিন্ন তত্ত্বে বিদেশি শক্তির জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে, বিশেষ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' (R&AW) এবং তাদের এজেন্ট লাকি বিষ্টের ভূমিকা। অভিযোগ ছিল যে 'র' বিডিআর-এর অভ্যন্তরীণ বিভেদকে কাজে লাগিয়ে বিদ্রোহ উস্কে দিয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের সামরিক নেতৃত্বকে দুর্বল করা এবং সদ্য নির্বাচিত সরকারকে অস্থিতিশীল করা। কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে ভারতীয় কিলার গ্রুপকে খেলোয়াড় বা রোগীর ছদ্মবেশে পিলখানায় ঢোকানো হয়েছিল এবং তারা হত্যাকাণ্ড শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে পিলখানা ত্যাগ করে।
অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তির জড়িত থাকার অভিযোগও ছিল, যেমন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরোধীরা বা "ওয়ান-ইলেভেন" (২০০৭-২০০৮ তত্ত্বাবধায়ক সরকার) সৃষ্টিকারীরা। হাইকোর্টের রায়েও "দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের" কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নবনির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা এবং দেশকে অস্থিতিশীল করা। গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই ষড়যন্ত্রের কথা আগে জানা যায়নি।
এই ষড়যন্ত্রের তত্ত্বের ব্যাপক এবং ক্রমাগত উপস্থিতি, যা দেশি ও বিদেশি উভয় শক্তিকে জড়িত করে, ঘটনাটিকে নিছক অভ্যন্তরীণ অসন্তোষের বাইরে নিয়ে যায়। এটি ইঙ্গিত করে যে বিডিআর-এর বিদ্যমান দুর্বলতা এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কৌশলগত অস্থিতিশীলতার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, কেবল সৈনিকদের দাবি পূরণের জন্য নয়। এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলির উপর চূড়ান্ত সরকারি অনুসন্ধানের অভাব, আদালতের পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও, জনমনে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে অমীমাংসিত রহস্য ও অবিশ্বাস তৈরি করে, যা ভবিষ্যতের অস্থিতিশীলতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

চলবে...

শেয়ার করতে পারেন এবং আপনার কোন মতামত বা প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, বর্তমান পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণকার্যনির্ব...
15/06/2025

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, বর্তমান পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণ

কার্যনির্বাহী সারসংক্ষেপ
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার বর্তমান সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটে একটি গভীর পরিবর্তন এনেছে, যা দীর্ঘদিনের ছায়া যুদ্ধ থেকে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষে রূপান্তরিত হয়েছে। এই গবেষণা রিপোর্টটি সংঘাতের ঐতিহাসিক বিবর্তন, আধুনিক প্রযুক্তির (ড্রোন, সাইবার হামলা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) উদ্ভাবনী ব্যবহার, এর বহুমুখী মানবিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য গতিপথ বিশ্লেষণ করে।

ঐতিহাসিকভাবে, ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৯ সালের শাহের শাসনামল পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত কিন্তু কৌশলগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব এই সম্পর্ককে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে দেয়, ইসরায়েলকে "শয়তানের রাষ্ট্র" আখ্যা দিয়ে ফিলিস্তিনি কারণকে ইরানের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। এরপর থেকে ইরান লেবাননের হিজবুল্লাহ, হামাস এবং ইয়েমেনের হুথিদের মতো প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে একটি "প্রতিরোধ অক্ষ" গড়ে তোলে, যা ইসরায়েলের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।

বর্তমান সংঘাতের তীব্রতা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে ইসরায়েল ইরানের মিত্রদের উপর ধারাবাহিক হামলা চালায় এবং প্রতিরোধ অক্ষকে দুর্বল করে দেয়। ২০২৫ সালের জুন মাসে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক প্রতিরোধমূলক হামলা চালায়, যার জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে পাল্টা হামলা করে। এই সংঘাতের মূল বৈশিষ্ট্য হলো আকাশপথে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, যেখানে ইসরায়েলের বিমান সক্ষমতা এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তাকে কৌশলগত সুবিধা দিয়েছে, যদিও ইরানের পাল্টা হামলা ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করেছে।

