24/07/2025
লুৎফর রহমান খুব কাছের একটা ছোট ভাই। সবসময় ভাই ভাই করে সমন্ধন করতো। তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন। তার বাবা হামিদুর রহমান ওরফে (ধারিগুতা) ছেলে দুটোর সাথে সম্পর্ক সেই ১৮ সাল থেকে। তারা তখন অনেক ছোট, কাজ করতো ভেলাজান বাজারের ছোট্ট একটা চায়ের দোকানে। আমি বরাবরই তাদের দেখতাম আর বলতাম আল্লাহ ছেলে দুটোকে সঠিক পথ দেখাও। সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাধার মত খাটুনি আহ্ কি মর্মান্তিক অবস্থা। বরাবর তাদের বাবাকে দোষারোপ করতাম কারণ সন্তান জন্ম দিছে ভরণপোষণ কে দিবে। অথচ তাদের যে বয়স সেটা স্কুলে যাওয়ার নতুবা টইটই করে ঘুরে বেড়ানো। ছোট ভাই ফারুক যদিও একটু দুষ্টু আর ফাঁকিবাজ ছিল কিন্তু লুৎফর ছিল কাজের ছেলে। তাকে কখনো দেখিনি ফাঁকিবাজি করতে সবসময় কথা হতো তার পরিবার নিয়ে আর সে একরাশ হতাশ নিয়ে বারবার বলতো ভাই আমার দ্বারা পড়ালেখা হবে না আমাকে পরিবারের হাল ধরতে হবে কারণ আমার নিচে আরো দুটো ছোট ভাই আছে। আর তুমি তো জানো আমার বাপ থাকতেও নাই। পরক্ষণে যখনই ওর বাপের সাথে দেখা হতো তখনই আমি কথা বলতাম কিন্তু তার বাপ ও ছিল নিরুপায় কারণ তার যে সীমিত ইনকাম সেটা দিয়ে পরিবার চালাতে হিমশিম খেত। ছোট ভাই হিসেবে আমি লুৎফরকে পরামর্শ দেয় এখানে থেকে জীবন নষ্ট করিস না বাইরে যা। কথা বলার ২ - ১ বছর পরেই পাড়ি জমায় ব্যস্ততম নগরী সরি নষ্টতম নগরী ঢাকায়। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই বন্ধু মোতালেবের ফেসবুক ওয়ালে দেখলাম লুৎফর আর নেই ।যদিও প্রথমে বিষয়টা তেমন মাথায় নেইনি কারণ চিনতে পারিনি। সেইসাথে দেশে তো এখন এগুলোই চলছে। নিজের কাজ শেষ করে পরক্ষণে যখন আবারো ফেসবুকে ঢুকলাম তখন ছবি দেখে চিনতে পারলাম এটা আমার খুব কাছের ছোট ভাই লুৎফর। আহারে জীবন আহারে লুৎফর। বিশ্বাস কর আমি আচমকা আটকে গেছি স্তব্ধ হয়ে ছিলাম কতক্ষণ তাও যানি না। আমি এখনো বিশ্বাসই করতে পারছিনা তুই আর নাই সন্ত্রাসী হামলায় শিকার হয়ে ঢাকায় জীবন দিতে হয়েছে তোকে।
তোর অনুপস্থিতিতে তোর পরিবারকে দোষারোপ করবো না। কারণ আমি জানি জীবিকার তাগিদে একদিন না একদিন বাইরে থাকতেই হবে। আমি দোষারোপ করব রাষ্ট্রকে, দোষারোপ করব সরকার প্রধানকে, দোষারোপ করবো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে। কারণ সরকার কিংবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দেশের মানুষের জান মাল রক্ষা করতে ব্যর্থ অথচ তারাও কিন্তু জানে খুন হওয়া ওই লুৎফরের ট্যাক্সের টাকায় কিন্তু আপনার আমার বেতন। শুধু লুৎফর না দেশে এরকম অহরহ ঘটনা ঘটতেই আছে এর নৈপর্থে কারা? কার ইন্ধনে-মদদে এমন কিছু হচ্ছে? সকলে জানলেও কোন এক অদৃশ্য শক্তির কাছে আমরা সবাই জিম্মি। জানি প্রশাসন কখনো এর সুষ্ঠ সমাধান দিতে পারবে না আর পারলেও লুৎফর কে তার বাবা-মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আজ শুধু লুৎফর না এরকম হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে ওই নরপিচাসরা। আর জীবন দিতে হয়েছে হাজারো মানুষকে। আজকে নতুন না বরাবরই ন্যায় বিচারের কথা বলি। প্রশাসন চাইলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যারকারীকে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু প্রশাসনও বড় বড় কর্তা বাবুদের কাছে জিম্মি। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একা দোষারোপ করা নিছক বোকামি। আমি রাষ্ট্রপ্রধান কে বলতে চাই জনগণ আপনাকে চেয়ার দিছে, সম্মানের জায়গা দিছে সেই জনগণ তাদের কাঙ্খিত চাহিদা মত ফলাফল পাচ্ছে না। মাননীয় উপদেষ্টা অপরাধীদের কোন পরিচয় হয় না তাদের কোন দল হয় না। আপনি চাইলেই সবকিছু করতে পারেন, কিন্তু বুঝিনা আপনি কার কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। দেশের খুন, গুম, হত্যা লুটপাটের শাস্তি স্বরূপ জনসম্মুখে এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন যাতে কোন অপরাধী অন্যায় করার আগে ১০০ বার ভেবে দেখবে। বাংলার মানুষ কোন দলকে না আমৃত্যু পর্যন্ত আপনাকে চাইবে। অথচ প্রশাসনকে অর্ডার দিলেন ওরা অপরাধীকে গ্রেফতার করলো আবার ২-৩ মাস কিংবা এক বছর পরে জামিনে মুক্তি পেল। ভেবে দেখুন যে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করল তাকে কি আর তার পরিবার পাবে সে কি ন্যর্য বিচার পাইল। ৫ আগস্টের পরে দেশে যতগুলো গুম খুন হত্যা সংঘটিত হয়েছে একটারো কি সঠিক বিচার হয়েছে? মাননীয় উপদেষ্টা আবারো আপনাকে বলছি অপরাধীদের কোন দল হয় না। আমার মনের ভেতরের পোষানো রাগ এবং ক্ষোভ গুলো সারাদিন লিখলেও খাতা কলম শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমার ক্ষোভ শেষ হবে না। আমরা সোনার বাংলা চাই যে, সোনার বাংলা রেখে গেছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বেগম সুফিয়া কামাল, হযরত শাহজালাল হযরত শাহ পরান। কিন্তু ফলাফল শূন্যের কোটায়।
সর্বশেষ আল্লাহতালার কাছে আবারো দোয়া করি আল্লাহ ছোট ভাইয়ের লুৎফরকে জান্নাতের উচ্চতর মাকাম দান করুক। সেই সাথে অপরাধীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করি। কারণ আমি যতই অপরাধ করি অন্য কেউ আমার জীবন নিয়ে নিতে পারে না। এরকম বিধান নাই। আমি অপরাধ করলে আইন আছে আইনের শাসন আছে। সেখানে আমার বিচার হবে কারণ আইনের উর্ধ্বে কেউ না।