13/04/2025
বয়কট 🔥: এগুলো কোম্পানির নাম, পণ্যের নাম না। এক কোম্পানির অধীনে অনেকগুলো প্রোডাক্ট আসবে।
যেমন কোকাকোলা কোম্পানি বয়কট করার অর্থ — কোকাকোলা, স্প্রাইট, ফান্টা, মাউন্টেন ডিও, কিনলে ইত্যাদি বয়কট করা।
—
আসিফ ভাইয়ের সম্পূর্ণ পোষ্ট—
"যায়ো--ব|দের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে টার্গেটেড বয়কট কিভাবে হতে পারে?
শুরুতে দুটো বেইসিক আইডিয়া স্পষ্ট করে নেই, কারণ এখানে অনেকের অনেক ফালতু মিসকনসেপশান আছে।
১। যায়ো-- পণ্য, ইস্র----লি পণ্য না:
আমরা ইস্র----লী পণ্য বয়কটের কথা বলছি না। যায়ো--- ব|দকে সমর্থন দেয়া কর্পোরেশন ও ব্যবসাগুলোর পণ্য বয়কটের কথা বলছি।
পার্থক্য কী?
পার্থক্য হল, ইস্র---লি পণ্য মানে এমন পণ্য যা ইস্র--- এ উৎপাদিত হয়েছে অথবা যে কোম্পানির মালিক 'ইস্র---লি'। অন্যদিকে যায়ো---ব|দকে সমর্থন দেয়া কোম্পানির মালিক যেকোন দেশের হতে পারে, সেই কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন যে কোনো দেশে হতে পারে।
উদাহরণ দেই:
আওয়ামী লীগ একটা ডারতবাদী প্রডাক্ট। এখানে কারও কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু এটার অফিস বাংলাদেশে, এটার নেতা, সভাপতিরা বাঙ্গালি, এটার সদস্যরা ম্যাক্সিমাম বাঙ্গালি, রেজিস্ট্রেশনও বাংলাদেশে। তারপরও ডারতবাদী প্রডাক্ট হিসেবে আপনি এটা বয়কট করতে পারেন।
কিন্তু কেউ যদি বলে লীগ হলো ডারতীয় দল, তাহলে টেকনিকালি কথাটা ভুল। এখানেও একই ধরনের ব্যাপার হচ্ছে।
সারা বিশ্বে যখন ইস্র---- দখলদারিত্ব ও অপরাধের বিরুদ্ধে বয়কট আন্দোলন হয় তখন সেটা যায়ো--- ব|দকে সমর্থন দেয়া কোম্পানীর প্রডাক্ট বয়কটকেই বোঝায়। ইস্র----লে উৎপাদিত পণ্য বয়কট না।
এখানে বয়কট করার কারণ হল যায়ো-- ব|দের প্রতি ঐ কোম্পানির সমর্থন। কোন কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন কোন দেশে, হেডকোয়ার্টার কোন দেশে, সেটা এখানে ইস্যু না।
যেমন, কোকা কোলা অ্যামেরিকান কোম্পানি, তাদের প্রধান অফিসও অ্যামেরিকাতে। তাদের শুরু যায়ো রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় দশক আগে। কিন্তু কোকা কোলা বয়কট যোগ্য কারণ তারা যায়ো--- ব|দকে সমর্থন করে। ক্লিয়ার?
বয়কট করবো যায়ো সমর্থক কোম্পানির পণ্য। ইস্র----লি পণ্য না। ঐ কোম্পানির মালিক কোন দেশের সেটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ না। তারা যায়ো-- রাষ্ট্রকে সমর্থন করে কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
যায়ো--- সমর্থক পণ্য এবং ইস্র----লি পণের মধ্যে পার্থক্য আমাদের স্পষ্ট করা উচিৎ। আমরা এটা করি না। আমরা শুধু ইস্র--- পণ্য বলে যাই। আর এই সুযোগে কিছু সো কলড ফ্যাক্ট চেকার 'কোকাকোলার অফিস তো অ্যামেরিকায়', 'কোকাকোলার প্রতিষ্ঠাতা তো অ্যামেরিকান' এসব বলে পানি ঘোলা করে।
মোদ্দা কথা: আমরা বয়কট করবো যায়ো---ব||দকে সমর্থন দেয়া প্রডাক্টগুলোকে, সেটা মঙ্গলগ্রহের হলেও সমস্যা নেই।
২। টার্গেটেড বয়কট:
টার্গেটেড বয়কট মানে হলো অনেকগুলো পণ্য একসাথে বয়কট না করে, বাই মিলে অল্প কিছু পণ্য ও কোম্পানি বয়কট করা। কেন?