প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, ড্রোন, সাইবার হামলা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) যুদ্ধের কৌশলকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করেছে। ইসরায়েল ড্রোন ঝাঁক এবং AI-সক্ষম গোয়েন্দা ব্যবস্থা ব্যবহার করে কৌশলগত চমক অর্জন করেছে, অন্যদিকে ইরান কম খরচের ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে অসম যুদ্ধ কৌশল প্রয়োগ করছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রগতি ইসরায়েলের জন্য "অস্তিত্বের হুমকি" হিসেবে বিবেচিত, যা ইসরায়েলের প্রতিরোধমূলক হামলার প্রধান চালিকা শক্তি।

এই সংঘাতের মানবিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ব্যাপক। উভয় পক্ষেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হতাহত হয়েছে, যার মধ্যে বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যা বেশি। গাজায় মানবিক সংকট, বাস্তুচ্যুতি, খাদ্য ও চিকিৎসা পরিষেবার অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। অর্থনৈতিকভাবে, সংঘাত বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে এবং সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ সৃষ্টি করছে।

আন্তর্জাতিকভাবে, বিশ্ব শক্তিগুলো (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন) সংঘাত নিরসনে জটিল ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে। মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো, বিশেষ করে সৌদি আরব, কাতার, তুরস্ক ও পাকিস্তান, ইসরায়েলের হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং সংযম ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘ, ন্যাটো এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সংঘাতের তীব্রতা এবং মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সামগ্রিকভাবে, এই সংঘাত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। এটি পারমাণবিক অপ্রসারণের চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী একটি নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি তৈরি করেছে। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং সংঘাতের মূল কারণগুলোর সমাধান অপরিহার্য।

১. ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার বর্তমান সংঘাতের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত, যা কেবল সাম্প্রতিক উত্তেজনা নয়, বরং কয়েক দশকের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন, আদর্শিক সংঘাত এবং কৌশলগত স্বার্থের জটিল জালকে প্রতিফলিত করে। এই সম্পর্কটি বন্ধুত্বের পর্যায় থেকে চরম শত্রুতায় রূপান্তরিত হয়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের গতিপথকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
১.১. ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্কের ইতিহাস: ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে ২০২৩ পর্যন্ত যুদ্ধের সূত্রপাত
১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্ক ছিল এক জটিল সমীকরণ। প্রাথমিকভাবে, এই দুই দেশের মধ্যে একটি অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল, যা তৎকালীন মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছিল বিরল।

প্রাথমিক বৈরিতা ও ইসরায়েলের স্বীকৃতি:
১৯৪৭ সালে, ফিলিস্তিনের ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের জন্য জাতিসংঘের বিভাজন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া ১৩টি দেশের মধ্যে ইরান অন্যতম ছিল। এরপর, জাতিসংঘে ইসরায়েলের সংযুক্তির বিপক্ষেও ইরান ভোট দেয়। এই পদক্ষেপগুলো প্রাথমিকভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইরানের সংহতি প্রকাশ করে। তবে, বিস্ময়করভাবে, ১৯৫০ সালে তুরস্কের পর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া দ্বিতীয় মুসলিম দেশ ছিল ইরান। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বৈরিতায় টিকে থাকতে ইসরায়েল ইরানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে।

শাহের শাসনামলে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক (১৯৫৩-১৯৭৯):
১৯৫৩ সালের অভ্যুত্থানের পর, যখন মোহাম্মদ রেজা পাহলভি (শাহ) ক্ষমতায় পুনর্বহাল হন, তখন দুই দেশের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়। ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে ইসরায়েলের "পেরিফেরি ডকট্রিন" (Periphery Doctrine) এর অংশ হিসেবে ইরান, তুরস্ক ও ইথিওপিয়ার মতো অনারব দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই মতবাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্যান-আরব জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা করা এবং আরব বিশ্বের বাইরে মিত্র খুঁজে বের করা।

১৯৫৮ সালে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন এবং তুর্কি প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্ডারেস "ট্রাইডেন্ট" (Trident) নামক একটি গোপন জোট গঠন করেন, যেখানে ইরানও একটি কেন্দ্রীয় অংশীদার ছিল।
এই সম্পর্কের মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং অস্ত্র বাণিজ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল। ইসরায়েলের মোসাদ (Mossad) এবং ইরানের তৎকালীন গুপ্তচর সংস্থা সাভাক (SAVAK) ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করত। ইসরায়েল ইরানকে সামরিক উপদেষ্টা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিত, বিশেষ করে ইরানের সামরিক-শিল্প কমপ্লেক্সের উন্নয়নে।

