14/04/2024
পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ বরণের নামে বিভিন্ন জীব-জন্তুর মূর্তি নিয়ে মঙ্গল শোভা যাত্রা করা, মুখে উল্কি আঁকা এবং নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণসহ সকল অনৈসলামিকতা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি থেকে দূরে থাকা মুসলিমদের একান্ত কর্তব্য। একজন ঈমানদার মুসলমানের জন্য এরূপ কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে কুফরের চূড়ান্ত পর্যায়ভুক্ত।
বর্ষবরণের নামে কথিত মঙ্গল শোভা যাত্রার মাধ্যমে মূলত ভিনদেশী হিন্দুত্ববাদি ও আগ্রাসী মনুবাদ সাংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চলছে। নতুন বছরের প্রথম দিন বাঘ, ভাল্লুক, সাপ, কুমির, পেঁচা, ময়ূর ও বিভিন্ন দেব-দেবীর বড় বড় মূর্তি, ছবি নিয়ে ও মুখোশ পরে মঙ্গল শোভা যাত্রার নামে যে র্যালি বের করা হয়, এখানে কার কাছে নতুন বছরের মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করা হচ্ছে? ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী কোন জীব-জন্তু, বন্যপ্রাণী ও দেব-দেবীর মূর্তির কাছে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করলে ঈমান থাকবে না।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, “আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে আহ্বান করো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না। বস্তুতঃ তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তুমি অবশ্যই জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে”। (সূরা ইউনুস, আয়াত- ১০৬)।
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, “তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে, যে আল্লাহ ব্যতীত এমন কাউকে ডাকে, যে ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিবে না এবং তারা তাদের আহবান সম্বন্ধেও অনবহিত”। (সূরা আহকাফ, আয়াত- ৫)।
ভাল-মন্দ, মঙ্গল-অমঙ্গল সব কিছুই আল্লাহর হুকুমেই সংঘটিত হয়ে থাকে। মুসলিমকে কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর কাছেই। সুতরাং মুসলিমদের জন্যে মঙ্গল শোভাযাত্রার সংস্কৃতি চর্চা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। মঙ্গল কামনার উদ্দেশ্যে শোভাযাত্রা করা বড় শিরকের পর্যায়ভুক্ত যা একজন মানুষকে ইসলামের গন্ডি থেকে বের করে দেয়।
তাছাড়া জীব-জন্তু বা প্রাণির ছবি অংকন করা এবং মূর্তি তৈরি করা আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের উপর হারাম করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “নিশ্চয়ই যারা এসব ছবি-মূর্তি তৈরি করে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদের বলা হবে- তোমরা যেসব ছবি-মূর্তি তৈরি করেছ তাতে রূহ দান কর”। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৫৯৫১)।
হযরত আয়েশা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর হতে ফিরলেন। এমতাবস্থায় আমি একটি ছবিপূর্ণ পর্দা তাকের উপর দিয়ে রেখেছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে ছিঁড়ে টুকরা করে দিলেন এবং বললেন- “যারা ছবি-মূর্তি অংকন করে ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি হবে”। (সহীহ বুখারী, হাদিস- ৫৯৫৪)।
যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছবি-মূর্তিকে এত ঘৃণা করতেন, সেখানে বিভিন্ন জীব-জন্তুর ছবি-মূর্তি তৈরি করে রাস্তায় রাস্তায় র্যালি বের করা যে কতটা ঘৃণিত ও নিন্দনীয় কাজ তা সহজেই অনুভব করা যায়।
বর্ষবরণের উৎসবের নামে নারী-পুরুষ পরস্পরের মুখে উল্কি আঁকা, জীব-জন্তুর মুখোশ পরা, নারীরা লালপাড়ের সাদা শাড়ি পরিধান করে কপালে শাখা-সিঁদুর লাগিয়ে সম্মিলিত উলুধ্বনি দেয়া, মূর্তি নিয়ে আনন্দ মিছিল করা এগুলোর সবই হিন্দু ধর্মীয় রীতি। অথচ মুসলিমদের জন্য কাফির মুশরিকদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদের দলভুক্ত”। (সুনানে আবু দাউদ ৪০৩১)।
তাই একজন প্রকৃত মুমিন হতে হলে আপনাকে অবশ্যই পহেলা বৈশাখে কথিত মঙ্গল শোভাযাত্রার মত কুফরি সাংস্কৃতিক আয়োজন থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। অন্যথায় আপনি তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য হবেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলের ঈমান ও আমলকে হেফাজত এবং সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।।