কারণ বয়কট একটা পলিটিকাল টুল। এই টুলকে সফলভাবে ব্যবহার করতে হলে বয়কট কর্মসূচী এমন হতে হবে যা সহজে বোধগম্য, যার ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা আছে, এবং যেখানে সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি।
এটা লড়াইয়ের অংশ। লড়াই হয় স্ট্র্যাটিজিকালি। যুদ্ধের সময় সাধারনত একসাথে সব ফ্রন্টে হামলা করা হয় না। যেখানে সফলতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বা যেখানে ফোকাস করা সবচেয়ে প্রয়োজন সেখানেই ফোকাস করতে হয়। এখানেও একই কথা। আশা করি, 'এটা বয়কট করলে ওটা না কেন" - এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট হয়েছে।
এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সফলভাবে যায়ো--- রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বয়কট আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া বিডি-এস আন্দোলনের বক্তব্য তুলে ধরছি। শাব্দিক অনুবাদ করছি না, চাইলে মূল বক্তব্য সাইট থেকে দেকে নিতে পারেন [১] :
বিডি-এস আন্দোলন এমন এক কৌশল বেছে নিয়েছে, যার কার্যকারিতা ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত—টার্গেটেড বয়কট। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী সংগ্রাম, আমেরিকার সিভিল রাইটস মুভমেন্ট, আর ভারতের ও আয়ারল্যান্ডের ঔপনিবেশিকতা-বিরোধী লড়াইসহ বিশ্বজুড়ে আরও অনেক ন্যায়বিচার-ভিত্তিক আন্দোলন থেকে আমরা এই কৌশল গ্রহণে অনুপ্রাণিত হয়েছি।
আমরা যদি বয়কট আন্দোলনে সর্বোচ্চ সফলতা চাই তাহলে আমাদের অল্পসংখ্যক কিছু কোম্পানি এবং প্রোডাক্টের ওপর খুব হিসেব করে ফোকাস করতে হবে। এই কৌশল-ই বিডি-এস আন্দোলনকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখানে G4S, Veolia, Orange, Puma আর Pillsbury-এর মতো বড় বড় কোম্পানিও যায়_-- রাষ্ট্রের সাথে কিছুটা দূরত্ব তৈরি করে নিতে বাধ্য হয়েছে।
বাংলাদেশে কিভাবে বয়কট:
উপরে আলোচনা থেকে আমরা দুটো বিষয় পেলাম।
১) বয়কট করতে হবে যায়ো---ব|দকে সমর্থন দেয়া কোম্পানি ও পণ্যকে, সেটা যে দেশের-ই হোক
২) বয়কট আন্দোলনকে সফল করতে হলে, বয়কট হতে হবে টার্গেটেড।
বয়কটের ক্ষেত্রে অল্প কিছু হাতেগোণা কোম্পানি ও পণ্যের ওপর স্ট্র্যাটিজিকভাবে ফোকাস করতে হবে আমাদের।
এবার আসা যাক তৃতীয় এবং মূল প্রশ্নে। বাংলাদেশে কোন কোন কোম্পানি এবং প্রডাক্ট বয়কট করা হবে?