ইরান ইসরায়েলের প্রধান অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী ছিল এবং ইসরায়েল নিয়মিত ইরানকে অস্ত্র বিক্রি করত, যা ইসরায়েলের উদীয়মান প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইসরায়েলের বাইরে ইরানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ইহুদি বসবাস করত, যা উভয় দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের একটি সামাজিক দিক ছিল।

ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার উপর আদর্শের নমনীয়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার ১৯৪৮-১৯৭৯ সালের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কেবল একটি ঐতিহাসিক কৌতূহল নয়, বরং এটি দেখায় যে কীভাবে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এবং আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্য আদর্শগত মতপার্থক্যকে সাময়িকভাবে ছাপিয়ে যেতে পারে।

ইসরায়েলের "পেরিফেরি ডকট্রিন" এবং ইরানের অনারব পরিচয় উভয়কেই আরব জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে একটি অভিন্ন কৌশলগত ভিত্তি প্রদান করেছিল। এই সম্পর্ক প্রমাণ করে যে, এমনকি তীব্র আদর্শগত বিরোধের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও, বাস্তববাদী ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ দেশগুলোকে অপ্রত্যাশিত জোট গঠনে চালিত করতে পারে। এটি মধ্যপ্রাচ্যের জটিল এবং পরিবর্তনশীল জোটের একটি ঐতিহাসিক উদাহরণ, যা বর্তমান সংঘাতের গতিপথ বুঝতে সহায়ক।

যুদ্ধের সূত্রপাত (২০২৩):
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলার পর এই সংঘাতের তীব্রতা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এই হামলার পর ইসরায়েল কঠোর সামরিক প্রতিক্রিয়া জানায় এবং ইরানের মিত্রদের (যেমন হামাস, হিজবুল্লাহ, হুথি) উপর ধারাবাহিক হামলা চালায়, যা ইরানের "প্রতিরোধ অক্ষ" (Axis of Resistance) কে দুর্বল করে দেয়। এই ঘটনাগুলো ইরান-ইসরায়েল সংঘাতকে একটি নতুন এবং বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে আসে।

১.২. ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব এবং ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কের মোড় পরিবর্তন
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব ইরান ও ইসরায়েলের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মোড় ঘুরিয়ে দেয়, যা দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বৈরিতার ভিত্তি স্থাপন করে।

সম্পর্কের আকস্মিক বিচ্ছিন্নতা:
১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী বিপ্লব রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। এই নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা ইসরায়েলকে "শয়তানের রাষ্ট্র" (Little Satan) আখ্যা দিয়ে তার বৈধতা প্রত্যাখ্যান করে। ইরান ইসরায়েলের সাথে সব ধরনের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং ইসরায়েলে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

ইসলামী বিপ্লবের পর ইহুদিদের একটি বড় অংশ ইরান ত্যাগ করে, যদিও বর্তমানে ২০,০০০-এর বেশি ইহুদি ইরানে বসবাস করে।

ফিলিস্তিনি কারণের প্রতি জোরালো সমর্থন:
নতুন ইরানি শাসনব্যবস্থা ফিলিস্তিনি মুক্তি আন্দোলনের প্রতি জোরালো সমর্থন জানায় এবং ফিলিস্তিনি কারণকে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে।

১৯৭৯ সালের আগস্টে বিপ্লবী নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি প্রদর্শনের জন্য রমজানের শেষ শুক্রবারকে "কুদস (জেরুজালেম) দিবস" হিসেবে পালনের আহ্বান জানান। ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস (IRGC)-এর অভিজাত ইউনিট "কুদস ফোর্স" (Qods Force) এর নামকরণও জেরুজালেমের নামে করা হয।ইরান ইসরায়েলকে মুসলিমদের পবিত্র ভূমি দখলকারী হিসেবে বিবেচনা করে এবং খোমেনি ইসরায়েলকে "ইসলামী দেশগুলোর দেহে একটি ক্যান্সারযুক্ত টিউমার" বলে অভিহিত করেন, যা উপড়ে ফেলতে হবে।

আদর্শিক রূপান্তর ও ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণ এই পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লব কেবল একটি শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন ছিল না, এটি ইরানের পররাষ্ট্রনীতির একটি মৌলিক আদর্শিক রূপান্তর ছিল। ইসরায়েলকে "শয়তানের রাষ্ট্র" হিসেবে আখ্যায়িত করা এবং ফিলিস্তিনি কারণকে নিজেদের এজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও গভীর করে তোলে, যা পরবর্তী চার দশকের প্রক্সি সংঘাতের ভিত্তি স্থাপন করে।

এই আদর্শিক পরিবর্তন ইরানের আঞ্চলিক কৌশলকে প্রভাবিত করে; ফিলিস্তিনি কারণকে সমর্থন করে ইরান মুসলিম বিশ্বে তার বিপ্লবী পরিচয় ও প্রভাব বাড়াতে চেয়েছিল। এর ফলস্বরূপ, ইরান লেবাননে হিজবুল্লাহর মতো প্রক্সি বাহিনী তৈরি করে, যা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি নতুন ফ্রন্ট তৈরি করে। এটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি "প্রতিরোধ অক্ষ" গঠনের ভিত্তি স্থাপন করে, যা ইসরায়েলের পতনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।এই আদর্শিক রূপান্তর মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে স্থায়ী পরিবর্তন আনে এবং ইসরায়েল তার "পেরিফেরি ডকট্রিন" পুনর্বিবেচনা করে।

প্রতিরোধ ফ্রন্টের সংঘাতের সূচনা:
১৯৮০-এর দশকের শুরুতে ইরানের সহায়তায় গেরিলা বাহিনী হিসেবে হিজবুল্লাহ গঠিত হয়, যারা দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ১৯৮২ সালে ইসরায়েল লেবানন আক্রমণ করলে উত্তেজনা আরও বাড়ে, কারণ এই আগ্রাসন ইরানের মিত্র ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (PLO) এবং শিয়া সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব ফেলে।ইরান লেবাননের বেকা উপত্যকায় প্রায় ১,৫০০ IRGC উপদেষ্টা পাঠায়, যারা হিজবুল্লাহকে সংগঠিত, প্রশিক্ষণ ও সজ্জিত করতে সহায়তা করে।

কৌশলগত বাস্তববাদ বনাম আদর্শিক বৈরিতা এই সময়ের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। ইরান-ইরাক যুদ্ধের (১৯৮০-১৯৮৮) সময় প্রকাশ্যে বৈরিতা সত্ত্বেও ইরান ও ইসরায়েল গোপন সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। ইসরায়েল ইরানকে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করে, যার বেশিরভাগের মূল্য পরিশোধ করা হয় ইরানি তেল দিয়ে। এই গোপন অস্ত্র বিক্রি "ইরান-কন্ট্রা অ্যাফেয়ার" (Iran-Contra affair) এর অংশ ছিল, যেখানে ইসরায়েলি মধ্যস্থতাকারীরা লেবাননে আমেরিকান জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইরানকে অস্ত্র সরবরাহ করেছিল।

এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জটিলতা এবং "শত্রুর শত্রু বন্ধু" নীতির গুরুত্ব তুলে ধরে। এটি দেখায় যে, এমনকি গভীর আদর্শিক বিভাজন থাকা সত্ত্বেও, জাতীয় নিরাপত্তা এবং টিকে থাকার স্বার্থে দেশগুলো বাস্তববাদী এবং গোপন সহযোগিতা বজায় রাখতে পারে।

১.৩. ইরানী বৈদেশিক নীতি, পারমাণবিক কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ
১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে একটি মৌলিক পরিবর্তন আসে, যা ইসরায়েলের প্রতি প্রকাশ্য বৈরিতার জন্ম দেয় এবং পারমাণবিক কর্মসূচির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে।
ইরানের পররাষ্ট্রনীতির বিবর্তন ও "প্রতিরোধ অক্ষ":
১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে ইসরায়েলের প্রতি ইরানের সম্পর্ক "কোল্ড পিস" থেকে প্রকাশ্য শত্রুতায় পরিণত হয়। ইরান ফিলিস্তিনি ইসলামি জিহাদ, হামাস এবং ইয়েমেনের হুথিদের মতো ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে তহবিল ও সমর্থন দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে প্রক্সি সংঘাত চালায়। ইরান তার "প্রতিরোধ অক্ষ" (Axis of Resistance) গড়ে তোলে, যা লেবাননের হিজবুল্লাহ, সিরিয়া ও ইরাকের শিয়া মিলিশিয়া এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের নিয়ে গঠিত। এই প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াতে এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলতে কাজ করে।