বিডি-এস এর সাইটে একটা সুন্দর তালিকা বানিয়ে দেয়া আছে। [২]
সমস্যা হল হাই ভ্যালু হিসেবে বিডি-এস যাদেরকে লিস্টে এনেছে এদের অধিকাংশ বাংলাদেশের বাজারে অ্যাক্টিভ না। কাজেই আমরা হুবহু বিডি-এসের লিস্ট ফলো করতে পারছি না। আমাদের ইম্প্রোভাইয করতে হবে। বাংলাদেশের বাস্তবতা অনুযায়ী আমাদের কিছু জায়গায় মানিয়ে নিতে হবে।
এক্ষেত্রে আমি খসড়া তালিকা বানিয়েছি। বিডি-এস এর লিস্টে হাইভ্যালু যেসব নাম বাংলাদেশের বাজারে আছে সেগুলোর পাশাপাশি, আরও কিছু কোম্পানি ও পণ্যের নাম আমি যুক্ত করেছি যারা যায়ো---ব||দকে সমর্থন করে, এবং বাংলাদেশের বাজারে যাদের ভালো উপস্থিতি আছে।
আমি জানি অনেকেই কমেন্ট বা মেসেজ করে বলবেন, অমুক অমুক প্রডাক্ট তালিকায় যুক্ত করা যায়। এবং আমি তাদের সাথে একমত। তবে মনে রাখবেন, টার্গেটেড বয়কটের উদ্দেশ্য হল "অল্প কিছু হাতেগোণা কোম্পানি ও পণ্যের ওপর স্ট্র্যাটিজিকভাবে ফোকাস করা"। তাই তালিকা ছোট থাকছে। তবে অবশ্যই ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমরা যতো বেশি এমন পণ্য বয়কট করতে পারবো ততো ভালো হবে ইন শা আল্লাহ্।
বয়কটযোগ্য কোম্পানির ও পণ্যের তালিকা:
- কোকাকোলা
- পিৎযা হাট
- ডোমিনোস পিৎযা
- বার্গার কিং
- A&W
- সিমেন্স
- পেপসিকো
- ইউনিলিভার
- নেসলে
এর মধ্যে প্রথম ছয়টা বিডি-এসের লিস্ট থেকে নেয়া। শেষের তিনটা বাংলাদেশের মার্কেট বিবেচনায় যুক্ত করা। প্লিস নোট, এগুলোর বেশির ভাগ কোম্পানির নাম, পণ্যের নাম না। এক কোম্পানির অধীনে অনেকগুলো প্রোডাক্ট আসবে।
যেমন কোকাকোলা কোম্পানি বয়কট করার অর্থ কোকাকোলা, স্প্রাইট, ফান্টা, মাউন্টেন ডিউ, কিনলে -- সব বয়কট করা। এভাবে পেপসিকো, ইউনিলিভার ইত্যাদি কোম্পানি বয়কট করার অধীনে অনেক পণ্যের তালিকা হয়ে যাবে।
এই খসড়া তালিকায় বিবেচনা সাপেক্ষে আরও ২-১টি পণ্য হয়তো যোগ করা যেতে পারে, তবে এর বেশি না। তালিকা বড় হলে ফোকাস নষ্ট হবে—সেটা টার্গেটেড বয়কটের স্ট্র্যাটিজির পরিপন্থী। মনে রাখতে হবে, আমাদের লক্ষ্য কেবল প্রতীকী প্রতিবাদ না, বাস্তব বিজয় আদায় করে নেয়া। তাই টার্গেট বাছাইয়ে বাস্তবতা ও সম্ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এক বোতল কোক বয়কট করা ছোট কাজ। কিন্তু এই ছোট কাজগুলো দিয়ে আমরা একটা বড় বার্তা দিতে পারি ইন শা আল্লাহ্—যদি আমরা ঠিকভাবে ঠিক জায়গায় আঘাত করতে জানি।
এই তালিকা চূড়ান্ত না। তবে আমাদের সাধ্যের ভেতরে প্রতিরোধের একটা পথ এখান থেকেই শুরু হতে পারে। আমরা সেটুকু খালেসভাবে করার নিয়্যাত করি। অন্য কেউ না করলে না করুক—আমরা করবো। ইন শা আল্লাহ্।"
Asif Adnan