"প্রতিরোধ অক্ষ" এর কৌশলগত দুর্বলতা ও ইসরায়েলের লক্ষ্য এখানে স্পষ্ট। ইরানের "প্রতিরোধ অক্ষ" মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তারের একটি মূল কৌশল হলেও, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় এই অক্ষের উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। ইসরায়েলের লক্ষ্য কেবল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা নয়, বরং ইরানের আঞ্চলিক নেটওয়ার্ককে ভেঙে দেওয়া, যা ইসরায়েলের জন্য দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি বৃহত্তর কৌশলগত উদ্দেশ্য নির্দেশ করে। হামাস ও হিজবুল্লাহর সামরিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের পতন ইরানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ রুট বন্ধ করে দিয়েছে।

এই দুর্বলতাগুলো ইরানের আঞ্চলিক প্রভাবকে সীমিত করছে এবং ইসরায়েলকে ইরানের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক হতে উৎসাহিত করছে। "প্রতিরোধ অক্ষ" এর দুর্বলতা মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন আনছে এবং আঞ্চলিক দেশগুলোর (যেমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত) ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

পারমাণবিক কর্মসূচি ও ইসরায়েলের উদ্বেগ:
ইসরায়েল বহু দশক ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে তার অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইসরায়েল বিশ্বাস করে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে, যদিও ইরান দাবি করে তার কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা (IAEA) সতর্ক করেছে যে ইরানের কাছে "কয়েকটি" পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত ইউরেনিয়াম রয়েছে। ২০০৩ সাল পর্যন্ত ইরানের একটি সংগঠিত পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি ছিল বলে IAEA এবং পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে।

ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে অসংখ্য গোপন হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে সাইবার হামলা এবং ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যা অন্তর্ভুক্ত। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার পর ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ দ্রুত গতিতে বেড়েছে।

২০২৫ সালের জুন মাসে IAEA ইরানকে পারমাণবিক অপ্রসারণ চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য নিন্দা জানায়, যার প্রতিক্রিয়ায় ইরান একটি তৃতীয় সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা দেয়। ইসরায়েল ইরানের নাতাঞ্জ (Natanz) পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যা ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতাকে কয়েক মাস বা বছর পিছিয়ে দিতে পারে।

পারমাণবিক কর্মসূচি: ইসরায়েলের জন্য "অস্তিত্বের হুমকি" এবং "সময় ফুরিয়ে আসছে" ধারণাটি ইসরায়েলের পদক্ষেপের মূল চালিকাশক্তি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন যে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি রোধে "সময় ফুরিয়ে আসছে"। IAEA-এর সাম্প্রতিক নিন্দা এবং ইরানের তৃতীয় সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণা ইসরায়েলের এই ধারণাকে আরও শক্তিশালী করেছে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে।

ইসরায়েল মনে করে, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে তা ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হবে।এই ধারণা ইসরায়েলকে প্রতিরোধমূলক (preemptive) হামলার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আইনের "আত্মরক্ষার অধিকার" (self-defense) এর বিতর্কিত ব্যাখ্যাকে সামনে এনেছে। এই ধরনের হামলা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে এবং পারমাণবিক অপ্রসারণের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দেয়।

আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ ও প্রতিক্রিয়া:
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং আঞ্চলিক প্রক্সি কার্যক্রম আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। চীন ও রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্রসহ আকাশপথে ইরানকে সহায়তা করছে বলে রিপোর্ট রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল দীর্ঘকাল ধরে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি রোধে সামরিক পদক্ষেপের অঙ্গীকার করেছে।তবে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন একটি কূটনৈতিক সমাধান খুঁজছে, যদিও ইসরায়েল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রতি সন্দিহান।

১.৪. ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কের জটিলতা এবং প্রতিরোধ
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাত দীর্ঘকাল ধরে একটি "ছায়া যুদ্ধ" হিসেবে চলে আসছিল, যেখানে গোপন হামলা, সাইবার আক্রমণ এবং প্রক্সি বাহিনীর মাধ্যমে একে অপরের ক্ষতি করা হতো। এই সংঘাতের প্রকৃতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিবর্তিত হয়েছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

ছায়া যুদ্ধ থেকে সরাসরি সংঘাতে রূপান্তর:
২০২৪ সালে এই সম্পর্ক সরাসরি সংঘাতে রূপ নেয়, যেখানে উভয় পক্ষই একে অপরের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ২০২৫ সালের জুন মাসে (চলমান যুদ্ধে) ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ব্যাপক হামলা চালায়, যা এই সংঘাতকে আরও তীব্র করে তোলে।
"ছায়া যুদ্ধ" থেকে "সরাসরি সংঘাতে" রূপান্তরের প্রভাব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি নতুন এবং বিপজ্জনক মাত্রা যুক্ত করেছে। এটি কেবল সামরিক কৌশলকেই প্রভাবিত করেনি, বরং উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। সরাসরি হামলাগুলো উভয় দেশের "রেড লাইন" (red line) কে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করছে। ইসরায়েলের "প্রতিরোধমূলক" হামলার দাবি এবং ইরানের "অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩" এর মতো নামকরণ উভয় পক্ষের পক্ষ থেকে একটি নতুন ধরনের সংঘাতের বৈধতা এবং জনসমর্থন আদায়ের প্রচেষ্টা। এটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি "নতুন স্বাভাবিক" (new normal) অবস্থা তৈরি করছে, যেখানে সরাসরি সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি অনেক বেশি।

এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক আইনের "আত্মরক্ষার অধিকার" (right of self-defense) এর ব্যাখ্যা নিয়েও নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সরাসরি সংঘাতের এই নতুন পর্যায় আঞ্চলিক দেশগুলোকে (যেমন জর্ডান, ইরাক, মিশর) আরও বেশি ঝুঁকির মুখে ফেলেছে, কারণ তাদের আকাশসীমা এবং ভূখণ্ড উভয় পক্ষ দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলছে, বিশেষ করে তেল ও গ্যাসের বাজারে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।

ইসরায়েলের আগ্রাসনমূলক পদক্ষেপ:
ইসরায়েল তার হামলাকে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি রোধে একটি কথিত "প্রতিরোধমূলক, সুনির্দিষ্ট, সমন্বিত আক্রমণ" (preemptive, precise, combined offensive) হিসেবে বর্ণনা করেছে। ইসরায়েল দাবি করে যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে এবং ইরানের নেতৃত্ব ইসরায়েলকে ধ্বংস করার বারবার হুমকি দিয়েছে।

ইসরায়েল তার গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের মাধ্যমে ইরানের অভ্যন্তরে অস্ত্র পাচার করে এবং ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি স্থাপন করে। এই কৌশলগুলো ইসরায়েলকে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকার্যকর করতে এবং কৌশলগত চমক (strategic surprise) অর্জন করতে সাহায্য করে।

ইরানের প্রতিরোধ ও পাল্টা হামলা:
ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইরান শত শত ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করে। ইরান ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে "স্যাচুরেট" করতে এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে ড্রোন ঝাঁক (drone swarms) ব্যবহার করে। ইরান তার পাল্টা হামলাকে "অপারেশন ট্রু প্রমিজ ৩" (Operation True Promise 3) নামকরণ করে এবং ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটি ও বিমানঘাঁটিতে আঘাত হানার দাবি করে।

চলবে...

Israel Defense Forces Israel Ministry of Foreign Affairs Israeli Air Force Organisation of Islamic Cooperation (OIC) Arab News Daily Ittefaq Channel 24 News NewsBangla24.com The Daily Star bdnews24.com Daily Naya Diganta Daily News Prothom Alo Rtv News । সংবাদ somoynews.tv Daily Jugantor NEWS24 MD Hussain Billah Urdu News Saudi Arabia RADIO TEHRAN

Hussain Billah

Founder & Chief Analyst, SIPRS

Address

Tangail

Website

https://siprsbangladesh.blogspot.com/?m=1

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when SIPRS posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share